আস্সালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বর্তমান সময়ে মানুষের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়েই চলছে। খাবারে ভেজাল ও খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম, ভাজাপোড়া বা তেল-মসলাযুক্ত খাবার ,অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও ধূমপানসহ নানা কারণে গ্যাস্ট্রিক নামক রোগে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে ।এটা একটি পরিচিত সমস্যা। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় বুকের ব্যাথা মারাত্মক আকার ধারন করে। কিছু খাবার রযেছে, যা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে, আজ আমরা এই আর্টিকেলটিতে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা দূর করার সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
গ্যাস্ট্রিক কি?
পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করাই হলো গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি । সাধারণত অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ঝাল,ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে ইত্যাদি থেকে গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বেশি হতে পারে। কারণ এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত অ্যাসিডের দরকার হয়, ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরিত হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে।অতিরিক্ত অ্যাসিড থেকে পেটে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাও হয় এবং পেট ফোলাভাব বা ফাঁপা ও হজমজনিত সমস্যাও হয়ে থাকে।
এই রোগের লক্ষ্মণ :
প্রতিটি রোগের নানা রকম লক্ষণ থেকে থাকে এবং এই গ্যাস্টিক এর নানা রকম লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন আপনার গ্যাস্ট্রিক হয়েছে।
এ রোগের সব থেকে বেশি লক্ষণ গুলো হলো বারবার বমি বমি ভাব হওয়া ,পেট জ্বালাপোড়া করা, বদ হজম হওয়া ,বুকে ব্যাথা হওয়া ,গলার কাছে কিছু বেঁধে থাকা ইত্যাদি।একক জনের গ্যাস্টিক লক্ষ্মণ একক রকম হয়ে থাকে।
গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার উপায়:
বুকে বিভিন্ন কারণে ব্যথা হয়ে থাকে। তবে বুকের ডানপাশে ব্যথা হলে বুজতে হবে গ্যাসের ব্যাথা। এই ব্যথা সাধারণত গ্যাসের ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যায় এবং বেশি করে পানি পান করলেও ঠিক হয়ে যায়। ওষুধ ও পানি খাওয়ার পরে যদি বুকের ব্যাথা ভালো না হয় তাহলে নিম্নে কিছু গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার প্রাথমিক উপায় দেওয়া হলো-
ঠান্ডা পানি দিয়ে সেক :
বুকে সেখানে ব্যথা সেই বরাবর একটি পাত্রে ঠান্ডা পানি নিয়ে ব্যথা স্থানে চেপে ধরে রাখুন। এভাবে কিছুক্ষণ ছেক দিয়ে দেখুন ব্যথা ভাল হয়ে যাবে।
জোরে জোরে নিঃস্বাস নিন:
বুকে ব্যথা হলে প্রথমে বড় করে ভেতর দিকে নিঃস্বাস টান দিন এরপর আবার আস্তে আস্তে বাহিরে ছেড়ে দিন। এভাবে কয়েক বার করলে গ্যাসের ব্যথা কমে যাই ।
মালিশ করুন:
বুকের যে স্থানে ব্যথা হয় সেই স্থানে মুভ বা টাইগার বাম দিয়ে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। ৪ থেকে ৫ মিনিট মালিশ করলে আশা করি গ্যাসের ব্যথা কমে যাবে।
উপরের এই তিনটি গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর না হলে নিচে কিছু বুকে ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে এমন কয়েকটি খাবারের নাম সম্পর্কে জানানো হল-
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে দই:
দই উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার ভালো উৎস। দই হজমে এবং বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে। পানির সঙ্গে দই মিশিয়ে পানীয় তৈরি পান করতে পারেন। এতে ভাজা জিরা ও বিট লবণ মিশিয়ে স্বাদ বাড়াতে পারেন।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভেষজ চা:
নানান ঔষধি গুণ সম্পন্ন গাছ পাতা দিয়ে তৈরি করতে হয় ভেষজ চা। এতে শক্তিশালি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদানরয়েছে । ভেষজ চা হজমে সাহায্য করে ও বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে । ভেষজ উপাদানের মধ্য আদা, পুদিনা, ক্যামোমাইল ও লেবু উল্লেখ্যযোগ্য। ভেষজ চা বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভাল কাজ করে থাকে।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভিনিগার:
দুই চা-চামচ ভিনিগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে এই ভাবে নিয়মিত ভিনিগার গ্রহণ করা যেতে পারে। এটা বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম কিংবা কিছু সময় হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। এতে বুকে গ্যাস জমতে পারবে না। যেটা বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভাল কাজ করে ।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে সবজি:
উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার সবুজ শাক সবজি হজম ক্রিয়া উন্নত করে ও বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। বুকে গ্যাসের ব্যথা স্বাস্থ্য কে ভালো রাখতে ব্রকলি বেশ ভালো। এটা আঁশ সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সালফোরাফেন যৌগের উৎস যা, বুকে গ্যাসের ব্যথা সমস্যা সৃষ্টিকারী হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ‘পিপারমিন্ট অয়েল:
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যে পিপারমিন্ট অয়েল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে আইবিএসের উপসর্গ তথা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, অত্যধিক গ্যাস ও বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভালো কাজ করে থাকে। খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে এই সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পারেন।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে শসা:
বুক ও পেট বুকে ঠাণ্ডা রাখতে শসার তুলনা হয় না। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বুকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে আনে এবং বুকের জ্বালা দূর করে থাকে।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে লবঙ্গ:
প্রাচীনকাল থেকেই বুকে গ্যাসের ব্যথা, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদির জন্য লবঙ্গ ব্যবহার করা হয় । লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া বা খাবারের পরে এলাচের সঙ্গে লবঙ্গের গুঁড়া মিশিয়ে এক কাপ চা পানে অ্যাসিডিটি কমায় এবং অতিরিক্ত গ্যাস দূর করতে সহায়তা করে থাকে। যেটা বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে ভাল কাজ করে থাকে।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে পুদিনা পাতা:
পুদিনা পাতার তেল ডায়রিয়া, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভূমিকা রাখে। পুদিনা পাতায় থাকা অ্যান্টিপেসমোডিক গুণাগুণ বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে। যারা প্রতিনিয়ত বুকে গ্যাসের ব্যথায় ভোগেন তারা নিয়মিত এই পাতার রস ও তেলে খেলে ভালো ফলাফল পাবেন।
বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে মৌরি বীজ:
মৌরি বীজ বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে উপকারী। মৌরিতে রয়েছে কপার, পটাশিয়াম,ক্যালিশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রনের মতো খনিজ। এতে আছে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ যৌগ যা বুকে গ্যাসের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে থাকে , খাবার হজমে সহায়তা করে, বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ দূর করতে সহায়তা করে।
আরো পড়ুন :ভোটার নিবন্ধন করা ও অনলাইনে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
আরো পড়ুন :পাসপোর্ট করার কাগজপত্র সমূহ ও পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম
পরিশেষে :
বলা যায় যে ,যেহেতু আমাদের অসচেতনতাই এই রোগের মূল লক্ষণ সেহেতু আপনাদেরকে এ ব্যাপারে বেশি সচেতন হতে হবে।আর যদি সচেতন থাকা অবস্থায় এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে উপরের পদ্ধতি মেনে চললে আশা করি খুব সহজে গ্যাস্ট্রিক থেকে রক্ষা পেতে পারেন। এই উপায়গুলো মেনে চললে আপনারা খুব সহজে বুকের ব্যথা থেকে নিরাময় পাবেন।