মহান আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব করা হবে। তাই মুমিনদের উচিত নামাজের প্রতি বেশি বেশি গুরুত্ব দেওয়া।যথাসম্ভব জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার আপ্রাণ চেষ্টা করা। কেননা নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির জামাতে নামাজের সওয়াব তার নিজের ঘরে ও বাজারে আদায়কৃত নামাজের সওয়াবের চেয়ে ২৫ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭)

ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অধিকাংশ জ্ঞাত আছে। তবে আপনি যদি ইমামেরে পিছনে তথা জামায়াতে নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে সঠিকভাবে না জেনে থাকেন, তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। 

নামাজ পড়ার গুরুত্ব এবং উপকারিতা অনেক বেশি । যা সংক্ষিপ্তে বলে শেষ করা যাবে না । তবে ইসলাম ধর্মে যেহেতু নামাজ হলো দ্ধিতীয় তম স্তম্ব, আর এটা নাবালক হতে বৃদ্ধ প্রায় সবার জন্যই ফরজ।  আর নামাজের মাধ্যমে আমরা অঢেল নেকি লাভ করতে পারি যা দ্ধারা কবর, হাশর, মিজান মূলত আখিরাতে আমাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির সহায়ক হবে। যাইহোক, এখন আপনাকে আমি প্রশ্ন করি, নামাজের মাধ্যমে কেমন নেকি বা সোওয়াব লাভ করা যায়?  আর জামাতে বা ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে কেমন সোওয়াব অর্জন করা যায়? সোওয়াব জিনিসটি মহান আল্লাহ তা’আলাই অবগত আছেন তবে যদি কোনো ব্যক্তি ঘরে বা দোকানে বা একা কোথাও স্থানে নামাজ পড়ে থাকে, তাহলে ঐ ব্যক্তি এক নামাজে ১ নামাজের সোওয়াব লাভ করবে।

তাহলে জামায়াতে নামাজ পড়ার ফজিলত কি? জামায়াতে নামাজ পড়ার ফজিলত হলো ১ রাকাত নামাজে ২৫গুণ সোওয়াব লাভ করা যায়। তাহলে এতোক্ষণে আমরা বোঝতে পেরেছি যে, জামায়াতে তথা ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার ফজিলত কেমন। এবার চলুন ক্রমান্বয়ে জেনে নেওয়া যাক জামায়াতে তথা ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে।

যদিও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম প্রায় একই রকম  তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ওয়াক্তে সামান্যতম ভিন্ন হয়। যেমন যোহর ও আছর নামাজ। তবে বিচলিত হওয়ার কোনো রকম কারণ নেই। কেননা, যোহর ও আছরের নামাজ কিভাবে জামায়াতে পড়তে হয়, সেই দিকটিকেও আলোচনায় নিয়ে আসবো। যাইহোক, এমনিতে স্বাভাবিকভাব বাকি ওয়াক্তের নামাজগুলো কিভাবে সঠিক উপায়ে ইমামের পিছনে পড়বেন? ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার নিয়ম হলো-

ইমামের পিছনে নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম:

  • প্রথমে একজন মুমিন ব্যক্তিকে মসজিদে গিয়ে হুজুরের পিছনে এক সাথে দাঁড়াতে হবে।
  • এরপর ইকামত দেওয়ার পর আপনাকে উক্ত নামাজের নিয়ত বাঁধতে হবে। ( ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম। )
  • এবার আল্লাহু আকবার বলে কান বরাবর হাত তুলে বুকের নিচে বা নাভির নিচে উভয় হাত ধরতে হবে।
  • এবার আপনাকে ছানা পড়তে হবে। (সুবাহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহামদিকা ওয়াতাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালাজাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা )
  • এবার ইমাম সাহেব সূরা পড়া শুরু করবে। প্রথমে সূরা ফাতিহা এবং এরপর কোরআন থেকে যেকোনো আরেকটি সূরা পড়বেন। এই ক্ষেত্রে কিন্তু আপনারা কোনো করম সাউন্ড করতে পারবেন না। জাস্ট শুনে যাবেন। কেউ কেউ বলে থাকে, সূরা ফাতিহা হুজুরের সাথে পড়ার কথা। অর্থাৎ হুজুর এক আয়াত পড়ে যখন একটু সময় নিবে, তখন আপনি পূর্বের আয়াতখানা পড়বেন। এভাবে সম্পূর্ণ সূরা ফাহিতা পড়বেন।
  • এখন হুজুর অন্য একটি সূরা পাঠক করবে। আপনাকে এখানে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনতে হবে। অমনোযোগী কোনো ভাবে ই হওয়া যাবে না।
  • এবার হুজুর যখন তিলাওয়াত শেষ করবেন, তখন প্রথম রুকুতে চলে যাবেন। তখন আপনারাও একই সাথে হুজুর আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে রুকুতে যাবেন এবং রুকুর তাসবিহ বা দোয়া পাঠ করিবেন অন্তুত ৩বার এবং বেজোড় ভাবে। (সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’যীম )
  • তাসবিহ পড়ার পর হুজুর “সামি আল্লাহু লিমান হামিদা” বলে পুনরায় উঠে দাঁড়াবে এবং আপনারাও উঠে দাঁড়াবেন।
  • এবার পুনরায় ইমাম “আল্লাহু আকবার” বলে বসে সিজদায় যাবেন। একই সাথে আপনারাও সিজদায় যাবেন।
  • সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করিবেন। (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা)
  • এখানেও আপনারা বিজোড়ভাবে উক্ত দোয়া বা তাসবীহ পাঠ করিবেন।
  • এভাবে পরপর দুইবার সিজদাহ দেওয়ার পর উঠে দাঁড়াবেন। এই অবধি এক রাকাত নামাজ শেষ হলো।
  • এভাবে প্রথম দিকের মতো আবার সূরা ফাতিহাপড়ে এবং অন্য সূরা পড়ে আবার রুকু ও সিজদাহ দিবেন।
  • এবার সিজদা দিয়ে উঠবেন না।
  • যদি দুই রাকাত হয়, তাহলে তাশাহাহুদ, দরুদ পড়বেন ও দোয়া মাছুরা পড়বেন এবং সর্বপরি সালাম ফিরিয়ে নামাজ সম্পূর্ণ করবেন। তবে যদি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ হয়ে থাকে, তবে তাশাহাহুদ ও দরুদ পড়বেন এবং পুনরায় ইমাম সাহেবের সাথে দাঁড়াবেন।
  • এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, যখন আপনারা তাশাহাহুদ পড়বেন, তখন আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাললাহু পড়ার সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উঁচু করে আবার নিচু করে নিবেন।
  • যাইহোক, চার রাকাত হলে হুজুরের সাথে উপরোক্ত উপায় বা নিয়ম অনুসরণ করে ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করতে পারেন।

উপরের নিয়মে আমরা সঠিকভাবে জামায়াতে নামাজ বা আদায় করতে পারি। আর যারা যারা তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ সহ ছানা এখনোও না শিখে থাকেন, তাহলে দয়া করে খুব দ্রুত শিখে ফেলুন। এতোক্ষণ আমরা ফরজ, মাগরিব ও এশার নামাজ কিভাবে জামায়াতে বা ইমামের পিছনে নামাজ পড়তে হয়, সে সম্পর্কে জেনেছি। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক যোহর ও আছরের দামাজ ইমামের ফিছনে কিভাবে পড়তেপারি। 

আরো পড়ুন :ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও কতটুকুউপকারি।

পরিশেষে :

বলা যায় যে আমাদের সবার উচিত সালাতের সহিত নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা। কেননা ইসলামে সালাতে নামাজ আদয়া করার ফজিলত ব্যাপক। আমরা কেউই চাইব না এই সাওয়াব হারাতে। মসজিদুল হারামে নামাজ আদায় করা আরোবেশি সাওয়াবের। তবে যেহেতু সৌদি আরবে গিয়ে সব ওয়াক্তে নামাজ পড়ার আমাদের অনেকের তৌফিক নেই, তাই আমাদের উচিত একা একা নামাজ না পড়ে মসজিদে গিয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। এতে করে এক দিকে আপনার নামাজ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং অন্যদিকে বেশি সাওয়াব লাভ।আশা করি কিভাবে জামাতে ইমামের পিছনে নামাজ পড়তে হয় সেই নিয়ম এবং সালাতে নামাজ আদায় করার ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরে আপনারা পাঠকগণ উপকৃত হতে পারবেন।

Write A Comment