আস্সালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন।  জন্মগত ভাবে আমরা একেকজন একেক ধরনের গায়ের রং পেয়ে থাকি। কেউবা ফর্সা, কেউবা শ্যামলা আবার কেউবা কালো । গায়ের রং চাপা হলে তা নিয়ে মন খারাপ করেন অনেকেই। তাদের আরেকটু উজ্জ্বল ত্বক পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে । আবার জন্মগতভাবে ফর্সা ত্বক পেয়েও ধুলোবালি আর রোদের ও যত্নের কারণে তা হারাতে বসেন অনেকেই। তাই তখন ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে নানারকম ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সেসব ক্রিম কেমিক্যালযুক্ত হওয়ার কারণে তা ত্বকের জন্য সবসময় উপকারী হয় না । তবে ঘরুয়া কিছু উপায় ব্যবহার করে ত্বক উজ্বল করতে পারেন। 

ত্বকের কালো ভাব :

আমরা সবাই  মুখের সৌন্দযের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকি । মুখের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কারণে মুখ সুন্দর হলেও, কিন্তু ঘাড়, কনুই ও হাত পায়ের ত্বক কালো দেখা যায়। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, সরাসরি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এবং স্থূলতার কারণেআমাদের ত্বক কালো হয়ে যায়। এছাড়া ত্বকের শুষ্কতাও বেড়ে যায়। এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরণের ক্রিম ব্যাবহার করে থাকি কিন্তু এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। ফর্সা হওয়ার প্রতিকারের জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে।

ত্বক কলো হওয়ার কারণ :

ত্বক কালো হওয়ার কারণ গুলো নিম্নে দেওয়া হলো –

  • রক্তে মেলালিন এর পরিমান বেশি।শরীর কালো হওয়ার জন্য সবথেকে প্রধান কারণ হলো রক্তে মেলালিন নামক এক হরমোনের পরিমান বেশি হওয়া।এটি জন্মের সময়  বাবা ও মায়ের জিন থেকে ব্যাক্তির শরীরের মধ্যে আসে।
  • বাত, পিত্ত ও কফ দোষের কারনে ত্বক কালো হয়ে যায় । বাত, পিত্ত এবং কফের ভারসাম্যের উপর প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য নির্ভর করে। বাত  পিত্ত ও কফের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে শরীরে রোগ দেখা দেয়। এর কারণে ত্বকের রং বিবর্ণ ও কালচে হতে থাকে, ত্বক প্রাণহীন ও দীপ্তিহীন দেখায়।
  • ক্রিম ব্যবহার বা অ্যালার্জির কারণে ও ত্বক কালো হয়ে যায় । আজকাল বেশিরভাগ বিউটি ক্রিমে রাসায়নিক ও কৃত্রিম উপাদান থাকে, যা ত্বককে কিছুক্ষণের জন্য উজ্জ্বল করে, কিন্তু নিয়মিত ব্যবহারে না করলে ত্বক আবার  কালো ও নিস্তেজ হয়ে যায় । 
  • বয়স বা রোগের কারণে ত্বক কালো দেখেই। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বক তার স্বাভাবিক আভা এবং আর্দ্রতা হারিয়ে ফ্যালে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ত্বকে কালো ভাব চলে আসে। যেকোনো রোগের কারণে ত্বক কালো ও বিবর্ণ হয়ে যায়।
  • সরাসরি সূর্যের আলোর ত্বক কালো হওয়ার অন্যতম কারণ। চেহারায় সানক্রিম না লাগিয়ে বা চেহারা না ঢেকে বেশি সময় সরাসরি সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে ত্বক জ্বলে যায় এবং কালো পড়ে যায়। এছাড়া  ধুলো বালি পরিবেশ দূষণের কারণে কালো ধোঁয়া ইত্যাদি আপনাকে আপনার উজ্জ্বল রং হারিয়ে দিতে পারে।

কালো থেকে ফর্সা হওয়ার উপায়:

সাধারণত মুখের কালো দাগ দূর করার উপায় হিসেবে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করা উত্তম । ফর্সা হওয়ার এই সমস্ত প্রতিকার খুব সহজেই বাড়িতে পাওয়া যায় এবং ব্যবহার করা যেতে পারে।নিম্নে দেওয়া হলো –

ফর্সা হতে  হলুদ ,লেবুর রস ,বেসন, গোলাপ জল :

ত্বকের জন্য  হলুদ খুব উপকারী। আর এর পাশাপাশি  ভালোভাবে ত্বককে পরিষ্কার করে।

৩ চামচ বেসন, ২ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ হলুদ গুঁড়া ও সামান্য গোলাপ জল নিন। সবকটি উপকরণ একটি পাত্রে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর তা মুখে মাখুন। মিশ্রণটা মুখে শুকোতে দিন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এটা আপনি সপ্তাহে দুদিন করবেন । হলুদ আপনার ত্বকে উজ্জ্বলতা বাড়াবে আর এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান কোনো রকম দাগ হতে দেবে না।

ফর্সা হতে কাঁচা দুধ, হলুদ গুঁড়ি:

কাঁচা গরুর দুধ ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারলে বেশ উপকারী হয়। এই কাঁচা দুধ ও হলুদ গুঁড়িদিয়ে পেস্টটি তৈরী করুন এবং শরীরে বা মুখে মালিশ করার ১০ থেকে ৩০ মিনিট  পর ঠান্ডাপানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই হবে। এটির কোনো সাইড এফেক্ট নাই। দুধ বেশি করে পান করলেও শরীর সাদা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ফর্সা হতে টক দই ,বেসন, মধু:

টক দইয়ে সাথে মধু এবং বেসন  মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি ত্বকে  লাগিয়ে রেখে দিন পনের মিনিট বা শুকানো পর্যন্ত। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।এটি সপ্তাহে ২থেকে ৩দিন ব্যাবহার করলে ধীরেধীরে ত্বক ফর্সা হবে। 

ফর্সা হতে টমেটো আর মধু: 

টমেটো ত্বক ফর্সা করতে খুব উপকারি একটি উপাদান । মুখে যদি রোদের থেকে হওয়া পোড়া দাগ থাকে বা মুখ অতিরিক্ত কালো হতে শুরু করে, তাহলে এই প্যাকটি ব্যবহার করুন। টমেটো এই দাগ খুব ভালোভাবে হালকা করতে পারে।

একটি পাত্রে একটি টমেটো চটকে নিন এবং আর সাথে  ৪ চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন । এই প্যাক মুখে মেখে রেখে দিন ২০ মিনিট মতো। তারপর গরম পানিতে ধুয়ে নিন। মুখ সঙ্গে সঙ্গেই তরতাজাও উজ্বল লাগবে।

ফর্সা হতে দুধ ও শুকনা কমলার খোসা:

শুকনা কমলার খোসা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। বিশেষ করে কমলার খোসা ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এবং ত্বকের ময়লা পরিস্কার করে। প্রথমে কড়া রোদে কমলার খোসা রেখে তা ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে । কমলার খোসা শুখিয়ে গেলে তা ভালোভাবে পাউডার করে একটি পাত্রে সংরক্ষন করুন। এরপর ৪ টেবিল চামচ শুখনা কমলার খোসার গুঁড়ো নিয়ে তার সাথে দুধ মিশিয়ে খুব ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে নিন। পেস্টটি ত্বকে  লাগিয়ে নিন এবং লাগানোর ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্কটি আপনার ত্বক থেকে ময়লা দূর করে আপনাকে দিবে ফর্সা ও উজ্জল ত্বক । আপনারত্বক সুন্দর করতে সপ্তাহে ৩ দিন এই মাস্কটি ব্যাবহার করুন।

ফর্সা হতে এলোভেরা ও শসার রস:

বহু গুনাগুন সম্পন্ন এলোভেরার জেল ত্বকের জন্য অনেক উপকারি । স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের যত্নে বেশ উপকারি এলোভেরার জেল । এলোভেরার জেল ত্বকের ভিতরের কোষ গুলোকে পরিষ্কার করে ও দাগ দূর করে। শসার রস কালো দাগ দূর করতে বেশ প্রচলিত।  প্রথমে ১ টেবিল চামচ এলোভেরার জেল নিন এবং তার সাথে ৩ টেবিল চামচ শসার রস মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি ত্বকে লাগান। লাগানোর ১০ মিনিট পর তা ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে ম্যাসাজ করতে পারেন। হাত, পায়ের কালো দাগ ও রোদের পোড়া দাগ দূর করতে এটি বেশ উপযোগী। তাই সপ্তাহে ২ বার মিশ্রণটি হাত পায়ে লাগিয়ে পেয়ে যান ফর্সা হাত ও পা।

ফর্সা হতে আলুর সাথে চন্দনের গুঁড়া:

 আলু রস ও চন্দনের গুঁড়া ত্বকের পোড়া দাগ ও কালো দাগ দূর করতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি তৈরী করতে প্রথমে আপনি ১ টেবিল চামচ আলু ও চন্দনের গুঁড়া করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করে নিন। ১৫ মিনিটের জন্য মিশ্রণ টি ত্বকে  লাগিয়ে রাখুন। তারপর পরিস্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৪ দিন করেই দেখুন আপনি কিভাবে কালো ত্বক  থেকে মুক্তি পেয়ে ফর্সা ত্বক পেয়ে গেছেন।

আরো পড়ুন :দাঁত হলুদ হওয়া কারণ ও দাঁত সাদা করার উপায়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,গায়ের রং ফর্সা করার সব চাইতে সহজ উপায় হচ্ছে আপনাকে ত্বকের প্রতি প্রচুর পরিমাণ যত্ন নিতে হবে। কারণ আপনি যদি যত্ন না নেন তাহলে আপনি ফর্সা হতে পারবেন না তাই আপনাকে প্রচুর পরিমাণ ধৈর্যশীল হতে হবে এবং ত্বকের প্রতি অত্যাধিক যত্ন নিতে হবে।

উপরের লেখাগুলো আপনারা ফলো করলে খুব সহজ ভাবেই গায়ের রং কালো থেকে ফর্সা করতে পারবেন। আপনারা সবসময় চেষ্টা করবেন রোদ এড়িয়ে চলার জন্য কারণ রোদের কারণে মানুষ ফর্সা থেকে কালো হয়ে যায়। তাই রোদ থেকে দূরে থাকবেন এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পান করবেন এবং সাথে ভিটামিনযুক্ত খাবার খাবেন।

Write A Comment