আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। ব্রণের চেয়ে ও বেশি অস্বস্তিদায়ক হচ্ছে এর দাগ। ব্রণের সমস্যায় অনেক নারী-পুরুষই ভুগছেন । বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে ব্রণের সমস্যা সব থেকে বেশি দেখা দেয়।অতিরিক্ত ব্রণ হওয়ার ফলে অনেকের মুখেই কালো দাগ পড়ে যায়।
আবার কখনও কখনও ব্রণ সেরে গেলেও মুখের ওই স্থানগুলোতে গর্ত হয়ে যায়। এতে মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই কমে যায়। নিশ্চয়ই ব্রণের দাগ দূর করতে বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করেছেন, তবুও ফলাফল শূন্য!তবে ঘরোয়া যত্নেই দূর হতে পারে এই দাগ।
ব্রণ ও ব্রণের দাগ কি:
ত্বকের একটি ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা ব্রণ বা একনি । আমাদের ত্বকের নিচে সিবাসিয়াস গ্রন্থি নামক এক ধরনের তৈলগ্রন্থি থাকে যেগুলো আমাদের ত্বককে মসৃণ ও নরম রাখতে এক ধরনের তৈল (সিবাম) উৎপন্ন করে থাকে।এ গ্রন্থি যদি কোন হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বা অন্য যে কোন সমস্যায় অতিরিক্ত সিবাম বা তেল উৎপন্ন করতে শুরু করে, তখন এ অতিরিক্ত তেল গ্রন্থিকোষ ফেটে আশেপাশের টিশ্যুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাক্টেরিয়া এই তেল ভেঙ্গে ফ্যাটি এসিডে পরিণত করে। ফ্যাটি এসিড ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই প্রদাহের ফলে ত্বকে ছোট ছোট দানা, ছোট ফোঁড়া, সিস্ট বা নোডিউল সৃষ্টি হয়। তখন এগুলোকে আমরা ব্রণ বলে থাকি।আর এগুলো থেকে কালো কাল দাগ হয়।
ব্রনের দাগ দূর করার প্রাকৃতিক উপায় :
বর্তমানে শুধু কিশোর কিশোরীদেরই নয়, তরুণ তরুণী, মধ্যবয়সী নারীদেরও ব্রনের সমস্যা হয়ে থাকে। ব্রন দূর করার চেয়ে ব্রনের দাগ দূর করা আরো কঠিন। প্রাকৃতিক উপাদান এবং ডাক্তারের সাহায্যে ব্রন দূর করা যায় কিন্তু ব্রনের এই জেদি দাগগুলো থেকেই যায়। এই দাগ কিছুতেই যেতে চায় না। কিন্তু নিয়মিত চেষ্টায় ও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সহায়তায় এই দাগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব। এই উপাদানগুলো প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে ত্বকে কাজ করবে এবং আপনার ত্বক থেকে স্থায়ীভাবে দাগ দূর করবে।নিম্নে কিছু ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় আলোচনা করা হলো –
(১)লেবু:
লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। লেবুর রসের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে দাগের উপরে ৩-৪ মিনিট আলতো ভাবে ঘষুন।
যদি সেনসিটিভ স্কিন হয় তাহলে লেবুর রসের সাথে সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে নিবেন। সম্ভব হলে ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
লেবুর ফেসপ্যাক:
১টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ আমন্ড তেল,১ টেবিল চামচ মধু, একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্রন থাকা অবস্থায় দুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
(২)মধু:
রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালো করে পরিস্কার করে মধু লাগান। সারারাত তা রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে তা ধুয়ে ফেলুন।
দারুচিনি গুঁড়া মধুর সাথে মিশিয়ে শুধুমাত্র দাগের উপর লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সারারাতও রাখতে পারেন।
মধুর ফেসপ্যাক:
প্রথমে কমলালেবুর খোসা গুঁড়ো করে নিন।এক টেবিল চামচ কমলালেবু খোসার গুঁড়ো ও এক টেবিল চামচ মধু নিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্টটি মসৃণ হতে হবে।এরপর এই পেস্টটি মুখের যেখানে ব্রণের দাগ রয়েছে সেই অংশে ভালো করে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট মতো রেখে হালকা গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
(৩) অ্যালোভেরা জেল:
অ্যালোভেরা জেল দিনে দুইবার মুখে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটা শুধুমাত্র ব্রনের দাগই দূর করবে না,আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে এবং অ্যালোভেরা জেলের
ফেসপ্যাক:
এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন এরপর এই পেস্টটি মুখে ভালো করে লাগান এবং ১০-১৫ মিনিট মতো রেখে হালকা গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।এটি সপ্তাহে তিন দিন করুন। আস্তে আস্তে ব্রণের দাগ চলে যাবে।
(৪) চন্দনগুঁড়া :
অধিকাংশ সময় ব্রণ চলে গেলেও তার দাগ থেকে যায়।এ ধরনের দাগছোপের জন্য চন্দনগুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে।
চন্দনগুঁড়া ফেসপ্যাক :
চন্দনগুঁড়া অনেক সময় ব্রণ হওয়া প্রতিরোধ করে এবং দাগ ত্বকে বসতে দেয় না। ২ টেবিল চামচ চন্দনগুঁড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন এবং মুখের ত্বকে লাগিয়ে নিন। এরপর আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার বা দুবারের বেশি মিশ্রণটি ব্যবহার করুন ।
(৫) কাঁচা হলুদ:
কাঁচা হলুদ ব্রণের জন্য খুবই কার্যকর একটি উপাদান। এই মিশ্রণটি শুধুমাত্র ব্রণদূর করার কাজ করে না বরং ব্রণের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
কাঁচা হলুদ ফেসপ্যাক :
১ টেবিল কাঁচা হলুদ বাটা এবং ১ টেবিল চন্দন কাঠের গুঁড়ো একত্রে নিয়ে এতে পরিমাণ মত পানি মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করতে হবে। এরপর মিশ্রণটি ব্রণ দাগের জায়গায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
(৬)লাল টমেটো:
টমেটোতে থাকা উপাদান ব্রনের দাগ দূর তো হবেই সেই সাথে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
টমেটোর ফেসপ্যাক :
২টেবিল চামুচ টমেটোর রস এবং ১টেবিল চামুচ চালের গুঁড়া এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। এরপর ৫মিনিট ম্যাসাজ করে শুকানো পর্যন্ত রেখে দিন। তারপর পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করুন।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। তাই অবশ্যই ত্বকের জন্য নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস ত্যাগ করতে ও ভালো কিছু অভ্যাস তৈরি করতে হবে ।
(১)ব্রনে নখ নয় :
আপনার ব্রনে ভুলেও নখ লাগাবেন না বা চাপ দিবেন না। চুলকানি হলেও স্পর্শ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে । আর যদি প্রতিকারের জন্য কোন ওষুধ বা কোনও কিছু ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই হালকা ভাবে করতে হবে যতটা সম্ভব না স্পর্শ করে চেষ্টা করুন।
(২) সূর্যের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন:
সূর্যের আলোতে ব্রনের দাগ বসে যায়। তাই সূর্যের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। যদি বাইরে না গেলেই নয়, তখন অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম লাগিয়ে যাবেন। আর ছাতা, হ্যাট, স্কার্ফ ওড়না ইত্যাদি দিয়ে নিজের ত্বককে সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন।
ব্রন ও ব্রনের দাগ থেকে মুক্তির কিছু টিপস-
- প্রতিদিন ৩-৪লিটার পানি পান করবেন।
- প্রতিদিন যেকোনও ধরনের মৌসুমি ফল খেতে চেষ্টা করবেন। এটি আপনার ত্বককে সতেজ রাখবে।
- যতটা সম্ভব ফাষ্ট ফুড বা তেলযুক্ত জাতীয় খাবার পরিহার করবেন।
- বাইরে থেকে আসামাত্র সব সময় মুখ ফেসওয়াস দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।এতেকরে ত্বকে জমে থাকা ধূলোবালি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- অনেকেরই নখ দিয়ে ব্রণ খোটার বাজে অভ্যাস রয়েছে। এটা কোন সমাধান না। উল্টো এতে ব্রণের অবস্থা আরও খারাপ হবে। এর ফলে ব্রণ লাল হয়ে যাবে।
- এমনকি ব্রণ না যাওয়া পর্যন্ত মেক-আপ ব্যবহার না করাই উচিত। দিনে অন্তত দুই বার তেল-মুক্ত ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- সূর্যের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে কারন সূর্যের আলোতে ব্রণের দাগ বসে যায়। তাই চেষ্টা করবেন সূর্যের সংস্পর্শ থেকে নিজেকে দূরে রাখার।
- যারা বহুদিন যাবত ব্রণসমস্যায় ভুগছেন এবং কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। তারা আর দেরি না করে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
আরো পড়ুন :মুখের দুর্গন্ধ দূর করার ঘরোয়া উপায় ও কিছু অভ্যাস মানা
পরিশেষে :
বলা যাই যে ,ব্রণ হবার একটি অন্যতম কারণ হলো অপরিষ্কার ত্বক। তাই ত্বক রাখতে হবে পরিষ্কার। নিয়মিত স্ক্রাবিং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।উপরের সবগুলো উপাদান ত্বকের দাগ দূরের জন্য বেশ উপকারী। তবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে উপাদান বেশি ভালো তা ব্যবহার করুন।