ক্যাস্টর অয়েল এক ধরনের উদ্ভিজ্জ তেল। এটি ক্যাস্টর অয়েল প্ল্যান্টের বীজ থেকে তৈরি করা হয়। প্রাচীনকাল থেকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার রয়েছে ।এটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ত্বকের নানা সমস্যাতেও এই তেল বেশি কার্যকরী।বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এটি। ক্যাস্টর অয়েল খুব ভারী এবং স্বাদেও ভালো নয়। তাই অন্য খাদ্য উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হয় ।তবে ক্যাস্টর অয়েল ত্বকের ক্ষেত্রে যেমন উপকারি, তেমন এর কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও আছে। তাই খুব সাবধানে এটি ব্যবহার করা উচিত। চলুন জেনে নেই, ক্যাস্টর অয়েলের ব্যাবহার সম্পর্কে-
ক্যাস্টর অয়েল-এর উপকারিতা:
আঠালো ক্যাস্টর অয়েল যেমন চুলের যত্নে অনন্য, তেমনি ত্বকের যত্নেবেশ কার্যকর।
১) হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট-এ ভালো উপকার দেয় এই ক্যাস্টর অয়েল।
২) চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল ঘন করতেও হেল্প করে করে থাকে এই তেল ।
৩) চুল ও স্ক্যাল্পের ন্যাচারাল ময়েশ্চার রিস্টোর করে।
৪) স্ক্যাল্পে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে।
৫) ইমিউনিটি ফাংশন ইম্প্রুভ করে, ত্বকের ফাইন লাইন ও রিংকেল দূর করে।
ক্যাস্টর অয়েল এর ব্যবহার :
চুল ঘন করতে যেমন ক্যাস্টর অয়েলের জুড়ি নেই, তেমনি ত্বকের যত্নেও এটি অনন্য। নিয়মিত এই তেল ত্বকে ম্যাসাজ করলে বলিরেখা দূর হয় ও ত্বক প্রাণবন্ত হয়।এই তেলে আছে নানা উপকারী উপাদান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ৮৫-৯৫% রিসিনোলিক , ২-৫% অলিক এসিড, ১-০.৫% লিনোলিক , ০.৫-১% স্টিয়্যারিক এসিড , ০.৫-১% পালমিটিক এসিড । ক্যাস্টর অয়েল হালকা হলদে রঙের বেশ ভারি তেল, যার বিশেষ গন্ধ রয়েছে। একটু ভারি বলে যেকোনো ক্যারিয়ার অয়েলের সাথে এটি মিক্স করে ব্যবহার করা হয়।জেনে নিন ত্বকের যত্নে কীভাবে এই তেল ব্যবহার করবেন।
ব্রণ দূর করতে:
ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করতে পারে ক্যাস্টর অয়েলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড। ত্বকের প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়া দূর করতে ক্যাস্টর অয়েল খুব কার্যকরী। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ব্রণের কারণে জ্বালাপোড়া থাকলেও কমে যাবে এই তেলে । ভালো ফল পেতে রাতে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন । এরপর কিছুক্ষণ গরম পানির ভাপ নিয়ে মুখ ভালোভাবে মুছে নিন। একটু তুলায় ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। সারারাত এভাবে রেখে সকালে ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিতে নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে:
ত্বকের রোদে পোড়া দাহ দূর করতে ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ত্বকে লাগান। আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
বলিরেখা দূর করতে:
ক্যাস্টর অয়েলে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-ই, যা ত্বকের ইলাস্টিন ও কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে । ত্বকের তারুণ্য ও সজীবতা ধরে রাখতে এ উপাদানগুলোর জুড়ি মেলা ভার। এ তেল ত্বক খুব দ্রুত শুষে নিতে পারে। ফলে ত্বকে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, আর সেই সঙ্গে সূক্ষ্ম বলিরেখাগুলো সহজে ছাপ ফেলতে পারে না।
প্রতিদিন আপনার মুখ ভালো করে ধুয়ে নিন। মুখ শুকিয়ে গেলে টোনার ব্যবহার করুন। এবার হাতের তালুতে একটু ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে দুই হাতে ঘষে নিন, যাতে হাতেই তেলটা উষ্ণ হয়ে ওঠে। এরপর মুখে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে নিন। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি করে দেখুন আর থাকুন চিরসবুজ!
ফাটা গোড়ালির যত্নে:
কুসুম গরম পানিতে কয়েক চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল ও সামান্য শ্যাম্পু মিশিয়ে গোড়ালি ডুবিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে নিন। রাতে ঘুমানোর আগে গোড়ালিতে গ্লিসারিনের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ম্যাসাজ করুন । এরপর মোজা পরে ঘুমান।
নখের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল:
ভঙ্গুর নখের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল কার্যকর। প্রতিদিন সামান্য ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি ঘষে ঘষে লাগান নখে। নখ মজবুত হবে।
ঠোঁট ফাটা দূর করতে:
ক্যাস্টর অয়েলে থাকা ভিটামিন ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড প্রাকৃতিকভাবে ঠোঁট ফাটা দূর করে থাকে । আঙুলের সাহায্যে সামান্য তেল নিয়ে ঠোঁটে ঘষুন। অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঠোঁট ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
হাতের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল:
হাতের ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে আমন্ড অয়েলের সঙ্গে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে হাতে ম্যাসাজ করুন।
চোখের পাপড়ি ও ভ্রুর যত্নে:
যাদের চোখের পাপড়ি, ভ্রু পাতলা, তাদের জন্য ভালো সমাধান হিসেবে রয়েছে ক্যাস্টর অয়েল। একটা কটন বাড়ে কিংবা শেষ হয়ে যাওয়া মাস্কারার ব্রাশ ক্যাস্টর অয়েলে চুবিয়ে নিন। এবার ভ্রু ও চোখের পাপড়িতে আলতো ব্রাশ করুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই কাজটি করতে পারেন। এতে ভ্রু ও চোখের পাপড়ি ঘন হবে।
মেকআপ রিমুভার হিসেবে:
সারা দিন পর বাড়ি ফিরে মেকআপ তুলে ঘুমানো সু-অভ্যাস বটে। মেকআপ রিমুভার হিসেবে নানা রকম ক্যামিকেল রিমুভার ব্যবহার না করে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে মেকআপ রিমুভ করুন। ভালোভাবে মেকআপ তুলতে এবং সুন্দর, মসৃণ ত্বক পেতে ব্যবহার করতে পারেন নিয়মিতই। এ ক্ষেত্রে অল্প একটু ক্যাস্টর অয়েল হাতে নিয়ে আলতোভাবে মাসাজ করুন মুখে। নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে এবার মেকআপ তুলে নিন। এভাবে ততবার করুন, যতক্ষণ মেকআপ পুরোপুরি উঠে না যাচ্ছে।
ত্বক ফেটে যাওয়া রোধে:
গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত পেটে ক্যাস্টর অয়েল মাসাজ করুন, তাহলে গর্ভ-পরবর্তী সময়ে ত্বকে ফাটা দাগ পড়বে অনেক কম।
চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করতে:
নারকেল তেল ও সামান্য ক্যাস্টর অয়েল একসাথে মিক্স করে একেবারে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে আঙুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করুন। যেহেতু ভার্জিন ক্যাস্টর অয়েল অনেক ঘন হয়ে থাকে, তাই এটি নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে অ্যাপ্লাই করতে হবে । সপ্তাহে কয়েকবার ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করুন ।
চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে:
সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল, অলিভ অয়েল, তিলের তেল মিশিয়ে একটু গরম করে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রাখুন। তারপরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। ব্যস, চুলের গ্রোথ বাড়বে এবং চুল পাকাও রোধ হবে।
এছাড়াও এই তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে, নতুন চুল গজাবে, চুল ঘন হবে, চুলের রঙ ডার্ক হবে, আগা ফেটে যাওয়া কমবে, হেয়ার ড্যামেজ কমাবে এবং এটি চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করবে।
বডির স্কিন ডিপলি ময়েশ্চারাইজ করতে :
কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পুরো হাত-পা ও বডিতে লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন কয়েক মিনিট। এরপর একটি পাতলা ছোট তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে পানিটা চিপে নিয়ে স্কিনের ওপর রেখে দিন এক মিনিট। এরপর ভালোভাবে ঐ তোয়ালে দিয়েই বডি মুছে নিন। একই প্রসেস আরেকবার করুন, তবে দ্বিতীয় বারে আরেকটি তোয়ালে নিবেন। এরপর ভালোভাবে গোসল করে নিন। যাদের স্কিন অনেক বেশি ড্রাই, তারা এটি অবশ্যই ট্রাই করে দেখুন ।
আরো পড়ুন :থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়মও উপকারিতা এবং অপকারিতা।
পরিশেষে :
বলা যাই যে ,প্রাচীনকাল থেকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে আসছে । কম বেশি সবাই জানে চুলের ত্বকের যত্নে ক্যাস্টর অয়েলের উপকারিতার কথা। তবে এটি ব্যবহার জানা উচিত। আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা এর সঠিক ব্যবহার জানতে পারবেন।