জীবনে চলার পথে আমাদের সকলেরই কোনো না কোনো প্রয়োজনে প্রত্যয়ন পত্রের দরকার হয়। কেননা প্রত্যয়ন পত্র ব্যক্তির দাখিল করা নথিপত্রের সত্যতা প্রমাণ করে। প্রত্যয়নপত্র মূলত কোন একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। প্রত্যায়ন পত্র হলো আপনার নিজের চারিত্রিক আচার-আচরণ ইত্যাদির সনদপত্র।
একজন মানুষের চারিত্রিক সকল বিষয় প্রত্যয়ন পত্রের মধ্যে উল্লেখ করা থাকে। এছাড়া কোন একটি প্রতিষ্ঠান প্রত্যয়ন পত্রের মাধ্যমে আপনি কোথাও সুপারিশ করতে পারেন।
প্রত্যয়নপত্র:
প্রত্যয়ন পত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Attestation. প্রত্যয়ন পত্র মূলত এক প্রকার সনাক্তকারী সার্টিফিকেট, যার সাহায্যে কোনো ব্যক্তির বিশেষ বৈশিষ্টকে সত্যায়িত করা হয়।একটি প্রত্যয়ন পত্রের মধ্যে একজন মানুষের চারিত্রিক সকল বিষয় উল্লেখ করা থাকে। প্রত্যয়ন পত্র নানা ধরনের কাজের দলিল হিসেবে সাক্ষ্য বহন করে। প্রত্যয়ন পত্র বলতে কোন একটি বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিমূলক সত্যায়ন করা বোঝায়।
অর্থাৎ,কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কোন একটি বিষয়ে কোনো ধরনের আপত্তি নেই এমনটা বোঝানো হয়। আবার কোনো কোনো সময় নির্দিষ্ট বিষয়ে উক্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা বোঝায়।প্রয়োজন ও প্রত্যয়নকারীভেদে প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম বাংলায় কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে থাকে। আমাদের দেশে কাজের ভিন্নতা অনুসারে বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয়ন পত্র প্রচলিত রয়েছে।
প্রত্যয়ন পত্রের ধরনের :
একটি প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম কেমন হবে, তা নির্ভর করে কোন ধরনের প্রত্যয়ন দেয়া হচ্ছে, তার ওপর। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী কয়েক রকম প্রত্যয়ন পত্র দেয়া হয়। যেমন-
- চারিত্রিক প্রত্যয়ন পত্র
- জাতীয়তার প্রত্যয়ন পত্র
- মৃত্যুর প্রত্যয়ন পত্র
- উত্তরাধিকার প্রত্যয়ন পত্র
- মুক্তিযোদ্ধা মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- চাকরির প্রত্যয়ন
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র
- বেকারত্বের প্রত্যয়ন পত্র
- কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র
- উপজাতি মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- ভুমিহীন মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- বিবাহিত মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- এতিম মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- অবিবাহিত মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
- পুনঃর্বিবাহ মর্মে প্রত্যয়ন পত্র
প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজনীয়তা:
আমাদের জীবনে চলার পথে বা বিভিন্ন কর্মকান্ডে প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।এজন্য প্রত্যয়ন পত্র সম্পর্কে জানা উচিত। প্রত্যয়ন পত্র কে আমাদের জীবেনর একটি অংশ বলা চলে। এটি আমাদের জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে।
প্রত্যয়ন পত্র ব্যক্তির সামাজিক,প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত জীবনের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত । যেমন ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয়ের দলিল জন্ম সনদ তেমনি ভাবে স্কুল,কলেজ থেকে প্রাপ্ত প্রত্যয়ন পত্র ব্যক্তি ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট,সেটির দলিল ।
ব্যক্তির জীবনে স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে,এস এস সি পাশের পর কলেজ ভর্তি ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ইস্যুকৃত প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন পড়ে।অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে প্রদাণ করা প্রত্যয়ন পত্রটি হলো ছাত্রত্বের দলিল স্বরুপ।
এছাড়াও,কোন কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য পূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পাশের পর প্রত্যয়ন পত্রের গুরুত্ব পরবর্তী জীবনে আরো বেশি বৃদ্ধি পায়।বিদেশে স্কলারশীপের আবেদন,চাকরির পরীক্ষা এমন কি বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য ও জন্ম সনদ,চারিত্রিক সনদ,অবিবাহিত সনদ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদ,নাগরিকত্বের সনদ প্রভৃতি গুরুত্ব পূর্ণ সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হয়।
এছাড়া প্রত্যয়ন পত্রের দরকার হয় কর্মস্থল পরিবর্তনের জন্যেও । কোন ব্যক্তির তার বর্তমান কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কোথাও যোগদানের সময় প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হয়।এক্ষেত্রে, ব্যক্তি তার পেশাগত সনদ হিসেবে কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র দেখাতে পারেন। এ ধরণের পেশাগত সনদ মূলত ব্যক্তির কোন কার্যে কর্ম অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রমাণ পায় ।
তাই, কোনো ব্যাক্তিকে তার পেশা প্রমানের জন্য কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বরাবর মৌখিক আবেদনের মাধ্যমেই কোম্পানির প্রত্যয়ন পত্র পাওয়া যায়।
এছাড়াও, বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে চারিত্রিক ও নাগরিক সনদ পত্র দেখানোর প্রয়োজন হয়। অফিসের বড় কর্তা হিসেবে যেমন প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম জানতে হবে, তেমনি নতুন অফিসে জয়েন দিতে হয়তো আপনাকেও কখনো না কখনো প্রত্যয়নে পত্রের জন্য আবেদন করতে হতে পারে।
সব ধরনের প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম:
সাধারণত প্রত্যয়ন পত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারে ওয়ার্ড ফাইলে অথবা একটি নির্দিষ্ট প্যাডে পূর্ব থেকেই ফরম্যাট করা থাকে। প্রয়োজন একটি অফসেট পেপারে লিখে সিল মোহর ও স্বাক্ষর দিয়েও প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা যেতে পারে। প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়মাবলী, প্রত্যয়ন পত্র লেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা উচিতঃ
- প্রত্যয়ন পত্র লেখার ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, প্রত্যয়ন পত্রের শিরোনামে অবশ্যই “প্রত্যয়ন পত্র” লেখাটি উল্লেখ থাকতে হবে।
- যে ব্যক্তির নামে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা হবে তার পূর্ণ নাম ও ঠিকানা উল্লেখ থাকতে হবে ।
- প্রত্যয়ন পত্র এমন ভাবে প্রত্যয়ন পত্রের ভাবার্থ প্রকাশ করতে হবে যেন যে কেউ পড়লে প্রত্যয়ন পত্র টি ভালোভাবে বুঝতে পারে।
- প্রত্যয়নপত্রে অবশ্যই তথ্য প্রদানকারীর সীল মোহর ও স্বাক্ষর থাকতে হবে।
- প্রত্যয়নপত্র প্রদানকারী যদি কোন ব্যক্তি হন তাহলে তার সীল মোহর ও স্বাক্ষর অথবা যদি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করা হয় তাহলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সীল ওস্বাক্ষর থাকতে হবে।
প্রত্যয়ন পত্রের ফরমেট :
প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে এতক্ষণ আমরা জানলাম। বোঝার সুবিধার্থে নিচে একটি প্রত্যয়ন পত্রের নমুনা দেয়া হল। ফলে আপনারা প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারবেন।
চারিত্রিক সনদপত্র
এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে ……………………………………………………………………………………………………………
পিতাঃ ………………………………………., মাতাঃ …………………………………………………গ্রাম/মহল্লাঃ …………………………., ডাকঘরঃ ……………………… কোড নংঃ ………………. ওয়ার্ডঃ …………………………………., ইউনিয়নঃ …………………….., থানাঃ ……………….. উপজেলাঃ ………………………….., জেলাঃ …………………, আমার নিকট সে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। আমার জানামতে কোন রাষ্ট্র সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নয়। তার স্বভাব ও চরিত্র ভালো। আমি তাহার সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও মঙ্গল কামনা করছি।
তারিখঃ …………………..
স্বাক্ষর
সিলমোহর
আরো পড়ুন :ঔষধ হিসেবে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা।
পরিশেষে:
বলা যাই যে ,বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের সামাজিক, ছাত্রজীবন বা কর্মজীবনের প্রত্যায়নপত্রের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মৌখিকভাবে আবেদনের মাধ্যমে প্রত্যায়ন পত্র উত্তোলন করা যায়। তবে বিভিন্ন সময় প্রত্যয়নপত্র উত্তোলনের জন্য আমাদের প্রত্যয়ন পত্রের জন্য আবেদন পত্র লিখতে হয়। সকলের প্রত্যয়ন পত্রের জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম জেনে রাখা উচিত। আশাকরি আপনারা প্রত্যয়ন পত্র,প্রত্যয়ন পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে এই আর্টিকলে জানতে পেরেছেন।