আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমরা কৃমির বিষয়ে কমবেশি সবাই জানি।
ছোট বড় সকলের ক্ষেত্রে কৃমি খুবই কমন সমস্যা। কৃমির সমস্যায় ভোগেন নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই কঠিন। যদিও কৃমির সমস্যার খুব সহজ সমাধান চিকিৎসা শাস্ত্রে আছে তার পরেও অনেকেই নানা ভুল ধারনার বশবর্তী হয়ে কৃমির ঔষধ খেতে চান না। আবার অনেকেই কৃমির ঔষধ খাবার নিয়ম জানেননা। কৃমি সম্পর্কে আর্টিকেলটিতে জেনে নেয়া যাক।
কৃমি:
কৃমি একটি পরজীবী যা মানুষের শরিরের বসবাস করে। এটি মানব দেহের অন্ত্রে বাস করা এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবানু বা ব্যাকটেরিয়া ।কৃমি মানব দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর জীবানু। এটি মানব দেহ থেকেই তার প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহন করে এবং বংশ বিস্তার করে।
খুবই সাধারণ ঘটনা কৃমিতে সংক্রমণ হওয়া , তাই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। সময় মত চিকিৎসা নিলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই কৃমির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
কৃমির প্রকারভেদ :
কৃমি সাধারণত কয়েক ধরণের হয়ে থাকে। যেমন –
গোল কৃমি:এগুলো সাধারণত গোল পাতলা ,সাদা ও গোলাপিরং আর হয়। এই কৃমি১০-১২ইঞ্চি হয়ে থাকে।
ফিতা কৃমি:এই কৃমি গুলো সাধারণত১-২ মিটার লম্বা হয়ে থাকে।
বক্র কৃমি:এগুলো খুব ছোট সাদা ও গোলাপি রং এর হয়ে থাকে। এই কৃমি গুলোখালি চোখে দেখা যাই না।
সুতা কৃমি:এই কৃমি গুলো সাদা সুতার মতো হয়ে থাকে।
কৃমি হওয়ার কারণ সমূহ:
নোংরা পরিবেশে থাকা, অনিরাপদ পানি পান, খালি পায়ে হাঁটা, পায়খানা থেকে এসে পরিস্কার করে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারনেই কৃমির সংক্রমণ হয়ে থাকে।
যখন শিশুরা হামাগুড়ি দেয় বা নতুন হাঁটতে শেখে সেই সময়টাতেই বেশি কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়। কারণ এসময় হাতের খেলনা তারা মুখে দেয়, যেকোন জিনিষ হাত দিয়ে ধরে এর পর সেই হাত মুখে দেয়, আবার গ্রামে যখন শিশুরা মাটিতে হামাগুড়ি দেয় মাটি হাত দিয়ে ধরে খেয়ে নেয়।সেই সময় ও তারা কৃমিতে সংক্রমণ হতে পারে।
এবং বড়দের ক্ষেত্রে কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হবার মূল কারণ পায়খানা থেকে এসে ভাল করে হাত না ধোয়া। ভাল করে হাত না ধুলে নখের কোনায় মলমূত্রে থাকা কৃমির ডিম্ব থেকে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। শিশুরা ও বড়রা কৃমির দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে।
এছাড়াও বাজার থেকে আনা শাকসবজি বা অন্যান্য তরু-তরকারী ভাল করে না ধুয়ে রান্না করলেও সেখান থেকে কৃমির বিস্তার হতে পারে।
আবার কিছু কৃমি ডিম্বানুর হিসেবে আমাদের মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। এছাড়া কিছু লাভা হিসেবে ত্বকের মাধ্যমেও প্রবেশ করতে পারে। খালি পায়ে হাটলে খুব সহজেই পায়ের ত্বকের মাধ্যমে লাভা আমাদের দেহে প্রবেশ করতে পারে।
কৃমির লক্ষণ :
কৃমি হলে সাধারণত তেমন কোন উপসর্গ দেখা না গেলেও কিছু অস্বাভাবিকতা আমাদের চোখে পরে । যেমন-
- শিশুর কৃমি হলে তার ঘন ঘন পেটে ব্যাথা হতে পারে।
- ক্ষুধা কমে যেতে পারে। শিশুরা খেতে চায় না।
- অকারনে বার বার থুতু ছিটায়তে থাকে।
- শিশুর পেট ফাঁপা ও অপুষ্টিতে ভোগা।
- কৃমি হলে মলদ্বারে চুল্কায়, তাই শিশু খামচি দিতে চায় বেশি বেশি।
- মল পরীক্ষার মাধ্যমেও আপনি কৃমির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন।
- যেহেতু পায়খানার মাধ্যমে কৃমি বের হয় তাই শিশুর মল ভাল মত দেখলেও আপনি কৃমির অস্তিত্ব টের পেতে পারেন।
একটি কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে প্রতিদিন ০.২ মিলিলিটার রক্ত শুষে নেয় এবং একারনেই কৃমি দ্বারা আক্রান্ত শিশু রক্ত শূন্যতায় ভোগে।
কৃমির কারনে এলার্জি, ত্বকে চুলকানি, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে। কখনও বা অন্ত্রে কিংবা পিত্ত থলিতে কৃমি আটকে গিয়ে অনেক বড় ধরনের জটিলতা হয় ।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম:
এবার আমরা বেশ কয়েকটি কৃমি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যানবো। যেমন:
- যখন কৃমির ট্যাবলেট খাবেন, তখন গোটা পরিবারের সদস্যদের সবাইকে কৃমির ট্যাবলেট খেতে হবে।
- যদি পরিবার এর সবাই কৃমির ট্যাবলেট না খায় তাহলে সেই ট্যাবলেট খাওয়ার পরেও কোন উপকারে হবে না।
- পরিবারে যদি দুই বছরের শিশু থাকে তাহলে আপনার যে রকম কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম রয়েছে ঠিক তেমনি ভাবে সেই শিশুটিকেও একই নিয়মে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
- শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হোক প্রতি তিন মাস পর পর কৃমির ট্যাবলেট খেতে পারবে।
- কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হিসেবে নির্দিষ্ট ডোজ কমপ্লিট করতে হয়। তাই অবশ্যই আপনাকে পরবর্তী ৭ দিন পরে পুনরায় আরেক টি ডোজ সেবন করতে হবে ।
- বর্তমান সময়ে দুই বছর এর বেশি বয়সী শিশু কে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে পারবেন।
- কৃমির ওষুধ প্রতি তিন মাস পরপর সেবন করতে হয়।
একটা কথা এখানে বলে রাখা ভালো উপরে শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম বলা হয়েছে। তবে যদি শিশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে চান সে ক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে কৃমির ট্যাবলেট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ শিশুদের কৃমির ওষুধ হিসাবে সিরাপ খাওয়াতে হবে।
কৃমির ওষুধের নাম :
কৃমির জন্য আমরা মূলত এই ওষুধগুলো খেতে পারি। যেমন –
কৃমির ওষুধের নাম হল মেবেন্ডাজল ও আলোবেন্ডাজল। এগুলো মূলত এমন এক ধরনের ওষুধ যা পরজীবী কৃমির বিরুদ্ধে দেহে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
স্কুল বা কলেজে তিন মাস অন্তর অন্তর যে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয় সেটির নাম আলবেন্ডাজল।
কৃমি রোগ যদি ভয়াবহ আকার ধারণ করে তখন তিন দিন অন্তর অন্তর মেবেনডাজল খাওয়ানো হয়।
শিশুদেরকে এই দুইটি ওষুধের সিরাপ খাওয়ানোর হতে পারে।
এই ওষুধগুলো বাজারে মূলত একই গ্রুপের তবে বিভিন্ন নামে পরিচিত হতে পারে।
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়:
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছু উপায় রয়েছে –
- স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যাবহার ও পরিস্কার রাখা এবং খালি পায়ে পায়খানা ব্যাবহার করা যাবে না।
- পায়খানা থেকে এসে পরিস্কার করে সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। নখের কোনা গুলো ভালোভাবে পরিস্কার করতে হবে।
- বাচ্চাদের ন্যাপকিনও ডায়াপার বদলানোর পর ভাল করে হাত ধুয়ে নিন।
- পরিস্কার ও নিরাপদ খাবার ও পানি সবসময় ব্যাবহার করতে হবে। দূষিত পানি খাওয়া যাবে না, রান্নার কাজে ও ব্যবহার করা যাবে না ।
- থালাবাসন পরিস্কার করে ধুবেন, ধোয়ার কাজেও নিরাপদ পানি ব্যাবহার করুন।
- খাওয়ার আগে ও পরে ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন ।
- পরিবারের সকলের নখ সময় মত কাটুন ও ছোট রাখুন।
- শাকসবজি রান্নার আগে পরিস্কার পানিতে ভাল করে ধুয়ে নিবেন।
- রান্না করা খাবার সব সময় ঢেকে রাখবেন। খোলা খাবার কখনই খাবেন না।
- খালি পায়ে হাটা যাবে না, সবসময় স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করতে হবে ,এমনকি বাড়িতেও।
- পরিস্কার পানিতে ফল-মূল খাবার আগে ভাল করে পরিস্কার করে নিন।
- বাইরে থেকে আসার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিন।
- শিশুদের কাপড় আলাদা জায়গায় রাখুন, প্রয়োজনে পানিতে স্যাভলন ব্যবহার করুন।
- প্রতিদিন একবার করে গোসল করুন।
- পরিস্কার পরচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- হেক্সিসল বা হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুন :ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম এবং ফি প্রদান
পরিশেষে :
বলা যাই যে , কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম গুলো সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছি। তবে কৃমির ট্যাবলেট যখন আপনি সেবন করবেন তখন অবশ্যই ডক্টর এর পরামর্শ নিবেন। কারণ যদি ডক্টরের পরামর্শ নেন, তাহলে আর কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে না। তবে চেষ্টা করবেন আজকের আলোচিত কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম গুলো মেনে চলার।