আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল;আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমাদের কমবেশি সকলেরই পেটে ব্যথা হয়ে থাকে। পেটে ব্যথা খুবই একটি যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার। তবে বেশির ভাগ পেট ব্যথাই গুরুত্বরহয় না, দ্রুত আসে আবার দ্রুত চলে যায়। হঠাৎ করে পেটে ব্যথা হলে আমরা বেশি ঘাবরে যাই। কি করবো চিন্তায় পরে যাই। দেখা যায় অনেকেই ঔষধ খেয়ে ফেলে। কিন্তু আমরা আসলে জানি না পেটে ব্যথা কমানোর উপায়।তাই সর্বপ্রথম পেট ব্যাথা দূর করার জন্য ওষুধ না খেয়ে ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে দূর করা সবচেয়ে ভালো হয়। কেননা ওষুধের মধ্যে ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। তাই আজ আমি দ্রুত পেট ব্যাথা কমানোর উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।
পেট ব্যথার কারণ:
পেট ব্যথা একটি কমন সমস্যা। অধিকাংশ মানুষেরই এই পেট ব্যথা হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই পেট ব্যথা বেশি গুরুতর হয় না বরং স্বাভাবিক কারণে হয়ে থাকে।পেট ব্যথার ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে।নিম্নে দেয়া হলো –
গ্যাস্ট্রিকের পেট ব্যথা:
পেটে অতিরিক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হলে পেট ব্যাথা হতে পারে। এ ধরনের পেটে ব্যথায় চিনচিনে ব্যথা হতে পারে। আবার কখনো কখনো পেটে জ্বালাপোড়া করতে পারে।
অ্যাপেনডিসাইটিসের পেটে ব্যথা:
এ ধরনের পেটে ব্যথা সাধারণত খুবই তীব্র হয়ে থাকে। নাভির গোড়া থেকে তলপেট পর্যন্ত ব্যথা বিস্তৃত থাকে।
বদহজমের কারণে পেটে ব্যথা:
অস্বাস্থ্যকর এবং অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে Food Poisoning বা বদহজম হয়ে থাকে। এই বদহজম হওয়ার কারণে নাভির নিচে চিনচিনে ব্যথা করে এবং আমাশয়ের সৃষ্টি হয়।
পেটের প্রদাহজনিত রোগের কারণে পেটে ব্যথা:
সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়ার কারণে পেটের প্রদাহ জনিত রোগ হয় । এ রোগের কারণে পেটে ক্ষত তৈরি হয় এবং আলসার হয়ে থাকে। বিভিন্ন জীবাণু এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে পেটে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে।
ভাইরাসজনিত কারণ:
ভাইরাসজনিত কারণে কোন ইনফেকশন হলে পেট ব্যাথা হয়ে থাকে । তাই এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
কিডনিতে পাথরের কারণ:
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণেও পেট ব্যথা করে। এটা বুঝার মাধ্যম হলো – তলপেটে ব্যথা করবে । ধীরে ধীরে এর ব্যথা বাড়তে থাকবে। পাশাপাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে জ্বর আসতে পারে। তাই এক্ষেত্রেও ডাক্তার দেখাতে হবে।
পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায়:
পেট ব্যথা কমানোর সবচেয়ে নিরাপদ এবং উপযোগী সমাধান হচ্ছে প্রাকৃতিক এবং ঘরোয়াভাবে পেট ব্যথা কমানোর উপায়কে কাজে লাগানো।যেমন –
আদা:
প্রাচীনকাল থেকেই পেট ব্যাথা কমানোর উপায় হিসেবে আদার ব্যবহার চলে আসছে। বিশেষ করে আদায় প্রদাহ বিরোধী গুণ থাকায় পেটের যাবতীয় সমস্যায় আদা খুব ভালো কাজ করে। আদা কয়েক ভাবে খেতে পারেন ।
- সরাসরি আদা কেটে তা চিবিয়ে খেতে পারেন।
- রং চায়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- কুসুম গরম পানির সাথে পরিমাণ মতো আদার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
হিটিং প্যাড এর ব্যবহার :
আপনার যখন পেট ব্যথা করবে তখন সেই ব্যাথার স্থানে হালকা গরম হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার কাছে যদি হিটিং প্যাড না থাকে তাহলে হালকা গরম পানি একটি বোতলে নিয়ে ব্যথার ওই স্থানে ধরতে পারেন।আশা করি খুব সহজেই আপনার পেটের ব্যথা কমে যাবে।
মৌরি:
মৌরি আমাদের শরীরের অনেক ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে খুব কার্যকরী মৌরিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য যা পেটে ব্যথা উপশমের পাশাপাশি গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে থাকেন।
- এক কাপ পানিতে 2 চা চামচ মৌরি মিশিয়ে 6 থেকে 7 মিনিট জ্বাল করে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ওই পানি ঠান্ডা করে এর সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে এক থেকে দুই বার খেতে পারেন আপনার পেটের যত সমস্যা রয়েছে সব সমস্যা দূর হতে সাহায্য করবে।
জিরা:
পেট ব্যাথা কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী জিরা। তাই পেট ব্যথার কমানোর জন্য আপনি জিরা ব্যবহার করতে পারেন। আপনার পেটে যদি গ্যাস্টিকের সমস্যা বা পেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা হয় সে ক্ষেত্রে আপনারা জিরা ব্যবহার করতে পারেন।
- পরিমাণ মতো জিরা পানিতে ভেজিয়ে তারপর পানি সহ জিরা চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে পারলে আপনার পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
জোয়ান:
পেট ব্যথা কমানোর জন্য জোয়ান খুবই কার্যকরী। এন্টি ফাঙ্গাস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। পেট ব্যাথা কমানোর জন্য বদহজম দূর করার জন্য আপনি জোয়ান ব্যবহার করতে পারেন।
- অল্প পরিমাণে জিরার গুড়া, জোয়ান এবং আদা গুড়া মিশিয়ে তারপর গরম পানির সঙ্গে খেতে পারেন। প্রতিদিন রাত্রে ঘুমানোর আগে এই উপকরণগুলো আপনি খেয়ে নিন।এতে পেটের সমস্যা দূর হবে।
তুলসী পাতা :
আপনি বদহজম ও গ্যাসের জন্য তুলসী পাতা খেতে পারেন। তুলসী আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে থাকেন। তুলসী পাতাতে উজেনল নামক একটি উপাদান রয়েছে ।যা আপনার পেটে গ্যাস্টিকের পরিমাণ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
- পরিমাণমতো পানির সঙ্গে কিছু তুলসী পাতা কিছুক্ষন ফুটিয়ে নিন। তারপর ওই পানি খেতে পারেন। এছাড়া তুলসী পাতার রস করে খেতে পারেন।
কলা,পেঁপে,আপেল:
হঠাৎ করে পেট ব্যাথা শুরু হলে ঘরে কলা,পেঁপে কিংবা আপেল যেটাই থাকুক না কেন তাৎক্ষণিক খেয়ে নিবেন। এতে করে আস্তে আস্তে পেট ব্যথা কমতে শুরু করবে।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার:
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড স্টার্চ থাকায় তা হজম করতে সাহায্য করে অন্ত্রের ব্যকটেরিয়াকে সুস্থ রাখে। আর এ কারণে এটি পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
- এর জন্য এক কাপ পানিতে এক চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও এক চামুচ মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।
পানি:
যখন আপনার পেট ব্যথা করবে তখন প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। পানির মধ্যে রয়েছে নানান উপকার। আশা করি আপনার পেট ব্যাথা খুব সহজে ভালো হয়ে যাবে।
আরো পড়ুন :দুর্বিষহ দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পরিশেষে:
বলা যায় যে ,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাহিরের খাবার, ফাস্টফুড-জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া পেট ব্যথার মূল কারণ হয়ে থাকে। শুধু পেট ব্যাথা কমানোর উপায় এর জন্য নয় শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এ খাবারগুলো পরিহার করা উচিত। আমাদের মধ্যে অনেকই আছেন যারা পেট ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এমনটা করা উচিত নয়। কারণ শুরুতে পেট ব্যথা বড় কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। সুতরাং পেট ব্যথা হলে প্রথমে পেট ব্যাথা কমানোর ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করতে হবে । আশা করি এই উপায় গুলো ফলো করলে খুব সহজে আপনার পেট ব্যথা দূর হয়ে যাবে। পাশাপাশি আপনার শরীরের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।যদি এ উপায় গুলোতে কাজ না হয় তবে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।