আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। ফেসবুকের হাজার হাজার কনটেন্ট ক্রিয়েটর কতো কতো যে টাকা আয় করছে । আর এটা দেখে আমাদের ও মনে হচ্ছে ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করি। অনেকে হয়তো পেইজ ওপেন করে ভিডিও আপলোড করা শুরু করেছেন। হয়তো মোটামুটি ভালোই রিচ পাচ্ছেন আপনার কনটেন্ট। কিন্তু আপনি কি জানেন টিউন ভাইরাল হলে এবং মনিটাইজেশন পাওয়ার সকল শর্ত পূরণ করার পরেও আপনার পেইজে মনিটাইজেশন পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই?প্রয়োজনীয় ফলোয়ার এবং ওয়াচটাইম পূরণ হওয়ার পরেও বেশিরভাগ সময় ফেসবুক পেইজের মনিটাইজেশন পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে ওঠে। কেননা ফেসবুক এর বিভিন্ন ধরনের ইস্যু রয়েছে। আর পেইজে কোনো ধরনের ইস্যু চলে আসলে মনিটাইজেশন পাওয়া যায় না উল্টো মনিটাইজেশন অন করা থাকলেও আর্নিং বন্ধ হয়ে যায়। তাই একটি ফেসবুক পেইজ চালু করা থেকে শুরু করে মনিটাইজেশন অন করার পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে বেশ সচেতনতা অবলম্বন কাজ করতে হয়।
ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা সম্প্রতি নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে যেখানে কপি করা কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। অন্যের ভিডিও, মিম নকল করে পোস্ট করা, জনপ্রিয় কনটেন্ট নির্মাতাদের প্রোফাইল কপি করা এবং একঘেয়ে কনটেন্ট ছড়ানো বন্ধ করতে এই নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে ।
মেটার ১৪ জুলাই প্রকাশিত এক ব্লগপোস্টে বলা হয়েছে, প্ল্যাটফর্মে বারবার একই ধরনের কনটেন্ট দেখায় ব্যবহারকারীরা বিরক্ত। বিশেষ করে কোনো মিম বা রিল ভাইরাল হলে সেটি হুবহু কপি করে বহু ব্যবহারকারী পোস্ট করেন, যার কারণে নতুন ও মৌলিক কনটেন্ট নির্মাতারা যথাযথ সুযোগ পাই না। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য মেটা নতুন নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে।এছাড়া মেটা জানিয়েছে, গত এপ্রিল থেকেই তারা স্প্যাম লিংক ও অনাকাঙ্ক্ষিত কমেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে এক কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। একই কনটেন্ট বা কমেন্ট বারবার পোস্ট করায় পাঁচ লাখেরও বেশি অ্যাকাউন্টের রিচ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কিছু অ্যাকাউন্টের পোস্ট করার সুবিধাও সীমিত করা হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে , ভবিষ্যতে যারা কপি করা কনটেন্ট পোস্ট করবেন, তাদের আর ফেসবুক মনিটাইজেশনের আওতায় আনা হবে না। শুধুমাত্র যারা নিজেদের নতুন ধারণা দিয়ে মৌলিক কনটেন্ট তৈরি করে জনপ্রিয় হবেন, তারাই আয় করার সুযোগ পাবেন।
ফেসবুকের লক্ষ্য এই পদক্ষেপের মাধ্যমে কনটেন্ট নির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং প্ল্যাটফর্মটিকে আরও বৈচিত্র্যময়, মানসম্মত ও ব্যবহারবান্ধব করে তোলা।
ফেসবুকের মনিটাইজেশন না পাওয়ার কারণ:
আজকে এমন কয়েকটি ভুল সম্পর্কে আপনাদের সতর্ক করতে চেষ্টা করবো যার ফলে আপনি ফেসবুক পেইজে মনিটাইজেশন পাবেন না। আর এ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে আয় করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো –
(১) যে কোনো অনলাইন সাইট থেকে ডাউনলোড করা ছবি পেইজে আপলোড করলে :
আমরা ফেসবুক পেইজ চালু করে এই ভুলটা করি প্রথমেই। ফেসবুক পেইজের প্রোফাইল ও কভারে আমরা অন্য কোনো সাইট থেকে ডাউনলোড করা ছবি ব্যবহার করি। অনেক সময় ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করে সেই ছবি নিজের ফেসবুক পেইজে ব্যবহার করি। এর ফলে পেইজে কপিরাইট ইস্যু চলে আসে এবং মনিটাইজেশন পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কেননা ফেসবুক থেকে বা অন্য কোনো সাইট থেকে ডাউনলোড করা ছবিটির মালিকানা আপনি নন।
তাই ফেসবুক পেইজে আপলোড করা ছবি অবশ্যই আপনার নিজের হতে হবে। হতে পারে কোনো সফটওয়ার ব্যবহার করে নিজে তৈরি করেছেন এমন ছবি। হতে পারে আপনার নিজের ডিভাইস বা ক্যামেরা দিয়ে তৈরি করা ছবি। অথবা কপিরাইট মুক্ত সাইড থেকে ডাউনলোড করা বা ক্রয় করা ছবি। এসকল ছবি আপনি নির্দ্বিধায় আপনার ফেসবুক পেইজে ব্যবহার করতে পারবেন।
(২)পেইজে আপলোড করা ভিডিও পুরোপুরি কপিরাইট মুক্ত না হলে:
আপনার ফেসবুক পেইজে আপলোড করা ভিডিওটা পুরোপুরি কপিরাইট মুক্ত হতে হবে। পুরো ভিডিও আপনি তৈরি করলেন কিন্তু তার মধ্যে ছোট্ট একটি ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করলেন যার মালিকানা আপনার নয়, এমন হলে আপনার পুরো ভিডিওটি কপিরাইট ক্লেইম হয়ে যাবে । ভিডিও স্ক্রিপ্ট যদি কপি করা হয় তবেও কপিরাইট ইস্যু হতে পারে। ভিডিওর কোনো মিউজিক কপিরাইট এর আওতাভুক্ত হলেও তা পেইজে কপিরাইট ইস্যু নিয়ে আসবে। মোটকথা বিন্দুমাত্র কোনো সাউন্ড, পিকচার, ভিডিও ক্লিপ বা কনটেন্ট যদি কপি করা হয় তাহলে আপনার পেইজে মনিটাইজেশন পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে না।
তাই ভিডিও তৈরির সময় পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে যে আপনার ভিডিওর কোনো অংশ কপি করা কিনা৷ পুরোপুরি কপিরাইট মুক্ত কিনা তা নিশ্চিত হয়ে তবেই সেই ভিডিওটা নিজের ফেসবুক পেইজে আপলোড কোবেন ।
(৩) ভিডিওর টাইটেল ও ডেসক্রিপশন এর সাথে কনটেন্ট এর মিল না থাকা:
অনেকেই বেশি ভিউ পাওয়ার আশায় একটু চালাকি করে ভিডিও টাইটেল ও ডেসক্রিপশন তৈরি করে। মানে ভিডিওর মূল কনটেন্ট এর সাথে টাইটেল এর মিল থাকে না। খুব আকর্ষনীয় টাইটেল দেখে ভিডিও চালু করার পরে দেখা গলো এর মধ্যে কোনো ধরনের কোয়ালিটি কনটেন্ট নেই। শুধুমাত্র দর্শক আকর্ষণ করার জন্য ভাইরাল টাইটেল ব্যবহার করা হয়েছে।
এই ধরনের চালাকি করলে অবশ্যই পরবর্তীতে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হবে। কেননা ফেসবুকে যে কোনো নেগেটিভ কার্যকলাপ এর জন্য পেইজে ইস্যু চলে আসতে পারে। এর ফলে মনিটাইজেশন স্থগিত করা হতে পারে। তাই আপনার ভিডিও স্ক্রিপ্ট বা কনটেন্ট এর সাথে মিল রেখে টাইটেল ও ডেসক্রিপশন সাজাতে হবে।
(৪)পেইজের কোনো টিউন বা ভিডিও নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করা:
পেইজের তুলনায় আমাদের প্রোফাইলে কিন্তু বেশি লোকজন এনগেজড থাকে। কেননা আমরা ফেসবুক পেইজের থেকে নিজের প্রোফাইলে তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় করে থাকি । তাই নতুন পেইজ চালু করে পেইজের সব ভিডিও আমরা নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করি। কারণ মনে করি যে প্রোফাইলে শেয়ার করলে তা খুব দ্রুত বেশি মানুষের কাছে পৌছে যাবে। আর এখানেই আমরা সবথেকে বড় ভুলটা করে থাকি।
ফেসবুক পেইজের কোনো টিউন বা ভিডিও নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করার বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কখনোই সমর্থন করে না। আর এই সত্যিটা অনেকেই হয়তো জানেন না। এতে করে যেমন পেইজের অর্গানিক রিচ কমে যায় ঠিক তেমনই পেইজ নেগেটিভ ইমেজ পায়। এই ধরনের কার্যকলাপের ফলে মনিটাইজেশন অন করার পথে বিভিন্ন বাঁধা সৃষ্টি হয়ে থাকে । তাই পেইজের কোনো টিউন বা ভিডিও নিজের প্রোফাইলে শেয়ার করা থেকে একদমই বিরত থাকুন।
চালাকি করে অন্য কারো মাধ্যমেও নিজের প্রোফাইলে পেইজের কনটেন্ট শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে । অন্যের ইনবক্সে গিয়ে বার বার পেইজ লিংক বা পেইজের কোনো কনটেন্ট লিঙ্ক শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা ফেসবুক এই বিষয়গুলো খুব সহজেই ধরে ফেলতে পারে।
(৫) ইতোমধ্যে আপলোড করা ভিডিও পুনরায় নিজের পেইজে আপলোড করা:
আপনার নিজের তৈরি করা ভিডিও যদি ফেসবুক প্রোফাইল বা পেইজে একবার আপলোড করে থাকেন তাহলে সেই ভিডিও পুনরায় আপলোড করা যাবে না। আবার আলাদা আলাদা ফেসবুক পেইজে একই ভিডিও আপলোড করবেন না। কেননা ফেসবুকে সর্বপ্রথম যে আইডি বা পেইজ থেকে কোনো ভিডিও আপলোড করা হয় ফেসবুক ঐ প্রোফাইল বা পেইজকে ভিডিওর আসল মালিক হিসেবে ধরে নেয়। তাই পুনরায় সেই ভিডিও অন্য আইডি বা পেইজে আপলোড করলে তা কপিরাইট ক্লেইম এর আওতাভুক্ত হবে৷ তাই পুনরায় একই ভিডিও আপলোড করা থেকে বিরত থাকুন।
অনেকে আবার একই ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউব সহ নানান সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যবহার করে থাকেন৷ এক্ষেত্রে একই সময়ে আপনাকে সবগুলো সাইটে ভিডিও আপলোড করতে হবে। কেননা আগে ইউটিউব বা অন্য কোনো সোস্যাল মিডিয়া সাইটে আপলোড করলে ঐ ভিডিও যদি অন্য কেউ ডাউনলোড করে তা ফেসবুকে আপলোড করে দেয় তাহলে আপনি ঐ ভিডিও টির মালিকানা হারাবেন। ফেসবুক ঐ ব্যক্তিকে ভিডিওর আসল মালিক বলে ধরে নেয়া হবে ৷ তাই একই ভিডিও আলাদা আলাদা প্লাটফর্মে ব্যবহার করলে তা একই সময়ে আপলোড করার চেষ্টা করবেন।
আর এটা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে আপনার পেইজে যে ভিডিওটি আপলোড করতে চাচ্ছেন সেটা আগে থেকে আপনার মাধ্যমে বা অন্য কারো মাধ্যমে ফেসবুক আপলোড হয়েছে কিনা।
আরো পড়ুন :ফেসবুক ভেরিফায়েড যে ভাবে করবেন।
পরিশেষে:
বলাযায় যে,একটা ফেসবুক পেইজ অনেক কষ্ট করে ভাইরাল করার পরে যদি এমন হাজারটা ইস্যু চলে আসে তখন আসলেই যে কারো মন ভেঙে যায় । তাই পেইজের প্রাথমিক যাত্রা থেকেই এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ হবে । আশাকরি টিপস গুলো আপনাদের ভালো লেগেছে এবং কাজে লাগবে।