প্রতিবেদন বর্তমান সময়ে একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।কোন বিষয় যার মাধ্যমে সহজেই সামনে ফুটিয়ে তুলা যায়। তাই আমাদের এই পোস্টে আপনাকে জানাব সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে।
বর্তমানে আমরা যারা শিক্ষিত সমাজে বসবাস করি, সকলের উচিত সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখা। আমাদের মাঝে অনেক লোক আছে যারা সহজে কিভাবে প্রতিবেদন লিখতে হয় সেই বিষয়ে জানে না
প্রতিবেদন :
ইংরেজি শব্দ Report থেকে প্রতিবেদন শব্দটি এসেছে। যার অর্থ সমাচার, বিবৃতি বা বিবরণী।যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধানের পর নির্দিষ্ট কোন সংশ্লিষ্ট বিষয় সুসংগঠিত করে বিবরণী আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করাই হল প্রতিবেদন।যেকোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণীকেই সংক্ষেপে প্রতিবেদন বলা যেতে পারে। অবশ্যই পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং সার্বিক সতর্কতা বিবেচনায় রেখে যেকোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয়।
প্রতিবেদন লেখার কারণ:
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় যেমন প্রতিবেদনের সীমা-পরিসীমা তেমনি এর উপযোগিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ বা বিবরণের জন্য প্রতিবেদনের কোনো বিকল্প নেই। কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়কে প্রতিবেদনে তদন্ত করে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষলব্ধ ফলাফল প্রকাশ করা হয় বলেই আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ সহজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিরূপণ, সমন্বয়সাধন ইত্যাদি করতে পারে। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ট পরিচালনা, নীতি নির্ধারণে প্রতিবেদন সহায়ক হয়।
প্রতিবেদনের প্রকার:
প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি বা প্রকারভেদ নেই। প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বিষয়ের বৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিবেদনের নানা বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেদন সাধারণত নিচে উল্লিখিত বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন –
- সংবাদ প্রতিবেদন
- নিয়মিত প্রতিবেদন।
- প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন।
- অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন
- দাপ্তরিক প্রতিবেদন।
- তদন্ত প্রতিবেদন।
- গবেষণামূলক প্রতিবেদন।
- সংবাদ প্রতিবেদন
- নিয়মিত প্রতিবেদন ইত্যাদি ।
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য:
যে কোন প্রতিবেদন কে বর্তমান সময়ে আদর্শ প্রতিবেদন বলা যায় না। কারণ প্রতিবেদন এর মধ্যে কয়েকটি আদর্শ না থাকলে সেটি আদর্শ প্রতিবেদন হিসেবে জায়গা দখল করতে পারে না।
তাই প্রতিবেদন লেখার আদর্শবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো যেমন-
-
নির্দিষ্ট কাঠামো
কোন প্রতিবেদন রচনাকালে একটি নির্দিস্ট কাঠামো অনুসারে করতে হয়। এতে একটি শিরোনাম, প্রাপকের নাম-ঠিকানা, আলোচ্যবিষয়ের সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি থাকবে।
-
সঠিক তথ্য
সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন রচিত হবে । কথ্যানুসন্ধানই হল প্রতিবেদনের প্রধান কাজ। সেজন্য তথ্যের যথার্থতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
-
ম্পূর্ণতা
প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পরিবেশিত হবে তা হতে হবে নির্ভুল সম্পূর্ণ ওনির্ভরযোগ্য হতে হবে ।
-
স্পষ্টতা
প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতা ও সহজলভ্য হতে হবে । যাতে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ সহজ হয়।
-
সংক্ষিপ্ততা
প্রতিবেদন হবে বাহুল্যবর্জিত । বক্তব্য হবে সুনির্বাচিত এবং কোন অনাবশ্যক বক্তব্য সংযোজিত হতে পারবে না ।
-
সুন্দর উপস্থাপনা
প্রতিবেদনের উপস্থাপন হবে আকর্র্ষণীয় ।এরবক্তব্য সহজ সরল ভাষায় প্রকাশ পায়।
-
সুপারিশ
প্রতিবেদনে উপসংহারে সুপারিশ সংযোজন করতে হবে যাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধন্ত গ্রহন করতে পারে ।
প্রতিবেদন এর বিভিন্ন অংশ:
একটি আদর্শ প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ হয় । তো চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিবেদন এর বিভিন্ন অংশ সমূহ যেমন-
- প্রারম্ভিক অংশ।
- প্রধান অংশ।
- পরিশিষ্ট অংশ।
-
প্রারম্ভিক অংশ
প্রতিবেদন সঠিকভাবে লেখার জন্য প্রতিবেদনের এর প্রারম্ভিব অংশ থাকে। প্রতিবেদন এর মূল শিরোনাম, প্রাপক এর নাম, ঠিকানা ও বিষয় সম্পর্কে সংক্ষ্তি আকারে লিখতে হবে।
-
প্রধান অংশ
প্রতিবেদন এর প্রধান অংশতে থাকবে মূল বিষয় সম্পর্কে ভূমিকা। মুল প্রতিদেন, উপসংহার ও সুপারিশ দেওয়া থাকবে।
-
পরিশিষ্ট অংশ
প্রতিবেদন এর পরিশিষ্ট এ থাকবে তথ্য নির্দেশ, বিবরণী, আনুসঙ্গিতা ও কমিটির তালিকা।প্রতিবেদন লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত থাকলে উত্তম প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব হবে।
প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা:
বর্তমান কালে সমাজ জীবনের নানা জাতের প্রতিবেদনের গুরুত্ব বেড়েছে বিচিত্র জটিলতার প্রেক্ষিতে এর উপযোগিতা মানুষের দৈনিক জীবনে ওব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদন থেকে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হওয়া যায়।আগে সাধারনত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলে অবহিত করা হত।
- প্রতিবেদনের বিশেষ গুরুত্বো ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যবসা -বানিজ্য, আইন আদালতো অন্যান ক্ষেত্রে
- প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোন বিষয়ে পরকল্পনা গ্রহন, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজে সহায়তা পাওয়া যায় ।
- বিভিন্ন খেলাধুলার খবরা খবর, আইনি জটিলতা, ইত্যাদি ও আজকাল প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
- বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গবেষনা মূলক লেখা প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ:
যে প্রতিবেদন গুলো আমরা প্রতিদিনের খবরের কাগজে দেখি তার মধ্যে প্রথম শ্রোণীর প্রত্রিকার প্রতিবেদন গুলোকে আদর্শ প্রতিবেদন বলা হয়।আপনি প্রতিবেদন লেখারপদ্ধতি সম্পর্কে বুঝতে পারবেন যদি এই প্রত্রিকার সংবাদ গুলো ভালোভাবে পড়েন ।
তাই আপনাকে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ গুলো ভালো করে পড়ে দেখতে হবে। মানে আপনাকে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এই নিয়ম গুলো কোনো ধরাবাধা নিয়ম না। কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারলে আপনি প্রতিবেদনকে সুন্দর করে তুলতে পারবেন।
তাই আপনারা আপনারা যারা সুন্দর একটি প্রতিবেদন লিখতে চান তার জন্য নিচে কয়েকটি নিয়ম দেওয়া হয়েছে-
-
হেডলাইন বা শিরোনাম
আদর্শ একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম থাকতে হবে। নজরকাড়া শিরোনাম দিতে হবে। এমন নজরকাড়া শিরোনাম দিতে হবে যাতে পাঠক পুরো প্রতিবেদনটি পড়ার ইচ্ছা জাগ্রত হয়। প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখেই পাঠকের মনে এক ধরনের কৌতুহল জাগে যে পড়তে বাধ্য হয় । আপনারা সহজ ভাষা প্রয়োগ করে হেডলাইন বা শিরোনাম এমন ভাবে দিবেন যাতে প্রতিপাদ্যটি সরাসরি বোঝা যায়। প্রতিবেদন লেখার হেডলাইন এর উদাহরণ হলো,
- শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য স্কুলে রক্তদান শিবির।
- বন্যা কবলিত মানুষের পাশে এগিয়ে এলো ক্লাব।
- রাজশাহী থেকে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনা:আহত ৫ জন
-
প্রতিবেদক-পরিচয় , স্থান
একটি প্রতিবেদনকে আদর্শ প্রতিবেদন হিসেবে গঠন করার দ্বিতীয় ধাপ হলো প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ করে দেওয়া।যখন আমরা বিভিন্ন পত্রিকা দেখি তখন শিরোনামের নিচে প্রতিবেদকের নাম বা স্টাফ রিপোর্টার বা নিজেস্ব প্রতিনিধি লেখা থাকে। মুলত এটাই প্রতিবেদকের নাম।
সংবাদপত্রে প্রতিবেদনের হেডলাইন লেখার পরে মূল লেখার প্রথমে প্রতিবেদকের নাম, পরিচয়, তারিখ, স্থান লিখতে হবে।এই গুলো কমা (,) চিহ্ন দ্বারা পৃথক করা হয়। যেমন –
- নিজস্ব সংবাদদাতা,
- জানুয়ারি, ২০২২, সাতক্ষীরা।
- ২৬ই জানুয়ারি,
-
সূচনা
প্রতিবেদনের সূচনা খুবই সংক্ষিপ্ত আকারের হবে। প্রথম দুটি বাক্যের মধ্যেই সূচনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে দিল ভাল হয় এবং সূচনার দৈর্ঘ্য দুই একটি বাক্যেই সীমাবদ্ধ হবে। মূল প্রতিবেদনের সাথেই লিখতে হবেসূচনা অংশটি,আলাদা অনুচ্ছেদ হবে না।প্রতিবেদনে আলাদা করে অনুচ্ছেদের প্রয়োজন হয় না।
-
মূল প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের সূচনায় ছোট্ট অংশটি লেখা হয়ে গেলে মূল ঘটনার বিবরণ দিতে হবে সহজ সরল ও সর্বজন-বোধ্য ভাষায়। প্রতিবেদনে ভাষার মারপ্যাঁচ ব্যবহার করা অনুচিত, কারণ এই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয় খবরের কাগজের সাধারণ পাঠকদের জন্য।
-
ঘটনার বিবরণ
ঘটনার বিবরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি লিখতে হবে তা হল:
ঘটনাটির স্থান, কাল, কোথায়, কবে কখন এই ঘটনাটি ঘটল তা লিখতে হবে।যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে আর আশেপাশে বিখ্যাত স্থান থাকলে তা লিখতে হবে। ঘটনাটির সম্পূর্ণ কার্য-কারণ অর্থাৎ একটি ঘটনা কেন ঘটল, ঘটনার কারণ জানা থাকলে তা সরাসরি লিখতে হবে।ঘটনার পিছনে একাধিক সম্ভাব্য কারণ থাকলে প্রতিটি কারণের উল্লেখ করতে হবে।
-
ঘটনার ফলাফল
ঘটনার ফল ভালো বা মন্দ, দুইই হতে পারে। দুই প্রকার ফলই বিস্তারিত জানাতে হবে।এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য কিছু তথ্য দিতে হবে এবং তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের সামঞ্জস্য থাকা খুবই জরুরি।স্থানীয় মানুষের মতামত বা প্রত্যক্ষদর্শীর মতামত ঘটনা সম্পর্কেঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । স্থানীয় মানুষ অথবা প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্যপ্রতিবেদনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্যকোটেশন হিসাবে দেওয়া যায়।
-
প্রতিবেদক নিজের মূল্যায়ন
প্রতিবেদনের শেষে সংক্ষিপ্ত আকারে ২-৩ লাইনের মধ্যে নিজের মূল্যায়ন যোগ করতে হবে।কখনোপাঠকদের উপর চাপিয়ে দিবেন না প্রতিবেদনের মতামত ।প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হবে প্রতববেদনের মাধ্যমে পাঠকদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, মতামত যেন গড়ে তুলতে পারে।
পরিশেষে:
বলা যায় যে পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ, গবেষণা এবং সার্বিক সতর্কতা বিবেচনায় রেখে যেকোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয়। আমাদের আর্টিকেল থেকে জ্ঞান নিয়ে আপনারা একটি সেরা প্রতিবেদন রচনা করতে সক্ষম হতে পারবেন।