আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আকিকা  হচ্ছে একটি আরবি শব্দ। বাংলাতে  এই আকিকার  অর্থ হল কেটে দেওয়া। প্রত্যেকটি মুসলমানদের জন্য আকিকা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।ইসলাম  ধর্ম মতে ,আকিকা করলে মহান আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট হন আবার সেই সন্তানের জীবনে কল্যাণ নেমে আসে।

এই সুন্নত  প্রত্যেকটি  মুসলমানকে পালন করতে হবে। তাই অভিভাবকের সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তান জন্মগ্রহণ এর সাত দিনের মাথায় আকিকা করতে করতে পারলে সেটা সবচাইতে ভালো হয়।তবে সম্ভব না হলে ১৪ তম দিনে বা ২১ তম দিনেও করা যায়।

আকিকা:

মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রবহমান রিতি বা নিয়ম  হচ্ছে আকিকা । ।যখন কোন পরিবারের নতুন শিশু জন্মগ্রহণ করে  তখন সেই শিশু জন্মগ্রহণ করা উপলক্ষে তার নামে পশু কোরবানি করাকেই আকিকা বলে। 

ইসলামের দৃষ্টিতে আকিকা বলতে বুঝায় ,সন্তান জন্মের পর পশু (গরু/ ছাগল/ ভেড়া) জবাই করা, মাথার চুল ফেলা এবং সুন্দর একটি নাম রাখা।

আকিকা দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। তবে, এটি আদায় করতে না পারলে পাপ বা সন্তানের অমঙ্গল হবে এরকম কথা কোরআন হাদিসের কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায় নি । তাই মানুষের এমন  কথা ভিত্তিহীন।

নবী করিম (সাঃ ) বলেছেন, আকিকা দিয়ে সন্তানের জন্য দোয়া করতে হবেএবং সকল অমঙ্গল খারাপ কিছু থেকে সন্তানের মুক্তি কামনা করতে হবে। এছাড়া সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চাইতে হবে।

কোন ধরণের পশু দ্বারা আকীকা করা সুন্নাত?

ছেলে সন্তান হলে দু‘টি দুম্বা বা ছাগল আর মেয়ে সন্তান হলে একটি দুম্বা বা ছাগল দিয়ে আকীকা করা সুন্নাত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)বলেন-

(عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة)

ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দু‘টি সমবয়সের ছাগল বা দুম্বা এবং মেয়ে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা দুম্বা দিয়ে আকীকা করতে হবে। 

কুরবানীর ক্ষেত্রে বৈধ,যে ধরণের ও বয়সের ছাগল বা দুম্বা  তা দিয়ে আকীকা করতে হবে। অর্থাৎ যেসমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হওয়া শর্ত, কুরবানীর পশু ক্ষেত্রে আকীকার ছাগল-খাসী বা দুম্বাও সেসমস্ত দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত হতে হবে।

আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে যদি কেউ ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে দু‘টি ছাগল দিয়ে আকীকা দিতে না পারে, তবে একটি দিয়ে আকীকা দিলেও চলবে। কারণ  রাসূল (সাঃ) সময় ছেলে সন্তানের পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকীকা করার কথাও প্রমাণিত আছে। 

মোটকথা, ছেলে সন্তানের আকীকার জন্য দু‘টি ছাগল বা দুম্বা হওয়াটা জরুর নয়; বরং মুস্তাহাব। আর গরু বা উটের ভাগা দিয়ে আকীকা দেয়া সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। 

গরু দিয়ে আকিকা দেওয়ার নিয়ম:

গরু দিয়ে আকীকা করার কথা উল্লেখ কোন হাদীসেই হয় নি। কিন্তু  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে সবধরণের পশুই বিদ্যমান ছিল।এই কারনে  উত্তম হচ্ছে ছাগল বা দুম্বা দিয়েই আকীকা করা।

একদল আলেমের মতে গরু দিয়ে আকীকা করা হলে তা জায়েয হবে। তবে শর্ত হচ্ছে একজন সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু দিয়ে আকীকা করতে হবে। অপর পক্ষে কিছু  আলেমগণ  সাত সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু দিয়ে আকীকা দিলেও জায়েয হবে বলে মত দিয়েছেন। তবে সাত সন্তানের পক্ষ হতে একটি গরু আকীকা করার কথা হাদীছে পাওয়া যায় না। আকীকা যেহেতু একটি এবাদত, তাই হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই পালন করা উচিত।

তাছাড়া পরবর্তীতে যখন আকিকা দেয়া হয় তখন পরিবারের যে সকল সদস্যের আকিকা দেওয়া হয়নি সে সকল সদস্যসহ নতুন জন্ম গ্রহণ করা শিশুর আকিকার দিয়ে মোট একটি গরু আপনারা আকিকার জন্য নির্বাচন করে থাকেন এবং সেখানকার প্রত্যেকটি ভাগ প্রত্যেকের জন্য নির্বাচন করে নিয়ত করা হয়। আবার অনেকেই আছেন যারা কোরবানির গরুর সাথে আকিকার ভাগ নির্ধারণ করে থাকেন এবং সেই আকিকা দিয়ে একই নিয়ম অনুসরণ করে আপনাদের নিয়ত সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।

তাই কেউ যদি গরু দিয়ে আকিকা দিতে চাই  তাহলে এটা করতে পারেন। তবে নিয়ম হচ্ছে যে ছাগল দিয়ে আকিকা দেওয়াটা সবচাইতে ভালো। ছাগল দিয়ে আকিকা দেওয়ার সুন্নত এবং আমাদের নবীজি (সাঃ)ছাগল দিয়ে আকিকা দিয়েছেন। ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে  দুইটি ছাগল এবং মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে একটি ছাগল এবং এটা যদি সাত দিনের ভিতরে দিতে পারেন তাহলে আপনারা এই সুন্নত পালন করতে পারবেন।

তবে আর্থিক কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে আপনারা তা পরবর্তীতে দিতে পারবেন।  কেউ যদি বলে পরবর্তীতে আপনার এই আকিকা কাজে লাগবে না অথবা নিয়ত করে থাকলেও এই আকিকা গ্রহণ করা হবে না তাহলে সেটা ভুল। তাই আকিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনারা গরু দিয়ে আকিকা দিতে পারেন এবং এক্ষেত্রে নিয়ত ঠিকঠাক করে আকিকা দিলে আপনাদের আকিকা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন গ্রহণ করবেন।

একটা গরু দিয়ে কয়টি সন্তানের আকিকা?

একটা গরু দিয়ে একাধিক সন্তানের আকিকা দেওয়ার জায়েজ নেই। একটি গরু দিয়ে শুধু মাত্র একটি সন্তানের আকিকা দিতে পারবেন। কারণ এটি হচ্ছে একটি প্রাণের পরিবর্তে আর একটি প্রাণ। সুতরাং একটি গরুতে একাধিক আকিকা শরিক হতে পারে না। কারণ নবী করিম (সাঃ) আকিকার  শেয়ারিংয়ের কথা কোনো হাদিসে বলেননি । এটি যদি কেহ বলে থাকেন তাহলে এটি পুরোপুরি ভুল কথা। 

আবার কোরবানির সঙ্গে আকিকা শরিক করা, এটিও জায়েজ হবে না। কোরবানি একটি বিষয় আর আকিকা আরেকটি বিষয়। সুতরাং এটি পুরোপুরি আলাদা দুটি  বিষয়। নবী করিম (সাঃ) এটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, ছেলে হলে দুটি এবং মেয়ে হলে একটি ছগল বা দুম্বা দিতে হবে। নবী করিম (সাঃ) আকিকার জন্য যেটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সেটি  নিজেদের গবেষণার মাধ্যমে  পরিবর্তন  করা উচিত নয় । এছাড়া সাহাবিদের আমল দ্বারাও এটি কোনো ভাবে প্রমাণিত হয় নি।

আরো পড়ুন :আকিকার গুরুত্ব ও ফজিলত এবং গোশত বিতরণের নিয়ম কানুন।

আরো পড়ুন :জমির খতিয়ানের প্রকারভেদ এবং খতিয়ান বের করার উপায়।

পরিশেষে :

বলা যাই যে , গরু দিয়ে আকীকা করাকে আলেমগণ জায়েজ বলেছেন। আবার এক পশুতে একাধিক আকীকাও সাহবীগণ দেননি। তবে আলেমগণ কুরবানীর উপর কিয়াস করে বলছেন ,বড় পশুতে একাদিক কুরবানী দেয়া জায়েজ। সে হিসেবে সাত জনের জন্য একটি গরু আকিকা দেয়া যাবে৷ আকিকা একটি ইবাদত ,তাই নিজেদের মতো এর নিয়ম তৈরি করে আকিকা দেয়া জায়েজ  হবে না তাই  হাদিস মতে, আকিকা দিয়াটা জায়েজ হবে। 

Write A Comment