আপনি যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, তবে আপনি যে কোনো জমির মালিকানা ও খতিয়ান সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারবেন। কেননা, বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেশের নাগরিকদেরকে ভূমি সেবা প্রদান করছে।

 এখন আর জমির মালিকানা ও খতিয়ান চেক করার জন্য ভূমি অফিসে স্বশরীরে যেতে হয় না। নিজ ঘরে বসেই কম্পিউটার -ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই জমি সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় জানা  যায়।

খতিয়ান:

ভুমির মালিকানা/ দাগের বর্ণনাসহ খতিয়ান বা পর্চা একই জিনিস। জমির মালিকানা প্রমাণের সরকারি দলিল হচ্ছে খতিয়ান । বিভিন্ন এলাকায় এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

 আইনিভাবে বলতে গেলে বলা যায় সরকারীভাবে জমি জরিপ করার সময় জরিপের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে  চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬২ (সংশোধিত) তে যে নথিচিত্র প্রকাশ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।

জমির খতিয়ানের প্রকারভেদ: 

খতিয়ান৪প্রকার-

1.সিএস খতিয়ান।

2.এস এ খতিয়ান।

3.আরএস খতিয়া

4.বি-এস খতিয়ান।

1.সিএস খতিয়ান: 

উপমহাদেশে সর্বপ্রথম যে জরিপ হয় সেটা সিএস খতিয়ান (Cadastral Survey)নামে  পরিচিত  । এই জরিপ ১৮৮৭ সালে শুরু হয়ে ১৯৪০ সালে শেষ হয়।

এই জরিপ কক্সবাজারের রামুতে শুরু হয় এবং দিনাজপুরে শেষ হয়। জরিপ চলাকালে সিলেট আসাম প্রদেশ এর সাথে সংযুক্ত এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জমিদারি প্রথার সাথে বাঙ্গালীদের বিরোধ থাকায় এই দুটি অঞ্চল সিএস জরিপের আওতায় আনা হয় নাই।

সিএস খতিয়ান চেনার উপায়ঃ

  • এটি দুই পৃষ্ঠা সম্বলিত হয়।
  • প্রথম পৃষ্ঠায় জমিদার এবং প্রজার নামে দুটি ভাগ থাকে।
  • সবার উপরে লেখা থাকবে বাংলাদেশ ফরম নং-৫৪৬৩।অপর পৃষ্ঠায় “উত্তর সীমানা” নামে একটা কলাম থাকে।
  • এই খতিয়ান উপর থেকে নিচে লম্বালম্বিভাবে হয়।

2.এসএ খতিয়ান :

১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। আইন পাশের পর ততকালিন সরকার জমিদারি অধিগ্রহণ সাবস্ত করেন।এই সময় সরকারি আমিনগণ সরেজমিন অর্থাৎ মাঠে না গিয়ে অফিসে বসে সিএস খতিয়ান সংশোধন করে যে খতিয়ান তৈরি করেন।সে সেটাকে এসএ খতিয়ান বলে। কোন কোন অঞ্চলে এ খতিয়ানকে টেবিল খতিয়ান বা ৬২ খতিয়ান বলা হয়।

এসএখতিয়ান চেনার উপায়ঃ

  • এইটা সবসময় হাতে লিখা হয়, কখনো প্রিন্ড হয় না।
  • এই খতিয়ানে সাবেক খতিয়ানের এবং হাল খতিয়ান নম্বর থাকে।
  • এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠার হয়।

3.আরএস খতিয়ান:
সিএস জরিপ সম্পন্ন হওয়ার দীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। পূর্বের জরিপের ভূল সংশোধনসহ জমি, মলিক ও দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার নিমিত্তে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। পূর্বের ভূল সংশোধনক্রমে আরএস জরিপ এতই শুদ্ধ করে তৈরি করা হয় যে, এখনো জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরএস খতিয়ানের উপর নির্ভর করা হয়।

আরএস খতিয়ান চেনার উপায়ঃ

  • ফরম এর সবার উপরে হাতের ডান পাশে “রেসার্তে নং” লেখা থাকে।
  • এই খতিয়ান এক পৃষ্ঠার হয়।
  • এটাও উপর থেকে নিচে লম্বালম্বি ভাবে হয়।

4.বি-এস খতিয়ান:

সর্বশেষ এই জরিপ ১৯৯৮-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়। যেটির কাজ এখনো চলমান রয়েছে।

বিএস খতিয়ান চেনার উপায়ঃ

  • এই খতিয়ানে ৯ টা কলাম থাকে।
  • কি ধরনের জমি সেটা লিখা থাকে (যেমনঃ চাষের জমি, পুকুর ইত্যাদি)

জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম:

সাধারণত দুইভাবে জমির খতিয়ান বের করা যায়। যারা সাধারণত জমির মালিক তারা এই দুই পদ্ধতিতেই জমির খতিয়ান বের করে থাকে। জমির খতিয়ান দেখার জন্য দুইটি অফিসিয়াল পদ্ধতি রয়েছে। তাহলে দেখা যাক জমির খতিয়ান দেখার পদ্ধতি দুটো কি কি।

১. ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ও

২. ডিজিটাল পদ্ধতিতে।

১. ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে খতিয়ান দেখার নিয়ম:

আপনি যদি আপনার জমির দাগ নাম্বার থেকে খতিয়ান বের করতে চান তাহলে সরাসরি আপনাকে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। সেখানে আপনাকে জমির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিয়ে আপনার জমির ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন। তবে এর জন্য সামান্য কিছু টাকা আপনাকে খরচ করতে হবে, এবং দীর্ঘসময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।

২.ডিজিটাল পদ্ধতিতে খতিয়ান দেখার নিয়ম:

জিটাল পদ্ধতিতে জমির খতিয়ান বের করার বা দেখার নিয়ম টা খুবই সহজ এবং বর্তমানে এই পদ্ধতি টি বেশ জনপ্রিয় ।

  1. আপনি  আপনার কম্পিউটার বা  মোবাইলের ক্রোম ব্রাউজারে land.gov.bd এ যান এবং এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।

2.ওয়েব সাইটটি খোলার পর, একটু নিচে স্ক্রোল করুন এবং এতে আরএস খতিয়ানদেখতে পারবেন  এই অপশনে ক্লিক করুন।

3.এই অপশনে ক্লিক করার পর জমিটি কোন বিভাগ,কোন,জেলা, খতিয়ানের ধরণ সিলেক্ট করতে হবে।পরবর্তীতে – উপজেলা, মৌজা, দাগ নাম্বার, খতিয়ান নং, মালিকানা নাম, পিতা/স্বামীর নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

4.তারপর  ক্যাপচার সাথে থাকা কোড নাম্বার সেম টু সেম উঠিয়ে দেবার পর একটি ক্যাপচা আসবে যা সার্ভে করার পরেই “অনুসন্ধান করুন” নামক বাটনে ক্লিক করতে পারবেন। এবং সেখানে ক্লিক করার মাধ্যমেই আপনার জমির খতিয়ান দেখতে পারবেন।

আরো পড়ুন :নফল ইবাদত সালাতুল হাজত নামাজ নিয়ম এবং সময়।

পরিশেষে: 

বলা যাই যে ,জমি জমা মানুষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই এই বিষয়ে সব সময় সচেতনতা অবলম্বন করা উচিৎ। এজন্য প্রয়োজন অনুসারে আপনার জমির মালিকানা সত্যতা যাচাই করতে অবশ্যই জমির খতিয়ান চেক করা উচিৎ।আশা করি, উক্ত আর্টিকেলের মাধ্যমে খতিয়ান চেক করার উপায় গুলো বুঝতে পেরেছেন এবং খুব সহজেই তা যাচাই করতে পারবেন।

Write A Comment