আসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।  ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে কমবেশি সবাই জানে , যে অনলাইনে আয় করা যায়। আর এর জন্য  অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে এবং এই সমস্ত মাধ্যম অবলম্বন করে অনেক অনলাইন থেকে হাজার হাজার ডলার প্রতিদিন  ইনকাম করছে।তাই আজ আমি  আলোচনা করব অনলাইনে আয় করার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় মাধ্যম গুলো সম্পর্কে যার মাধ্যমে খুব ভালো পরিমাণে ইনকাম করা সম্ভব।

অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অসংখ্য উপায় রয়েছে। অনলাইনে আয় করার যে প্ল্যাটফর্মটি বেছে নিবেন সে সম্পর্কে আপনার সচেতন থাকা উচিত। অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অসংখ্য উপায় থাকার সত্ত্বেও এর কয়েকটি জাল হতে পারে। এছাড়াও, অনলাইন থেকে কম সময়ে দ্রুত একটি বিশাল পরিমাণ উপার্জন আশা করবেন না করাই ভালো ।

অনলাইনে আয় এর সেরা মাধ্যম গুলো হলো:

সারা বিশ্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক মানুষ আছেন যারা অনলাইন থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন। আবার অনেকে আছেন যারা তাদের চাকরি এবং ব্যবসার ফাকে বাকি সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন হতে ভালো পরিমাণে ইনকাম করছেন।আর এটা আমাদের জন্য হতে পারে আয় এর একটি অতিরিক্ত মাধ্যম।বর্তমানে  অনলাইনে আয় অনেকগুলো নিশ্চিত উপায় রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি উপায় হচ্ছে –

  • অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করা। 
  • অনলাইনে ব্যবসা করা।

ফ্রিল্যান্সিং :

ফ্রিল্যান্সিং মানে হচ্ছে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করার পর আপনি নিজে কাজ করবেন এবং কাজের বিনিময় ক্লায়েন্ট আপনাকে পেমেন্ট করবে ।

অনলাইনে ব্যবসা: 

অনলাইন ব্যবসা করা  কিছুটা ফ্রিল্যান্সিং এর মতই। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি কোনো  কাজ করতে হবে না। বিভিন্ন উপায়ে দেশে বা বিদেশের বায়ারদের সাথে অপনি  ডিল করে অন্য কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। আর আপনি লাভের একটা অংশ পেতে পারেন । 

অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করা: 

অনলাইনে আয় করার নিশ্চিত উপায় গুলোর মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং অন্যতম ।উপরে বলা হয়েছে  ফ্রিল্যান্সিং মানেই হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে ক্লায়েন্টের কাজ করবেন এবং আপনার কাজের বিনিময়ে বায়ার আপনাকে পেমেন্ট দিবে। 

ফ্রিল্যান্সিং :

অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার বিষয়টি । বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ওয়েবসাইট ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার সুযোগ দেয় । সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হবে এবং কাজদাতা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দিয়ে থাকে। 

এসব সাইটের মধ্যে  আপওয়ার্ক ডটকম,ফাইভার ডটকম,ফ্রিল্যান্সার ডটকম ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। কয়েকটি ওয়েবাসাইটে কাজের দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়, যাতে ক্রেতা সরাসরি কাজের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সাইট থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করাসম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, কাজ শেষ করার পর কাজদাতার অনুমোদন দিলেই অর্থ পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে  কাজদাতা কাজের মানের ওপর রেটিং দিতে পারেন। ফ্রিল্যান্সারকে গ্রাহকের পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে দিতে হয় ।

ব্লগিং করে আয়:

অনলাইনে আয়ের একটি অন্যতম বড় মাধ্যম হল ব্লগিং। ব্লগিং করে আপনি বিভিন্ন মাধ্যম কাজে লাগিয়ে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। যেমন, অ্যাড সেল, গুগল এডসেন্স, সার্ভিস সেল করা,এফিলিয়েট মার্কেটিং, নিজস্ব প্রোডাক্ট সেল করা ,অনলাইনের মাধ্যমে কারোর প্রডাক্ট কে প্রমোশন করা, আপনার ব্লগের মাধ্যমে কারোর ব্যবসাকে মার্কেটিং করা ইত্যাদি কাজ করতে ব্লগিং একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম বা মাধ্যম ।

ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আয় :

নিজের ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে আয় করতে পারেন। প্রথমে  নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট আপনি তৈরি করবেন। যদি আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করার অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে ওয়েব ডিজাইন কোর্স করে নিন । ওয়েবসাইট এর ডোমেইন নেম, হোস্টিং, থিম ইত্যাদি আপনি নিজের মতো করে সাজাতে পারেন। তারপর বিভিন্ন টপিক সিলেক্ট করে আপনি আর্টিকেল পাবলিশকরতে পারেন । এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট এ ভিজিটর বাড়বে। তার পরের ধাপে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন । গুগলের বিজ্ঞাপনের অনুমোদনের পর গুগল আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু করবে । আর আপনার সাইটের ভিজিটদের বিজ্ঞাপনে ক্লিক থেকে আপনি আয় করতে পারেন।

গ্রাফিকস ডিজাইন করে আয়:

গ্রাফিকস ডিজাইন  হলো ঘরে বসে আয় করার আরেকটি উপায়। গ্রাফিকস ডিজাইন শিখে  মার্কেটপ্লেস থেকেআপনি আয় করতে পারেন । গ্রাফিকস ডিজাইনের মাধ্যমে আয় করার জন্য এ কাজে দক্ষতা অর্জন  হতে হবে। তারপর মার্কেটপ্লেস এ আপনার ডিজাইন দিয়ে গিগ সাজাতেপারবেন।  অতপর ডিজাইন বিক্রির মাধ্যমে ঘরে বসেই টাকা আপনি আয় করতে পারেন। বর্তমানে গ্রাফিকস ডিজাইনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। 

ইউটিউব থেকে আয়:

ইউটিউব হচ্ছে বর্তমান সময়ে ঘরে বসে আয় করার সেরা মাধ্যম । ইউটিউব এ চ্যানেল খোলার পর ভিডিও তৈরি করে আপনি আপলোড দিতে পারেন । আপনার ভিডিওতে  যত বেশি ভিউ হবে তত আপনার চ্যানেলের ভিউ আওয়ার বাড়বে। এর পাশাপাশি আপনার চ্যানেলের নির্দিষ্ট সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার প্রয়োজন। আপনার ভিডিও বেশি সংখক লোক দেখার জন্য মানসম্পন্ন ও সৃজনশীল উপায়ে ভিডিও তৈরি করতে পারেন ।এজন্য আগে থেকে আপনার ভিডিও’র টপিক নির্ধারণ করে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী ভিডিও তৈরি করতে হবে। আপনার ভিডিও’র ভিউয়ার ও বিজ্ঞাপন থেকে আপনি আয় করতে পারবেন । আপনি খুব সহজে ইউটিউব এর মাধ্যমে ঘরে বসে আয় করতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে  আয়:

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে বর্তমানে আয়ের নানা উপায় রয়েছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম,পিন্টারেস্ট  ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে আয় করা সম্ভব হচ্ছে । আর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কের্টিং এর কাজ ঘরে বসেই  করা যায়। যদি  আপনার পেজ এর ফলোয়ার বেশি হয় সেক্ষত্রে যে কোন কোম্পানির পণ্যের প্রচারণার মাধ্যমেও  টাকা আয় করতে পারেন। এর পাশাপাশি আপনার পেজ বিক্রির মাধ্যমে ও টাকা আয় করতে পারেন ।বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ফেসবুক হচ্ছে  সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সবচেয়ে অন্যতম মাধ্যম  । আপনি যদি চান শুধু মাত্র  ফেসবুক মার্কেটিং শিখেই  অনলাইনে ইনকাম শুরু করতে পারেন।

কন্টেন্ট রাইটা বা আর্টিকেল লিখে আয় :

বর্তমান সময়ে প্রচুর কন্টেন্ট রাইটার এর চাহিদা রয়েছে অনলাইন সেক্টরে । 

ওয়েবসাইটে কোন সার্ভিসের ডেস্ক্রিপশন কিংবা কোন প্রোডাক্ট সম্বন্ধে বিস্তারিত লেখার জন্য প্রফেশনাল কনটেন্ট রাইটার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট যে কোনো বিষয়ের উপর রিসার্চ করে লেখালেখি করাকে কনটেন্ট রাইটিং বলে। আপনি চাইলে বাংলায় কনটেন্ট রাইটিং বা আরটিকেল  লিখে আয় করতে পারেন । 

অনলাইনে ব্যবসা করা:

অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে আমরা অনলাইনে ব্যবসা করে আয় করতে পারি। আপনি কিভাবে বসা শুরু করবেন এবং কোন বিষয়ের উপর ব্যবসা শুরু করলে সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি এই সবকিছু নিয়ে আলোচনায় করবো। 

আউটসোর্সিং:

আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে যা অনেকেই জানে না। কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে নিজে কাজ করাই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আর আউটসোর্সিং হচ্ছে মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে কাজ নিয়ে অন্য কারো মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়া। কাজ শেষে একটি অংশ আপনি লাভ হিসেবে গ্রহণ করবেন।

উদাহরণস্বরূপবলা যায়  ফাইবার মার্কেট প্রাইস একটি অ্যাকাউন্ট  আপনার আছে। কিন্তু আপনার কাজ করার যথেষ্ট সময় নেই। সে ক্ষেত্রে আপনি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ নিয়ে কারো কাছ থেকে কম দামে কাজটি করিয়ে নিলেন। কাজ শেষে ক্লাইন্ট  আপনাকে যে পেমেন্ট দিবে সেখান থেকে আপনি আপনার লভ্যাংশ রেখে দিবেন । 

বর্তমানে বাংলাদেশের অনেকেই আউটসোর্সিং করে মাসে ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে কোন কাজ করতে হবে না শুধু আপনি অর্ডার নিবেন এবং অর্ডার ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করবেন ।

ড্রপ শিপিং:

 ড্রপ শিপিং অনলাইনে বিজনেস করার আরেকটি বড় উপায় । শিপিং বাংলাদেশ জনপ্রিয় না হলেও আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। অ্যামাজন, আলিবাবা ইত্যাদি এর মতো ওয়েব সাইট গুলো থেকে প্রোডাক্ট কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করার প্রক্রিয়ায় হচ্ছে  ড্রপ শিপিং।ড্রপ শিপিং শিখে চাইলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন অথবা নিজের ব্যবসা করতে পারেন। 

এমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং:

 আমরা অ্যামাজন ওয়েবসাইট সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস। আপনি চাইলে অ্যামাজন থেকে এফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা আয় করতে পারেন। এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কোন একটি প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেয়ার জন্য আপনি যে  কমিশন পাবেন। অর্থাৎ অ্যামাজন ওয়েবসাইটের কোন একটি প্রোডাক্ট যদি আপনি নিজের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে দিতে পারেন তাহলওই  প্রোডাক্ট এর মূল দামের একটি অংশ আপনি পাবেন।

কিন্ডল বুক পাবলিশিং:

 কিন্ডল হচ্ছে অ্যামাজন এর পিডিএফ বুক পাবলিশিং সার্ভিস এর নাম । অনলাইন পিডিএফ বুক পাবলিশ করার মাধ্যমে লাইফ টাইম আয় করার সুযোগ রয়েছে। 

বাংলাদেশে এখনো কিন্ডল বুক পাব্লিশিং অতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। তবে বিশ্ব বাজারে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।

অনলাইনে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট বিজনেজ:

আপনি যদি নিজের একটি স্থায়ী ব্যবসা দাড় করাতে চান সেক্ষেতে অনলাইনে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা শিখতে পারেন। বাংলাদেশে বর্তমানে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট বিজনেস এর যথেষ্ট ডিমান্ড রয়েছে। চায়না, ইন্ডিয়া থেকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট কম দামে এনে দেশে পাইকারি দরে ও বেশি দামে বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। অল্প পূজিতে যারা অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এই ব্যবসা ভালো একটি অপশন হতে পারে। 

আরো পড়ুন :সজনে পাতার পুষ্টি, উপকারিতা,গুড়া করা, এবং খাওয়ার নিয়ম

পরিশেষে :

বলা যায় যে ,যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে দক্ষতা অর্জন করে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করার মাধ্যমে খুব সহজে আয় করতে পারেন।অনলাইনে আয় করার নিশ্চিত উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এই আর্টিকেলটি কিছুটা হলেও আপনাদের উপকারেআসবে। আমরা যে কয়টি উপায়  বলেছি তার প্রত্যেকটির মার্কেটে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

Write A Comment