আমরা সকলেই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চাই আর বিশেষ করে মেয়েরা। নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য নিজেদেরকে পরিপাটি হয়ে থাকতে হয়। আর আমাদের এই পরিপাটি হয়ে থাকার জন্য কিছু প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে করতে হয় যা হচ্ছে মেকআপ । মেকআপ মূলত এক ধরণের আর্ট যা সৌন্দর্য চর্চার ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রাচীন মিশর, গ্রিস, রোম, সুমের, সিন্ধু উপত্যকা এবং অন্যান্য সভ্যতার একটি দল, পুরুষ ও মহিলা উভয়ই, ইতিহাসের সময়সীমা জুড়ে, মধ্যযুগ থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত, মেকআপ শিল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।আমাদেরকে বাহ্যিকভাবে আরো সুন্দর করে তোলে মেকআপ। 

নিজেদের প্রেজেন্টেবল লুকে প্রেজেন্ট করার ক্ষেত্রে, নানান ধরনের মেকআপ ব্র্যান্ডের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নিত্যনতুন বিউটি সেলুন। কিন্তু সবসময় যেমন বিউটি সেলুনের প্রয়োজন পরে না, তেমনি সব অকেশনে আবার হেভি মেকআপ মানায়ও না। তাই পারফেক্টলি নিজেকে প্রেজেন্টেবল লুকে চমকে দিতে আপনি চাইলে ঘরে বসেই মেকাপ করতে পারবেন।মেকআপ কিভাবে করে? এটা নিয়ে আপনাদের মধ্য অনেক দ্বিধা কাজ করে।  এখন আমরা ঘরে বসেই মেকআপ করতে পারি। আর ঘরে  মেকআপ করার জন্য আমাদের কিছু  পদ্ধতি বা নিয়ম মনে রাখলেই হবে। 

মেকআপ করার নিয়ম :

মেকআপ করতে গিয়ে  আমরা মাঝেমাঝেই নানা ভুল করে বসি আর এর  মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ভুল হল বেস মেকআপে গোলমাল কর। ফাউন্ডেশন ঠিক করে ব্লেন্ড করতে আর সেট করতে পারাটা একটা শিল্প। সেই শিল্পকে ঠিকঠাক কাজে লাগিয়ে নিখুঁত দাগহীন মখমলের মতো ত্বক পেতে যেমন দরকার সময়, তেমনি দরকার ধৈর্য। মেকআপ লাগানোর সঠিক সরঞ্জাম হাতের কাছে থাকাটাও দরকার, আর সেই সঙ্গেই চাই ত্বকের উপযোগী মেকআপ প্রডাক্ট। কারণ ঝলমলে সুন্দর ত্বকের কোনও শর্টকাট হয় না। মেকআপসঠিক ভাবে করার জন্য বেশ কিছু ধাপ মেনে চলতে হবে। 

ধাপ(১): ক্লেনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং। 

ধাপ(২): প্রাইমার লাগিয়ে নিন। 

ধাপ(৩): ফাউন্ডেশন লাগান।        

ধাপ(৪): কনসিলার লাগাতে ভুলবেন না। 

ধাপ(৫): সেটিং পাউডার দিয়ে সেট করে দিন। 

ধাপ(১):ক্লেনজিং, টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং-

সুস্থ, আর্দ্র ত্বক পাওয়ার অব্যর্থ উপায় হল নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা, টোনিং করা এবং সব শেষে ময়শ্চারাইজার মেখে নেওয়া। শুষ্ক ও আর্দ্রতাহীন ত্বকে মেকআপ ভালো করে বসে না, ছোপছোপ অসমান হয়ে ফুটে থাকে। তাই নিখুঁত বেস পেতে হলে প্রথমেই ক্লেনজিং,টোনিং আর ময়শ্চারাইজিং দিয়ে শুরু করতে হবে। ত্বক থেকে সমস্ত নোংরা আর দূষিত উপাদান সাফ করতে ফেসিয়াল ওয়াশ এর মতো কোমল সাবানহীন ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তারপর ভালো মানের টোনারলাগিয়ে নিন এটি লাগালে ত্বক আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে, রোমকূপও সংকুচিত আর টানটান থাকবে। শেষে ত্বকে আর্দ্রতা ফেরাতে মাখুন ময়শ্চারাইজার  নিয়মিত এই রুটিন মেনে চললে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নরম আর টানটান। নিখুঁত মেকআপ করতে এমন ক্যানভাসই তো চাই। 

ধাপ(২): প্রাইমার :

ত্বক প্রস্তুত করে নেওয়ার পর এবার প্রাইমার লাগানোর পালা। আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী জেল-বেসড প্রাইমার বেছে নিন। ভিটামিন ই-র গুণে সমৃদ্ধ এই প্রাইমারটি ত্বক মসৃণ করে, দাগছোপ ঢেকে দিয়ে আপনার মুখ ফাউন্ডেশন লাগানোর উপযোগী করে তোলে। প্রাইমার লাগালে মেকআপ অনেকক্ষণ নিখুঁত থাকে, তাই এই ধাপটি কখনও বাদ দেয়া যাবে না। 

ধাপ(৩): কনসিলার :

আপনার মুখের সমস্ত দাগছোপ, ডার্ক সার্কল এবং অসমান স্কিনটোন ঢেকে দেয়, এবং তার সঙ্গেই রোদের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে রাখে। চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল, মুখের কালো দাগ বা ত্বকের রেডনেস ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার করা হয়। ডার্ক সার্কেল দূর করতে চোখের নিচে কনসিলার দিয়ে ত্রিভুজ এঁকে ব্রাশ বা স্পঞ্জ দিয়ে ব্লেন্ড করুন। নাকের চারপাশের রেডনেস ঢাকতে চারপাশে কনসিলার লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ত্বকের কালো দাগ ঢাকতে, দাগের উপর অল্প পরিমাণ কনসিলার লাগিয়ে ছোট কনসিলার ব্রাশ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।তবে কনসিলার ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখবেন তা যেন ত্বকের রঙের চেয়ে খুব বেশি হালকা না হয়। চোখের ডার্ক সার্কেল বা মুখের কালো দাগ ঢাকতে কমলা/হলুদ রঙের কনসিলার ব্যবহার করুন। এছাড়া পিচ টোন ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের লালচে ভাব ঢাকতে ব্যবহার করুন সবুজ রঙের কনসিলার।

ধাপ(৪): ফাউন্ডেশন:

এই পর্যায়ে ফাউন্ডেশন লাগানোর পালা। আপনার ত্বকের ধরণ অনুযায়ী পারফেক্ট কভার ফাউন্ডেশন  এর মতো ফুল কভারেজ ফাউন্ডেশন বেছে নিন। অনেকেই আছেন যারা ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করার সময় একবারে অনেকটা প্রোডাক্ট অ্যাপ্লাই করে তারপর ব্লেন্ড করতে যান। এতে কিন্তু ফাউন্ডেশন ঠিকমতো ব্লেন্ড হতে চায় না। যার ফলে মেকআপ খারাপ হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে এবং ন্যাচারাল ফিনিশিংটাও থাকে না।পুরো মুখে আর গলায় ফোঁটা ফোঁটা করে লাগান। তারপর ফাউন্ডেশন ব্রাশ বা ভেজা বিউটি স্পঞ্জ দিয়ে আউটওয়ার্ড স্ট্রোক করে অর্থাৎ কানের দিকে ব্লেন্ড করতে শুরু করুন। এভাবে ব্লেন্ড করলে নিখুঁত মসৃণ বেস পাবেন।ফ্ললেস মেকআপ লুক পেতে চাইলে ধীরে ধীরে ফাউন্ডেশনের কভারেজ বিল্ডআপ করুন। ড্রাই স্কিন হলে ডিউয়ি ফাউন্ডেশন ইউজ করুন।

ফাউন্ডেশনের রয়েছে বিভিন্ন শেইড  এজন্য ফাউন্ডেশন বাছাই করার আগে আপনার ত্বকের জন্য কোন ধরণের ফাউন্ডেশন মানানসই হবে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। আবার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ব্যবহার করা প্রয়োজন ম্যাট ফাউন্ডেশন। প্রাইমার, কনসিলার ব্যবহারের ৫-১০ মিনিট পর ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে হবে। ফাউন্ডেশন কখনোই হাত দিয়ে ব্লেন্ড করবেন না। ফাউন্ডেশন সেট করতে কখনোই পাউডার ঘষে ব্যবহার করতে যাবেন না। পাউডার ব্রাশে নিয়ে হালকা চেপে চেপে ব্যবহার করতে হবে। 

ধাপ(৫): সেটিং পাউডার, কনটোরিং, ব্লাশ অন, হাইলাইটিং :

এই ধাপে শুধু মাত্র পাতলা করে এক কোট ট্রান্সলুসেন্ট সেটিং পাউডার লাগিয়ে নিলেই চলবে। পাউডার লাগালে বেস মেকআপ অনেকক্ষণ ভালো থাকে, কারণ পাউডার ফাউন্ডেশন সেট হতে সাহায্য করে এবং সেই সঙ্গে বাড়তি মেকআপ শুষে নেয়, ফলে আপনি পেয়ে যান স্বাভাবিক জেল্লাযুক্ত ত্বক। বড় ফাঁপানো ব্রাশ নিন, তারপর পাউডারের কৌটোয় ব্রাশ ডুবিয়ে সেই ব্রাশ দিয়ে সারা মুকে পাউডার মেখে নিন যাতে বেস সেট করে যায়। 

একা একা ঘরে বসে মেকআপ করার পর অনেকের  মনে হয়েছে মুখের প্রাকৃত লুকটা আর নেই। মেকআপ সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকায় এর কারণটা তখন কিছুতেই ধরতে পারে না । পরে বুঝতে পারে ফাউন্ডেশন ব্যবহারের পর আমাদের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় রঙের তারতম্য থাকে না বলে মুখের আসল লুক আর পাওয়া যায় না। আলোছায়ার তারতম্য সৃষ্টি করে ত্বকের ন্যাচারাল লুক ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে কনটোরিং, ব্লাশ অন এবং হাইলাইটিং।

কনটোরিং এর ক্ষেত্রে সামান্য ব্রঞ্জ পাউডার ব্রাশে নিয়ে ঠিক চোয়াল বা চিকবোন বরাবর ব্রাশ করুন। ব্রঞ্জার কানের পাশ এবং সেখান থেকে টেনে কপালে চুলের লাইনে ব্রাশ করে নিতে হবে । এরপর নাকের দুপাশেও ব্রঞ্জার ব্রাশ করুন। কনটোরিং এর পর ব্লাশ অন ব্যবহারের পালা। হাসলে আপনার মুখের যে অংশটুকু ফুলে ওঠে, ঠিক সেখানে নিচ থেকে উপরের দিকে ব্লাশ অন ব্রাশ করুন এবং তা কান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। ব্লাশ অন ব্যবহার করতে হবে চোয়ালে করা কনটোরিং এর সামনের দিকটাতে।

কনটোরিং ও ব্লাশ অন এর পর পছন্দসই হাইলাইটার ছোট ব্রাশে নিয়ে চোয়ালের হাড়, নাকের হাড়, কপালের মাঝ বরাবর হাড়ের উপর এবং ঠোঁটে হালকা করে ব্যবহারকরতে হবে। এটি ত্বকের আলোছায়া সৃষ্টির শেষ এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

আরো পড়ুন :ঈদুল আজহা নামাজের নিয়ম।

পরিশেষে :

বলা যাই যে, সঠিক পদ্ধতিতে মেকআপ করা হলে তা আর অপ্রাকৃতিক মনে হবে না। নিয়ম না মেনে মেকআপ করলে সবার তো দূর আপনার নিজেরই মনে হবে মুখে একগাদা আটাময়দা মেখে বসে আছেন।আশা করি এখন আপনি ঘরে বসে মেকআপ করতে পারবেন। 

Write A Comment