আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আপনার সিগারেট নিয়ে ভীষণ বিরক্ত আশেপাশের মানুষ। নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এবং অন্যদের ও ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। কিন্তু কিচ্ছু করতে পারছেন না। ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা অনেকবার করেও আবার ধরেছেন এই সিগারেট নামক মরণ নেশা। যদি আপনি কোনও একটি নেশায় অভ্যস্ত হয়ে যান তবে সেটি ছাড়তে অনেক কষ্ট হয়। এই নেশাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষকরাও অনেক গবেষণা করেছেন। তাই এই সিগারেটের প্যাকেটে ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর ভয়াবহ ছবি দেওয়া থেকে শুরু করে, নানা সতর্ক বাণীও লেখা আছে। তবু ও ধূমপান ছাড়া বড়োই কঠিন। তারপরেও যারা ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য কিছু পরামর্শ।
ধূমপান:
ধূমপান হচ্ছে তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি যা বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে শ্বাসের সাথে তার ধোঁয়া শরীরে গ্রহণের প্রক্রিয়া। সাধারণ আমরা যেকোনো দ্রব্যের পোড়ানো ধোঁয়া শ্বাসের সাথে প্রবেশ করলে তাকে ধূমপান বলে থাকি কিন্তু মূলত তামাক জাতীয় দ্রব্যাদির পোড়া ধোঁয়া গ্রহণকেই ধূমপান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকগণসহ সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত যে, ধূমপান যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার সহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ধূমপান ছাড়র উপায় :
সিগারেট ধরা যতটা সহজ, সিগারেট ছাড়া ঠিক ততটাই কঠিন। প্রতিদিনই হয়তো সিগারেট ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করেন , কিন্তু আবার সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গও করেন । তবে আপনাকে বেশ কিছু ধাপে ধূমপান বা সিগারেট ছাড়তে হবে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো –
ধূমপান ছাড়তে শক্তিশালী ব্যক্তিগত যুক্তি দাঁড় করুন:
ধূমপান ছাড়ার আগে অবশ্যই জানতে হবে কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চান । একটি ব্যক্তিগত শক্তিশালী কারণ অবশ্যই থাকা দরকার যা আপনাকে ধূমপান ছাড়তে সাহায্য করবে। হয়তো আপনি নিজেকে সবসময় তরুণ হিসেবে দেখতে চান অথবা আপনার ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে ইত্যাদি ভেবে একটি শক্তিশালী কারণ দাঁড় করান এবং সেটি ভেবে ধূমপান করা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন।
ঠাণ্ডা স্থানে যাবেন না:
যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ধূমপান ত্যাগ করবেন তাহলে ঠাণ্ডা স্থানে গেলে সেটি হয়তো আবার মাথা চাড়া দিতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেও ছাড়তে পারেন না কেবল নিকোটিনের প্রভাবে। কারণ সিগারেটের ভেতর যে নিকোটিন থাকে সেটি থেকে নেশা তৈরি হয়। একপর্যায়ে মস্তিস্ক নিকোটিন নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং বার বারই গ্রহণ করতে চায়। তাই ঠাণ্ডা স্থানে গেলে নিকোটিন গ্রহণের চাহিদা বেড়ে যায়।
লজেন্স খান, চুইঙ্গাম চাবান:
আপনি যখন সিগারেট ছাড়তে চাইবেন তখন আপনার হতাশ ও বিষণ্ণ লাগবে। তাই সিগারেটের বিকল্প কিছু ভাবুন। গবেষণায় বলা হয়ে থাকে , সিগারেটের বিকল্প হিসেবে নিকোটিন গাম, লজেন্স বা চুইঙ্গাম চাবালে বদ অভ্যাস এড়ানো কিছুটা সহায়ককাজ করে। সিগারেট ছাড়ার জন্য এখন বাজারে কিছু চুইঙ্গাম ও পাওয়া যায় যেগুলো বেশ কার্যকর। সেগুলো খেয়ে দেখতে পারেন।
পরিপূরক ওষুধ গ্রহণ:
আপনি যদি আপনার মানসিক চাপ দূর করতে সিগারেটকে অবলম্বন ভেবে থাকেন তবে ভিন্ন চিন্তা করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সিগারেটের বদলে মানসিক রোগের ওষুধ সেবন করুন ।
আশপাশের মানুষের সহায়তা নিন:
যদি আপনি ধূমপান বন্ধ করতে চান তাহলে বিষয়টি বন্ধুবান্ধব,পরিবারের সদস্য এবং অফিসের সহকর্মীদের জানান মোট কথা আপনার আশে পাশে মানুষের সহায়তা নিন এবং তাদের বলুন আপনাকে উৎসাহিত করতে। হয়তো কোনো পার্টিতে গিয়ে ভুল করে একটি সিগরেট ধরিয়েই ফেললেন তখন আশপাশের লোকজন নিষেধ করলে বিষয়টি কাজে লাগতে পারে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন:
অনেকে মানসিক চাপের ফলে ধূমপান করে থাকেন । তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। মানসিক চাপ দূর করতে নিয়মিত ম্যাসাজ করান, মনকে হালকা করতে গান শুনুন, যোগ ব্যয়ামও করতে পারেন। এগুলো আপনাকে চাপমুক্ত করে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
এলকোহল বাদ দিন:
এলকোহলও আরেক ধরনের ক্ষতিকর বস্তু ধূমপানের মতোই । তাই এলকোহল পান করাও বাদ দেন এবং এলকোহলের নেশা চাপলেই দাঁত ব্রাশ করুন বা চুইঙ্গাম চাবান।
বারবার চেষ্টা করুন :
ধূমপান ত্যাগের জন্য বারবার চেষ্টা করার কোনো বিকল্প নেই। এক বাড়ে না পারলে আপনি বারবার চেষ্টা করুন
শারীরিক পরিশ্রম করুন:
শারীরিক কাজ আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করতে সাহায্য করবে। যখন ধূমপান করতে ইচ্ছা করবে তখনি শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করুন। শারীরিক পরিশ্রমের ফলে আপনার ধূমপান করার ইচ্ছা চলে যেতে পারে এবং আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরিও দূর করবে।
উপরোক্ত উপায় গুলো ছাড়া ধূমপান থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি। আসুন জেনে নিই ধূমপান ছাড়ার কিছু উপায়-
(১) দীর্ঘদিন ধরে সিগারেট খেলে শরীরে একেবারে ভেতর পর্যন্ত নিকোটিন চলে যায় । শরীরে টক্সিন হিসেবে জমতে থাকা নিকোটিনকে ধুয়ে বার করে দিতে পানির কোনো বিকল্প নেই। ধূমপান ছাড়তে প্রচুর পানি পান করুন।
(২) সিগারেট বা ধূমপান ছাড়তে আদা খেতে পারেন। এতে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা নানাভাবে সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকে দমিয়ে দেয়। আদা চা বা কাঁচা আদা চিবিয়ে খেতে পারেন।
(৩) প্রতিদিন ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার খান কারণ নিকোটিনের মতো টক্সিনের সঙ্গে লড়াই করে এই সব উপাদান। এতে সিগারেটের নেশা কমে যেতে পারে।তাই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ ফল এবং শাকসবজি খান।
(৪) সিগারেট ছাড়তে খেতে পারেন আঙুরের রস। এটি নিকোটিনের কারণে শরীরের ভেতরে জমতে থাকা টক্সিন দূর করে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাও কমতে শুরু করে।
(৫) মধুতে থাকা ভিটামিন, প্রোটিন এবং এনজাইম শরীর থেকে নিকোটিন বের করে দেয় ও সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাকেও নিয়ন্ত্রণে করে।
আরো পড়ুন :নিজেকে সুস্থ রাখতে লিভার পরিষ্কার করার উপায়।
পরিশেষে :
বলা যাই যে , ধূমপান হচ্ছে একটি মরণ নেশা। এই মরণ নেশার প্রতি প্রবল আকর্ষণ মানুষকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।এছাড়া সিগারেট ছাড়লে অনেক রোগ থেকে মুক্ত পাবেন , রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে, রক্তের কার্বন মনোক্সাইড স্বাভাবিক থাকবে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে এবং ফুসফুস ভালো থাকবে। অতএব সিগারেট ছাড়ুন সুস্থ থাকুন।