আসসালামু আ’লাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।  দর্শক বন্ধুরা আপনাদের অনেকেরই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাষণ বা বক্তৃতা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে বা অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে চান কিন্তু অনেকেই জানেন না কিভাবে বক্তৃতা দেবেন বা কিভাবে একটা বক্তৃতা শুরু করতে হবে। আবার আমরা অনেক সময় বক্তব্য দিতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলি যার ফলে শ্রোতাদের সামনে লজ্জায়তাই পড়তে হয়।তাই আজ এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এই আর্টিকেলে আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন । আমি চারটি ধাপে এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব ।

বক্তব্যশুরু করার নিয়ম :

কোন অনুষ্ঠানে মানুষের সামনে কথা বলতে গেলে অনেকেরই হাত-পা কাঁপা শুরু হয়ে যায়, গলা শুকিয়ে যায়, হার্টবিট বেড়ে যায়। কিন্তু সহজ কিছু বিষয় মনে রাখলে সাবলীলভাবে উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়া সবার পক্ষেই সম্ভব হয় । 

(১) অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণ:                

কোন বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রায় সবাই অস্থির বোধ করে থাকি । এই অস্থিরতা দূর করার জন্য বারবার অনুশীলন করা প্রয়োজন । তোমার নোটগুলো বারবার পড়ে দেখো যে সব ঠিক আছে কিনা। যখন তোমার মনে হবে যে  বক্তব্য ঠিকআছে , তখন বারবার অনুশীলন করতে থাকো। নিজের বক্তব্য ভিডিও করো অথবা কোন বন্ধুকে তোমার বক্তব্যের সমালোচনা করতে বলো।  

(২) দর্শক বুঝে বক্তব্য দেওয়া:

তোমার বক্তব্য তৈরি করার আগে কাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছো, সে ব্যাপারে জেনে নাও। ফলে তুমি কোন ধরণের শব্দ বলবে, কী ধরণের তথ্য দেবে, বক্তব্যের ধরণ কেমন হবে, সে সম্বন্ধে একটা ভালো ধারণা থাকতে হবে।

(৩) বক্তব্যের বিষয়বস্তু সাজিয়ে নেওয়া:

নিজের বক্তব্যের জন্য কাঠামো দাঁড় করাও। বক্তব্যের ধাপগুলো লিখে রাখো। প্রথমেই বিষয়টির নাম লিখে রাখো, তারপর বিষয়টির কোন কোন দিক নিয়ে তুমি কথা বলতে চাও, তা লিখে রাখো । তোমার শ্রোতার মনোযোগ বক্তব্যের প্রথম ৩০ সেকেন্ডেই আকর্ষণ করার দিকে জোর দাও।

(৪) বক্তব্য কিভাবে শুরু করবে:

উপস্থিত বক্তৃতা শুরু করার নিয়ম গুলোর মধ্যে প্রথম রুল হলো কাগজ অথবা স্লাইড দেখে বক্তব্য না দেওয়া। এটি দর্শকের সাথে তোমার সংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে । দর্শকের দিকে তাকিয়ে কথা বললে তোমার এবং তোমার বক্তব্যের দিকেই সবার নজর থাকবে। বক্তব্যের কাঠামো তোমাকে বিষয়বস্তু মনে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

(৫) স্বরভঙ্গির যথাযথ ব্যবহার:

বক্তব্যে কী বলছো, তার সাথে সাথে কীভাবে বলছো, সেটাও সমান গুরুত্ব বহন করে থাকে । কথা বলার সময় গলার স্বর কখন ওঠাতে হবে এবং কখন নামাতে হবে, সে ব্যাপারে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। একইভাবে কথা বলে গেলে দর্শক বক্তব্য শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে । এজন্য গলার স্বরে তারতম্য এনে দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। এর ফলে তোমার আইডিয়াগুলো দর্শক খুব সহজেই বুঝতে পারবে।

(৬) দর্শকের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া:

বক্তব্য দেয়ার সময় দর্শকের দিকে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করো, প্রয়োজন হলে তোমার বক্তব্যে কিছু পরিবর্তন আন্তে পারো । একদম গৎবাঁধা বক্তব্য দিলে তুমি সবচেয়ে আগ্রহী শ্রোতারও মনোযোগ পাবে না।

(৭) নিজের ব্যক্তিত্বকে বক্তব্যের মাঝে ফুটিয়ে তোলো:

স্বাভাবিক ভাবে নিজের মত করেই সবসময় কথা বলবে, কখনোই একদম গাছের মত শক্ত হয়ে গিয়ে শুধু মুখ নাড়াবে না। তুমি যখন সাবলীলভাবে কথা বলবে, তখন শ্রোতারা তোমর কথা বিশ্বাস করবে। তখনই তোমার বক্তব্যের উদ্দেশ্য সফল হবে।

(৮) গল্প, কৌতুকের মাধ্যমে শ্রোতাকে আকৃষ্ট করা:

তোমার বক্তব্যের মধ্যে মজাদার কোন কৌতুক থাকলে দর্শক অবশ্যই আকৃষ্ট হবে। তাছাড়াও দর্শকেরা বক্তৃতার মাঝে গল্প শুনতেও পছন্দ করে। এজন্য বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন গল্প বক্তব্যের মধ্যে বলা যেতে পারে।

(৯)শুরুতেই মনোযোগ আকর্ষণ করা:

প্রথমে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য গতানুগতিকভাবে বক্তব্য শুরু না করে কোন চমকপ্রদ তথ্য অথবা অসাধারণ উক্তি দিয়ে বক্তব্য শুরু করাতে  হবে । বক্তব্য শেষ করার সময় পুরো বক্তব্যের সারমর্ম এবং শক্তিশালী বক্তব্য দিয়ে শেষ করতে হবে যা তোমার দর্শক অবশ্যই মনে রাখবে।

(১০) প্রযুক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা:

অডিও/ভিডিওর আধিক্য দর্শকের সাথে তোমার সম্পৃক্ততা কমিয়ে দেয়। এজন্য এগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। এমনভাবে অডিও/ভিডিও তোমার বক্তব্যে ব্যবহার করতে হবে যেন তোমার বক্তব্য বাধাগ্রস্ত না হয়, বরং এগুলোর উপস্থিতিতে তোমার বক্তব্য আরও শাণিত হয়।

আরো পড়ুন :ওয়ালটন ফ্রিজ কিস্তিতে যে নিয়মে কেনা যায়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে ভাষণ দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনি বুঝতে পেরেছেন। তবে তুমি যদি বক্তব্য তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট সময় দাও, তাহলে ভালো বক্তৃতা দেওয়া তোমার জন্য সহজ হবে। তাই, আজ থেকেই সাবলীল বক্তা হওয়ার জন্য অনুশীলন শুরু করে। 

Write A Comment