আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন।  আল্লাহর এক অঘোম বিধান হলো মৃত্যু। মৃত্যুকে অস্বীকার করা কিংবা মৃত্যু থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো পথ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন , প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে আবার প্রত্যাবর্তিত হবে।

কবর জিয়ারত করলে হৃদয় বিনম্র হয়ে যাই। স্মরণে আসে মৃত্যুর কথা। আখিরাতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। গুনাহ ও অন্যায় থেকে তওবা করার মন মানসিকতা তৈরি হয়। সৎ-আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে । কবর জিয়ারত রাসুল (সা.) সুন্নতও বটে।

কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে – এতে পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ করাই । ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের কোনো অনুমতি ছিল না। হাদিসে রাসুল (সা.)বলেছেন , ‘আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, কবর জিয়ারত দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৭১)

যেভাবে কবর জিয়ারত করবেন:

কবরস্থানে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম জিয়ারতের দোয়া পড়তে হয় ।এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি পড়তে হয় । তার পর মৃতের বা কবরবাসীর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন।

কবরকে সামনে রেখে দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত নয়। তাই কবরকে পেছনে রেখে কিংবা কবরের দিকে পিঠ দিয়ে এরপর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা যাই । আবার কেউ চাইলে হাত না তুলে মনে মনেও দোয়া করতে পারবে । (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৩৫০, কিতাবুল কারাহিয়্যা) ২৪৯)

কবর জিয়ারতের দোয়া:

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যেতেন সেই সময় যে দোয়াটি তিনি পাঠ করেন তা হচ্ছে –

আরবি উচ্চারণ:

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

বাংলা উচ্চারণ : 

‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আছার।’

অর্থ : 

হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের আগে তোমরা কবরে গেছ এবং আমরা পরে আসছি। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১০৫৩)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবর জিয়ারতে গিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেন ,

আরবি উচ্চারণ:

السَّلامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤمِنينَ وإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاحِقُونَ     

বাংলা উচ্চারণ :

 আসসালামু আলাইকুম দার ক্বাওমিম মুউমিনি না ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুনা। অর্থ : মুমিন ঘরবাসীর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবো। (সহিহ মুসলিম : ২৪৯)

কবর জিয়ারতের ফজিলত:

হাদিসে কবর জিয়ারতের ক্ষেত্রে কিছু সুরার বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি দরুদ শরিফের ফজিলতের কথাও বলা হয়েছে । তাই দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ও অন্য যেসব সুরা সহজ মনে হয় সেগুলো সওয়াবের আসাই পড়া হয় ।

কবর জিয়ারতের উপকারিতা:

কবর জিয়ারতের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যে কবর জিয়ারত করে থাকে সে  সওয়াব লাভ করে। এর মাধ্যমে জীবিত আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। ব্যক্তিজীবনে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের যে তাড়া সেই  অনুভব সদাজাগ্রত থাকে। কবরবাসীদের হক আদায় করা হয় । এইসব কবর জিয়ারত করার অন্যতম উপকারিতা। আবু উসাইদ মালিক ইবনে রাবিয়া সায়িদি (রা.) বলেছেন , ‘একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় সালামা গোত্রের এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসাকরলেন , হে আল্লাহর রাসুল! পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার কোনো সুযোগ আছে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ? তুমি তোমার পিত মাতার জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করবে। তাদের অসিয়ত পুরা করবে। তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং তাদের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৫২)

দোয়ার জন্য কবরস্থানে যাওয়া আবশ্যক নয়: 

মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে চাইলে কবরস্থানে যাওয়া আবশ্যক নয়। যে কোনো স্থান থেকেই দোয়া করা যায়। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায় তখন তার আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। 

তবে তিনটি বিষয় ব্যতিক্রম -সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়েছে এবং এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৮৮০)

হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ:

কবর জিয়ারত শেষে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়েজ আছে, তবে জরুরী নয়। তাই এ সময় কেউ দোয়া করতে চাইলে কবরকে পেছনে বা পাশে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত উঠিয়ে দোয়া করতে পারবে । 

হাদিস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বাকী’ কবরস্থান জিয়ারত শেষে তিনবার হাত উঠিয়ে ছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদীস : ৯৭৪) 

সহিহ মুসলিমের ভাষ্যগ্রন্থ ‘আলমিনহাজে’ ইমাম নববী (রহ.) বলেন, এই হাদিস দ্বারা হাত উঠিয়ে দোয়া করা মুস্তাহাব বলে প্রমাণিত হয়। (আলমিনহাজ, শরহু মুসলিম, নববী ৭/৪৩)

আরেকটি হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন (রা.) এর দাফনের কাজ শেষ করার পর কিবলামুখী হন, এবং উভয় হাত উঠিয়ে তার জন্য দোয়া করেন যে, ইয়া আল্লাহ, আমি তার উপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। (হিলয়াতুল আউলিয়া ১/১২২; ফাতহুল বারী ১১/১৪৮)

পরিশেষে :

 বলা যাই যে, গোরস্থানে গিয়ে সম্মিলিত ভাবে দোয়া মোনাজাত করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সম্মানিত সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত নয়। কবর জিয়ারতের সুন্নতি নিয়ম হলো , প্রত্যেক ব্যক্তি যার যখন সুবিধা হবে তখন কবরের সন্নিকটে গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দুই হাত উত্তোলন করে অথবা না করে মৃত ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করতে পারবে । এর আগে কবরে গিয়ে সালামের সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে।

Write A Comment