আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।কারো জমি আছে সেটার প্রমান হলো হলো তার নামের  জমির দলিল। তাই আপনার যদি জমি থাকে তাহলে অবশ্যই উক্ত জমির দলিল থাকতে হবে।

এছাড়া জমির যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে দলিল ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করতে হবে। যদি আপনার কাছে জমির  দলিল না থাকে তাহলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

জমির দলিল:

জমির দলিল হচ্ছে  একটি নির্দিষ্ট জায়গা সম্পর্কিত তথ্যের সমষ্টি৷ প্রতিটি জমির একটি নির্দিষ্ট দাগ নম্বর থাকে৷একটি নির্দিষ্ট দাগ নম্বরে, মৌজায় একটি ভুখন্ডের বিষয়ে কর, খাজনা, ক্রয়-বিক্রয়, ওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর ইত্যাদি করার বিষয়ে  যে একটি কাগজে সরকারি স্ট্যাম্প সমেত ও সরকারি রেকর্ডে স্থান পায় সেই দলিলটি হচ্ছে জমির দলিল৷ 

সেজন্য কেবলমাত্র জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজটি দলিল নয় বরং জমি সম্পর্কিত সকল তথ্যের  যে কোন কাগজপত্র দলিল হিসবে গণ্য৷

জমির দলিলের প্রয়োজনীয়তা: 

জমির দলিলের প্রয়োজনীয়তা জমির মালিকের কাছে অনস্বীকার্য! দলিলের মাধ্যমেই ব্যক্তির জমি সম্পর্কিত মালিকানা নির্ধারণ হয়ে থেকে৷  জমির প্রকৃত মালিকের কাছে জমির দলিল থাকা আবশ্যকীয় ৷ অন্যথায় প্রকৃত মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও জমি বেদখল হয়ে যেতে পারে ৷ কেননা জমির দলিলে যার নাম থাকে জমি তার বলেই গণ্য হয় ৷

এজন্য পারিবারিক বন্টন নামা করার পর তা রেজিষ্ট্রি করে যার যার জমির তার তার নামে জমির দলিল, তার নিকট হস্তান্তর করতে হয়৷ তাছাড়া জমি ক্রয় করলে আসল জমির দলিল দেখে তা ক্রয় করতে হয় ৷ কোন কারনে ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল না পাওয়া গেলে সর্বশেষ খাজনা পরিশোধ ও অন্যান্য তথ্য যাচাই করে নিতে হয়।  নাহলে ভুয়া জমি ক্রয়ের শিকার হবার সম্ভাবনা থাকে ও জেল, জরিমানার মুখোমুখি হতেপারে।  

জমির দলিলের প্রকারভেদ:

প্রথমে বলেছি,জমির দলিল কেবল ক্রয়-বিক্রয়ের কাগজটি বলা হয় না ৷ জমির দলিল হিসেবে গণ্য হয়  আরও অন্যান্য ডকুমেন্টসকে ৷ সেগুলো হলো –

  • খতিয়ান 
  • মাঠ পর্চা
  • বিক্রয় দলিল

খতিয়ান: 

খতিয়ান হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত জমির মালিকানা বা দাগের বর্ণনাসহ প্রস্তুতকৃত নথিচিত্র ৷ মূলত খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় জমির প্রকৃত মালিকদের নিকট থেকে সরকারি খাজনা আদায় করা জন্য।  এই খতিয়ানকে আবার কয়েকভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। 

  • সিএস খতিয়ান 
  • এসএ খতিয়ান
  • আরএস খতিয়ান
  • বিএস খতিয়ান বা সিটি জরিপ
  • পেটি খতিয়ান

মাঠ পর্চা: 

মাঠ পর্চা হচ্ছে সরকার প্রদত্ত জমির মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ান। জমি জরিপ করার সময় জমি মালিকদের জমি সম্পর্কিত তথ্য এতে দেওয়া থাকে 

মূল খতিয়ান প্রকাশের আগে একে খতিয়ানের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মাঠ পর্চায়  যদি কোন ভুল থাকে তবে খতিয়ান প্রকাশের পূর্বেই তা সংশোধন করে নিতে হবে৷

বিক্রয় দলিল:

বিক্রয় দলিল হচ্ছে জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দলিল৷  এতে খতিয়ানে উল্লেখিত দাগ নাম্বারের কোন জমি কার নিকট হতে বা কার কাছে বিক্রয় করা হল তা উল্লেখ করা থাকে৷ মূলত একেই সাধারণভাবে আমরা জমির মূল দলিল হিসেবে বিবেচনা করে থাকি৷

অনলাইনে জমির দলিল বের করার নিয়ম :

অনলাইনে জমির দলিল বের করার জন্য কয়েকটি ধাপে রয়েছে। সেগুলো নিম্নরূপ –

১ম ধাপ :

অনলাইন থেকে জমির দলিল বের করার জন্য সর্বপ্রথম   https://www.eporcha.gov.bd/khatian-search-panel এই ওয়েবসাইটটিতে চলে যাবেন।

২য়  ধাপ :

এই ওয়েবসাইটটিতে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম আপনাকে নিজ বিভাগ সিলেক্ট করতে হবে এরপর জেলা তারপর উপজেলা এবং সর্বশেষ মৌজা বাছাই করে নিতে হবে।

(তবে তার আগে আপনারা জমির জরিপ ধরন অনুযায়ী বি এস, সি এস,টি আর এস, আর এস, এস এ, পেটির কোন খতিয়াননের ভিতর আপনার জমি জেটি  সিলেক্ট  করতে হবে। ) 

৩য়  ধাপ :

তারপর আপনার সামনে চারটি অপশন উল্লেখ করা হবে। সেগুলো হচ্ছে-

খতিয়ান নং অনুযায়ী

দাগ নং অনুযায়ী

মালিকানা নাম অনুযায়ী

পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী

এই চারটি আসনের মধ্যে আপনার কাছে যে তথ্যগুলো রয়েছে তার ওপর ক্লিক করবেন ।সিলেক্ট করার পর আপনাকে নিচে আরেকটি বক্স দেখাবে।বক্সটি অবশ্যই পুরন করতে হবে।

অর্থাৎ, খতিয়ান নম্বর সিলেক্ট করে থাকলে খতিয়ান নম্বরটি বক্সে লিখুন, দাগ নম্বর সিলেক্ট করে থাকলে দাগ নম্বরটি বক্সে লিখুন, মালিকের নাম সিলেক্ট করে থাকলে মালিকের নাম বক্সে লিখুন, মালিকের পিতা বা স্বামীর নাম সিলেক্ট করে থাকলে পিতা বা স্বামীর নাম বক্সে লিখুন।

৪র্থ  ধাপ :

এরপর  আপনাকে ক্যাপচা পুরন করতে হবে, যেখানে দুটি সংখ্যা যোগ করতে বলা হবে। সংখ্যা দুটির যোগফল আপনি নিচের বক্সে লিখে দিবেন।

৫ম  ধাপ :

 সবশেষে  ‘খুজুন’ অপশনে ক্লিক করুন। আপনার অনুসন্ধানকৃত খতিয়ানটি মনিটরে দেখতে পাবেন ।

জমির দলিল বের ও যাচাই করার নিয়ম:

আগেই বলা হয়েছে ,জমির বিভিন্ন  ডকুমেন্ট দলিল থাকতে পারে। বিক্রীত দলিল থেকে শুরু করে ভূমি উন্নয়ন কর, খতিয়ান সবই হচ্ছে দলিল।প্রস্তাবিত জমিটির সর্বশেষ রেকর্ডে বিক্রয়কারীর নাম উল্লেখ আছে কি না এবং সিএস, আরএস সহ অন্যান্য খতিয়ানের ক্রম মিলিয়ে দেখতে হবে।

বিক্রয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমিটি বিক্রয়কারীর দখলে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। এ কারণে  সরো জমিনে নকশার সঙ্গে জমিটির  অবস্থা মিলিয়ে দেখতে হয়।

প্রয়োজনে পার্শ্ববর্তী ভূমির মালিকদের কাছ থেকে দাগ ও খতিয়ান নম্বর জেনে মিলাতে হবে।

জমির প্রকৃত মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখতে হবে প্রকৃত মালিক যথাযথ কিনেছে  কি না।

জমির ক্রেতাকে প্রথমেই দেখতে হবে সব শেষে যে দলিল করা আছে, তার সাথে পূর্ববর্তী দলিলগুলোর মিল আছে কি না। বিশেষ করে, ভায়া দলিলের সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না (ভায়া দলিল হচ্ছে মূল দলিল, যা থেকে পরের দলিল সৃষ্টি হয়)।

মিউটেশন বা নামজারি করা হয়েছে কি না এবং সে অনুযায়ী খতিয়ানে হস্তান্তরিত দাগের মোট জমির পরিমাণ এবং দাগের অবশিষ্ট পরিমাণ মিল আছে কি না তা  দেখতে হবে।

যিনি জমি বিক্রি করবেন তার কাছ থেকে ভায়া দলিলটি চেয়ে নিতে হবে। এরপর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জানতে হবে সব দলিলের দলিল নম্বর ঠিক আছে কিনা।

আর একটি বিষয় দেখতে হবে যে জমির খাজনারদেয়া হয়েছে কিনা এবং খাজনা পরিশোধের রশিদ আছে কিনা। 

আরও একটি  বিষয় খেয়াল করতে হবে যে ভায়া দলিল থেকে পরবর্তী যে  দলিল করা হয়েছে, তাতে প্রতি দাগের হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ঠিক আছে কি না।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমির দলিলের প্রকৃতি অনুযায়ী চারটি রেজিস্ট্রার বা ভল্যুমে লেখা হয়ে থাকে।  যদি কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হয় তাহলে রেজিস্ট্রি অফিসে সংরক্ষণ করা দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। এ জন্য নির্দিষ্টভাবে দরখাস্ত করতে হয় ।

আরো পড়ুন :ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম এবং প্রাপ্তির প্রক্রিয়া।

পরিশেষে:

বলা যাই যে ,জমি কেনার সময় জমির সকল ডকুমেন্ট বা কাগজ ভালো করে  নিতে হবে। অনলাইনে জমির দলিল বের করার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ ও সাশ্রয়ী ৷ এ পদ্ধতিতে জমির দলিল বের করা যায় যাতে একজনের শক্তি, সময় উভয়ই সাশ্রয় হয় ৷ তাছাড়া জমির মালিকানা নিয়ে যে কোন ঝামেলা, আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়ে থাকে৷

Write A Comment