ডুমুর এমন একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল যা কাঁচা থাকতে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। আর পাকলে মজাদার ফল হয়ে ওঠে। ডুমুর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ যা স্বাস্থ্যের জন্য বিস্ময়কর কাজ করে। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আদিকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হাড়ের গঠন মজবুত করা, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করাও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ডুমুরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।। ঝোপঝাড়ে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে এই  ডুমুর ফলগুলো ।

ডুমুর ফল:

ডুমুর হচ্ছে একটি নরম ও মিষ্টি জাতীয় ফল। এই ফলের উপরের আবরণ খুবই পাতলা এবং এর ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট বীজ থাকে। এই ফলগুলো শুকনো এবং পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। এই গাছগুলো উষ্ণ জলবায়ু সম্পূর্ণ এলাকায় বেশি জন্মায় ।

বাংলাদেশে বেশ কয়েক প্রকারের ডুমুর ফল পাওয়া যায়।  এখানে সচরাচর যে ডুমুর গুলো দেখতে পাওয়া যায় তার ফল আকারে অনেক ছোট এবং এগুলো খাওয়ার অনুপযোগী। এই ফলগুলো কাকডুমুর নামে পরিচিত। 

এই গাছগুলো যেখানে সেখানে গজিয়ে ওঠে এবং অযত্ন এবং অবহেলার কারণে এই কাজগুলো আকারে অনেক ছোট হয় থাকে । 

এটি এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই ডুমুর সাধারণত পাখিরাই বেশি খেয়ে থাকে এবং তাদের বিষ্ঠার মাধ্যমে যেখানে সেখানে এই গাছ  জন্ম নেয়। 

অনেক এলাকায় এই ডুমুর রান্না করে খাওয়া হয়। এই ফলগুলো কাণ্ডের গায়ে থোকায় থোকায়  হয় থাকে । 

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে ডুমুর পাওয়া যায় সেগুলো আকারে অনেক বড় হয় । এটি জনপ্রিয় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। আফগানিস্তান এবং পর্তুগালে এগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে । এই গাছগুলো 6 মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। 

ডুমুর ফল এর পুষ্টিগুণ :

প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে পুষ্টি উপাদান হচ্ছে –

  • জলীয় অংশ   — ৮৮.১ গ্রাম
  • খনিজ পদার্থ — ০.৬ গ্রাম
  • হজমযোগ্য আঁশ —  ২.২ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি —৩৭ গ্রাম
  • আমিষ —১.৩ 
  • চর্বি — ০.২
  • শর্করা —৭.৬,
  • ক্যালসিয়াম —৮০ মিলিগ্রাম, 
  • লৌহ — ১.১ মিলিগ্রাম, 
  • ক্যারোটিন — ১৬২ মিলিগ্রাম, 
  • ভিটামিন বি১ —০.০৬ মিলিগ্রাম,
  • ভিটামিন বি২  — ০.০ ৫ মিলিগ্রাম
  •  ভিটামিন সি — ৫ মিলিগ্রাম।

ডুমুর ফল খাওয়ার নিয়ম:

ডুমুর ফল খেলে তা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে । ডুমুরের ক্যালসিয়াম উপাদান হাড়-সম্পর্কিত অসুস্থতা থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।তবে এই  ডুমুর ফল আমরা কয়েক ভাবে খেতে পারি। নিম্নে আলোচনা করা হলো –

(১)কাচা ডুমুর খাওয়ার নিয়ম:

যে কোন ফাল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম থাকে। ডুমুর শুকনো ও কাঁচা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই কাঁচা ডুমুর কি ভাবে খাওয়াযায় –

টাটকা কাঁচা ডুমুর ধুয়ে খেলে আমাশয়ের জন্য তা খুবই উপকারী। তবে এটি তিন দিন নিয়মিত খেতে হবে। 

যেসব মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তারা কাঁচা ডুমুর বেটে এক চা চামচ মধু দিয়ে খেলে অনেক উপকার পাবেন। তবে নিয়মমাফিক খেতে হবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। 

যাদের ডায়াবেটিস আছে সকাল অথবা সন্ধ্যায় একটি করে ডুমুর ভালোভাবে ধুয়ে চিবিয়ে খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে যায়। তবে একটির বেশি ডুমুর খাওয়া যাবে না। 

যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এবং শরীরে আয়রনের মাত্রা খুবই কম তারা প্রতিদিন ডুমুর রান্না করে অথবা কাচা খেতে পারেন। 

(২)শুকনো ডুমুর খাওয়ার নিয়ম:

কাঁচা ডুমুর অথবা শুকনো ডুমুর দুটোই শরীরের জন্য উপকারী। ডায়েটের জন্য শুকনো ডুমুর কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে । চলুন জেনে নিয়ে যাক  শুকনো ডুমুর কিভাবে খেতে হবে –

ডুমুর গাছ থেকে পেরে রোদে শুকিয়ে এক থেকে দুই মাস সংরক্ষণ করা যায় । শুকনো ডুমুর দুই টুকরো করে কেটে রাতের বেলায় ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সকালে ডুমুরসহ পানিগুলো খেয়ে ফেলুন তাহলে অনেক উপকারিতা পাবেন।

পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন এক গ্লাস দুধের সাথে এক চা চামচ মধুএবং কুচি কুচি ডুমুর একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। 

বুকে কফ জমা এবং শুকনো কাশি সারাতে এক গ্লাস গরম  দুধের সাথে শুকনো কুচি ডুমুর দিয়ে খেতে হবে। শুকনো ডুমুর নিয়মিত খেলে হার্টের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। 

মেয়েদের অতিরিক্ত ঋতুস্রাব থেকে মুক্তি পেতে শুক্ল ডুমুর এক চামচ মধু এবং দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন । তাহলে ঋতুস্রাব স্বাভাবিক হবে। 

(৩)ডুমুরের ফল রান্না করার নিয়ম :

প্রথমে ডুমুরের ফল গুলোর চারপাশ থেকে কেটে নিতে হবে এবং  বীজগুলো বাদ দিতে হবে। এগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর সামান্য পরিমাণ জল এবং লবণ, হলুদ  মিশিয়ে এগুলো সিদ্ধ করে নিতে হবে। জল গুলো ঝরিয়ে ফেলতে হবে। 

এবার কড়াইতে লঙ্কা, তেজপাতা , জিরা, পাঁচফোড়ন, পিয়াজ দিয়ে ভাজা ভাজা করে নিতে হবে। এখন আদা রসুন কাঁচা লঙ্কা, বিট মসলা, ডাবল হলুদ লঙ্কা দিয়ে দিতে হবে।একটু নাড়ানাড়ি করার পর টমেটো দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর ডুমুর  দিতে হবে। একটু নাড়ানাড়ি করার পর দুই কাপের মতো জল দিয়ে তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে ।

কিছুক্ষণ পর সিদ্ধ হয়ে গেলে গুড়ো মসলা দিয়ে নেড়ে নেড়ে নামাতে হবে। এরপর এগুলো গরম গরম পরিবেশন করতে হবে। তবে যে যার মতো রান্না করে খেতে পারেন। 

ডুমুর ফল এর উপকারিতা: 

এই ডুমুর ফল এর উপকারিতা অনেক নিম্নে আলোচনা করা হলো –

(১)রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে ডুমুর:

ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। এই পটাশিয়াম শরীরের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। বেশ কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে, ডুমুরে থাকা ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা এই ফল ভিজিয়ে খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। অনেক সময় ডুমুর সালাদের সঙ্গে টুকরো করে খাওয়া যেতে পারে। 

(২)কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য উপকারী:

ডুমুর জিংক, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মত খনিজ পদার্থের ভরপুর। এছাড়াও ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য খুবই উপকারী।এটি মলত্যাগ কে স্বাভাবিক করে এবং অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।  তাই বিশেষজ্ঞরা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলসের রোগীদের ডুমুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

(৩)ওজন কমাতে সাহায্য করে:

যারা ওজন কমাতে চান তারা ডায়েটের তালিকায়  ডুমুর অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। ফাইবার সম্পন্ন এই খাবারটি ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে । এটি শরীরে ফাইবার সরবরাহ করে থাকে। এতে ক্যালের মাত্রা অনেক বেশি তাই এটি পরিমানমত খেতে হবে। পরিমাণের তুলনায় বেশি খেলে ওজন কমার পরিবর্তে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। 

(৪)ডুমুর হাড়কে মজবুত করে:

ক্যালসিয়ামের একটি অন্যতম উৎস আছে এই ডুমুর। তাই এটি হাড়কে সুস্থ, মজবুত ও শক্তিশালী রাখতে সহায়তা  করে থাকে । শরীর নিজে থেকে ক্যালসিয়াম উৎপন্ন করতে পারে না। তাই বিভিন্ন উপাদান থেকে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করতে হয়। যেমন দুধ, সয়া,  শাক-সবজি,  ডুমুর ইত্যাদি ।

(৫)ডুমুর হার্টকে ভালো রাখে:

ডুমুরে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া শরীর থেকে ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে। করোনারি ধমনীতে বাধা রোধ করে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। 

(৬)হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখে:

আয়রনের অন্যতম উৎসব হচ্ছে ডুমুর। শরীরে আয়রনের অভাব হলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিয়মিত ডুমুর খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা স্বাভাবিক  থাকে। 

(৭)যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডুমুর:

যারা পুরুষত্বহীনতায় ভুগছেন তারা শুকনো ডুমুর দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন ।এছাড়া সালাদের সঙ্গেও ডুমুর খেতে পারেন । এতে পুরুষের যৌন ক্ষমতা এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

আরো পড়ুন :ফেসওয়াশ ব্যবহারের সঠিক নিয়ম এবং সঠিক ফেসওয়াশ নির্বাচন।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,ডুমুর সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল যার একাধিক উপকারিতা আছে।ডুমুর খাওয়া যেমন উপকারী তেমনি রয়েছে এর কিছু অপকারিতাও। তাই এই ডুমুর ফল বেশি খাওয়া উচিত না 

Write A Comment