আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন । অভিযোগ পত্র বা নালিশ নামা যা ই বলি না কেন দৈনন্দিন জীবনে খুব একটা এর প্রয়োজন হয়না বললেই চলে। তবেএ ধরনের অভিযোগ পত্র ,পরিস্থিতির প্রয়োজনে লেখার নিয়ম প্রয়োজন হতেই পারে। সামাজিক বা কর্ম জীবনে কোন ধরনের সমস্যা হলে সমস্যা তুলে ধরে আমরা যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সমাধান দাবী করতে পারি,তাই অভিযোগ পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমাদের জেনে থাকা উচিত।

অভিযোগ:

আমরা ব্যক্তিগত ও দৈনন্দিন জীবন এবং কর্মজীবনে নানান ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হই,এর মধ্যে  কিছু সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে পারি  আর কিছু কিছু সমস্যা থাকে যা আমাদের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব হয় না। 

নানান ধরণের হয়রানি,ছিনতাই ,মানহানী,ডাকাতি  এবং নিরাপত্তাহানীর জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জানাইবা বলি এটাই হলো অভিযোগ।  

অভিযোগ পত্র :

তবে মৌখিক অভিযোগ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণযোগ্যহয় না ।।তাই প্রাতিষ্ঠানিক অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবগত করতে অভিযোগ পত্রের দরকার হয়ে থাকে।অভিযোগ পত্র হচ্ছে এমন এক ধরণের লিপি যাতে কোন প্রতিষ্ঠান,ব্যক্তি,পণ্য বা সেবার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কাজ বা বিরক্তির কারণ বা ভুল বা অসন্তোষ প্রকাশ করে ,তা প্রতিহত করার জন্য লেখা হয়।

অভিযোগ পত্রের ধরণ :

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ পত্র নানা রকম হয়ে থাকে। অভিযোগের ধরণ নির্ধারিত হয় অভিযোগ কারীর ভোগান্তির উপর।  নিম্নে সচারচর যেসব অভিযোগ পত্র লেখা হয়ে থাকে তা তুলে ধরা হলো:

  • চার্জশীট বা অপরাধ নিয়ে অভিযোগ নামা।
  • ভোক্তা অভিযোগ পত্র।
  • কর্মচারী অভিযোগ পত্র।
  • ভাড়াটে অভিযোগ পত্র।

অভিযোগ পত্রের ক্ষেত্র সমূহ:

  • পুলিশি মামলায় আসামীর অপরাধ বর্ণণ করে যে  চার্জশীট বা অভিযোগ নামা লেখা হয়। 
  • কোন পণ্য বা সেবা গ্রহনের সন্তোষজনক ফলাফল না পেয়ে ক্রেতা যদি ক্ষতি মনে করেন তবে সেক্ষেত্রে ভোক্তা অভিযোগ পত্র করতে পারে।
  • কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তির নৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক গাফিলতি বা অপরাধ সংগঠনের বিরুদ্ধে কর্মচারী অভিযোগ পত্র লিখতে পারে।
  • কোন সম্পদ,বাড়ি বা গাড়ি অর্থের বিনিময়ে কোন ব্যক্তি ভাড়া দিলে,ভাড়াটে ব্যক্তির দায়িত্বশীলতার অভাবে মালিক পক্ষ ক্ষতি গ্রস্থ হলে সেক্ষেত্রে ভাড়াটে অভিযোগ করতে পারে ।
  • ব্যক্তিগত বিভিন্ন সৃষ্ট সমস্যার কারণে ব্যক্তিগত অভিযোগ পত্র লেখার ও প্রচলন রয়েছে।

অভিযোগ পত্র লেখার কারন:

  • কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক বিপণনে অথবা কোন জায়গায় যদি কোন ব্যক্তির দাবী,অধিকার লঙ্ঘিত হয় তবে অভিযোগ পত্র পেশ যাতে পারে।যেন উক্ত ব্যক্তি ন্যায্যতা ফিরে পায়।
  • কর্মস্থলে এরকম অভিযোগের অনেক পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হতে পারে।যেমন ন্যায্য সম্মানী না প্রদান,পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ,যৌন সহিংসতামূলক আচরণ ইত্যাদি প্রতিহত করতে অভিযোগ পত্র দায়ের করা যেতে পারে।
  • কোন সেবা গ্রহণ বা পণ্য ক্রয়ের পর পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ,সেবার গুনগত মানের আমূল পার্থক্য,বিজ্ঞাপনের সাথে বাস্তবিক পণ্যের মান ঠিক না হলে ,সেক্ষেত্রেও অভিযোগ পত্র দায়ের করা যেতে পারে।এ ধরনের অভিযোগ পত্র ভোক্তা অভিযোগ পত্রের আওতায় পড়ে।
  • কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হয়রানি মূলক কাজের জন্যেও অভিযোগ পত্র দায়ের করা যায়।যেমন জাল কাগজ দ্বারা জমি বা সম্পদ বিক্রয়ের প্রচেষ্টা ,অর্থ লেনদেন এ জালিয়াতি ইত্যাদি।
  • কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অপর্যাপ্ত সেবার বিরুদ্ধেও অভিযোগ পত্রের মাধ্যমে সুষ্ঠুতা দাবী করা যায়।যেমন- অতিরিক্ত বিল আসলে অভিযোগ পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা যায় এবং অতিরিক্ত লোডশেডিং এর জন্য বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ পত্র প্রদান করা যায়।

অভিযোগ পত্র লেখার নিয়ম:

প্রকৃতপক্ষে অভিযোগ পত্র নানান ধরনের হয়ে থাকে। নানান বিষয়ে অভিযোগ প্রদান করা হয় এবং নানান ধরনের অভিযোগ পত্রের নিয়ম রয়েছে।আলাদা আলাদা অভিযোগ পত্র গুলো আলাদা আলাদা নিয়ম অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

  • ব্যবহারিক দিক থেকে অভিযোগ পত্র যেহেতু বেশ গুরুগম্ভীর একটি কাগজ,তাই ছেলেমানুষী পরিহার করে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য যাচাইয়ের পরেই অভিযোগ পত্র লেখার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কেননা,এর সাথে জড়িয়ে থাকবে কোন ব্যক্তির ব্যক্তি জীবন,ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সুনাম ইত্যাদি।
  • অভিযোগ পত্রের প্রথমেই সুস্পষ্ট ভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচয় উল্লেখ করতে হবে।এরপরই  আনিত অভিযোগ টি পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করতে হবে।
  • অভিযোগ পত্রের অনুচ্ছেদের প্রথম ভাগে স্পষ্ট ও বিশেভাবে আনিত অভিযোগের প্রকৃতি বর্ণনা করতে হবে।
  • ২য় ভাগে,যথাযথ প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • এবং শেষ ভাগে,উপসংহার স্বরুপ অভিযোগ নিরসনের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে,সে দাবী জানাতে হবে।
  • যদি আর্থিক ক্ষতি সংশ্লিষ্ট থাকে,ক্ষতিপূরণ ও এক্ষেত্রে দাবী করা যেতে পারে।
  • অভিযোগ পত্রের ভাষা ও শব্দ চয়ন সাবলীল ও বোধগম্য হওয়া উচিত ।
  • নিরপেক্ষতা অভিযোগ পত্রের অন্যতম অলংকারস্বরুপ।মিথ্যে কোন তথ্য অবশ্যই পরিহারযোগ্য করতে হবে।

অভিযোগ পত্র লেখার ফরমেট :

আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে অভিযোগ পত্র লিখতে হয়। নিম্নে একটি দেখানো হলো –

বরাবর,

বরাবর

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/প্রতিষ্ঠানের প্রধান

কার্যালয়ের এলাকা

বিষয়:

অভিযোগ নং:

………

(১)অভিযোগকারীর নাম ও ঠিকানা:

………….

(২)অভিযোগ দাখিলের তারিখ:

………..

(৩)যাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তাহার নাম ও ঠিকানা:

…………..

(৪)অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:

………..

(৫)সং ক্ষুব্ধতার কারণ:

…………

(৬)পার্থিত প্রতিকার এবং উহার যৌক্তিকতা:

……………

(৭)অভিযোগ এ উল্লেখিত বক্তব্যের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের বর্ণনাঃ

……………

সত্যপাঠ

আমি /আমরা এই মর্মে প্রত্যায়ন করিতেছি যে, এই অভিযোগ এ বর্নিত অভিযোগসমূহ আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সত্য।

আরো পড়ুন :আপেল সিডার ভিনেগার বানানো ও খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা

পরিশেষে :

বলা যাই যে , অভিযোগ নামা অত্যন্ত সংবেদনশীল নথি।এজন্য এ ব্যাপারে সতর্কতাঅবলম্বন করা উচিত ।আশা করি অভিযোগ পত্র সঠিক ভাবে লেখার ব্যাপারে আপনাদের সকল দ্বিধা দূর হয়েছে।

Write A Comment