প্রিয় পাঠক আসসালাম আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।ত্বক গ্লো করা, সজীব রাখা, চুল পড়া রোধ করা,ত্বকের দাগ দূর করা , চুল ঘন ও লম্বা করা এসব এর জন্য যেসব কসমেটিক্স এ যে উপাদানগুলো ব্যাবহার করা হয়  তার একটি সাধারণ উপাদান হলো অ্যালোভেরা। অ্যালোভেরাতে রয়েছে অনেক ধরণের ঔষধি উপাদান এজন্য সৌন্দর্য জগতে অ্যালোভেরার ব্যবহারও অনেক বেশী। কিন্তু এই সৌন্দর্য চর্চায় অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী যে অসাধারণ কাজ করে তা অনেকে জানেই না। তাই সৌন্দর্য চর্চায় ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার সহজ কিছু ব্যবহার নিয়ে  আলোচনা করবো এই আর্টিকেলে ।

অ্যালোভেরা :

ইংরেজিতে অ্যালোভেরাএকটি উদ্ভিদের নাম বলা হলেও গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে এটি ঘৃতকুমারী নামে পরিচিত। এটি  বহুগুণ সম্পন্ন ভেষজ ওষধি উদ্ভিদ। এতে  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। যেমনঃ ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফলিক অ্যাসিড,জিঙ্ক,  অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিন-এ, বি২ ও বি৬ ইত্যাদি।

অ্যালোভেরা দিয়ে রূপচর্চা শুধু ত্বকের উজ্জ্বলতা আনে তা নয়, নানা ধরণের স্কিন প্রবলেম থেকেও ত্বক কে সুরক্ষিত রাখে। এই উদ্ভিদে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট আছে ফলে প্রাকৃতিক এই উদ্ভিদ দ্বারা বিভিন্ন প্রকার বিউটি প্রডাক্ট তৈরী করা হয়।

এছাড়া এই উদ্ভিদে রয়েছে  মেনাস, ল্যাকটিন, পলিস্যাকারাইড ইত্যাদি।  এই উদ্ভিদ ত্বকের পাশাপাশি চুলকে শাইনি সিল্কি ও ঝলমলে করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ গাছের চারা লাগিয়ে অ্যালোভেরা চাষ করা যেতে পারে।

অ্যালোভেরার কাজ 

অ্যালোভেরাকে বলা হয় জাদুকরী ভেষজ। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ভালো, তেমনি উপকারী ত্বকের জন্য উপকারী। এই গরমে ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা ব্যবহার করলে ত্বক ঠান্ডা থাকবে । এছাড়া ত্বক উজ্জ্বল করার পাশাপাশি  ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। ব্রণের দাগ ও অন্যান্য কালচে দাগ দূর করতেও অ্যালোভেরার জুড়ি নেই।

  • একনে বা পিম্পল দূর করে।
  • পায়ের গোড়ালি ফাঁটা কমায়।
  • সান বার্ন দূর করে।
  • ত্বকে বলিরেখা রোধ করে।
  • ত্বকের যৌবন ধরে রাখে।
  • ত্বককে  সজীব রাখে।
  • চুলের বৃদ্ধি  ঘটায়।
  • মেকআপ  উঠাতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সৌন্দর্য চর্চায় ঘৃতকুমারী ব্যবহার

অ্যালোভেরা জেলগ্রীষ্মকালে ত্বকে খুব ভালো কাজ করে কারণ এর ৯৮ শতাংশই পানি থাকে। অ্যালোভেরা জেল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টি ইনফ্লামাটরি, অ্যান্টি অক্সিডাইজিং, অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যাস্ট্রিজেন্ট সমৃদ্ধ। অ্যালোভেরা ত্বকের পাশাপাশি চুলের ও যত্নে খুব ভালো কাজ করে।

  • শুষ্ক ত্বকের যত্নের কসমেটিক্স এ অ্যালোভেরা থাকে কারণ এটি ত্বককে সজীব করে যা আপনিও বাসায় করতে পারেন। ছুরি দিয়ে অ্যালোভেরার ভিতরের জেল বের করে  মুখের ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ , উজ্জ্বল আর নরম হবে।
  • বয়সের বাড়ার সাথে আমাদের চামড়ায় ভাজ পড়ে  এই অ্যালোভেরা  জেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ। এই জেল ব্যবহার করলে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং এর  ভিটামিন এ, বি, সি ও এ  উপাদান ত্বকের পুষ্টি যোগায়এবং ত্বককে  ভাঁজ পড়া থেকে রক্ষা করে।  
  • রোদে পোড়া দাগ দূর করে ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখতে অ্যালোভেরা  জেল খুব উপকারি। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল আর অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।এই মাস্ক  ত্বকের সান বার্ন দূর করে। 
  • অ্যালোভেরা দিয়ে ত্বকের মৃত কোষ দূর করার জন্য এক চা চামচ ওটমিলের গুড়া আর ১-২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি মাস্ক তৈরি করুন। মুখে আর গলায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখবেন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন । 
  • একনি  সারাতে আর  নুতন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানটি । অ্যালোভেরার জেল আইস কিউব ট্রেতে করে অ্যালোভেরার আইস কিউব তৈরি করতে পারেন এবং এই কিউব দিনে দু তিনবার আপনার একনেতে ঘষলে একনের সমস্যা কমে যাবে।
  • ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্য অ্যালোভেরা অনেক উপকারি। অ্যালোভেরার জেল ব্যবহারে মাথার ত্বকের পি এইচ ঠিক থাকে আর খুশকিও দূর হয়। ক্যাস্টর অয়েল আর ২ঃ ১ অনুপাতে  অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু  করতে হবে। চুল খুশকি মুক্ত থাকবে।
  • ঠোঁট এর রঙ উজ্জ্বল রাখতে ঠোঁট নরম আর মসৃণ করতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে লাগলে ঠোঁট উজ্জ্বল হবে। এক টেবিল চামচ  চালের গুঁড়া আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে আস্তে আস্তে এই মিশ্রণ ঠোঁটে লাগিয়ে ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ঠোঁট উজ্জ্বল, মসৃণ এবং কোমল হয়েউঠবে।
  • টক দই প্রাকৃতিকভাবে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল ও ১ চা চামচ টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। ত্বক শুষ্ক হলে ১ চা চামচ মধু মেশাবেন এই প্যাকে। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় হবে মধুর বদলে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ১৫ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। 
  • পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারকেলের তেল মিশিয়ে ত্বকে লাগান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। 
  • মুলতানি মাটির সাথে পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা জেল ও কয়েক ফোটা গোলাপ জল মিশিয়ে ফেইস মাস্ক তৈরি  করে এই ফেইস মাস্ক মুখে এপ্লাই করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এই প্যাকটি  প্রতিদিন একবার করে ব্যবহার করতে পারেন।
  • অতি অল্প খরচে বাজারে এই অ্যালোভেরা পাওয়া যায়। আপনার রূপচর্চার এই  ঘরোয়া উপাদানটি আপনাকে সতেজ, সুন্দর আর  উজ্জীবিত করে তুলবে। 

সতর্কীকরণ:

অ্যালোভেরা কাটার পর সরাসরি মুখে না লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কারণ অ্যালোভেরার কাটার স্থান থেকে কিছু হলুদ রঙের জলীয় পদার্থ বের হবে। তা ধুয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করে নিন। অন্যথায় অনেক সময়ই এই হলুদ নির্যাস আপনার ত্বকের জন্য এলার্জির কারণ হতে পারে।

ত্বকে যদি এলার্জি থাকে তাহলে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে রূপচর্চার সময় সরাসরি মুখে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার না করে, হাতে বা শরীরের অন্য যেকোন জায়গায় ব্যবহার করে দেখুন।

আরো পড়ুন: অনলাইনে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম ও ভোটার হওয়া প্রক্রিয়া

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,অ্যালোভেরা জেল অতি অল্প খরচে বাজারে এই অ্যালোভেরা  জেল পাওয়া যায়। রূপচর্চায়  এই  ঘরোয়া উপাদানটি ত্বককে সতেজ, সুন্দর আর  উজ্জীবিত রাখবে।এটি খাওয়া যেমন শরীরের জন্য উপকারী তেমনি ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার জেল ভীষণ উপকারী। 

Write A Comment