আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। বর্তমানে আমাদের দেশে শহরে এবং গ্রামে জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ সবচেয়ে বেশি হয়। বিভিন্ন কারণে এ বিরোধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে যতটুকু জায়গার আপনি মালিক আপনাকে ততটুকু জায়গা থেকে বঞ্চিত করা।
বেশির ভাগ মানুষ জায়গা জমির হিসাব তেমন বুঝে না। যার কারণে সমাজের অনেক শ্রেণির মানুষ অন্যের জায়গা জোর করে দখল করে রাখে। তাঁরা মামলা করতেও চায় না তার কারণ জায়গা জমি সংক্রান্ত মামলা অনেক সময় লেগে যায় নিষ্পত্তি হতে এবং অনেক অর্থ ব্যয় হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় যে মামলা করার পর মামলার রায় পাওয়ার জন্য যে টাকা ব্যয় হয় ঐ টাকা দিয়ে সমপরিমান জমিও ক্রয় করা যায়।
আপনার যে জায়গাটি আছে সেটি কত শতাংশ বা শতক অথবা কত কাঠা তা আপনি খুব সহজে হিসাব করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এ ব্লগটি পড়ে আপনি ভূমি মাপে এক্সপার্ট হতে পারবে না তবে আমি নিশ্চিত আপনি এখন থেকে একটি জমি কত শতাংশ বা শতক অথবা কত কাঠা তা খুব সহজে বের করতে পারবেন।
জমির শতাংশ বের করার নিয়ম:
জমির হিসাব বের করার আগে জমির শতাংশ বের করতে হবে। একটি জমির শতাংশ বের করতে হলে প্রথমে জমিখন্ডের দৈর্ঘ্য ও প্রস্তের মোট পরিমাণ কত ফুটে আছে তা বের করতে হবে। জমির চারপাশের মাপ যদি সমান না হয় তাহলে তাদের গড় বের করতে হবে। এরপর দৈর্ঘ্যের সাথে প্রস্তের গুণফলকে ৪৩৫.৬ দ্বারা ভাগ করার পর যে ফলাফল বের হবে এটাই জমির শতাংশের হিসাব।
জমির হিসাব বের করার নিয়ম:
সচরাচর আমাদের দেশে জমির হিসাব বের করার নিয়ম জানার জন্য ফিতা বা টেপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এটার মাধ্যমে নিখুঁতভাবে জমির হিসাব বের করা হয়।আবার হাত দিয়েও আপনি জমির হিসেব করতে পারবেন। কিন্তু এতে জমির হিসাব সঠিক নাও হতে পারে কারণ সবার হাতের মাপ একরকম হয় না। একেক জনের হাতের মাপ একেক রকম হয়ে থাকে। তাই এইভাবে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
সবচেয়ে জনপ্ৰিয় যেই পদ্ধতিটি সেটি হলো গান্টার শিকল বা চেইন পদ্ধতি এটার মাধ্যমে আপনি সঠিকভাবে জমির হিসাব বের করতে পারবেন। দিন দিন এটি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গান্টার শিকলের দৈর্ঘ্য হিসেবে ২২ গজ বা ৬৬ ফুট। এটি ১০০ টি লিংকে বিভক্ত রয়েছে। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭.৯২ ইঞ্চি। ১০০০ বর্গলিংকে এক শতাংশ হিসাব ধরে জমির হিসাব বের করা হয়।
ফিতা বা টেপের ক্ষেত্রে হিসাবটা ফুটে হয়ে থাকে । সাধারণত ৪৩৫.৬ বর্গফুটকে এক শতাংশ হিসাব ধরে নিখুঁতভাবে জমির হিসাব করা হয়ে থাকে।
আমরা অনেকেই জানি না যে কিভাবে জমির হিসাব বের করতে হবে। নিম্নে বিভিন্ন ভাবে জমির হিসাব বের করার নিয়ম দেয়া হলো –
(১) শতকে জমির হিসাব বের করার নিয়ম :
বেশিরভাগ জমিই শতাংশে হিসাব করা হয়ে থাকে । ধরি, আপনার জমিটির ক্ষেত্রফল ২০০০ বর্গফুট/স্কয়ার ফুট। শতাংশ বের করার জন্য ক্ষেত্রফলকে ৪৩৫.৬ দ্বারা ভাগ করতে হবে । কারণ, ১ শতাংশ = ৪৩৫.৬ বর্গফুট। ধরি, আপনার জমিটির ২০০০ বর্গফুট।
শতক / শতাংশ = (২০০০/৪৩৫.৬) শতাংশ
= ৪.৫৯১ শতাংশ হবে ।
(২)কাঠায় জমির হিসাব বের করার নিয়ম :
কাঠার হিসাবে জমির পরিমাণ বের করতে হলে আপনার জমির ক্ষেত্রফলকে ৭২০ দ্বারা ভাগ করতে হবে। কারণ ৭২০ স্কয়ার ফিট বা বর্গফুটে এক কাঠা হয় । ধরি, আপনার জমিটির ক্ষেত্রফল ২০০০ বর্গফুট।
কাঠা = (২০০০/৭২০) কাঠা
= ২.৭৭ কাঠা
(৩) আয়তাকার বা বর্গাকারে জমির হিসাব বের করার নিয়ম:
সচরাচর জমিগুলোর আয়তকার বা বর্গাকার হয়ে থাকে। যার ফলে ক্ষেত্রফল বের করা সহজ।
আমরা জানি,
জমির ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য× প্রস্থ। ধরি, কোন জমির দৈর্ঘ্য ২০০ বর্গলিংক এবং প্রস্থ ১০০ বর্গলিংক হলে ক্ষেত্রফল = ২০০ × ১০০ = ২০০০ বর্গলিংক।
এক শতাংশ ১০০০ বর্গলিংক হয়। তাহলে ২০০০ বর্গলিংককে ১০০০ দিয়ে ভাগ করার পর শতাংশের হিসাব পাওয়া যাবে।
সুতরাং, এখানে জমির পরিমাণ হচ্ছে ২০ শতাংশ।
(৪) ক্ষেত্রফল আকৃতির জমির হিসাব বের করার নিয়ম:
ক্ষেত্রফল = বাহু × বাহু
কর্ণ = ১ বাহু × ১.৪১৪
পরিসীমা = ১ বাহু × 8
সুতরাং একটি বর্গক্ষেত্রের বাহুগুলির দৈর্ঘ্য যদি২২০ লিংক করে হয় তাহলে ক্ষেত্রফল কত এবং জমির পরিমাণ কত হবে?
আমরা জানি যে,
ক্ষেত্রফল = বাহু × বাহু = ২২০ × ২২০ = ৪৮,৪০০ বর্গলিংক (যদি ক্ষেত্রফলে একেকটি বাহু ২২০ লিংক হয়)।
এখন, শতাংশের হিসাবে ৪৮,৪০০ বর্গলিংক = কত শতাংশ হয় ?
সূত্রানুযায়ী ১০০০ বর্গলিংকে ১ শতাংশ।
তাহলে ৪৮৪০০ বর্গলিংক = ৪৮৪০০ ÷ ১০০০ শতাংশ = ৪৮.৪ শতাংশ হয়।
(৫) দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের গড় বের করে জমির হিসাব:
যদি আয়তক্ষেত্র বা বর্গক্ষেত্র পরিমাণে নিখুঁত না হয় তাহলে দৈর্ঘ্যের এবং প্রস্থের গড় করে ক্ষেত্রফল বের করা হয়। যদিও এভাবে সঠিক হিসাব মিলানো কঠিন। যেহেতু পরিমাণ নিখুঁত না তাই কাছাকাছি হিসাব পাওয়াও সঠিকের মতো হয়ে থাকে ।
গড় হিসাব বের করার জন্য ধরে নেয়া যাক ,
একটি জমি যার দৈর্ঘ্য এক দিকে ২৫০ বর্গলিংক, অপর দিকে ২৪০ বর্গলিংক এবং প্রস্থ হচ্ছে এক দিকের ১৪০ বর্গলিংক, অপর দিকের ১২০ বর্গলিংক।
অসম এই জমির গড় বের করতে হবে এভাবে… দৈর্ঘ্য = (২৫০ + ২৪০) ÷ ২ = ৩৬৫ বর্গলিংকক এবং প্রস্থ (১২০+১৪০) ÷ ২ = ১৯০ বর্গলিংক।
জমির ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × গ্রন্থ = ৩৬৫ × ১৯০ = ৬৯,৩৫০ বর্গলিংক। এটিকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করলে শতাংশ পাওয়া যাবে।
৬৯,৩৫০ বর্গলিংকে কত শতাংশ হবে ?
৬৯,৩৫০ ÷ ১০০০ = ৬৯.৩৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, যেকোন একক ব্যবহার করে জমির ক্ষেত্রফল বের করা যাবে।
জমি পরিমাপের একক:
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গ গজ।
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গ ফুট।
১ শতাংশ = ১৯৩.৬০ বর্গ হাত।
১ শতাংশ = ৪০.৪৭ বর্গ মিটার।
ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে জমির হিসাব:
১ শতাংশ = ৪৩৫.৬০ বর্গফুট।
১ শতাংশ = ১৯৪.৬০ বর্গহাত।
১ শতাংশ = ৪৮.৪০ বর্গগজ।
১ শতাংশ = ৪০.৪৬ বর্গমিটার।
১ শতাংশ = ১০০০ বর্গলিংক।
১ কাঠা = ১.৭৫ শতক (৩৫ এর মাপে)।
১ কাঠা = ১.৬৫ শতক (৩৩ এর মাপে)।
১ কাঠা = ১.৫০ শতক (৩০ এর মাপে)।
১ একর = ৪৩৫৬০বর্গফুট।
আরো পড়ুন :মোবাইলে নগদ একাউন্ট খোলার সহজ ও বিভিন্ন নিয়ম।
পরিশেষে :
বলা যাই যে ,জমি জায়গার হিসেবে অনেকে বুঝে না আশা করছি এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জমির হিসাব বের করতে পারবেন অথবা একজন ব্যক্তি কতটুকু জমি পাবেন তার হিসাব বের করে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে আপনারা আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে অবশ্যই আপনাদের এলাকায় যিনি একজন দলিল লেখক রয়েছে তার কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।