আসসালামু আলাইকুম আশা করি এআল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। ইসলামি শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান হচ্ছে দেনমোহর।একজন বিবাহিত মুসলিম নারীর বৈধ অধিকার হলো দেনমোহর। মূলত স্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি নিদর্শন। আর দেনমোহর হচ্ছে মুসলিম আইনে বিবাহের অন্যতম একটি শর্ত। শরিয়তের উদ্দেশ্য হলো যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত করে।
দেনমোহর কি :
একজন নারী ও একজন পুরুষের মধ্যে সামাজিক চুক্তি হলো বিয়ে। এ চুক্তি সম্পাদনের অন্যতম শর্ত দেনমোহর। দেনমোহর হলো কিছু অর্থ বা সম্পত্তি, যা বিয়ে বন্ধনে জড়ানোর প্রতিদানস্বরূপ স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রী পেয়ে থাকেন । ইসলামী শরিয়ত অনুসারে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ পারিবারিক আইনেও স্ত্রীকে দেনমোহরের টাকা দেয়া স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক।তবে বিয়ের সময় অনেকেই দেনমোহরের টাকা বাকি রাখেন। এটা ঠিক না।
দেনমোহর আদায়ের গুরুত্ব:
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল, যদি তোমরা তাদের মোহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। -(সুরা মায়েদা. আয়াত, ৫)
নারীর দেনমোহরকে হালকা করে দেখা বা আদায়ের ইচ্ছা না থাকলে আল্লাহর সামনে জবাবদিহীতা করতে হবে। একটি হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোনও নারীকে বিয়ে করলো এবং তার মোহর বাকি রাখলো এরপর সে ইচ্ছা করলো মোহর আংশিক বা একেবারেই আদায় করবে না তাহলে সে ব্যভিচারী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সঙ্গে ব্যভিচারী হিসেবে সাক্ষাৎ করবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা , ১২৭, কানজুল উম্মাল, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)
দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ:
ইসলামে দেনমোহর নির্ধারণের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই’ (বায়হাকি)। তবে মোহরের সর্বোচ্চ কোনও পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে রাসূলে (সা.) বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য’।
নগদ আদায় করা যায় এমন পরিমাণ উত্তম:
স্বামী তার সামর্থ্য অনুযায়ী যেকোনও পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করতে পারবে, তবে এক্ষেত্রে লৌকিকতা বা শুধু শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য অনেক বড় পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত হবে না, যা আদায় করা কষ্টকর হবে । লোক দেখানো ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে দেনমোহরের ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেয়া যেমন বৈধ নয়, তেমনি বরপক্ষকেও বেশি চাপাচাপি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
দেনমোহর পরিশোধের নিয়ম :
দেনমোহর নগদে পরিশোধ করা সুন্নাত। তবে বাধ্যগত অবস্থায় মোহর কিছু বাকী রেখে বিবাহ করা জায়েয আছে (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত ৩২০২)। তবে কিছু মোহর পরিশোধ করে বাকীটা মৃত্যু পর্যন্ত দেরী করার যে রীতি সমাজে আছে সেটার কোনো ভিত্তি নেই। এ রেওয়াজ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। আর স্ত্রীকে মোহর পরিশোধ করার পূর্বেই যদি স্ত্রী মারা যায় তাহলে স্বামীকে স্ত্রীর ওয়ারিসদের নিকট মোহরানার সম্পদ পরিশোধ করতে হবে (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ১০/১১৫; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/৫৪)।
মোহরও এক প্রকার ঋণ। কেউ যদি তা আদায়ের ইচ্ছা না রাখে তাহলে হাদিসের দ্বিতীয় অংশের বর্ণনা অনুযায়ী সে ব্যক্তিও প্রতারক-চোর হিসেবে বিবেচিত হবে।
তাই প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের উচিত এমন মারাত্মক বিষয় থেকে বেঁচে থাকা আর এজন্য মোহর আদায়ের পুরো ইচ্ছা থাকতে হবে।
আলেমরা বলেন, মানুষের সাধ্যের মধ্যে কোনও বিষয় থাকলেই মানুষ তা আদায়ের পুরোপুরি ইচ্ছা করে এবং তা আদায় করতে পারে। তাই সবার উচিত বিয়ের সময় মানুষকে দেখানোর জন্য বড় অংকের মোহর নির্ধারণ না করে নিজের সাধ্যমতো মোহর নির্ধারণ করা। এতে মোহর আদায় করা সহজ হবে এবং বড়ধরনের পাপ থেকে বেঁচে থাকা যাবে। (ইসলাহে ইনকিলাব, খন্ড,২, পৃষ্ঠা, ১২, বর-কনে, ১৫১)সাধ্যের অতিরিক্ত মোহর নির্ধারণ করে আদায় না করা গুনাহের কাজ। আর সাধ্যের মধ্যে অল্প মোহরানা নির্ধারণ করে তা আদায় করে দেয়াই ইসলামের বিধান।
বিয়ের সময় দুই পরিবারের সম্মতিতে বৈধভাবে বরপক্ষ থেকে যে আর্থিক লেনদেন কনেকে দেওয়ার জন্য নির্ধারিত করা হয়, সেটাই দেনমোহর।দেনমোহর হতে পারে কিছু টাকা বা কোন সম্পত্তি, যা একজন স্ত্রী তার সম্মানের প্রতীক হিসেবে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার অধিকার রাখে । সেই দেনমোহর একসাথে পরিশোধ করতে না পারলে কিভাবে কিস্তিতে তা পরিশোধ করা যায়, তা নিম্নে আলোচনা করা হলো –
ইসলামের রীতি অনুযায়ী স্বামী স্ত্রী উভয়ের পরিবার মিলে একত্রিত হয়ে, স্বামীর আর্থিক অবস্থা বুঝে একটা ভালো মানের দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। যা নির্ধারণ করলে স্বামী খুব সহজেই বিয়ের সময়ই তা পরিশোধ করে দিতে পারবে। বিয়ের সাথে সাথেই দেনমোহর পরিশোধ করা উত্তম।
দেনমোহর হচ্ছে স্ত্রীর হক, তাই এই দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর উপর ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমরা খুশি মনে তোমাদের স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধ করে দাও, অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিতে পারে”, (সূরা-নিসা,আয়াত-৪)। বিয়ের সময় একসাথে যদি পুরোটা পরিশোধ করতে না পারেন তাহলে দুই পরিবারের সম্মতিতে সময় নিয়ে কিস্তিতেও তা পরিশোধ করতে পারবেন। তাও পরিশোধ করতে হবে, দেনমোহর পরিশোধ করাটা বাধ্যতামূলক।
আরো পড়ুন :টোনার ব্যবহারের নিয়ম এবং টোনারের উপকারিতা।
পরিশেষে :
বলা যায় যে, বিয়ের বন্ধনের মাধ্যমে দুইজন নর-নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে । সেই বন্ধনকে আরও অটুট রাখতে দেওয়া হয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে তার সম্মানে সম্মানিত করে তার প্রাপ্য দেনমোহর। যা একটি বিয়েতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বিশেষ। সঠিক সময়ে দেনমোহর পরিশোধ করা উত্তম এবং কুরআনে বলা হয়েছে ” স্ত্রীর দেনমোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ, যে এ কাজ করে তাকে বলা হয় ব্যভিচারী”।