মানুষ একসঙ্গে থাকা বা সংসার করার জন্য বিয়ে করেন। এ কারণে সাধারণত ডিভোর্স বা বিবাহবিচ্ছেদ কারও কাম্য নয়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ ডিভোর্স দিতে পারেন। তবে স্ত্রী ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে। বিয়ে নিবন্ধনের সময় নিকাহনামার ১৮ নম্বর কলামে যদি স্ত্রীকে ডিভোর্সের অধিকার দেওয়া থাকে, তবে স্ত্রী ডিভোর্স দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীর জন্য যে প্রক্রিয়া বলা হয়েছে, একই বিধান স্ত্রীর জন্যও প্রযোজ্য হবে । তবে ডিভোর্সের অধিকার না দেওয়া থাকলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে আবেদন করে ডিভোর্স দিতে পারবেন।

ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম :

ডিভোর্সের জন্য কয়েকটি মাধ্যমে ডিভোর্স নেয়া যায়।  ডিভোর্স পেপার লেখার নিয়ম নিম্নে দেয়া হলো –

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • বিবাহের সনদপত্র।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি.
  • আবেদনপত্র।
  • নোটিশ।
  • সাক্ষীর নাম ও ঠিকানা।

আবেদনপত্র:

  • আবেদনপত্রে ডিভোর্সের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
  • আবেদনপত্রটি সত্যি এবং সঠিক বলে শপথ করে স্বাক্ষর করতে হবে।
  • আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংযুক্ত করতে হবে।

নোটিশ:

  • নোটিশে ডিভোর্সের আবেদনের কথা উল্লেখ করতে হবে।
  • নোটিশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, ডিভোর্সের আবেদনের বিরুদ্ধে আপত্তি থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদালতে জানাতে হবে।
  • নোটিশের একটি কপি সঙ্গীর কাছে পাঠাতে হবে।

তলাকের ধরন:

 তলাক :মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ডিভোর্সের প্রক্রিয়া।

তালাকনামা: মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য লিখিত ডিভোর্স।

বিবাহ বিচ্ছেদ: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ডিভোর্স।

ডিভোর্স ডিক্রি: আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স।

আইন:

  • মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪
  • বাংলাদেশ পারিবারিক আইন, ১৯৬১
  • ডিভোর্সের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।

আইনি প্রক্রিয়া :

  • আবেদনপত্র ও নোটিশ আদালতে জমা দেওয়ার পর আদালত শুনানি তারিখ নির্ধারণ করবে।
  • শুনানিতে উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে আদালত ডিভোর্সের আবেদন মঞ্জুর করবে কিনা তা নির্ধারণ করবে।ডিভোর্স নেয়ার আরও কিছু নিয়ম নিম্নে দেয়া হলো –

(১) পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে:

পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্সের পেপার লেখার নিয়ম নিম্নে দেয়া হলো –

ডিভোর্সের আবেদনপত্র:

আবেদনপত্রে আপনার নাম, ঠিকানা, বিবাহের তারিখ, স্ত্রীর/স্বামীর নাম ও ঠিকানা, ডিভোর্সের কারণ, সন্তানদের তথ্য (যদি থাকে), এবং আপনার দাবি (যেমন: ভরণপোষণ, সন্তানের হেফাজত) অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

আবেদনপত্রের সাথে আপনার বিবাহের সনদপত্র, স্ত্রীর/স্বামীর পরিচয়পত্র, সন্তানদের জন্ম সনদপত্র (যদি থাকে), এবং ডিভোর্সের কারণ প্রমাণের কাগজপত্র (যদি থাকে) সংযুক্ত করতে হবে।

নোটিশ:

আবেদন করার পর আদালত আপনার স্ত্রী/স্বামীকে নোটিশ পাঠাবে।এই নোটিশে ডিভোর্সের কারণ, আপনার দাবি, এবং আদালতে উপস্থিত হওয়ার তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকবে।

সালিশ:

আদালত ডিভোর্সের পূর্বে আপনাদের মধ্যে আপস করার জন্য একটি সালিশের ব্যবস্থা করবে।যদি আপস হয়, আদালত আপসনামা অনুযায়ী ডিভোর্সের ডিক্রি দেয়া হবে ।যদি আপস না হয়, আদালত ডিভোর্সের আবেদনের শুনানির জন্য তারিখ দেবে ।

শুনানি:

শুনানিতে আপনাকে এবং আপনার স্ত্রী/স্বামীকে ডিভোর্সের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে বলবে ।এরপর আদালত উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে ডিভোর্সের ডিক্রি দেবে।

(২) ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে:

ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে ডিভোর্সের পেপার লেখার নিয়ম নিম্নে দেয়া হলো –

আবেদনপত্র:

আবেদনপত্রে আপনার নাম, ঠিকানা, বিবাহের তারিখ, স্ত্রীর/স্বামীর নাম ও ঠিকানা, ডিভোর্সের কারণ, সন্তানদের তথ্য (যদি থাকে), এবং আপনার দাবি (যেমন: ভরণপোষণ, সন্তানের হেফাজত) উল্লেখ করতে হবে।

আবেদনপত্রের সাথে আপনার বিবাহের সনদপত্র, স্ত্রীর/স্বামীর পরিচয়পত্র, সন্তানদের জন্ম সনদপত্র (যদি থাকে), এবং ডিভোর্সের কারণ প্রমাণের কাগজপত্র (যদি থাকে) সংযুক্ত করতে হবে।

নোটিশ:

আবেদন করার পর ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন আপনার স্ত্রী/স্বামীকে নোটিশ পাঠাবে।নোটিশে ডিভোর্সের কারণ, আপনার দাবি, এবং ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে উপস্থিত হওয়ার তারিখ ও সময় উল্লেখ থাকবে।

সালিশ:

সময় মতো উপস্থিত হওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন ডিক্রি দেয়া হবে ।

ডিভোর্সের বিকল্প:

বিবাহের সমস্যা সমাধানের জন্য একজন বিবাহ পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি বিবাহের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে পারেন।

ডিভোর্স একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

আরো পড়ুন :ভিটামিন -এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর নিয়ম ও উপকারিতা। 

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,শখের বশে বা খামখেয়ালী থেকে কেউ তালাক দেওয়ার মত গর্হিত সিদ্ধান্ত নেয় না। সংসার জীবনে চলতে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন কুট-তর্ক, ভুল-বুঝাবুঝি এবং জটিলতা হতেই পারে। তবে তালাকের মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই  বেশি বেশি চিন্তা ভাবনা করা উচিত। আশা করছি এই আর্টিকেলটি পরে আপনি তালাকের নিয়ম কানুন জানতে পারবেন। 

Write A Comment