আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। কোমরের ব্যথা কমবেশি সব মানুষের হয়ে থাকে। এই ব্যথা যুবক থেকে বৃদ্ধ সব বয়সেই হতে পারে।এক গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জীবনে কখনও না কখনও এ ব্যথায় আক্রান্ত হয়। কোমর ব্যথা এমন এক ব্যথা যা সহজে মুক্তি দিতে চায় না। উঠতে, বসতে, ঘুমাতে গেলেও জানান দেয় ব্যথাটা। কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ সারাক্ষণ বসে বসে কাজ করা । অফিসেই হোক অথবা বাড়িতে কম্পিউটারে সামনে বসে কাজ করতে করতে কখন যে কোমর ব্যথাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তা হয়তো আপনিও জানেন না। যাদের বয়স প্রায় চল্লিশ, তাদের মধ্যে ছেলেদের থেকে মেয়েরা বেশি কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে শুরু থেকে কোমরের ব্যথা নির্মূল করতে না পারলে রোগীকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
কোমরের ব্যথার কারণ :
কোমরের ব্যথা বা ব্যাক পেইনের সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন কারণে কোমরের ব্যথার হয়ে থাকে। অনেকেই এ ধরনের ব্যথা কমাতে মুঠো ভরে বারবার পেইনকিলার খেয়ে থাকে । তবে পেইনকিলার সাময়িক স্বস্তি দিলেও বারবার এ ব্যথা হতেই থাকবে। আর পেইনকিলার কিন্তু কিডনির জন্য ক্ষতিকর।তাই পেইনকিলার খাওয়ার আগে ঘরোয়া ভাবে চেষ্টা করা উচিত। নিম্নে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-
কোমরের ব্যথার কারণ :
কোমরের ব্যথা বা ব্যাক পেইনের সমস্যাকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন কারণে কোমরের ব্যথার হয়ে থাকে। অনেকেই এ ধরনের ব্যথা কমাতে মুঠো ভরে বারবার পেইনকিলার খেয়ে থাকে । তবে পেইনকিলার সাময়িক স্বস্তি দিলেও বারবার এ ব্যথা হতেই থাকবে। আর পেইনকিলার কিন্তু কিডনির জন্য ক্ষতিকর।তাই পেইনকিলার খাওয়ার আগে ঘরোয়া ভাবে চেষ্টা করা উচিত। নিম্নে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-
লাম্বার স্পনডাইলোসিস:
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হচ্ছে লাম্বার স্পনডাইলোসিস। মানুষের কোমরে পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে। আর এ কারণে কোমর ব্যাথা হয়ে থাকে।
এলআইডি:
কোমর ব্যথার আর একটি অন্যতম কারণ হলো এলআইডি।যাদের ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়স তাদের এ সমস্যাটি হতে পারে। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে আর এই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই চাকতি যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুর ওপরে চাপ পরে। ফলশ্রুতিতে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন:
এটি কোমর ব্যথার আর একটি কারণ। অনেক চিকিৎসকেরা আবার বলে থাকেন অনির্দিষ্ট কারণ । মূলত অনির্দিষ্ট কারণে মানুষের হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়ে থাকে। এটি তরুণ বয়সে তুলনামূলক বেশি হয় ।
অন্যান্য কারণ
উপরোক্ত কারণ গুলো ছাড়া ও বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। যেমন-
- মেরুদণ্ডে টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
- শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হয়।
- একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা কোলে কিছু বহন করলেও কোমরে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সারাক্ষণ বসে বসে কাজ করলে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।
কোমরের ব্যথা ঘরোয়া কমানোর উপায়:
বয়স বাড়লে অনেকেই হাঁটু ও কোমরের ব্যথ্যায় ভোগেন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিলে সাময়িকভাবে কিছুটা ব্যথা কমলেও এর দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান পাওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। কিছু দিন পরপরই ফিরে আসে এই কষ্টদায়ক ব্যথা।
কিন্তু প্রতিদিনের অল্প কিছু অভ্যাস অনুশীলনেই এ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । অনেক দিনের কোনো খারাপ অভ্যাসের পরিণতিই হাঁটু ও কোমরের ব্যথ্যা। তাইএর জন্য শুধু আনতে হবে আমাদের জীবনযাত্রায় সাধারণ কিছু পরিবর্তন।সময় থাকতেই হতে হবে সাবধান ।
কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে যা করবেন-
নারকেল তেল ও কর্পুর:
নারকেল তেল ও কর্পুর মিশিয়ে গরম করে নিন। এরপর ঠান্ডা করে ওই তেল কোমরে মালিশ করুন কয়েকবার। দেখবেন ব্যথা মুহূর্তেই কমে যাবে।
নীলগিরি তেল:
কোমর ব্যাথা কমানোর আরও একটি উপায় হলো নীলগিরি তেল ব্যবহার। ব্যথার স্থানে এই তেল মালিশ করলে অনেকটাই স্বস্তি পাওয়া যায় ।
গরম সেঁক:
কোমরে ব্যথা কমাতে চাইলে দিনে দু’বার গরম সেঁক দিতে পারেন । এটি অনেক উপকারী। কোমরে ব্যথাতে গরম সেঁক দিলে অনেক আরাম মিলে।
সরিষার তেল ও রসুন:
সরিষার তেলের মধ্যে রসুন কুচি মিশিয়ে গরম করে ব্যবহার করলেও শরীরের যে কোনো ব্যথা থেকেই দ্রুত নিস্তার পাওয়া যায় ।
গরম দুধে ও কাঁচা হলুদ:
গরম দুধে কাঁচা হলুদ বা হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন। ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে হলুদ দুধ।কোমর ব্যথা কমাতে আদার চাও অনেক উপকারী।
পান পাতা ও ঘি:
কোমর ব্যথা পান পাতায় ঘি লাগিয়ে তারপর সেটি গরম করে কোমরে কিছুক্ষণ সেঁক দিন। দেখবেন ব্যথা কমবে দ্রুত।
দুধ ও মেথি:
গুড়াঁ দুধের সাথে মেথি বীজের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার জায়গায় ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য:
প্রতিদিন নিয়মিত দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর নিয়মিত শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না।
আদা:
আদার চায়েরও রয়েছে অনেক গুণ। কোমর ব্যথা কমাতে আদার চাও অনেক উপকারী।আদার ভেতরের রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং ব্যথা নাশক উপাদান ,এই কারণে কোমর ব্যথা বা পেট ব্যথা কমাতে চিবিয়ে আদার রস খেলে অনেক আরাম পাওয়া যায়।
একইভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে না থাকা:
আমাদের জীবনে বেশিরভাগ সময় অফিসিয়াল কাজগুলো দীর্ঘক্ষণ বসেই করতে হয় আর এই কারণে অনেক সময় কোমর ব্যথা হয়। এ জন্য কোমর ব্যথা কমাতে বা কোমর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘক্ষণ একইভাবে বসে কাজ করা বন্ধ করতে হবে । প্রয়োজন হলে কাজের ফাঁকে ১/২ মিনিট হাঁটাহাঁটি করুন অথবা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে , কিছুক্ষণ বসে এইভাবে কাজ করুন।
হঠাৎ কোমরে ব্যথা হলে এসব ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে ব্যাথা কমানো যায় । তবে বারবার ব্যাক পেইন হওয়া কিন্ত মোটেও ভালো নয়। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোমর ব্যথা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে :
- একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। জায়গা ছেড়ে মাঝে মাঝে উঠে পড়ুন।
- ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। দিনে যতো বেশি হাঁটবেন, ততো
- মাটিতে বসে কাজ করবেন না।
- দীর্ঘদিন শরীরের অবস্থা ভালো থাকবে।
- কোমর ভাঁজ করে হালকা শরীরচর্চাও করতে পারেন।
- শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার জন্য সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে কারণ বিশ্রাম শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আস্তে সাহায্য করে।
- এবং নরম ম্যাট্রেস বা ফোমের বিছানায় কখনোই শোবেন না। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
আরো পড়ুন : বিভিন্ন পদ্ধতিতে ছারপোকা তাড়ানো উপায়
পরিশেষে :
বলা যাই যে, কোমরের ব্যথা বা ব্যাক পেইনের সমস্যায় বর্তমানে কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরুষদের তুলনায় কোমর ব্যথার সমস্যায় নারীরাই বেশি ভুগেন। কিন্তু কোমরের ব্যথাকে অবহেলা করা যাবেনা। কোমর ব্যথা হলে উপরোক্ত উপায় গুলো আপনার কোমর ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। তবে এতে ব্যথা না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে।