আসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনারা সবাই ভালো আছেন। মুসলিম উম্মার জন্য পবিত্র রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই রহমত বর্ষণ হয়ে থাকে । এ মাসকে আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাজিলের মাধ্যমে অন্য সব মাস থেকে অধিকতর সম্মানিত করেছেন। এ মাসের এমন একটি রাত রয়েছে যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি, সেই রাতটি হলো লাইলাতুল কদর।
তিনি বলেন, রাসূল( সা.) শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের মাঝে খতিব হিসেবে দাঁড়ালেন, বললেন মাহে রমজান এমন একটি মাস যার প্রথম ভাগ রহমত, মধ্যবর্তী ভাগ মাগফেরাত বা ক্ষমা আর শেষ ভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। অর্থাৎ রমজান মাসের ৩০ দিনের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। (সহিহ ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)
এ মাসে মুমিনকে যেসব বিষয়ের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তম্মধ্যে অন্যতম একটি হলো দোয়া কবুল হওয়া । মহানবী (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ বাদশা, রোজা পালনকারী—যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং মজলুম।’ (তিরমিজি, হাদিস, ৩৫৯৮)হাদিস বিশারদগণ এই ‘রহমত’ শব্দের ব্যাখ্যা করে বলেছেন, মূলত রমজানের প্রথম দশ দিনের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদের মাঝে রহমত ও দয়া বণ্টন করতে থাকেন।
মহানবী (সা.) হাদিসে বিষয়ে ইরশাদ করেছেন ,রোজা মুমিন ব্যক্তিকে যাবতীয় ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখে। সুনানে নাসাঈ ও ইবনে খুযাইমা’র যৌথ বর্ণনায় এসেছে- ‘হজরত আবু উবায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, সাওম (রোজা) ঢালস্বরূপ যতক্ষণ পর্যন্ত সে তা ভেঙ্গে না ফেলে, আর তা হলো- মিথ্যা ও গিবত (বলা দ্বারা)। (সুনানে নাসাঈ ২২৩৫, সহিহ ইবনে খুযাইমা ১৮৯২)।
হাদিসের ভাষায়- ‘হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কেউ রমজানের প্রথম দিন রোজা রাখে তখন তার পূর্বেকার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
এমনিভাবে রমজান মাসের সমস্ত দিন চলতে থাকে এবং প্রতি দিন রোজাদার ব্যাক্তির জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা সকালের নামাজ থেকে শুরু করে তাদের পর্দার অন্তরালে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (কানযুল উম্মাল, ৮ম খণ্ড ৪৭১ পৃষ্ঠা, হাদিস: ২৩৭০৬)।
রোজাদার যেন একাগ্রচিত্তে মহান প্রভুর ইবাদত করতে পারেন সেজন্য রমজানের প্রথম রাতেই অর্থাৎ প্রথম দশকে শয়তানকে বন্দি করা হয়। জান্নাতের শীতল বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে রহমত স্বরূপ রোজাদাররা প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে কোনও রোজাই তার জন্য কষ্টসাধ্য মনে হয় না।
হাদিসের ভাষায়- ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে, রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে বন্দি করা হয়ে থাকে । জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়,কোনও দরজা খোলা রাখা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। কোনও দরজা বন্ধ রাখা হয় না।’ (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস: ৬৮২)।
দোয়াও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়া ছাড়া ইবাদত অস্পূর্ণ হয়ে থাকে। যে কোনো সময় যে কোনো দোয়া পড়া যায়। বিশেষ সময়গুলোতে উপযুক্ত দোয়া পড়া সুন্নত। আমরা জানি- রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের।জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল (সা. )আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন।
রমজানের প্রথম ১০ দিন যেহেতু রহমত নাজিল হয়, সেজন্য এ সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি রহমত কামনা করে দোয়া করা যেতে পারে।
এ ক্ষেত্রে কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়া যেতে পারে।দোয়াটি হলো-
দোয়া:وَقُل رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণ: ‘ওয়া কুর রব্বিগফির ওয়ার হাম ওয়া আনতা খইরুর র-হিমীন।’
অর্থ: ‘আর বলুন, হে আমার রব! আমাদের ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, আর আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মুমিনুন, আয়াত, ১১৮)
অথবা এই দোয়াটিও পড়া যেতে পারে—
দোয়া:رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً وَّ هَیِّیٴۡ لَنَا مِنۡ اَمۡرِنَا رَشَدًا
উচ্চারণ: রব্বানা আ-তিনা মিল্লাদুনকা রহমাহ, ওয়াহায়্যি’লানা মিন আমরিনা রশাদা।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদের অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিন ।’ (সূরা কাহফ, আয়াত, ১০)
আরো পড়ুন :পোস্ট অফিসে টাকা রাখবো যে নিয়মে।
পরিশেষে :
বলা যাই যে , রমজান মাসে প্রথম ১০ দিনের দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে। কারণ রমজানের প্রথম ১০ দিন যেহেতু রহমত নাজিল হয়, তাই এ সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি রহমত কামনা করে দোয়া করা যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহিমান্বিত মাস রমজানকে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত দোয়া দুটি রহমতের দশ দিন বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।