আসালামু আলাইকুম আশা করছি সবাই ভালো আছেন। কোমরে ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা।কোমর ব্যথা এমন এক ব্যথা যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাই না । উঠতে, বসতে, ঘুমাতে গেলেও জানান দেয় এই ব্যথাটা। সারাক্ষণ বসে বসে কাজ কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ। সে অফিসেই হোক কিংবা বাড়িতে। কম্পিউটারে সামনে বসে কাজ করতে করতে কখন যে কোমর ব্যথাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তা হয়তো আপনিও জানেন না। যাদের বয়স প্রায় চল্লিশ, তাদের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
এ ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে, কখনও কখনও অল্প সময়ে ভালো হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ রোগী দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
চিকিৎসকরা বলেন, ব্যথা শুরু হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে। তা সম্ভব না হলে (ব্যথার তীব্রতা বেশি থাকলে) যেভাবে ব্যথা কম অনুভব হয়, সেভাবে বিশ্রাম নিতে হবে। পরবর্তী দিন থেকে ব্যথা নিরসনে পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোমর ব্যথার কারণ:
বর্তমানে কোমর ব্যথায় ভুগতে দেখা যায় অনেককেই। এই সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। এর সব চেয়ে বড় কারণ হচ্ছে একটানা দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যাস।নিম্নে কারণগুলো আলোচনা করা হলো –
লাম্বার স্পনডাইলোসিস:
কোমরে পাঁচটি হাড় আছে। কোমরের হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে। আর এর কারনে কোমরে ব্যথা হয়।
এলআইডি:
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ এলআইডি। ৩০ থেকে ৪০ বছর যাদের বয়স তাদের এ সমস্যাটি হতে পারে। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই চাকতি যদি কোনো কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুর ওপরে চাপ পরে। ফলশ্রুতিতে কোমরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন:
এর কারণ অনেক আবার চিকিৎসকেরা বলে থাকেন অনির্দিষ্ট। মূলত অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়ে থাকে। এটি তরুণ বয়সে তুলনামূলক বেশি হয় ।
অন্যান্য কারণ:
এছাড়া বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডে টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হতে পারে। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা কোলে কিছু বহন করলেও কোমরে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যেভাবে কোমর ব্যথা থেকে দূরে রাখবেন :
কোমর ব্যথা থেকে দূরে রাখতেএকই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। জায়গা ছেড়ে মাঝে মাঝে উঠে পড়ুন।ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলতে পারেন । দিনে যতো বেশি হাঁটবেন, ততো দীর্ঘদিন শরীরের অবস্থা ভালো থাকবে। কোমর ভাঁজ করে হালকা শরীরচর্চাও করতে পারেন। মাটিতে বসে কাজ না করাই ভালো । এবং নরম ম্যাট্রেস বা ফোমের বিছানায় কখনোই শোবেন না। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো রকম ওষুধ খাবেন না।
কোমর ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা:
হটাৎ কোমর ব্যথা হলে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। নিম্নে সে গুলো আলোচনা করা হলো –
(১)সেঁক দিন:
কোমরের যে জায়গায় ব্যথা সেখানে সেঁক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
(২)আদা:
আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
(৩)হলুদ:
দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমে থাকে।
(৪)মেথি বীজ:
গুড়াঁ দুধের সঙ্গে মেথি বীজের মিশ্রণ তৈরি করে ব্যথার জায়গায় ম্যাসাজ করলে উপকার পাবেন।
(৫)লেবুর শরবত:
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই কার্যকারী।তাই কোমর ব্যাথা কমাতে লেবু উপকারী।
(৬)অ্যালোভেরা:
প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
(৭)ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য:
প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর নিয়মিত শরীরচর্চা করতে ভুলবেন না।
(৮)বালিশ ব্যবহার:
একটি বালিশ রেখে তার উপর কোমরের ব্যথার জায়গাটি রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। এতেও ব্যথা অনেকটা উপশম হবে। ঘুমের সময়েও এভাবে কোমরের নিচে বালিশ রেখে ঘুমালে উপকার পাবেন।
(৯)তেল মালিশ:
ব্যাক পেইন কমানোর আরও একটি উপায় হলো নীলগিরি তেল ব্যবহার। ব্যথার স্থানে এই তেল মালিশ করলে অনেকটাই স্বস্তি মিলবে।এছাড়াও নারকেল তেলে কর্পুর মিশিয়ে গরম করে নিন। এরপর ঠান্ডা করে ওই তেল কোমরে ব্যবহার করুন কয়েকবার। দেখবেন ব্যথা মুহূর্তেই সেরে যাবে।
কোমরে ব্যথা কমাতে ব্যায়াম:
কিছু ব্যায়াম কোমর ব্যথা প্রশমনে সাহায্য করে থাকে। এমনকি ওষুধের চেয়েও ভালো ফল দেয়। খুব অল্প সময়ে সহজে করা যায় এমন কিছু ব্যায়ামের কথাই জানা যাক।
এই ব্যায়াম প্রতিদিন রাতে ও সকালে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করতে পারেন। নিম্নে কিছু ব্যায়াম আলোচনা করা হলো –
(১) সমতল হালকা নরম বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে দুই হাত শরীরের দুই পাশে রেখে দুই পা সোজা করে শুতে হবে। এরপর হাঁটু ভাঁজ না করে এক পা ওপরের দিকে তুলতে হবে যত দূর পর্যন্ত সম্ভব হয় । ১০ সেকেন্ড পা তুলে রাখতে হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত পা তুলে রাখতে পারেন। একইভাবে অপর পা ওপরে তুলুন এবং একই সময় নিন।
(২)এবার একইভাবে হাঁটু ভাঁজ না করে একসঙ্গে দুই পা তুলতে হবে এবং একই সময় নিতে হবে।
(৩)এবার এক হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটুকে বুকে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে। এভাবে ১০ সেকেন্ড পার করতে হবে। একইভাবে অপর হাঁটু বুকে লাগাতে হবে এবং একই সময় পার করুন।
(৪)এবার একসঙ্গে দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুহাতে জড়িয়ে বুকে লাগাতে হবে।
(৫)সর্বশেষ ধাপটি হলো দুই পা সোজা করে পায়ের পাতার দিকে সটান করে ১০ সেকেন্ড রাখতে হবে।
প্রতিটি ধাপ ১০ সেকেন্ড দীর্ঘায়িত হবে বা ১০ গোনা পর্যন্ত করতে হবে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করে দু-তিনবার সকালও রাতে করতে হবে।এটা কোমরের মাংসপেশির প্রদাহ কমায় ও শক্তিশালী করে তোলে। ফলে কোমরে ব্যথা কমে আসে।
আরো পড়ুন :গলা খুসখুস দূর করার কার্যকরী ঘরোয়া উপায়।
পরিশেষ :
বলা যায় যে ,হঠাৎ কোমরে ব্যথা হলে এসব ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে কমাতে পারবেন। আর এজন্য আমার এই আটিকেলটি আপনাদের সাহায্য করবে। তবে বারবার ব্যাক পেইন হওয়া কিন্ত মোটেও ভালো নয়। সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।