আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধে দেশব্যাপী একটি বড় উদ্যোগ নিয়েছেন বাংলাদেশের  সরকার। সারাদেশে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে শিশু-কিশোরদের টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি এবং বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এই টিকাদান কর্মসূচির জন্য অনলাইন ১ আগস্ট থেকে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় শিশুদের কীভাবে নিবন্ধন করতে হবে, তা নিয়ে একটি বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ করা ও হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। অভিভাবকদের দ্রুত অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

টাইফয়েড :

টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ রোগ , যা সাধারণত দূষিত পানি বা খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়ে থাকে। এটি স্যালমোনেলা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের মধ্যে টাইফয়েডের সংক্রমণ এখনও উদ্বেগজনক। জ্বর, পেট ব্যথা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ও কখনো কখনো ডায়রিয়া ইত্যাদি এই রোগের প্রধান উপসর্গ। সময়মতো চিকিৎসা না হলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

টাইফয়েড কীভাবে ছড়ায়: 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, টাইফয়েড জ্বর হলো স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট একটি সিস্টেমিক সংক্রমণ, যা সাধারণত দূষিত খাদ্য বা পানি গ্রহণের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

টাইফয়েড উপসর্গ :

এ রোগের উপসর্গ হলো- দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা। কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, আবার কখনো ডায়রিয়াও হতে পারে। উপসর্গগুলো প্রায়ই অস্পষ্ট থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য জ্বরজনিত রোগ থেকে আলাদা করা কঠিন হয়ে পরে।রোগের তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে কিংবা মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। টাইফয়েড মূলত এমন অঞ্চলে বেশি হয়, যেখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা দুর্বল এবং নিরাপদ পানির অভাব রয়েছে।

টিকার গুরুত্ব:

বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা নেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে । শুধু টিকাই নয়, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার এবং খাবার ভালোভাবে রান্না করাও টাইফয়েড প্রতিরোধে অত্যান্ত জরুরি।

কারা কারা এই টিকা পাবে?

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় পাঁচ কোটি শিশু বিনামূল্যে এই টিকা পাবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত  শিশুদের এই টিকা দেয়া হবে। এই বয়সের সব শিশু-কিশোরকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। 

টিকা প্রদানের সময় ও সুরক্ষা: 

নির্ধারিত তারিখে নির্বাচিত কেন্দ্রে গিয়ে এক ডোজ ইনজেকটেবল টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আর মতে।,এই টিকা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে।

কোথায় এবং কখন টিকা দেওয়া হবে?

অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নির্বাচিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে। এই টিকা কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ১২অক্টোবর   থেকে শুরু হবে। এক ডোজের এই ইনজেকটেবল টিকাটি ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত শিশুকে সুরক্ষা দেবে।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক রোগ থেকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রতিটি অভিভাবককে তাদের শিশুদের সুরক্ষার জন্য দ্রুত নিবন্ধন সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

রেজিস্ট্রেশন করবেন যেভাবে:

গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায় টাইফয়েডের টিকা বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এক ডোজের ইনজেকটেবল এই টিকা তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে।

টিকা পেতে হলে অনলাইন নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশনের পর ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করে নিতে হবে। টিকা গ্রহণের সময় এই কার্ড দেখাতে হবে।টাইফয়েডের টিকা রেজিস্ট্রেশনেরজন্য কয়েক ধাপে নিবন্ধন করতে হবে। 

নিবন্ধনের নিয়ম:

(১) ওয়েবসাইটে প্রবেশ: প্রথমে ব্রাউজারে গিয়ে নিবন্ধনের ওয়েবসাইট https://vaxepi.gov.bd/registration/tcv-এ প্রবেশ করুন।

(২) জন্মতারিখ পূরণ: শিশুর জন্মদিন, মাস ও বছর লিখতে হবে।

(৩) জন্মনিবন্ধন সনদ: শিশুর ১৭ সংখ্যার জন্মনিবন্ধন নম্বরটি লিখুন।

(৪) লিঙ্গ নির্বাচন: লিঙ্গ নির্বাচন করুন, ছেলে বা মেয়ে উল্লেখ করুন।

(৫) ক্যাপচা কোড পূরণ: ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত ক্যাপচা কোড লিখুন।

(৬) অভিভাবকের তথ্য দিন: মোবাইল নম্বর, ই-মেইল (যদি থাকে), পাসপোর্ট নম্বর (ঐচ্ছিক) ও বর্তমান ঠিকানা লিখে ‘সাবমিট’ চাপুন।

(7) ওটিপি যাচাই: মোবাইলে প্রাপ্ত ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) দিয়ে যাচাই সম্পন্ন করুন।

(8) টিকা নির্বাচন: এবার টিকা হিসেবে “টাইফয়েড” নির্বাচন করুন। প্রার্থী যদি স্কুলে অধ্যয়নরত (নবম শ্রেণি পর্যন্ত) হয়, তা নির্বাচন করুন। অথবা স্কুল বহির্ভূত শিশু (৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী) নির্বাচন করুন।

(9) কার্ড ডাউনলোড: নিবন্ধন সম্পন্ন হলে ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিন।

টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি মোট চলবে ১৮ দিন। প্রথম ১০ দিন স্কুলে ক্যাম্প করে টিকা দেওয়া হবে। স্কুলে টিকা না নেওয়া শিশুরা পরের ৮ দিন টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দিতে পারবে।

দুই ধাপে দেওয়া হবে টাইফয়েডের টিকা:

টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন,  দুই ধাপে টাইফয়েডের এ টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে অক্টোবরের ১২ তারিখ থেকে বিদ্যালয় ভিত্তিক ক্যাম্পে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এ ধাপে যারা বাদ পড়বেন, তারা দ্বিতীয় ধাপের ৮ দিনে ইপিআইয়ের কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে পারবেন।

তিনি বলেন, এক ডোজের ইনজেকশনে টিকা দেওয়া হবে। এ টিকা শিশু-কিশোরকে তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স টাইফয়েডের টিকা সরবরাহ করেছে। টিকাগুলো কেনা হয়েছে ভারত থেকে। এরইমধ্যে সব টিকা দেশে চলে এসেছে।

টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া :

টাইফয়েডের এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না, কিংবা টিকা দেওয়ার আগে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ হবে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে, টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক, এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, শতভাগ পরীক্ষিত। তারা তাদের সুবিধামতো দেশ থেকে এটা কিনে দেয়। টিকাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী তৈরি করা।

তিনি বলেন, এটা শতভাগ পরীক্ষিত টিকা। আমাদের উপমহাদেশের নেপাল, পাকিস্তান ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে এ টিকাদান শুরু হয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলে করণীয়:

বাংলাদেশে যেসব শিশু-কিশোরের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই, তারাও এই টিকা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর দিতে হবে বলে জানান টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই, তারাও টিকা নিতে পারবে। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। তাদের ভ্যাকসিন গ্রহণের তথ্য কাগজে লিখে দেওয়া হবে।

পরিশেষে :

বলা যাই যে , বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী শিশু-কিশোরদের জন্য টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে , বাংলাদেশের মতো টাইফয়েড-প্রবণ দেশে এ ধরনের কর্মসূচি যুগান্তকারী। টিকা কার্যক্রম সফল হলে দেশে শিশু মৃত্যুহার ও রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমে আসবে।

ডব্লিউএইচওর তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে থাকে আনুমানিক ৯০ লাখ মানুষ । তাদের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

Write A Comment