প্রিয় পাঠক আসসালাম আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন । শবে বরাতের নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি নফল ইবাদত ,  নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শবে বরাতের নফল ইবাদত নামাজ পছন্দ করেছেন । 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম শবে বরাতে নামাজের নিয়ম যথাযথ মেনে ইবাদত করতে বলেছেন।

শবে বারা’আত:

শবে বরাত বা লাইলাতুল বারা’আত হচ্ছে হিজরী শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখে মধ্যবর্তী রাতে শবেবরাত পালিত হয়। মুসলমানদের জন্য এই রাতটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক বিশ্বাস মতে শবে বরাতের রাত আল্লাহতালার  কাছে  ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি  রাত। তাই  মুসলমানদের জন্য এই  রাত  খুব  গুরুত্বপূর্ণ।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  শবে বরাত সম্পর্কে বলেছেন  , আমার কাছে আরবি শাবান মাসের ইবাদত বন্দেগী অধিক প্রিয় ,  তাই তোমাদের কাছে শবে বরাতের রাত হাজির হবে তখন তোমরা সে রাতে জাগ্রত থাকো, নামাজ পড়ো, জিকির করো, কোরআন তেলাওয়াত করো , তাসবীহ পড়ো ইত্যাদি  এবং  দিনের বেলায় রোজা রাখো।

শবে বরাতের  রাতে গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহ সকল বান্দরকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাকিয়ে থাকে। আমরা যদি মন খুলে এই দিনে মহান রব্বুল আলামীনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি তাহলে আল্লাহতালা  সকলের  আশা-আকাঙ্ক্ষা , দুঃখ কষ্ট, এবং  গুনাহ মাফ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

শবে বরাতের নামাজ:

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য শবে বরাত খুবই পবিত্র একটি রাত। মুসলিমরা এই রাতে সারা রাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। এছাড়া রোজা রাখা এই দিনে অনেক উত্তম। শবে বরাতেরনফল ইবাদত সঠিক করে এবং নিয়ম অনুসারে খুব মনোযোগ দিয়ে আদায় করেতে হবে।শবে বরাতের নফল নামাজ অন্যান্য নফল নামাজের মতই পড়তে হবে।

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত:

বাংলা এবং আরবি দুই ভাবেই শবে বরাতের নামাজের নিয়ত করা যায়।  নিচে শবে বরাতের নামাজের নিয়ত বাংলা এবং আরবি দুই ভাবে উল্লেখ করা হলো-

  • শবে বরাতের নামাজের বাংলা নিয়ত:

“ আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতেদু‘রাক‘আত নফল নামায আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার”।

  • শবে বরাতের নামাজের আরবি নিয়ত:

“নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তা‘আ-লা- রাক‘আতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার”।

শবে বরাতের নামাজ:

শবে বরাতের নামায দুই রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় ততই  বেশী ছওয়াব। নামাযের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াব পাওয়া যায়। 

শবে বরাতের নামাজের নিয়ম:

শবে বরাতের নামাজের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। প্রতিদিনের মতোই এশার সালাত আদায় করার পর শবেবরাতের জন্য দুই রাকাত  দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে হবে। আপনি চাইলে ১২ রাকাত কিংবা তার চেয়ে বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন।

  • শবে বরাতের নামাজের জন্য প্রথমেই নিয়ত করতে হবে।
  • নিয়ত করার পর আল্লাহু আকবার বলে নামাজে দাঁড়াতে হবে। 
  • প্রতি রাকাতে সুরা ফাতেহার সাথে অন্য কোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে। 
  • এর পর রুকু করতে হবে।
  • তারপর সেজদা করতে হবে। 
  • সেজদা থেকে উঠে সালাম ফেরাতে হবে। 

শবে বরাত নামাজের রোজা রাখার নিয়ম:

শবে বরাতের রাতে আল্লাহ তা’লার প্রতিটি বান্দায় বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় ও জিকির করে থাকে। এছাড়া শবে বরাতের নফল নামাজের পাশাপাশি নফল রোজা ও  করে থাকে। 

হাদিস শরীফে শবে বরাতের রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, রাতে ইবাদত কর এবং দিনে রোজা রাখো। তাহলে শবে বরাতের রোজা একটিও রাখা যায়। তবে বিভিন্ন হাদিসে এসেছে যে , রাসূল (সা.) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখতেন। এই হিসেবে শবে বরাতে ও তিনটি রোজা রাখতে উৎসাহিত করেছেন। তাহলে শাবান মাসে তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে।রোজা রাখার পাশাপাশি  আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে পারেন  এতে আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে ইনশাল্লাহ । শবে বরাতের রোজার অনেক ফজিলত রয়েছেএবং শবে বরাতের রাত্রিতে নফল ইবাদত করা বেশি প্রয়োজন।

এ বিষয়ে অন্য একটি হাদিসে এসেছে, হজরত উম্মে সালমা ও হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত শাবান মাসে প্রায় পুরোটা সময়ই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম  রোজা রাখতেন।  সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অধিক সওয়াবের কাজ।

আরো পড়ুন :সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার নিয়ম ও সঞ্চয়পত্র কেনার ডকুমেন্ট সমূহ।

পরিশেষে:

বলা যাই যে ,সারা বিশ্বের প্রত্যেকটি মুসলমানদের জন্য শবেবরাতে রাত্রি হচ্ছে ভাগ্য পরিবর্তনের একটি রাত। আমরা মুসলিম বান্দা অবশ্যই এই বরকতময় রাতে বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করব। আমাদেরকে সব সময় বেশি বেশি করে সালাত আদায় করতে হবে। হাদিস অনুসারে এই রাত দোয়া , কবুল, ক্ষমা, প্রার্থনা, আল্লাহর কাছে চাওয়া রাত। 

 

Write A Comment