আসসালামু আলাইকুম আশা করি অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের গ্রাহকদের দেয়া একটি বিশেষ সুবিধা । এটি দিয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি বিভিন্ন সেবার জন্য ঋণ নেয়া যায়। তবে সেই ঋণ অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় । কেননা, যদি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই অর্থ ফেরত না দেয়া হয়, তাহলে গ্রাহককে গুণতে হয় ‍সুদ। কাজেই সর্তকতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে এই কার্ড।

কোনো কারণে সুদ দিতে দেরি করলে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম বুথ থেকে টাকাও তোলা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হারে সুদ দিতে হয়। চাইলে চেক দিয়েও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা যায়। তবে ক্রেডিট কার্ড মূলত কেনাকাটা করার জন্যই গ্রাহকেরা বেশি ব্যবহার করেন। 

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে যে কেবল ঋণ নেয়া যায়, তা নয়, বিভিন্ন উপলক্ষে এই কার্ডগুলো গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে থাকে। রিওয়ার্ড পয়েন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ডিসকাউন্ট এবং গিফট কার্ডের ছড়াছড়ি থাকলেও সঠিক উপায়ে এই কার্ড ব্যবহার না করা হলে কার্ড ধারক পড়তে পারেন নানা সমস্যায়। তাই অবশ্যই এই কার্ড ব্যবহারে করতে হবে সাবধান। কাজেই কীভাবে সাবধানতার সঙ্গে এই কার্ড ব্যবহার করবেন, জেনে নিন।

 ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা সহজ। কিন্তু আগেই দুইটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।

  •  নিজের সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করবেন না।
  • প্রতি মাসে নিজের ব্যালেন্স সময়মতো পরিশোধ করুন।

 তাছাড়া ক্রেডিট স্কোর কীভাবে কাজ করে তা একবার বুঝতে পারলে, তা আপনাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার ক্রেডিট স্কোর নিয়ন্ত্রণ এবং বৃদ্ধি করতে সহায়তা করতে পারে।

ক্রেডিট কার্ড:

ক্রেডিট কার্ড হলো একটি ছোট প্লাস্টিকের কার্ড যাতে শনাক্তকরণের একটি মাধ্যম থাকে, যেমন একটি স্বাক্ষর বা ছবি, যা এটিতে নামযুক্ত ব্যক্তিকে একটি অ্যাকাউন্টে পণ্য বা পরিষেবা চার্জ করার অনুমতি দেয়, যার জন্য কার্ডধারককে পর্যায়ক্রমে বিল করা হয়।

 ১৯২০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়েছিল , যখন তেল কোম্পানি এবং হোটেল চেইনগুলির মতো পৃথক সংস্থাগুলি কোম্পানির আউটলেট গুলিতে কেনাকাটার জন্য গ্রাহকদের কাছে এই কার্ড ইস্যু করা শুরু করেছিল।  এই সিস্টেমের অধীনে, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি তার কার্ডধারীদের একটি বার্ষিক ফি নেয় এবং তাদের পর্যায়ক্রমিক ভিত্তিতে-সাধারণত মাসিক বিল দেয়। সারা বিশ্বে সহযোগিতাকারী ব্যবসায়ীরা ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারীকে মোট বিলিংয়ের 4-7 শতাংশের মধ্যে একটি পরিষেবা চার্জ প্রদান করে।

সঠিক ক্রেডিট কার্ড নির্বাচন: 

ক্রেডিট কার্ড থাকলে নগদ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করা যায়।বাজারে অনেক রকমের ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়। কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব বাছাই করা মুশকিলহয়ে যায় । এক্ষেত্রে অনেকেই এজেন্ট বা বন্ধুবান্ধবের উপর ভরসা করেন। সেটা ঠিক নয়। নিজের চাহিদা বুঝতে হবে সবার আগে। কী জন্য ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার দরকার পড়ছে, সেটা বুঝে সেই অনুযায়ী সঠিক ক্রেডিট কার্ড নির্বাচন করতে হবে।

কারা পাবেন ক্রেডিট কার্ড:

একজন ব্যক্তি ক্রেডিট কার্ড নিতে পারবে কি পারবে না-সেটা নির্ধারণ করে ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র, মাসিক আয় বা বেতন এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনা করে। ব্যাংকভেদে ক্রেডিট কার্ডের জন্য ভিন্ন হলেও সাধারণ কিছু শর্ত রয়েছে, যা সব ব্যাংকের জন্যই প্রযোজ্য হয় ।

ব্যাংক ভেদে শর্তাবলি পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি যদি এসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো ব্যাংকে আবেদন করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড পেতে গ্রাহককে প্রথমেই আবেদন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানের চাহিদামতো তথ্য পূরণ করে ছবিসহ জমা দিতে হবে।

আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, সেখানে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন হতে হবে, সেটির পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন । নির্দিষ্ট পরিমাণের কম বেতন পেলে ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। তবে প্রতিটি ব্যাংকের জন্য লিমিট নিয়ে আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে।

সময়মতো ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করুন:

একবার একটি ক্রেডিট কার্ড নেয়া হলে সেটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা অত্যাবশ্যক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো সময়মত পেমেন্ট পরিশোধ করা। কাজেই সব সময় আপনার বিল সময়মত পরিশোধ করুন। দেরি করে অর্থ পরিশোধের কারণে আপনার যেমনি সুদের চার্জ ও বিলম্বিত ফি গুণতে হবেই, তেমনি এটি আপনার ক্রেডিট ইতিহাসকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। পাশাপাশি আপনার ক্রেডিট স্কোরও কমাতে পারে ব্যাংক।

 আপনি যদি একেবারে পুরো বিল নাও পরিশোধ করতে পারেন, তাহলে কমপক্ষে সর্বনিম্ন বিল পরিশোধ করুন। ক্রেডিট কার্ডের চড়া সুদের হার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এবং ক্রেডিট স্কোর ঠিক রাখতে আপনার বিল পরিশোধ করা আবশ্যক ।

ক্রেডিট সীমার অনুপাত:

একই সঙ্গে ক্রেডিট সীমার তুলনায় কম ব্যালেন্স বজায় রাখা অপরিহার্য। ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও হচ্ছে ক্রেডিট লিমিটের সঙ্গে আপনার ব্যালেন্সের অনুপাত। এটি ৩০ শতাংশের নিচে রাখা উচিত। এটি বেশি হলে বা আপনি কার্ড বেশি ব্যবহার করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বা ক্রেডিট ইতিহাসে নেতিবাচক প্রভাব পরবে । এ অনুপাত কম রাখা শুধু যে আপনাকে আপনার ঋণ পরিশোধ পরিচালনায় সাহায্য করে তা নয়, বরং এটি আপনার ক্রেডিট ইতিহাসেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা:

ক্রেডিট কার্ড হলো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি বিশেষ সুবিধা।

দ্রুত লেনদেন করা যায়।

  • পুরস্কার পয়েন্ট সুবিধা পাওয়া যায়।
  • নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি থেকে মুক্তি।
  • বর্তমানে প্রচলিত ডেবিট কার্ডের চেয়ে ক্রেডিট কার্ডের সুরক্ষা অনেক বেশি৷

ক্রেডিট কার্ডের অসুবিধা:

ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহারে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে । 

  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে ঋণের ফাঁদে পড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • লুক্কায়িত ব্যয় হয়।
  • ভুল কার্ডে ঋণের বোঝা বাড়ার আশঙ্কা থাকে৷

আরো পড়ুন :একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করার সঠিক নিয়ম।

পরিশেষে :

বলাযায় যে ,ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার আমাদের জীবন যাত্রা অনেক সহজ করেছে। তবে এটি সঠিক ভাবে ব্যাবহার না করলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।  অনেকেই অগ্রিম নগদ দেওয়ার বদলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন। এটা মারাত্মক ভুল। কারণ এর মানে ক্রেডিট কার্ড প্রদানকারীর কাছ থেকে গ্রাহক উচ্চ সুদে টাকা ধার করছেন।তাই ক্রেডিট কার্ড বুজে শুনে ব্যবহার করতে হবে। 

Write A Comment