আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। বর্তমানে দেশের বাজারে চাকরি যেন সোনার হরিণ। ভালো বেতনের একটি চাকরি পাওয়ার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রি ও দক্ষতা। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতার সবার আগে প্রয়োজন হয় । দেশে অথবা দেশের বাইরে প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা মানুষের কদর দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান কর্মী সংখ্যা কমিয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে ইচ্ছুক হচ্ছে ।
আধুনিকতার এই যুগে মানুষ যেসব পেশায় সবচেয়ে বেশি নিযুক্ত হচ্ছে তারমধ্যে প্রযুক্তি অন্যতম। এই পেশাতে যেমন মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই তৈরি হয়েছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। আপনিও যদি আইটি সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চান কিংবা পড়াশোনা শেষে সফলতার সাথে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবেন তবে এই লেখাটি আপনাকে সাহায্য করবে।
সফল ক্যারিয়ার গড়তে যেসব বিষয় জানা জরুরি :
এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না জীবনে সফল হতে চান না । স্ব-উন্নয়নে মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে ব্যক্তি ও কর্মজীবনে ইতিবাচক ফলাফল আসে। অনেকে দ্রুত সময়ে ক্যারিয়ারের উন্নতি করতে পারেন আবার অনেকেরই সময়ের প্রয়োজন হযে থাকে। কারণ তারা জানেন, প্রতিযোগিতা সব সময়ই থাকে। তাই তারা সফল হওয়ার জন্য যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং একদিন জীবনে সফলতা লাভ করেন।
কর্মজীবনের জন্য সুকৌশল পরিকল্পনা:
সুকৌশল ক্যারিয়ার গড়ার প্ল্যান তৈরি করতে সময় নিন। সূক্ষ্ম লক্ষ্য এবং নিজের ক্যারিয়ার গড়ার প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করুন এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। আলোচনা বা পরামর্শ দেয়ার মতো কেউ না থাকে, তবে আপনার কাজ বা ক্যারিয়ার সাথে সংযুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান বা দলের সাথে আলোচনা করতে পারেন । এতে করে আপনি আপনার ক্যারিয়ার গড়ার প্ল্যানটি ঠিক না ভুল বা কোন পরিবর্তন প্রয়োজন কি না তা জানতে পারবেন।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন:
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য কর্মজীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কর্মজীবনে উদ্যমী হতে সাহায্য করে। অনুপ্রেরণামূলক বই, তথ্যচিত্র, টকশো এর আলোচনা বা পডকাস্ট সহ আপনার মানসিক সুস্থতার জন্য যে বিষয়গুলো ইতিবাচক তা গ্রহণ করা উচিত।
একটি ইতিবাচক সমাজের অংশ হওয়া:
সবসময় ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক বা যাত্রা ধরে রাখুন যা আপনার ক্যারিয়ার সাফল্যের দিকে একদিন এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইতিবাচক মানুষের সাথে সফল ক্যারিয়ার লাভের জন্য ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা বা পরামর্শ করতে হবে ।
ইন্টারভিউ প্রসেস আয়ত্ত করা:
আপনার ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ইন্টারভিউ ফরম্যাট নিয়ে গবেষণা করবেন এবং সেই অনুযায়ী ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন। ইন্টারভিউ অনুশীলনের মাধ্যমেই ভালো করা সম্ভব হয়। আপনার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক ইন্টারভিউ এর সুযোগ নিতে পারেন ।
ইন্টারভিউ এর উদ্দেশ্য সাধনের উপায়:
প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ইন্টারভিউ ডিব্রিফিং সুযোগের সুবিধা নিতে পারেন । সংগঠনের যে সকল প্রতিভা রয়েছে তা অনুসন্ধান করুন এবং দক্ষতা মূল্যায়নের দক্ষতা অর্জনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হিসাবে গ্রহণ করতে পারেন ।
চ্যালেঞ্জের জন্য ব্যক্তিগত পরামর্শ:
সুকৌশল ক্যারিয়ার গড়ার প্ল্যানকে সফল করার জন্য একজন ব্যক্তিগত পরামর্শক অত্যাবশ্যক হয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাথে সাথে কাজে মনোযোগী হওয়া এবং নিজেকে কাজের নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানো পাশাপাশি ভালো আচরণ করার মাধ্যমে সকল চ্যালেঞ্জ পার করা সম্ভবহয় ।
অনবোর্ডিং প্রক্রিয়া নেভিগেট করুন:
আপনার কাজের টাইমলাইন, সিস্টেম এবং বাড়ি থেকে কাজে আসার পরিকল্পনাসহ প্রতিষ্ঠানের অনবোর্ডিং প্রক্রিয়া বুঝতে আপনার ব্যক্তিগত পরামর্শকের সাথে আলোচনা করে নিন । একটি স্বাভাবিক অনবোর্ডিং অভিজ্ঞতার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রযুক্তির সাথে নিজেকে পরিচিত করে নিন ।
কৌশলগত নেটওয়ার্কিং:
বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং অনলাইন নেটওয়ার্কিং উভয় ক্ষেত্রেই নিযুক্ত হতে পারেন। কাজে নেটওয়ার্কিং বাড়ানো এবং আপনার সংযোগ এবং সম্ভাব্য সুযোগগুলো বাড়ানোর চেষ্টা করবেন ।যে কোম্পানির জন্য আপনি কাজ করেন তাদের উদ্দেশ্যে এমন কিছু করতে হবে যা আপনি বিশ্বাস করেন। ধরুন কোনো একটা কোম্পানি খাবার উৎপাদন করে থাকে । তাহলে তাদের কাছে এমন কিছু প্রযুক্তিগত কৌশল উপস্থাপন করতে হবে যা গ্রাহকদেরকে খাবার পেতে সাহায্য করবে। প্রযুক্তিগত দিকে ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রতিনিয়ত এমন চিন্তা করতে হবে যা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান তৈরি করে পারে এবং এটি দ্বারা গ্রাহকরা উপকৃত হয় ।
সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন :
অনেকসময় দেখা যায় গ্রাহকদের সমস্যাগুলো সুস্পষ্ট না। যে কারণে কাজ করছেন সেই সমস্যাগুলো যদি আপনি ভালোভাবে না জানেন তাহলে তা সমাধান করা একটা অন্ধকার রাস্তায় পথ চলার মতনই কঠিন কাজ হবে। সেজন্য সমসাময়িক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সমাধানের জন্য আপনাকে আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আইটি সেক্টরে কাজ করার জন্য ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা দক্ষতার পরিচয় দেয়।
নিরবচ্ছিন্নভাবে শিখতে থাকা:
নতুন কাজ বা স্কিল শিখার জন্য সময় বের করতে হবে । আজকাল অনলাইনে অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে যেখানে নতুন কাজ বা স্কিল শেখার পাশাপাশি সার্টিফিকেটও প্রদান করে । যা পরে আপনার ক্যারিয়ারে সফল হতে সাহায্য করবে ।
আত্মবিশ্বাসই মূল:
আপনার আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রতি আস্থা রাখতে হবে এবং তা কাজে এবং ব্যবহারে তুলে ঘরটা হবে । শুধু ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা থাকলেই হবে না, পাশাপাশি নিয়মানুবর্তী হওয়াটাও অনেক জরুরি।
উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
কর্মস্থলে ভালো কাজের পাশাপাশি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। নিজের উদ্ভাবনী ধারণাগুলো কাজে উপস্থাপন করতে হবে এবং তাদের প্রদর্শন করতে হবে যে কীভাবে তারা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ এবং স্বল্পমেয়াদি সাফল্যে অবদান রাখতে পারে।
গ্লোবাল ফ্রেন্ডশিপ:
কাজে সকল সহকর্মীদের সাথে বৈচিত্র্যময় সম্পর্ক তৈরি করতে হবে । বৈচিত্র্যময় প্রফেশনাল সম্পর্কগুলো হতে পারে আপনারা ক্যারিয়ারের বড় কোন সুযোগ। কাজে আপনার আত্ম-সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে আপনি আপনার ক্যারিয়ার সফল করার সুযোগ বাড়াতে পারবেন। এছাড়া আপনি যে কাজগুলো করে সফলতা পেয়েছেন সেই কাজ গুলো অন্যদের করতে উৎসাহিত করতে পারেন । অনেকেই জানেন না জীবনে কীভাবে কাজ করলে সফল হওয়া যাবে। তাই আপনি যদি আপনার সফলতার দ্বারা অন্যদের পথ দেখান তাহলে এই সেক্টরে যে আপনি একজন দক্ষ মানুষ তা সবাই বিশ্বাস করবে।
একটি সলিড ব্যাকআপ প্ল্যান তৈরি করুন:
আপনার আদর্শ অনুসরণ করে কাজ করার সময়, সম্ভাব্য পরিবর্তন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন, বা অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো নেভিগেট করার জন্য একটি ব্যাকআপ পরিকল্পনা তৈরি করে রাখতে পারেন । স্থিতিস্থাপকতার জন্য একটি পুনরুদ্ধারের কৌশল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন:
আপনার কর্মজীবনের যাত্রায় আপনি যে বৈশ্বিক বৈচিত্র্য, স্বাধীনতা এবং শান্তি অনুভব করেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত । জীবনে কোন কিছু এমনিতেই আসে না, কর্মস্থলে যা আসবে তা কৃতজ্ঞতার সাথে গ্রহণ করেন যা আপনার ক্যারিয়ার সফল সহায়তা করবে।
ক্যারিয়ার উপভোগ করুন:
সবশেষে ক্যারিয়ারেসফল হওয়ার প্রক্রিয়াটি উপভোগ করুন। আপনি যদি বিপত্তির সম্মুখীন হন, একটি ইতিবাচক মানসিকতার সাথে তাদের কাছে যান, অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন এবং সাফল্যের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
পরিশেষে :
বলা যাই যে ,বর্তমানে প্রযুক্তির দুনিয়াতে নিজেকে দক্ষ হিসেবে পরিচিত করতে অবশ্যই আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে। সময়ের মূল্য দিতে হবে এবং যথাযথভাবে নিজের টার্গেট পূরণ করার লক্ষে কাজ করতে হবে। আপনি যদি টার্গেট থেকে সরে যান এবং মনে করেন পরবর্তীতে তা পূরণ করবেন তাহলে এই প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে পড়বেন। এই সেক্টরে ভালো করতে গেলে অবশ্যই উপরের বিষয় গুলো মেনে কাজ করতে হবে, তাহলেই সফল হওয়া সম্ভব হবে।