আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। অনেকেই নাকে এলার্জি সমস্যায় ভোগেন । এলার্জি সর্দি নাকের একটি সমস্যা, যা নাসিকা ঝিল্লির প্রদাহের ফলে হয়ে থাকে।এটি কোনো মারাত্মক রোগ না হলে ও  এই রোগের কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।অনেক সময় এই এলার্জি জনিত সর্দি ও হাঁচিতে অতিষ্ঠ হয়ে যেতে হয় । নাকে অসহ্য চুলকানি ও একনাগারে কয়েকটি হাঁচি দেয়া সত্যি বিব্রতকর। 

নাকের এলার্জির উপসর্গ :

অনবরত ও অনিয়ন্ত্রিত হাঁচি হয় , নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, কারো কারো আবার চোখ দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ চুলকায়,  এছাড়া আরো ও অনেক উপসর্গও দেখা দেয়। এতে শরীরে ক্লান্তি ভাব চলে আসে। কখনো কখনো মাথা ব্যথা, মাথা ভার ভার লাগা, কান বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।অনেক দিন ধরে এ ধরনের এলার্জিতে আক্রান্ত রোগীদের নাসারন্ধ্রের পার্শ্ববর্তী মাংসপিণ্ড (ইনফিরিয়র টারবিনেট) ফুলে থলির মতো বড় এবং বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে ।

নাকের এলার্জির কারণ :

নাকের এলার্জি বা এলার্জিক রাইনাইটিস মূলত একটি এলার্জি জনিত নাকের প্রদাহ। ।এতে নাকের ঝিল্লী ও ঝিল্লীর নিচের অংশ বা তার আশেপাশের অংশ ফুলে গিয়ে নাক বন্ধ হয়ে যায়।বিভিন্ন কারণে নাকে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। আসুন জেনে নেয়া যাক নাকের এলার্জির বেশ কিছু কারণ-

(১) রাস্তার ধুলা, পুরনো বইপত্র বা পত্রিকায়, বাসার পুরনো ধুলোজমা কসমেটিকস, ফুলের রেণু ও পশুপাখির লোম থেকে এই এলার্জি হতে পারে। 

(২)গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোয়া, সিগারেটের ধোয়া, শিল্পকারখানার বিভিন্ন উপাদানও এই এলার্জির আরেকটি কারণ।  

(৩) কিছু খাবার রয়েছে যেমন- ইলিশ মাছ, বোয়াল মাছ, চিংড়ি, বেগুন ও হাঁসের ডিম থেকেও এলার্জি হতে পারে। 

(৪) শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ায় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকে। তাই এ সময় এলার্জির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। 

নাকের এলার্জি প্রতিরোধের উপায় :

এলার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হচ্ছে  কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। প্রথমেই রোগীকে বুঝতে হবে কী কারণে তার এলার্জির সমস্যা হয়।  

এলার্জি চিকিৎসার প্রথম ধাপ হলো হেলথ এডুকেশন। যাদের এই সমস্যা রয়েছে , তারা শীতের ধুলাবালি ও গাড়ির কালো ধোয়া থেকে নিরাপদ থাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাহিরের এলার্জিনের স্পর্শে নাকের এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যার কারণে নাক ফোলা ও জ্বালাপোড়া হয় । 

(১) মধু: 

মধু প্রচুর প্রাকৃতিক গুনাগুন সম্পন্ন একটি উপাদান। নাকের এলার্জির প্রায় সব উপসর্গ নিরাময়ে মধু কার্যকরি ভূমিকা রাখে । মধুতে আছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা নাকের প্রদাহ এবং এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। 

এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করলে অল্পদিনেই নাকের এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় ।

(২) বাতাস পরিশোধক

দূষিত বায়ু ও বাতাসে উপস্থিত বিষাক্ত পদার্থের কারণে এলার্জির প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়। শীতের সময় বাইরের বাতাস খুব শুষ্ক হয়, যার কারণে নাক শুকিয়ে যায় এবং নাক জ্বালাপোড়া শুরু হয় এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ে। 

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে বাড়ির ভিতরে একটি এয়ার ফিল্টার বা হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে । এয়ার ফিল্টার ঘরের মধ্যে থাকা এলার্জেন এবং ধুলাবালি দূর করতে সাহায্য করে।এছাড়া বাহিরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। 

(৩) নিমের পাতা: 

নিমপাতা দিয়ে খুব সহজেই এলার্জি উপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। নিমপাতা মৌসুমী ও পেরিনাল এলার্জি রাইনাটিস উভয় অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে। 

এজন্য নিম পাতার একটি পেস্ট দিয়ে ট্যাবলেট তৈরি করে মধু লাগিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এটা সব ধরনের এলার্জি প্রতিরোধে বেশ কার্যকর হিসেবে কাজ করে ।

(৪) স্পিরলিনা:

স্পিরলিনা হলো এক ধরনের শৈবাল। এটি পানিতে পাওয়া যায়। এই শৈবালের  রং নীল ও সবুজ। স্পিরলিনাতে এন্টি অ্যালার্জির বৈশিষ্ট্য আছে, যা এলার্জির উপসর্গ দূর করতে সাহায্য করে থাকে ।

(৫) ভিটামিন সি: 

শরীর এলার্জিনের সংস্পর্শে আসলে হিস্টামিনের মাত্রা অনেকগুন বেড়ে যায়, যার কারণে এলার্জি ও বাড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে এর বর্ধিত মাত্রা কমে যায়। তাই বেশি বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা উচিত।

(৬) পেপারমিন্ট এসেন্সিয়াল অয়েল: 

পেপারমিন্ট এসেন্সিয়াল অয়েল এ আছে অ্যান্টি ইনফ্লামেন্টারি বৈশিষ্ট্য, যা হাঁপানি ও এলার্জির রায়নাটিসের উপসর্গ কমাতেসাহায্য করে থাকে ।

এজন্য এই তেলের দুই তিন ফোঁটা ,সমপরিমাণ লেবেন্ডার তেল লেবুর সাথে মিশিয়ে একটি ডিফিউজারে রেখে বাম্প নিলে আরাম পাওয়া যায়। চাইলে এই তেল নাকেউ লাগাতে পারেন।

(৭) আপেল ভিনেগার: 

এতে এন্টিহিস্টামিন উপাদান রয়েছে, যা এলার্জি সৃষ্টি করে হিস্টামিনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে থাকে। নাক বন্ধ, নাক দিয়ে সর্দি বা নাকের মধ্যে যেকোনো বাধা দূর করতে এটি সক্ষম। 

এজন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন এবং এটি নিয়ম করে দিনে একবার পান করুন।

নাকের এলার্জির চিকিৎসা:

এলার্জির কারণ এড়িয়ে চলা এই রোগের প্রধান চিকিৎসা, তবে ঔষুধ প্রয়োজন হয় এই রোগের প্রধান ওষুধহচ্ছে – এন্টি-হিস্টামিন, স্টেরয়েডজাতীয় নাকের স্প্রে। এ ছাড়া বয়সভেদে মন্টেলুকাস্ট জাতীয় ট্যাবলেট বেশ কার্যকর। তবে যে কোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

আরো পড়ুন :ঘন ঘন পাতলা পায়খানার কারণ ও এর জন্য করণীয়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,যার যে জিনিস থেকে অ্যালার্জি হয় সে জিনিস পরিহার করার মাধ্যমে, চিকিৎসকের পরামর্শ মতে দীর্ঘমেয়াদে অ্যালার্জির ওষুধ সেবন বা প্রয়োগ এবং অ্যালার্জি ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া অনেকটাই সম্ভব হয় । মনে রাখতে হবে নাকের অ্যালার্জির সঠিক চিকিৎসা না হলে শতকরা পঁচিশ ভাগ রোগীর অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থেকে হাঁপানি রোগ হতে পারে। 

 

Write A Comment