আস্সালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের  চুলের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় সমস্যা খুশকি।শুধুমাত্র শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়াতেই নয়, অতিরিক্ত দূষণের ফলে এখন অনেকেই মোটামুটি সারা বছর খুশকির সমস্যায় ভোগেন। খুশকির জন্য চুলে আরও নানা সমস্যা দেখা দেয় ।অতিরিক্ত চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া,চুল ঝরে যাওয়া, মাথার ত্বকে নানা রকমের সংক্রমণে জন্যেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ি এই খুশকি। তাই সঠিক সময়ে খুশকির সমস্যার দূর করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলেই চুল অকালেই ঝরে গিয়ে মাথা টাক  হয়ে যেতে পারে।

খুশকি :

খুশকি অতি পরিচিত একটি চর্মরোগ।আগেকার মানুষেরা খুশকিকে মরামাস বলতেন।মরামাস বলতে মাথার তালুর বা মাথার শুকনো খসখসে ত্বকে বুঝায়।সাধারণভাবে বলতে গেলে আমাদের কমবেশি সবার মাথায় মৃত কোষ থাকে কিন্তু সেই মৃত কোষ গুলো আমরা দেখতে পাওয়ার আগে ঝরে পরে । কিন্তু  সমস্যা তখন হয় যখন এই মৃত কোষ গুলো আমাদের চোখে পরে। আর এইমৃত কোষ হচ্ছে খুশকি। সাধারণত মাথার ত্বকে হয়ে থাকে।। 

মাথায় খুশকির কারণ :

বেশ কয়েকটি কারনে ছেলেদের মাথায় খুশকি হতে পারে। যেমন- 

ছত্রাকের সংক্রমণ: 

বিভিন্ন ছত্রাকের সংক্রমণে মাথায় খুশকি ও চুলকানি হয়ে থাকা থাকে।বিশেষ করে ম্যালাসেজিয়া নামক একটি প্রকার ছত্রাক খুশকির অন্যতম কারন।ম্যালাসেজিয়া ছত্রাক হলো এক ধরনের খামির যা বেশিরভাগ মানুষের মাথার ত্বকে বাস করে। তবে কখনও কখনও এটি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। 

ড্রাই স্কিন:

শুষ্ক মাথার ত্বক বা স্কিন খুশকি হওয়ার অন্যতম কারন।এটি  শ্যাম্পু, ঠান্ডা আবহাওয়া বা ঘন ঘন মাথা ধোয়ার কারনে হতে পারে। যখন মাথার ত্বক শুকিয়ে যায় তখন এটি খিটখিটে ভাব সৃষ্টি করে এবং মাথায় খুশকি হয়।

ত্বকের খারাপ অবস্থা:

ত্বকের কিছু অস্বাভাবিক অবস্থা, যেমন সোরিয়াসিস বা একজিমা মাথার খুশকি হতে পারে।আবার  অতিরিক্ত দূষণে মাথার ত্বকের অবস্থা খারাপ হয় এবং ত্বকে উপর মরা কোষ গঠন করে। যার ফলে খুশকি পারে।

চুলের প্রসাধনী ব্যবহার:

কিছু কিছু চুলের প্রসাধনী, যেমন হেয়ার কালার , হেয়ার জেল, হেয়ার স্প্রে  ইত্যাদি ব্যবহার খুশকি  হতে পারে। পন্যের প্রতিক্রিয়ার কারনে অথবা সেই প্রসাধনী সামগ্রী মাথায় জমাট বেধে গেলে এমন হতে পারে।

হরমোনের পরিবর্তন:

হরমোনের পরিবর্তনের ফলে, যেমন বয়ঃসন্ধিকাল বা গর্ভাবস্থায় মাথায় খুশকি ও চুলকানি হতে পারে।  এই সময়ে হরমোনের পরিবর্তনগুলি সিবাম নামক একটি তৈলাক্ত পদার্থ যা আমাদের মাথার ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে তার উৎপাদনকে প্রভাবিত করে।যার ফলে চুলের ত্বকের শুষ্কতা, জ্বালাভাব, চুলকানি এবং খুশকি হয়। 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা:

ছেলেদের মাথার ত্বক থেকে খুশকি অন্যতম প্রধান কারণ  হচ্ছে অপরিষ্কারও অপরিচ্ছন্নতা। যেহেতু দিনের অধিকাংশ সময় ধুলোবালি এবং অতিরিক্ত রোদে থাকে তাই খুশকির প্রবণতা ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি ।

মাথার খুশকি দূর করার উপায়:

খুশকির সমস্যা থেকে রেহাই পেতে বাজারে নানা ধরনের শ্যাম্পু বা লোশন পাওয়া যায়।তবে সেগুলিতে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের প্রভাবে চুলেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। সাধারন কিছু পদক্ষেপ নিলে মাথার খুশকি দূর করা সম্ভব। যেমন-

মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন: 

বেশ কিছু ওভার-দ্য-কাউন্টার মেডিকেটেড শ্যাম্পু রয়েছে যা খুশকি  নিরাময়ে সাহায্য করে। তবে এ সকল শ্যাম্পু  চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।

পরিষ্কার পরিছন্নতা: 

চুলের ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিছন্নতা অনুসরন করতে হয়। আপনার মাথার ত্বক পরিষ্কার এবং জমাট মুক্ত রাখা খুশকির জন্য অনেক বেশি কার্যকর। আপনার চুল নিয়মিত ধুয়ে নিন এবং একটি হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে পরিষ্কার করুন। চুল ভালো রাখতে গরম পানি ব্যবহার করবেন না।কারন এটি মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের কনা ছিঁড়ে ফেলতে পারে এবং শুষ্কতা বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রাকৃতিক উপাদান:

কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা শুষ্ক, চুলকানিযুক্ত মাথার ত্বককে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। যেমন, মাথার ত্বকে অ্যালোভেরা জেল, নারকেল তেল বা চা গাছের তেল, নিম পাতা ইত্যাদি প্রয়োগ করাযেতে পারে। এতেমাথার ত্বকের জ্বালাভাব কমে এবং ত্বককে প্রশমিত করতে সহায়তা করে ও খুশকি কম হয়।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রন:

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ খুশকিকে আরও খারাপ করতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা  করুন। যেমন, যোগব্যায়াম বা ধ্যান স্ট্রেস লেভেল কমাতে সাহায্য করে।

সুষম খাদ্য গ্রহন:

সুষম, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ শরীরের উন্নতিতে যেমন সাহায্য করে তেমনি মাথার ত্বকের  উন্নতিতেও সাহায্য করে। তাই খাবারের ক্ষেত্রে এটি নিশ্চিত করুন যে আপনি যথেষ্ট ভিটামিন এবং খনিজ পাচ্ছেন। যেমন- জিঙ্ক, বায়োটিন এবং ভিটামিন ডি, যা স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

এছাড়াও ঘরোয়াভাবে মাথার খুশকি দূর করার উপায় রয়েছে। 

অলিভ অয়েল:

অলিভ অয়েল ছেলেদের ত্বকের খুশকি দূর করতেঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।কারণ অলিভ হয়েল প্রাকৃতিকভাবেই মশ্চারাইজার এবং ক্লিনজার হিসেবে কাজ কাজ করে। তাই নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ছেলেদের ত্বকের খুশকি দূর হবে।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা

খুশকি যুক্ত মাথায় অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী ব্যবহার করলে খুশকি সম্পূর্ণরূপে দূর করে । অ্যালোভেরার বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান ছেলেদের মাথার ত্বকের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সমূহ ধ্বংস করে এবং চুলকে করে তোলে সজীব এবং সতেজ।

মেথি তেল:

বিশুদ্ধ নারকেল তেলের সাথে মেথি মিশিয়ে কয়েকদিন রেখে দিন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় ওই তেলটি চুলে ব্যবহার করুন এবং সকালে ধুয়ে নিন এতে ছেলেদের মাথার ত্বকের খুশকি দূর হবে।

লেবুর রস:

ছেলেদের মাথার খুশকি দূর করতে লেবুর রস অত্যন্ত কার্যকরী।৪টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে মাথায় সম্পূর্ণ ভালভাবে মালিশ করে নিন।  আবার একটি পাত্রে পানির  সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন এতে খুশকি সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হবে।

চায়ের লিকার:

চায়ের লিকার ঘন করে নিয়ে তার সঙ্গে অল্প পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় ভালোভাবে মালিশ করুন। আধঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। এতে ছেলেদের ত্বকের খুশকি দূর হবে।

নিম পাতা:

পরিমাণ পানিতে নিমপাতা সিদ্ধ করে নিন।এর পর নিমপাতা ছেঁকে নিয়ে ওই পানি দিয়ে তার মাথার ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ছেলেদের মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী। ভালো ফলাফলের জন্য এটি সপ্তাহে তিন থেকে চারবার  ব্যবহার করতে পারেন ।

আমলকি পাউডার:

পরিমাণমতো পানিতে আমলকি পাউডার মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে দিন এবং কিছু সময় পরে শ্যাম্পু করে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন এতে ছেলেদের  খুশকি দূর হয়।

টক দই:

টক দই মাথার ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেদের মাথার ত্বকে এককাপ টকদই ভালোভাবে  মালিশ করুন কিছু সময় রেখে শ্যাম্পু ককরুন । এতে মাথার ত্বকের  খুশকি দূরীভূত হবে।

আরো পড়ুন :ঔষধ হিসেবে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,উপরোক্ত আলোচনাটি গুরুত্ব সহকারে মেনে চললে ছেলেদের মাথার  খুশকি দূর হবে।  বিভিন্ন বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলুন এবং নিজের চুলের যত্ন নিন। সুস্থ,সুন্দর, মসৃণ এবং প্রাণবন্ত চুল সবাই চায় ।মাথায় খুশকি হলে চুলের ব্রাশ চিরুনি এবং বালিশের কভার নিয়মিতভাবে পরিষ্কার রাখুন।এই আলোচনা ভালো ভাবে মেনে চললে ছেলেদের মাথার খুশকি সম্পূর্ণরূপে নিরাময় হবে ইন্শাল্লাহ ।

Write A Comment