আসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। দাগহীন সুস্থ, সুন্দর ত্বক আমাদের সবারই কাম্য। কিন্তু বর্তমান সময়ের দূষণ, ধুলোবালি ত্বককে করে তোলে মলিন নিস্প্রান। এ ছাড়া অনেক সময় রোদের কারণে ত্বকের পোড়া ভাব মানুষের সামনে অস্বস্তির কারণ হতে পারে।আবার অনেক সময় রোদে পুড়ে বা অযত্নে মুখের ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে হাতে-পায়ের রঙের সঙ্গে ভিন্নতা দেখা যায়। তখন কিন্তু মন অনেক খারাপ হয়ে যায় সবারই।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে অনেকেই দামি দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন না । আবার উল্টো রিঅ্যাকশন দেখা দেয় অনেকের ত্বকে। এক্ষেত্রে রয়েছে কিছু ঘরোয়া সমাধান।কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বক উজ্জ্বল করতে বেছে নিতে পারেন ঘরোয়া উপায়গুলো ।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় সমূহ:
(১) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন:
ত্বক উজ্জ্বল করার প্রথম শর্ত হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। দিনে ৬-৮ গ্লাস পানি পান করা অবশ্যই দরকার। যদি ১ সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখতে চান তবে নিয়ম করে প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
(২) সরাসরি রোদের সংস্পর্শ পরিহার করুন:
সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি আমাদের ত্বকের অনেক ক্ষতি করে। তাই ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে চাইলে জরুরী ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচানো। তাই যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলবেন। বাইরে বের হলে ছাতা ও স্কার্ফ ব্যবহার করবেন অবশ্যই। আর বাইরে বের হওয়ার আগে ভালো মানের এসপিএফ ৫০+ সানস্ক্রিন মেখে বের হবেন।
(৩) ত্বক প্রতিদিন পরিস্কার করুন:
বাইরে থেকে ফিরে প্রতিদিন ত্বক পরিস্কার করার অভ্যাস গড়তে হবে। বাহির থেকে ফিরে প্রথমে ভালো মানের ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তারপর কাঁচা দুধে তুলো ভিজিয়ে সেই তুলো দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন। এটা মুখের ভেতর জমে থাকা ধুলোবালি পরিস্কার করে থাকে।এছাড়া রোদে পোড়াভাব দূর করতে চাইলে একটি টমেটোর রস বা থেঁতো করা টমেটো মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
(৪)ত্বক উজ্জ্বল করতে মাস্ক লাগান:
দ্রুত ত্বক উজ্জ্বল করতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঘরোয়া বিভিন্ন ধরণের মাস্ক বানানো যাইযা ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন ।ঘরোয়া এই মাস্কগুলোর ব্যাবহার করলে ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
(৫) ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন:
ত্বক ভালো রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজ করা অত্যান্ত জরুরি। ময়েশ্চারাইজিং ত্বকের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে ,ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে থাকে।
(৬) ভালো স্কিন প্রোডাক্ট ব্যবহার:
ত্বকে সবসময় ভালো মানের স্কিন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে । বাজারের যে কোন রূপচর্চার প্রোডাক্ট অনেক সময় স্কিনের ক্ষতি করে থাকে। তাই মান যাচাই করে প্রোডাক্ট কেনা উচিত। যে সব স্কিন প্রোডাক্টে হাইড্রেটের মাত্রা বেশী সেসব প্রোডাক্ট কিনুন ও ব্যবহার করুন।
এছাড়াও কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বক উজ্জ্বল করতে বেছে নিতে পারেন ঘরোয়া উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু উপায়—
শসা:
শসা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অনেক ভালো কাজ করে। তিন টেবিল চামচ শসার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। কাচের মুখবন্ধ বয়ামে মিশ্রণটি সংরক্ষণ করতে পারেন । দিনে কয়েকবার এই মিশ্রণ দিয়ে মুখ মুছে নিন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে ও ত্বককে কোমল রাখবে।
লেবুর রস :
পাতিলেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে করে। কিন্তু সরাসরি লেবুর রস ত্বকে লাগানো যাবে না । কারণ এর প্রভাবে ত্বকে তীব্র জ্বালাভাব ও নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই সরাসরি লেবুর রস না লাগিয়ে তার সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে লাগাতে পারেন। লেবুর রসের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যাবহার কোনো পারেন। এছাড়া ১ চামচ লেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে সার্কুলার মোশনে ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন। চিনি গলে গেলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস ব্যবহার করার পর অতি অবশ্যই ভালো মানের কোনো ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে নিতে হবে। পাতিলেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
মসুর ডাল:
মসুর ডাল ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মসুর ডাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভেজা মসুর ডাল বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে । তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
মধু :
খুব কম সময়েই ত্বককে উজ্জ্বল করতে চাইলে মধুর কোনো বিকল্প নেই। মধু এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বক নরম রাখে, বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে থাকে । এ ছাড়া ব্রণের জীবাণুও ধ্বংস করতে মধু বেশ কার্যকর। মধু সরাসরি মুখে লাগাতে পারেন, কিন্তু বেশী ফলাফল পেতে হলে মধুর সাথে দুধ, দই, কলা, পেঁপে, লেবুর রস এসবের যে কোন কিছু মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
কলা:
ত্বককে উজ্জ্বল করতে কলা বেশ কার্যকর। একটা কলাকে চটকে নিয়ে তাতে পরিমাণ মতো দুধ মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন পেস্টটা যেন একেবারে মিহি হয়ে যায়। তাহলে অনেক ভাল কাজ দেবে।
অ্যালোভেরা:
অ্যালোভেরা ত্বকের যত্নে উপকারী। এতে আছে বিভিন্ন উপকারী উপাদান। যেমন ভিটামিন, এনজাইম, মিনারেল, সুগার, লিগনিন, স্যাপোনিন, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড। ভিটামিন এ, সি এবং ই আছে এই অ্যালোভেরায়। এগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরায় আরও আছে ভিটামিন বি ১২, ফলিক অ্যাসিড এবং কোলাইন। তাই ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
বেসন :
ত্বক উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করতে পারেন বেসন। ৩ টেবিল চামচ বেসন, ১ টেবিল চামচ হলুদ এবং ৩ টেবিল চামচ টক দই নিন। এবার একটি পাত্রে সব উপাদান মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। এভাবে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর মুখ ধুয়ে নিন। আপনি যদি নিয়মিত বেসনের এই ফেসপ্যাক ব্যবহার করেন তবে তা ত্বকের দাগ-ছোপ দূর হবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়বে ।
গোলাপজল :
ত্বক ভালো রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি। এই কাজে সাহায্য করে গোলাপজল। এটি আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে উঠে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর গোলাপজল লাগিয়ে নিন। এতে ত্বক ভালো থাকবে। বাইরে বের হলে ব্যাগে গোলাপজল রাখতে পারেন। এর ব্যবহার আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে ।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় যে খাবার :
অনেক সময় রুপচর্চা বা স্কিন প্রোডাক্টে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরানো বা বাড়ানো যায় না। সেক্ষেত্রে ত্বক ঠিক রাখতে খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম আর স্বাস্থ্যের অবস্থা ভীষণভাবে জড়িত।
কিছু খাবার আছে যা খেলে প্রাকৃতিকভাবে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হতে পারে। এগুলো হলো—
(১) গ্রিন টি:
শুধু স্বাস্থ্য রক্ষায়ই নয় বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও গ্রিন টি দারুণ কার্যকর। গ্রিন টি-তে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, নানাবিধ এনজাইম, অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন বি-সহ বেশকিছু উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে খুবই উপকারী। শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে গ্রিন টি।
(২) টমেটো:
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, যা উজ্জ্বল ত্বক করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া লাইসোপিন নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ত্বকের বিভিন্ন দাগ, বলিরেখা ও শুষ্কভাব দূর করে ত্বক মসৃণ করে। এটি রোদেপোড়া ভাব দূর করতেও কাজ করে থাকে ।
(৩) গাজর:
গাজরে থাকা ভিটামিন এ ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে যার ফলে ত্বক মসৃণ থাকে। গাজর ত্বকের টিস্যু মেরামত করে এবং ক্ষতিকর সূর্য রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সহায়তা করে।
(৪) বাদাম:
বাদামে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন-ই। নিয়মিত খাদ্য তালিকায় বাদাম রাখলে এর পুষ্টি উপাদানগুলো ত্বককে আরও সজীব ও লাবণ্যময় করে তুলে ।
(৫) ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ মাছ:
যেসব মাছে ফ্যাটি এসিড (ওমেগা-৩) আছে নিয়মিত এ ধরনের মাছ খাদ্য তালিকায় রাখা ত্বকের জন্য উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে থাকা প্রাকৃতিক তেল ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
(৬)কলা:
ত্বক ভালো রাখার জন্য কলা অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন-এ, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এর পাশাপাশি এটি ত্বকের মলিনতা দূর করতেও কার্যকর।
(৭)ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার :
নিয়মিত নাশপাতি, বাদাম ও মটরশুঁটি খেলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে অনেকখানি।
(৮)সবুজ শাকসবজি:
সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে সবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন। রান্না করা সবজির পাশাপাশি সালাদ হিসেবে কাঁচা সবজিও ত্বকের জন্য উপকারী।
আরো পড়ুন :তেলাপোকা দূর করার উপায় বা কার্যকরী সমাধান।
পরিশেষে :
বলা যায় যে ,উজ্জ্বল ও কমনীয় ত্বক সকলেরই কাম্য। বিশেষ করে একটু উজ্জ্বল ত্বক পাবার জন্য আমরা অনেকেই অনেক কিছু করে থাকি।তবে নামিদামী প্রসাধনীর পিছনে গাদা-গাদা টাকা খরচ না করে ঘরোয়া এই উপায় গুলো বেশি কার্যকর । তাই আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপনাদের সাহায্য করবে