আসসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। অনেক ভাই-বোন সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার প্রত্যাশায় আছে । জাপান সূর্যোদয়ের দেশ, পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত জাপান । সেখানে উন্নত জীবনযাপন, কর্মসংস্থান এবং উচ্চ আয়ের সুযোগ রয়েছে এদেশে ।

বাংলাদেশ থেকে অনেকেই জাপান যাওয়ার জন্য অনেক আগ্রহী, তবে সরকারী ভাবে ভিসা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যাওয়া অনেক সহজ এবং সাশ্রয়ী হয় । ২০২৫ সালে সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এবং শর্তাবলী আছে যা আপনার অবশ্যই জানা উচিত।

জাপান যেতে চাওয়ার কারণ :

আমাদের দেশে সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার অনেকেই চেষ্টা করে। করণ জাপান আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে মানুষ জাপানে পড়াশোনা, চাকরি এবং ব্যবসার জন্য যেতে খুব আগ্রহী। এখানে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-

উন্নত কর্মসংস্থান ও উচ্চ বেতন:

জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যেখানে দক্ষ কর্মীদের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিখাতে কাজের চাহিদা বেশি থাকে ।

উন্নত জীবনযাত্রা:

জীবনযাত্রার মান বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাপান। এই দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত।

বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন:

জাপানে কাজ করতে গেলে সাধারণত চাকরিদাতা কোম্পানি গুলো প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে টেকনিক্যাল ইন্টার্নশিপ ভিসা আসলে প্রশিক্ষণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে।

স্থায়ী বসবাসের সুযোগ:

যারা দীর্ঘ সময় ধরে জাপানে কাজ করে , তারা পরে স্থায়ী বসবাস (Permanent Residency – PR) এবং নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।

শিক্ষার উন্নত মান ও স্কলারশিপ সুবিধা:

জাপান উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দেশ। এই দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের দেশ:

জাপান প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্য বেশ বিখ্যাত। এখানে কাজ বা গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বমানের প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব।উন্নত কর্মসংস্থান, নিরাপদ জীবনযাত্রা ,উচ্চ বেতন এবং স্থায়ী বসবাসের সুযোগের জন্য জাপান অনেকের স্বপ্নের গন্তব্য। যারা দক্ষতা উন্নয়ন এবং একটি উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের জন্য জাপান একটি আদর্শ দেশ।

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয় :

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র বা ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়। এসব ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত ও জমা না দিলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো-

বৈধ পাসপোর্ট:

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য অবশ্যই বৈধ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) বা ই-পাসপোর্ট অবশ্যই থাকতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করাই ভালো হয় ।

জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ:

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য প্রত্যেক আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা ১৮ বছরের নিচে হলে জন্ম নিবন্ধন সনদ অবশ্যই দরকার হয়। সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য এটি পরিচয় যাচাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র:

শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য আবেদন করা যাবে। সাধারণত ন্যূনতম এসএসসি বা সমমান পাস হতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রি প্রয়োজন হয় ।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট:

জাপানে যেতে হলে নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । এজন্য বাংলাদেশ পুলিশ থেকে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। এটি দেখায় যে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা বা অপরাধমূলক কার্যক্রম নেই।

স্বাস্থ্য সনদ (Medical Certificate):

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য জাপান সরকার স্বাস্থ্য সচেতন দেশ হওয়ায় প্রার্থীদের অবশ্যই মেডিকেল পরীক্ষা করিয়ে স্বাস্থ্য সনদ জমা দিতে হবে। এই মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে কোনো গুরুতর রোগ বা সংক্রামক ব্যাধি আছে কিনা তা যাচাই করা হয়ে থাকে ।

জীবনবৃত্তান্ত (Curriculum Vitae – CV): 

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে একটি সুন্দরভাবে সাজানো সিভি (CV) জমা দিতে হয়। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মসংস্থান অভিজ্ঞতা (যদি থাকে) এবং অন্যান্য দক্ষতা উল্লেখ করতে হবে।

পাসপোর্ট সাইজের ছবি:

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য আবেদনপত্র ও অন্যান্য ডকুমেন্টের সাথে বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতেহবে।

জাপানি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়):

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য কিছু ক্ষেত্রে N5 বা N4 লেভেলের জাপানি ভাষা দক্ষতার প্রমাণ প্রয়োজন হয় । এটি JLPT (Japanese Language Proficiency Test) পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া যায়।

বিএমইটি (BMET) রেজিস্ট্রেশন সনদ:

বাংলাদেশ থেকে সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য প্রথমে BMET (Bureau of Manpower Employment and Training)-এ নিবন্ধন করতে হবে। একবার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে, কাজের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে আবেদন করা যাবে।

নিয়োগপত্র (Job Offer Letter): 

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোম্পানি বা নিয়োগকারীর কাছ থেকে চাকরির অফার লেটার থাকতে হবে। এটি সাধারণত সরকারিভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রদান করা হয়ে থাকে।

ভিসার জন্য আবেদন ফর্ম:

যখন সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার সুযোগ আসে, তখন ভিসার জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে । এতে ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও চাকরির বিবরণ উল্লেখ করতে হবে ।

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য উল্লিখিত সমস্ত কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখা খুব প্রয়োজন। ভুল বা অসম্পূর্ণ ডকুমেন্ট জমা দিলে আবেদন বাতিল হয়ে থাকে । তাই আগে থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ ও প্রস্তুত করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া:

সরকারিভাবে জাপানে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে । ধাপে ধাপে নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হলো-

বিএমইটি (BMET) ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন:

সর্ব প্রথম ধাপে আপনাকে বিএমইটি’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি নতুন একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্ট খোলার জন্য নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে পারেন –

  • BOESL ওয়েবসাইট ভিজিট করেন ।
  • “Overseas Employment Registration” অপশনে ক্লিক করতে হবে ।
  •  জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে সাইন আপ করুন।
  • ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য তথ্য দিন।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি আপলোডকরতে হবে।
  • নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধ করতে হবে  (যদি প্রযোজ্য হয়)।
  • সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন সম্পন্ন করে সাবমিট করবেন ।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া:

 অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হলে,  নির্ধারিত অফিসে গিয়ে আপনাকে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসমূ-

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • স্বাস্থ্য সনদ
  • পাসপোর্টের কপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র
  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩ কপি)
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা:

জাপানে যাওয়ার জন্য একটি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয় । সাধারণত এটি জাপানি ভাষা ও দক্ষতার উপর নির্ভরশীল। পরীক্ষার ধাপ-

  • জাপানি ভাষার মৌলিক জ্ঞান যাচাই।
  • নির্দিষ্ট পেশার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক পরীক্ষা। 
  • ব্যক্তিগত দক্ষতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা। 

চূড়ান্ত নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ:

যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন , তাদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। এরপর বিএমইটি তাদের নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু-

  • জাপানি ভাষার ক্লাস (N5 & N4 লেভেল) 
  • কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা। 
  • কর্মস্থলের নিয়ম-কানুন।

চাকরির অফার লেটার গ্রহণ:

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করার পর প্রার্থীদের চাকরির অফার লেটার প্রদান করা হয়ে থাকে । এটি জাপানি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারাই ইস্যু করা হয়।

ভিসার জন্য আবেদন:

 চাকরির অফার লেটার পাওয়ার পর, পরবর্তী ধাপে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে । বিএমইটি ও জাপানি দূতাবাসের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়ে থাকে ।

ফ্লাইট ও জাপানে যাত্রা:

সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার ভিসা পেলে, বিএমইটি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ট্রাভেল অনুমোদন দেয় । নির্দিষ্ট তারিখে টিকিট কেটে জাপানে যাত্রা করতে হয়  হয়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরে BMET রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ভিসার ধাপগুলো অবসসই অনুসরণ করতে হবে। সঠিক নিয়মে আবেদন করলে খুব সহজেই কম খরচে সরকারী ভাবে জাপান যাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন ।

Write A Comment