ওজন কমাতে অনেকে আপেল সিডার ভিনিগার-এর উপরেই ভরসা রাখেন। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে এটি একটি জনপ্রিয় টনিক। রক্তে কোলেস্টেরল ও শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতেএর জুড়ি মেলা ভার। সৌন্দর্য রক্ষায়ও কাজে লাগে এটি। কিন্তু ভিনিগার অম্ল হওয়ার কারণে তা দৈনিক খাদ্যতালিকায় যোগ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিয়ম পালন করা উচিত ।

ফরাসিতে ভিনিগার শব্দের অর্থ ‘সাওয়ার ওয়াইন’। সাধারণত ভিনিগার বলতে টক ওয়ানইকেই বোঝানো হয় । আপেল সিডার ভিনিগারের ক্ষেত্রে আপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটিরিয়া মিশিয়ে তাকে প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্যকর নানা কারণে এই ভিনিগারকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরাও।

ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারকে যদি রোজের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তবে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় কম লাগে। এই পানীয়টিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপদান শরীরে প্রবেশ করলে খিদে কমে যেতে শুরু করে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার খারণে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে সময় লাগে না। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে শুধু এই পানীয়টি খেলে কিন্তু তেমন একটা উপকার মিলবে না। ফল তখনই পাবেন যখন শারীরিক পরিশ্রম করার পাশাপাশি এই পানীয়টি পান করা শুরু করবেন।

আপেল সিডার ভিনেগার কি সত্যিই ওজন কমায়? উত্তর হলো, হ্যাঁ। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসিভি (আপেল সিডার ভিনেগার) খাবার খাওয়ার পরে গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া ঠেকায়। গ্লুকোজ কমে গেলে শরীরকে আগের মতো ইনসুলিন তৈরি করতে হয় না।আর কম ইনসুলিনের কারণে শরীরে আরও চর্বি ভেঙে যায়, ফলে ওজন কমতে শুরু করে থাকে । আপেল সিডার ভিনেগার ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে থাকে । এ কারণেই পেটের গভীরে চর্বি জমা হওয়ার ঝুঁকিও কমে।

অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খাওয়ার নিয়ম:

দিনে বড় চামচের দু’চামচ বেশি আপেল সিডার খাবেন না। খেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া যখনই এই ভিনিগার খাবেন তা অবশ্যই পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে ফেলতে হবে। যেমন এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ (৫-১০ মিলিলিটার) অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন।দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মাত্রায় আপেল সিডার খেলে এর অম্ল গুণ শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে দিতে পারে।অ্যাপেল সিডার কখন খাওয়া ভাল:

বদহজমের সমস্যা থাকলে সকালে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার যেতে পারে। সকালে এই পানীয় খেলে গ্যাস অম্বলের সমস্যা দূর হয়ে থাকে । তবে সকালে খালি পেটে এটি খেলে এর গন্ধে অনেকের বমি বমি ভাব হয়। সে ক্ষেত্রে সকালে খাবারের পরে এই পানীয় খাওয়া যেতে পারে।

ডায়াবিটিসের সমস্যায় এই ভিনিগার অনেক উপকারী। মূলত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের কারণেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাই । খাওয়াদাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস জলে এক চামচ আপেল সিডার মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। গলা ব্যথা কিংবা টনসিলের সমস্যা থাকলে রাতে ঘুমনোর আগে এক কাপ গরম জলে আপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। যারা অনিদ্রার সমস্যায় ভুগলে রাতের বেলা ভুলেও এটি খাবেন না।ওজন ঝরার ক্ষেত্রে খাওয়াদাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে এই পানীয় খেলে বেশি উপকার পাওয়া যেতে পারে। এই পানীয় বিপাক হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম ভাল হয়। শরীরের মেদ দ্রুত ঝরাতে এই উপায়ের উপর ভরসা রাখতে পারেন। খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে আপেল সিডার ভিনিগার খুবই উপকারী।

আপেল সিডার ভিনেগারের উপকারিতা:

অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। অতিরিক্ত ওজনের ফলে দেহে বিভিন্ন জটিল রোগ বাসা বাধে । তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যান্ত জরুরি। 

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আপনাকে সুস্থ রাখবে আপেল সিডার ভিনেগার। এটি একটি ফার্মেন্টেড জুস। এতে রয়েছে এসিটিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি৷ 

আপেল সিডার ভিনেগারের আমাদের কি উপকারে আসে নিম্নে দেয়া হলো

১. আপেল সিডার ভিনেগার ব্লাড সুগার কমায়।

২. কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ও হজমশক্তি বাড়ায়। 

৩. নিয়মিত ভিনেগার গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে ও হৃৎপিণ্ড সুস্থ থাকে।

৪. ত্বকের পি এইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ঘামের দুর্গন্ধ দূর করে। ৫. পা ব্যথা, পেট খারাপ, গলাব্যথা, সাইনাসের সমস্যা সারাতে ভালো কাজ করে আপেল সিডার ভিনেগার। 

 

সতর্কতা:

আপেল সিডার ভিনেগার অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। খেতে হবে নিয়ম মেনে পরিমাণমতো। খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে বা পরে আপেল সিডার ভিনেগার পান করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞরা দেন । 

অনেকেই হয়তো ঘুমানোর আগে এসিভি পান করেন, তবে এটি ঠিক নয়। ঘুমানোর আগে এসিভি পান করলে গলা ও খাদ্যনালির ক্ষতি হতে পারে। তবে ঘুমনোর আগে পান করলেও আধা ঘণ্টা পর ঘুমাতে যান। সবচেয়ে ভালো হয় ডিনারের আগে পান করা।

 যাদের অ্যাসিটিক পাথর তৈরি হয় কিডনিতে, তারা অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাবেন না। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তারা এটি এড়িয়ে চলুন।

যাদের দাঁতের সমস্যা যেমন এনামেল ক্ষয়ে যাওয়া, গর্ত হয়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তারাও অ্যাপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া থেকে বিরত থাকন।

আপেল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। পেটের মেদ কমাতে এবং রক্তে ইনসুলিনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।

অনেকেই হয়তো ঘুমানোর আগে এসিভি পান করেন, তবে এটি ঠিক নয়। ঘুমানোর আগে এসিভি পান করলে গলা ও খাদ্যনালির ক্ষতি হতে পারে। তবে ঘুমনোর আগে পান করলেও আধা ঘণ্টা পর ঘুমাতে যান। সবচেয়ে ভালো হয় ডিনারের আগে পান করা।

আরো পড়ুন :কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা।

পরিশেষে :

বলা যায় যে,ওজন কমাতে আপেল সিডার ভিনেগারের কোনো তুলনা নাই। তবে অতিরিক্ত এসিভি শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।আশা করছি এই আর্টিকেলটি আপেল সিডার ভিনেগার খেতে আপনাদের সাহায্য করবে। আপনারা বিশেষজ্ঞর পরমর্শ  নিয়ে আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন। 

Write A Comment