আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমরা আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র বিষয়ে কমবেশি সবাই জানি।আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্রবের করা সম্পর্কে আর্টিকেলটিতে জেনে নেয়া যাক।
সকলের জন্য আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র খুব প্রয়োজনীয়। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য তা আরো গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকার দেশের সর্বোস্তরের জনগণেকে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা প্রদানে স্মার্ট কার্ড বিতরণ এবং বৈধতা নিশ্চিত করে আসছে।২০০৮ সাল থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা স্মার্ট কার্ড দেয়া শুরু হচ্ছে।
ভোটার আইডি কার্ড (NID)
বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকদের জন্য আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র অত্যান্ত গরুত্বপূর্ণ একটি সনদ। সরকারী বেসরকারী যে কোন দাপ্তরিক কাজে এটি প্রয়োজন হয়। বর্তমানে জতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নাগরিকদের যে পরিচয় সনদ প্রদান করা হয় তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড কিংবা সংক্ষেপে এনআইডি (NID) বলা হয়। দেশের ভিতর এটি পরিচয় প্রমাণের প্রধান মাধ্যম। আঠার বছর পূর্ণ হলে ভোটার আইডি করা সবার জন্য বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে আইনে।
ভোটার হওয়ার জন্য যে কাগজ পত্র লাগে:
নতুন ভোটার হওয়ার জন্য নির্বাচন অফিসে যে সকল কাগজপত্র জমা দিতে হয় তা নিচে দেওয়া হলো-
- জর্ম্ম সনদের ফটোকপি
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রত্যায়ন পত্র
- শিক্ষিত হলে এসএসসি সনদসহ শিক্ষাগত সনদের সত্যায়িত ফটোকপি
- রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হলে তার ফটোকপি
- বিদ্যুৎ বিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
- জমির কাগজ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ভোটার হওয়া প্রক্রিয়া:
নতুন ভোটার নিবন্ধন করা হয় প্রতি তিন বছর পর পর আদম শুমারীর মাধ্যমে । সেই সময় নির্বাচন কমিশনের লোকজন বাড়ী বাড়ী গিয়ে নতুন ভোটারের তালিকা করে থাকেন।
যারা বাদ পড়েন তারা অনলাইনে আবেদন করে নতুন ভোটার হতে পারে।প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষে নির্বাচন কমিশন নতুন ভোটারের তালিকা প্রকাশ করে ।
ভোটার নিবন্ধন একটি চলমান প্রক্রিয়া। আঠার বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে ভোটার নিবন্ধন করে ফেলা জরুরী। কেননা সময়মত ভোটার হতে না পারলে পরবর্তীতে অনেক হয়রানির স্বীকার হতে হয়।এছাড়ও অফিসিয়াল অনেক কাজ করতে ঝামেলা হয়।
ভোটর নিবন্ধন করার জন্য কোথায় যেতে হয় :
নিজ এলাকায় ভোটর নিবন্ধন করতে পারবেন । এলাকায় বাদ পড়ে থাকেন তাহলে উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করে নিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যোগাযোগ করুন। তার আগে আপনাকে ভোটার হওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
নতুন ভোটার হওয়ার নিয়ম:
কারো বয়স যদি আঠার পূর্ণ হয় এবং ভোটার না হয়ে থাকেন তাহলে খুব সহজেই ভোটার হতে পারেন। ভোটার নিবন্ধন সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারী মাসের মধ্যে হয়ে থাকে। এলাকা অনুযায়ী সময়টা ভিন্নতা হয়।
অনলাইনে যে কোন সময় ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।নিজের ভোটার নিবন্ধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদন কপি প্রিন্ট করে নিন।
উপজেলা নির্বাচন অফিসে খোজ নিয়ে জানুন আপনার এলাকার ছবি, ফিংগার প্রিন্ট কখন শুরু হবে। আপনার এলাকার ছবি তোলা শুরু হলে আবেদন ফরম ও প্রয়োজনী কাগজপত্রসহ ছবি উঠে আসুন।ছবি, ফিংগার নেওয়ার পর আপনাকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে। স্লিপটি যত্ন করে রেখে দিন। স্মার্ট কার্ড নেওয়ার সময় স্লিপটি সাথে নিয়ে যাবেন।
ভোটার নিবন্ধন করার জন্য অনলাইনে আবেদন:
ভোটার হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। মোবাইলেও আপনি আবেদন করতে পারবেন।
এজন্য ইন্টারনেটে https://services.nidw.gov.bd/ ঠিকানায় গিয়ে নতুন ভোটার নেভিগেশন বাটন ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে ফেলুন।
এরপর ফরমটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন। আপনার এলাকার নতুন ভোটারদের ছবি তোলা শুরু হলে ফরমটি সাথে নিয়ে ছবি উঠিয়ে নিন।
আপনার ল্যাপটপ/কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোন যদি না থাকে তাহলে কোন কম্পিউটারের দুকানে গিয়ে অনলাইনে আবেদন ফরমটি পূরণ করে নিন।
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড বের করার নিয়ম:
যে ব্যক্তির আইডি কার্ড বের করা হবে তাকে স্বয়ং উপস্থিত থাকতে হবে অথবা সে নিজে যদি আইডি কার্ড বের করতে চায় সেক্ষেত্রে আরো ভালো। কারন আইডি কার্ডের প্রকৃত মালিক যাচাই করার জন্য ফেইস ভেরিফিকেশন করা হয়।
ভোটার আইডি কার্ড বের করার জন্য আমাদের কিছু ডকুমেন্ট বা তথ্যের প্রয়োজন হবে, সেই ডকুমেন্ট গুলো হলো –
- জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার আথবা ভোটার স্লিপ নাম্বার
- জন্মতারিখ (dd/mm/yyyy)
- মোবাইল নাম্বার
- বর্তমান ঠিকানা
- স্থায়ী ঠিকানা
আইডি কার্ড বের করার নিয়ম:
- অনলাইনে আইডি কার্ড বের করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ওয়েবসাইটের services.nidw.gov.bd লিংকে প্রবেশ করতে হবে। তারপর NID স্লিপ নাম্বার ও জন্ম তারিখ দিয়ে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- সেখান প্রথম বক্সে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ফরম নম্বর দিন। দ্বিতীয় অংশে আপনার জন্মতারিখ সঠিকভাবে দিন। তারপর নিচের একটি ইমেজ এর মধ্যে যে অক্ষর গুলো লেখা আছে সেটা নিচের বক্সে হুবহু লিখে দিন। তারপর সাবমিট অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে লিখে দিন।
- সব কিছু ঠিক থাকলে আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর দিন। মনে রাখবেন আপনার এই মোবাইল নম্বরে একটি কোড যাবে তাই বন্ধ কোন মোবাইল নাম্বার দিবেন না।মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে একটি কোড যাবে সেই কোডটি সঠিকভাবে বসিয়ে বহাল এ ক্লিক করুন।
- উপরের প্রক্রিয়া গুলো শেষ হলে একটি পেজ আসবে।এই পেজ একটি কিউআর কোড পাবেন। এখন আপনাকে আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের প্লে স্টোরে গিয়ে “NID Wallet” নামের অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ওপেন করতে হবে। তারপর সেই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে সেই কিউআর কোডটি স্ক্যান করুন।
- কিউআর কোড স্ক্যান করার পরে আপনার ফেইস ভেরিফিকেশন চাইবে। আপনি মোবাইলে যেমনি সেলফি তোলেন ঠিক তেমনি আপনার মোবাইলে অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করা অবস্থায়, আপনার মুখমণ্ডল একবার ডান দিকে, একবার বাম দিকে এবং একবার উপরের দিকে ঘুরান। তাহলেই আপনার ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
- ফেইস ভেরিফিকেশনের প্রসেস সম্পন্ন হলে একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে । এই পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যতে ফেইস ভেরিফিকেশন এর ঝামেলা ছাড়া আপনার একাউন্টে লগইন করতে পারবেন।
- পাসওয়ার্ড সেট করার পরে আর একটি পেজ আসবে। এই পেজে আপনি সর্বশেষে ডাউনলোড অপশন পেয়ে যাবেন। এখান থেকে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
মনে রাখবেন আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র টি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড হবে। পিডিএফ আকারে ডাউনলোড হওয়ার পরে আপনি সেই পিডিএফ প্রিন্ট করে খুব সহজেই বাংলাদেশের যে কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
পুরাতন আইডি কার্ড বের করার নিয়ম:
এই নিয়মটি অনুসরন করে পুরাতন আইডি কার্ড বের করতে পারেন, 2017 কিংবা 2018 সালের পর থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অনলাইনের মাধ্যমে বের করার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন চাইলে যে কেউ ঘরে বসে নতুন ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন এর মাধ্যমে ডাউনলোড করতে পারে।
তবে যদি কারো জাতীয় পরিচয় পত্র 2017 কিংবা 2018 সালের পূর্বে হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে অনলাইনের মাধ্যমে আইডি কার্ড বের করতে হলে, প্রথমে থানায় হারিয়ে গেছে অথবা চুরি হয়ে গেছে কিংবা নষ্ট হয়ে গেছে এই মর্মে সাধারণ ডায়েরি লেখাতে হবে।
তারপর অনলাইনে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে থানায় লিখিত ডাইরির স্ক্যান কপি সাবমিট করার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র পুনরায় পাওয়ার আবেদন করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড বের হতে সময় লাগে:
জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন শেষে আইডি কার্ড অনলাইনে হতে কিছু দিন সময় প্রয়োজন হয়। আইডি কার্ড বের হতে সাধারণত 30 থেকে 60 দিন ( ছবি তোলার পর থেকে ) সময় প্রয়োজন হয়। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র অনলাইনে চলে আসে এবং ব্যক্তি তখন অনলাইন থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারে। যখন জাতীয় পরিচয়পত্রের অনলাইন হয়ে যাবে, তখন ব্যক্তির মোবাইলে এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন :বরকতপূর্ণ রাত শবে বরাতের নামাজ ও রোজার নিয়ম।
পরিশেষে:
বলা যায় যে ,প্রত্যেকের কাছে জাতীয় পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য জাতীয় পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা প্রয়োজন।আশা করি এই আরটিকেল থাকে আপনারা জাতীয় পরিচয় পত্র বা আইডি কার্ড সম্পর্কেজানতে পারবেন।