আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। মুখ ফর্সা এবং উজ্জ্বল, এদিকে ঘাড়ের কাছে কালচে দাগ।ঘাড়ের কালো দাগ নিয়ে অস্বস্তিতে থাকেন অনেকেই।ত্বকে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তা দূর করতে উঠেপড়ে লাগেন অনেকেই। অথচ ঘাড়ের পরিচর্যাতেই সবচেয়ে বেশি অবহেলা দেখা যায়। আর এ জন্য ঘাড়ে কালো দাগ ছোপ পরে। তবে এই দাগ দূর করার জন্য দোকান থেকে কেনা বিভিন্ন কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো।এতে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে মেনে চলতে পারেন ঘরোয়া কিছু উপায়।
ঘাড় কালো হওয়ার কারণ:
ঘাড়ের এই কালো দাগ হাইপার পিগমেন্টেশনের কারণে ঘটে থাকে। মেলানিন নামক একটি হরমোন ত্বকের রঙের গাঢ়ত্বের জন্য দায়ী। বেশি পরিমাণে মেলানিনের কারণে ত্বকের রং কালো হয়ে থাকে । এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে-
- আমাদের আশেপাশের পরিবেশ অর্থাৎ দূষণ।
- সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির কারণে ঘাড়ও কালো হয়ে যায়।
- নিম্নমানের প্রসাধনীর ব্যবহার
- ওজন।
- পিসিওএস ও হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে।
- মোটা চেইন গলায় ব্যবহারের করলেও গলা ও ঘাড়ের ত্বক কালো হতে পারে।
- শরীরে আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় ত্বকের রং কালচে হয়
ঘাড়ের কালো দাগ দূর করার উপায়:
বিভিন্ন কারণে ঘাড়ের কালো দাগ হয় আর ঘাড়ের এ কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় নিম্নে আলোচনা করা হলো –
অ্যালোভেরা জেল:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা, ত্বকে পিগমেন্টেশন সৃষ্টিকারী এনজাইমের কার্যকলাপকে বাধা দেয় এবং ত্বকের কালো দাগ হালকা করে থাকে । এছাড়া অ্যালোভেরা জেল ত্বককে পুষ্ট করার পাশাপাশি, হাইড্রেটেড রাখতেও অত্যন্ত সহায়ক হয় ।
ফ্রেশ অ্যালোভেরার পাতা কেটে অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন। তারপর ওই জেল ঘাড় এবং গলায় দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্রক্রিয়াটি আপনি নিয়মিত অনুসরণ করতে পারেন।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার :
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ত্বকের PH লেভেল বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা ম্যালিক অ্যাসিডে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে।
দুই টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে চার টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিন। তারপর তাতে তুলো ভিজিয়ে ঘাড় এবং গলায় ভাল করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে দিন এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে এই প্রক্রিয়াটি প্রতিদিন করুন।
বেকিং সোডা :
বেকিং সোডা ত্বকের মৃত কোষ থেকে মুক্তি দিতে বেশ কার্যকরী। বেকিং সোডা ত্বকের ময়লা অপসারণের পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্ট করতেও অত্যন্ত সহায়ক।
প্রথমে দুই চামচ বেকিং সোডা নিয়ে তাতে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর ঘাড় এবং গলায় পেস্টটি ভাল করে লাগিয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর ভেজা হাতে এটা স্ক্রাব করে পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
আলুর রস :
আলুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে। আলুতে বিদ্যমান ব্লিচিং প্রপার্টি ত্বকের ডার্ক স্পট হালকা করে।
প্রথমে একটি ছোট আলু পিষে তার থেকে রস বের করে নিন। তারপর ওই রসে তুলো ভিজিয়ে, ঘাড়ে এবং গলায় ভাল করে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
হলুদের উপটান :
ত্বকের রঙ উজ্জ্বল এবং হালকা করতে হলুদের উপটান অত্যন্ত কার্যকরী। উপটান পিগমেন্টেশন কমাতেও সহায়তা করে এবং ঘাড়-গলার ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে।
উপটানটি তৈরি করতে ২ টেবিল চামচ বেসন, ১/২ চা চামচ লেবুর রস, সামান্য হলুদ এবং পরিমাণমতো গোলাপ জল কিংবা দুধ নিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ঘাড়ে এবং গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন এর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে দুবার এই উপটান ব্যবহার করা যেতে পারে।
দই লেবুর মিশ্রণ:
দইয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক এনজাইম যা লেবুর অ্যাসিডের সঙ্গে মিশে ত্বকে ভালো ফল দিতে পারে। তাছাড়া এই মিশ্রণটি ত্বককে পুষ্টি যোগায় এবং মসৃণ রাখতেও সহায়তা করে থাকে।
এটি তৈরি করতে দুই টেবিল চামচ দই এবং এক চা চামচ লেবুর রস নিয়ে ভালো করে মেশান। তারপর এটি ঘাড় এবং গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যাবহার করতে পারেন।
শসা:
শসার রস আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিক ভাবে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনার ঘাড় ও গলায় শসার রস ব্যবহার করুন নিয়মিত।
গোলাপজল:
গোলাপজল ঘাড় ও গলার কালো দাগ দূর করে ।
গোলাপজলের সাথে সামান্য হলুদের গুড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করতে পারেন, পেস্টটি ঘাড়ে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন।
মধু:
মধুতে থাকা উপাদান ঘাড় ও গলার ত্বক উজ্জ্বল করতে ও ময়লা দূর করে থাকে।
পরিমাণ মত মধু নিয়ে ত্বকে কিছুক্ষন ম্যাসেজ করে ১০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি ধুয়ে ফেলুন।
কমলা:
কমলার রস আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য কমলার রস ব্যবহার করতে পারেন আপনার গলা ও ঘাড়ে।
বাদাম তেল:
আমন্ড অয়েল ত্বকের যত্নে দারুণ কার্যকরী। বাদামের তেলে ভিটামিন ই এবং ব্লিচিং এজেন্ট আছে। উভয় উপাদানই একসঙ্গে ত্বকের রং উজ্জ্বল করে থাকে ।
কয়েক ফোঁটা বাদাম তেল কয়েক মিনিটের জন্য ঘাড়ে ম্যাসেজ করুন। ভালো ফল পেতে নিয়মিত ব্যবহারে করলে উপকার মিলবে।
লেবু:
লেবু রোদে পোড়া দাগ দূর করে ও ত্বক উজ্জ্বল করে থাকে । তাই আপনি এক টুকরো লেবু নিয়ে সরাসরি আপনার গলা ও ঘাড়ে ম্যাসেজ করুন এবং চাইলে গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুন :কোমরের ব্যাথা থেকে দূরে থাকা ও ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পরিশেষে :
বলা যাই যে শুধুমাত্র দূষণ বা রোদের কারণে ঘাড় বা গলার ত্বক কালো হলে এই উপায় ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু শারীরিক কোনো সমস্যা হলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিকার করতে হবে। বিশেষ করে ঘাড় বা গলার ত্বক কালো হয়ে পড়ার সঙ্গে যদি চুলকানির সমস্যা হয়। কারণ এটি ত্বকের কোনো ধরনের সংক্রমণের কারণে হতে পারে।