কোনো না কোনো সমস্যা হয় আমাদের সকলের জীবনে । আর এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য একে অন্যের সাথে পরামর্শ করে থাকি। তবে জীবনে এমন অনেক বিপদ বা সমস্যা  রয়েছে যেখানে সেই বিপদের কথা  আমরা কারো কাছে শেয়ার করতে পারিনা, তবে এই সকল বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সালাতুল হাজত নামাজ পরতে পারি এবং মহান আল্লাহতালার কাছে  বিপদের কথা বলে সাহায্য চাইতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেই সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে হয় কিভাবে এবং এই নামাজের অন্যান্য বিষয় সমূহ।

সালাতুল হাজত নামাজ:

হাজত অর্থ হল -” প্রয়োজন”  আর সালাত অর্থ “নামাজ” এবং  সালাতুল হাজত হল প্রয়োজনের নামাজ। বৈধ যেকোন প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে  আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নফল নামাজ আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে। মোটকথা বিপদ আপদের সময় নিজের কষ্ট গুলো কে নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে পেশ করাই সালাতুল হাজত

সালাতুল হাজত কেন পড়বো: 

সালাতুল হাজত হচ্ছে  প্রয়োজনে  নামাজ পড়া । প্রয়োজনে বা বিপদে  যখন কেউ সাহায্য করতে পারে না, তখন মানুষের একমাত্র সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। মানুষকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করতে তিনিই পারেন। মানুষের বিপদ যত সহজ আর কঠিনই হোক না কেন, তিনি পারে মানুষকে তা থেকে রক্ষা করতে। বিপদ থেকে মুক্তি পেতে  যে নামাজ পড়া হয় সে  নামাজ ‘সালাতুল হাজত’ হিসেবে পরিচিত। এ নামাজের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআল ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৩)

সালাতুল হাজত নামাজের সঠিক সময়:

কোন নির্দিষ্ট সময় নেইএই নামাজের। যে কোনো সময় এই নামাজ পড়া যাই । তবে নিষিদ্ধ বা মাকরূহ সময় এই নামাজ পড়া যাই না।অবশ্যই এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

সবচেয়ে উত্তম সময় হলো :

রাত্রিবেলা ঘুমানোর সময়। আপনি ইচ্ছে করলে শেষ রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাজের পরে দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ পড়তে পারেন কারণ  এই সময় দোয়া কবুলের সময়। আশা করা যায় খুব দ্রুত আল্লাহ তায়ালা দোয়া কবুল করবেন।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ত:

সালাতুল হাজত  নামাজের গুরুত্ত অপরিসিম।  নিজের প্রয়োজনে আল্লাহ কাছে  সাহায্যের জন্য এ  নামাজ পড়া হয় ।এ  নামাজের জন্য এ   নিয়ত পড়তে হয় আবার বাংলায় ও পড়া  যায় 

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাই ছালাতিল হাজাতি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।

অর্থ : ছালাতুল হাজাত দুরাক’আত নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।

বাংলায় : আমি কেবলা মুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে সালাতুল হাজত নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়িয়েছি ।

সালাতুল হাজত নামাজের দোয়া:

বাংলায় উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম সুবহানাল্লাহি রাব্বিয়াল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। আস্আলুকা মুজিবাতি রহমাতিক ।

অআ’ঝাইমা মাগফিরাতিক অলগনিমাত মিনকুল্লি বির্রীন । আসসালা মাতা মিন কুল্লি ইস্মিন। লা তাদা’লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহ। অলা হাম্মান ইল্লা ফার্রজতাহ । অলা হাজাতান হিয়া লাকা। রিযান ইল্লা ক্বাদাইতাহা । ইয়া আরহামার রাহিমীন।

অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি অনেক সহনশীল ও দয়ালু । তিনি সমস্ত দোষ ত্রুটি থেকে পুত – পবিত্র।তিনি বিশাল আরশের প্রভু । সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনি পুরা বিশ্ব জাহানের প্রভু।আপনার কাছেই একমাত্র আমি চাচ্ছি , আপনার রহমত আকর্ষণকারী সমস্ত ভালো কর্মের ওসিলায় , আপনার ক্ষমা , মাগফিরাত আকর্ষণকারী সমস্ত কাজের বরকত।সমস্ত ভালো আমলের সাফল্য লাভের এবং সমস্ত গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন। সমস্ত সমস্যা সমাধান করে দিবেন।

আর আমার যে সমস্ত প্রয়োজন রয়েছে যাতে আপনি সন্তুষ্ট রয়েছেন সে সমস্ত প্রয়োজন আপনি পুরো করে দিবেন। হে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাময়।

সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার সূরা:

সালাতুল হাজত নামাজ পড়ার সময় কোন বিশেষ সূরা রয়েছে কিনা। সালাতুল হাজত নামাজের বিশেষ কোনো সূরা  নেই আপনারা যেভাবে নফল নামাজ আদায় করেন ঠিক সেভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে। তবে নিয়ত করার সময় অবশ্যই সালাতুল হাজত নামাজ উল্লেখ রাখতে হবে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম:

সালাতুল হাজত নামাজের কোন নির্দিষ্ট নিয়ম। আমরা যেভাবে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করি ঠিক সেভাবে সালাতুল হাজতের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে হবে।

  • প্রথমে আমাদের অজু করে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
  • নামাজ নিয়ত করতে হবে।
  • ছানা দোয়া, সূরা ফাতিহা এবং এর সাথে যে কোন একটি সূরা মিলিয়ে করতে হবে।
  • নামাজের রুকু এবং সেজদা দিতে হবে। 
  • এভাবে দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে এবং তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ এবং মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত ধরতে হবে। 

সালাতুল হাজতের ফজিলত:

যে কোনো প্রয়োজন পূরণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এ নামাজ পড়ার গুরুত্ব ওঠে এসেছে-

হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে যে কোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য  নিজেই এ নামাজ পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে এ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যখন  কোনো প্রয়োজন বা বিষয় (বিপদ-আপদ)  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে চলে আসতো তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে বা মানুষের কাছে কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে এবং ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে।’ 

কারণ নামাজ ও দরূদ পাঠের বরকত ও ফজিলতে মহান আল্লাহ মানুষের যে কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। বিপদের সময় উত্তমভাবে অজু করে হাজত পূরণের নিয়তে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করা। আর নামাজ শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে নিজ ভাষায় বৈধ প্রয়োজনের জন্য এ দোয়া করা।

সালাতুল হাজত নামাজের উপকারিতা:

এই নামাজ পড়ার উপকার অনেক  রয়েছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে এই নামাজ পড়া হয় সে উদ্দেশ্যটা পূরণ হয়ে  যায় ।এই নামাজ যখন আপনি মনোযোগ সহকারে একমাত্র আল্লাহর দিকে ধ্যান করে আদায় করবেন। আশা করা যায় তখন আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে।বর্তমান সময় হলো এমন একটি সময় যে সময় কেউ কারো উপকার করতে চায় না। তাই কখনোই মানুষের দিকে মনোযোগী না হয়ে আপনি সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে আপনার মনের আশা , বিভিন্ন প্রয়োজন ইত্যাদি আল্লাহর কাছে যাবেন।

আপনার মনের আশা ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা পূরণ করে দিবেন এবং আপনার নানা প্রয়োজন পুরা করে দিবেন।একনিষ্ঠ এবং মনোযোগ হয়ে এই নামাজ আদায় করলে অবশই আপনার মনের আশা  খুব দ্রুত পূরণ  যাবে ইনশাআল্লাহ।

আরো পড়ুন :গ্যাস্ট্রিক বুকে ব্যাথা দূর করার উপায় এবং লক্ষ্মণসমূহ

পরিশেষে:

প্রত্যেকটি মুমিনের উচিত পারিবারিক, সামাজিক ,শারীরিক-মানসিক যে কোন বিপদ আপদ এর ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন দুশ্চিন্তার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার কাছে সালাতুল হাজত নামাজ পড়ে দোয়া করা।এটা আমাদের নবী হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন এবং সাহাবাদেরকে আদেশ করেছেন। অতএব আমাদেরকে সালাতুল হাজত নামাজ পড়া উচিত ।

Write A Comment