আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।অনেকেরই মুখের দুর্গন্ধের কারণে কথা বলতে লজ্জা লাগে এবং এমন অবস্থায় তাদের অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়। আপনার ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও এমন একটি সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । মুখে দুর্গন্ধের কারণ দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার ও জীবাণুর কারণে হতে পারে। এছাড়া ও মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার পেছনে মুখের ভেতরে বা দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব ছাড়াও আরও অনেক কারণ থাকতে পারে।
মুখে দুর্গন্ধের কারণ:
এছাড়া আপনার মুখে দুর্গন্ধ কিডনির সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যার ,ডায়াবেটিসের জন্যেও হতে পারে । মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে লিভারের সমস্যা থাকলে।বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যেগুলো কাজে লাগিয়ে মুখের দুর্গন্ধ দূর করা যেতে পারে।
ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছাড়াও যেসব কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে—
অভ্যাস এবং খাবারদাবার
রসুন,পেঁয়াজ, কমলালেবুর রস এবং কিছু মসলার কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এ ছাড়া যেকোনো খাবার দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকলে সেখান থেকে মুখে দুর্গন্ধ হয়। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলেও কিন্তু মুখে দুর্গন্ধহতে পারে। এক্ষেত্রে না খেয়ে থাকতে হলে “যেমন পবিত্র রমজানে রোজা রেখে কিংবা উপবাসের সময়” মুখ পরিষ্কার রাখার প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে। যাঁরা অ্যালকোহল কিংবা ধূমপান করেন, তাঁদের মুখেও দুর্গন্ধ হয়ে থাকে । এছাড়া পান, সুপারি, জর্দা, গুল প্রভৃতিও দুর্গন্ধের কারণমুখেও দুর্গন্ধ হয় ।
মুখের শুষ্কতা :
মুখ যাদের শুষ্ক হয়ে থাকে, তাদের মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে । মুখ খোলা রেখে যারা ঘুমান, তাদের মুখ শুষ্ক হয়ে থাকে। আবার কিছু ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও মুখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং মুখে দুর্গন্ধ হয় ।
দুর্গন্ধের অন্যান্য কারণ:
বিভিন্ন কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয় যেমন –
- ডায়াবেটিস
- শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ
- বদহজম
- সাইনাসে দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ
- লিভার বা কিডনির কিছু রোগ
- গলার পেছনের অংশে কফ জমা হওয়া
যেভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর করবেন :
মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।যেমন –
লেবুর রস:
মুখের গন্ধের কারণে যদি সবসময় অস্বস্তিতে পড়তে হয় , তা হলে নিয়মিত লেবুর রস পান করুণ। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে লেবুর অন্দরে থাকা অ্যাসিডিক কনট্যান্ট, মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুদের মেরে ফেলে। ফলে খারাপ গন্ধের প্রকোপ কমতে থাকে । এক্ষেত্রে এক কাপ পানিতে ২ চামুচ লেবুর রস ফেলে পান করতে পারেন কিংবা সেই পানি দিয়ে ভালো করে কুলকুচি করে ফেলেও দিতে পারেন।
মৌরি:
মৌরিতে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটেরিয়াল প্রোপার্টিজ, যা মুখ গহ্বরে তৈরি হওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো মেরে ফেলে। ফলে মুখে দুর্গন্ধ হয় না । যখনই আপনার মনে হবে যে ,মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে, এক মুঠো মৌরি নিয়ে চিবিয়ে নেবেন।
বেকিং সোডা:
শরীরের অন্দরে অ্যাসিড লেভেল ঠিক রাখার মধ্য দিয়ে মুখের দুর্গন্ধ দূরকরে বেকিং সোডা। তাই এ ধরনের সমস্যায় যদি ভুগে থাকেন, তা হলে এক গ্লাস পানিতে অল্প পরিমাণে বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করুন প্রতিদিন। দেখবেন দারুণ ফল পাবেন।
এলাচ:
মুখে যদি দুর্গন্ধ হয় তাহলে এলাচ মুখে রেখে দিন। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যেই দুর্গন্ধ একেবারে কমে যাবে।
মেথি বীজ:
মুখের দুর্গন্ধ কমাতে মেথি বীজ অনেক কার্যকরি। এক চামুচ মেথি বীজ নিয়ে পরিমাণমতো পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফোটান। তার পর বীজগুলো ছেঁকে নিয়ে সেই জল চায়ের মতো পান করুন।এমনটি কয়েক দিন করলে দেখবেন মুখের গন্ধ কমে যাচ্ছে ।
পুদিনাপাতা:
পুদিনাপাতাকে প্রাকৃতিক মাউন্ট ফ্রেশনার বলা যেতে পারে। তাই মুখে গন্ধ হলে ২-৩টি পুদিনাপাতা নিয়ে চিবিয়ে ফেলুন দেখবেন মুখের দূগন্ধ চলে যাবে।
দারুচিনি:
দারুচিনির কোনো বিকল্প নেই মুখের ভেতরে তৈরি হওয়া জীবাণু মেরে ফলতে। তাই মুখ থেকে গন্ধ হলেই এক চামচ দারুচিনির পাউডারের সঙ্গে পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে গরম করে নিন। তার পর সেই পানি ছেঁকে নিয়ে কুলকুচি করুণ। দেখবেন মুখের গন্ধ চলে যাবে।
লবঙ্গ:
এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপাটিজ, যা মুখে গন্ধ তৈরি করা ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলতে পারে । একটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে চুসতে থাকুন। দেখবেন মুখের গন্ধ একেবারে চলে গেছে।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার:
এই প্রাকৃতিক উপাদানটির মধ্যে উপস্থিত একাধিক উপাকারী উপাদান মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতে খাওয়ার আগে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার অল্প পরিমাণে নিয়ে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করতে হবে। এমনটি করলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে, অন্যদিকে পেটের রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে ।
ধনিয়া ও পুদিনা পাতা:
খুব দ্রুত মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে ধনিয়া পাতা, পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে সাময়িক ভাবে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
এগুলো ছাড়া ও বেশ কিছু অভ্যাস করলে মুখের দূগন্ধ দূর করা যাই। নিম্নে কিছু উপায় দেয়া হলো –
দিনে দুই বেলা ব্রাশ করুন:
দাঁতের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে দিনে দুই বেলা ব্রাশ করুন । মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করা দরকার। যদি এরপরও মুখে দুর্গন্ধ হয়, তাহলে বেকিং সোডা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে পারেন।
জিহ্বা ব্রাশ করুন:
ব্রাশ করার মানে কেবল দাঁতই ব্রাশ করা নয় জিহ্বাও ব্রাশ করা জরুরি। জিহ্বার জন্যও মনোযোগ প্রয়োজন। ব্যাকটেরিয়া জিহ্বাতেও বৃদ্ধি পায়। এতে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
প্রচুর পানি পান করুন:
আপনি পানি শূন্যতায় ভুগলেও মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনাকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে এবং মুখের বাজে গন্ধ দূর করবে।
দুধ খান:
দুধ খাবার গ্রহণের আগে খেলে মুখের দুর্গন্ধ ভাব কম হয়। বিশেষ করে তেল মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার আগে দুধ বেশি কার্যকরি।
চা খান:
চায়ের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি মুখের দুগর্ন্ধের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে থাকে । এ ছাড়া এর মধ্যে রয়েছে পলিফেন। এটি মুখের সালফার উপাদানকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
তাজা ফল খান:
ফাইবার সমৃদ্ধ ফল আপেল, পেয়ারা, গাজর ও আনারস ইত্যাদি সব ফলগুলো দাঁতে আটকে থাকা খাদ্য কণা বের করে আনে। তাই এই ফল বেশি খেলে মুখের দুর্গন্ধ কম হয়।
চুইঙ্গাম চিবানো:
চিনি ছাড়া চুইঙ্গাম মুখের বাজে গন্ধ দূর করতে চিবুতে পারেন। এটি মুখের লালা উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। এটি ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে সাহায্য করবে ও খাদ্যকণাও পরিষ্কার করবে।
আরো পড়ুন :বিভিন্ন কারণে ঘাড় ব্যথা এবং এ থেকে মুক্তির উপায়।
পরিশেষে :
বলা যাই যে , উপরোক্ত সকল চেষ্টার পরও মুখে দুর্গন্ধ রয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দাঁত বা মাড়ির কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলে সেটির চিকিৎসা করুন । এছাড়া কখনো কখনো শরীরের ভেতরকার সমস্যার জন্যও মুখে দুর্গন্ধ হয় থাকে । তাই গন্ধ কোনোভাবেই না কমলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।