আসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজকাল একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে গলার সংক্রমণ অথবা খুশখুশ করা। যখনই আপনার ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর থেকে বেশি জ্বর হয়, গলা বা ঘাড়ের ব্যথা হয়, গিলতে অসুবিধা হয় অথবা পেট ব্যথা করে তখন আপনার গলাতে সংক্রমণ হতে পারে। গলা খুসখুস হওয়ার বা করা অনেক রকম কারণে হতে পারে। যেমন দূষিত হাওয়া, আবহাওয়ার পরিবর্তন,অত্যাধিক ঠান্ডা পদার্থের সেবন, খারাপ খাওয়া পান করা ইত্যাদি। সেই জন্য সকলের গলার খেয়াল রাখা জরুরী। গলা খুসখুস থেকে বাঁচার এবং গলা খুসখুস হওয়ার পরে ডাক্তারে কাছে যাওয়ার আগে প্রাথমিক ভাবে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। সাধারণ কোনো কারণে গলা খুসখুস করলে ঘরোয়া উপায়ে তাসেরে যায়।
গলা খুসখুস কি :
গলা খুসখুস হচ্ছে এলার্জি বা গলার সংক্রামন একটি সাধারণ উপসর্গ। এই সমস্যার জন্য রোগী ব্যাথা ও অসস্তি অনুভব করেন। তবে খুব সহজে চিকিৎসা ও ঘরোয়া উপায়ে এটি নিরাময় করা যায়।
গলা খুসখুসের কারণ :
- গলা খুসখুসেরসবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে এলএলার্জি রাইনাইটিস। একে হাই ফিবার ও বলা হয়। এটি শরীরের হাইপারএকটিভ ইমিউন সিস্টেম এর কারণে হয়।
- অন্য প্রকারের এলার্জি যার ফলে গলা খুসখুস এবং সর্দি হয় তা হলো নিদিষ্ট খাবারে ,ধুলোয় ও সুবাসে এলার্জি। এই ক্ষেত্রে দূষণের ও অবদান থাকে।
- মাইক্রো-অর্গানিজম সংক্রমণ এর কারণে প্রায় গলাতে খুসখুসঅনুভূত হয়। গলায় সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে।
- ধুমপান ও মদ্যপান এর কারণে গলায় খুসখুস হতে পারে।
- গুরুতর হাইড্রেশন এবং এসিডিটির কারণে ও গলায় খুসখুস হয়ে থাকে।
গলা খুসখুসের দূর করার উপায় :
গলা খুশখুশ থেকে বাঁচার এবং গলা খুসখুস হওয়া দূর করবার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো –
(১)উষ্ণ গরম জল এবং নুন এর গার্গল:
গলাতে সংক্রমণ প্রতিরোধ হওয়ার সব থেকে প্রথম এবং সহজ উপায় হচ্ছে যে আপনি উষ্ণ গরম জলে হালকা নুন দিয়ে দিনে গার্গল করুন। আপনার গলাতে সংক্রমনের জন্য ঝিল্লির কোষগুলোর মধ্যে ব্যথা হয়ে যায় এবং গরম জল দিয়ে গার্গল করার ফলে ব্যথা কম হওয়ার জন্য খুশখুশের থেকে আরাম পাওয়া যায়।
(২)ভাপ দিয়ে গলায় সেঁক
অনেকবার আপনার গলায় খুসখুস এর কারণ হিসাবে গলা শুকিয়ে যাওয়া হতে পারে। এর থেকে আরামের জন্য আপনাকে কোন গামলা অথবা খোলা মুখ যুক্ত বাসনে জল ঢেলে তোয়ালে অথবা কোন বড় কাপড় মাথার উপর রেখে গরম হাওয়াটি নিতে পারেন। দিনে দুবার এটি করলে আপনি আরাম পেতে পারেন।
(৩)আদা এবং লবঙ্গ :চা
অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ দিয়ে ভরপুর আদা এবং লবঙ্গ গলার ইনফেকশন থেকে মুক্তি পেতে অনেক সাহায্য করে থাকে। একটি লবঙ্গ মুখে রেখে তার রস ধীরে ধীরে চুষে নিন। এক কাপ পানিতে আদা দিয়ে গরম করুন এবং যখন জল উষ্ণ গরম হয়ে যায় তখন তাকে একটু মধু মিশিয়ে তাকে দিনে তিনবার পান করুন। এটিও গলার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে থাকে।
(৪)যষ্টিমধু :
যষ্টিমধু ঔষধি গুণ দ্বারা ভরপুর থাকে। গলা খুশখুশের থেকে বাঁচারও গলার সংক্রমণ দূর করার জন্য আপনি ঘুমানোর সময় যষ্টিমধু এর ছোট টুকরো মুখে রেখে কিছুক্ষণ চিবোনোর ফলে সকাল পর্যন্ত আপনার গলা পরিষ্কার হয়ে যায়। এর ফলে ব্যথা এবং যন্ত্রণা দুটোই দূর হয়ে যায়।
(৫)গোলমরিচ বাতাশা এবং তুলসী:
পরিমানমতো গোলমরিচ এবং বাতাশা মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে ধীরে ধীরে চেবান। এছাড়াও এক কাপ পানিতে চার পাঁচ গোল মরিচ এবং তুলসী পাতা মিশিয়ে গাঢ় করে পান করলে আরাম পাওয়া যায়। গোলমরিচের সাথে বাদাম পিষে পান করলেও আরাম পাওয়া যায়।
(৬)ডুমুর এবং সুহাগা:
গলার খুসখুস দূর করার জন্য যে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো আমরা ব্যবহার করতে পারি তার মধ্যে একটি হলো ৫-৬ টি ডুমুরকে জলে সিদ্ধ করুন। তারপরে এটি ফিল্টার করুন এবং সকালে ও সন্ধ্যায় গরম জল পান করুন। এ ছাড়া মুখে কাঁচা সুহাগা নিয়ে এর রস চুষে খেলে আপনি উপকার পেতে পারেন।
(৭)কিশমিশ দিয়ে গলা খুশখুশ দূর করা যায়:
কিছু লোকের সব সময় গলাতে সংক্রমণ হয়ে থাকে । তাদের জ্বরের সময় অ্যালার্জির কারণেও গলাতে অসুবিধার মোকাবিলা করতে হতে পারে। এইরকম লোকের জন্য সব থেকে ভালো উপায় এই হল যে সকাল সন্ধ্যে দুইবার চার অথবা পাঁচবার কিশমিশের দানা খুব চিবিয়ে খেয়ে নেওয়া কিন্তু এর সাথে পানি যেন না খায়। টানা ১০ দিন এরকম করলে আপনি আরাম পেতে পারেন।
(৮)হলুদ দুধ:
হলুদের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। ভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এই হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকে অনেক উপকারী উপাদান। এক্ষেত্রে হলুদে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যে কোনও ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্ষেত্রে গরম দুধের সঙ্গে সামান্য কাঁচা হলুদ খেয়ে নিন। এতে গলা ব্যথা, গলা খুসখসের সমস্যা দূর হতে পারে।
(৯)মৌরি:
গলার সংক্রমণ থেকে মৌরি সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। যখনই আপনার গলায় সংক্রমণ হবে তখনই একটু ভরে মৌরি মুখে নিয়ে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খেতে পারেন । এতেও গলা খুশখুশ থেকে আপনি আরাম পাবেন।
(১০)আপেল সিডার ভিনেগার:
আপেল সিডার ভিনেগার বেশির ভাগ মানুষ ওজন কমাতে গ্রহণ করে থাকেন। তবে ঠান্ডার সমস্যার সমাধানেও এর ভূমিকা রয়েছে। এক গ্লাস গরম পানিতে ২ চামচ আপেল সিডার মেশান। খালি পেটে উষ্ণ অবস্থায় চুমুক দিয়ে খান। গলা খুসখুস থেকে আরাম পাওয়া যাবে ।
(১১)দারুচিনি:
দারুচিনিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলার গুণ রয়েছে। একটি দারুচিনির টুকরা এক কাপ পানিতে সেদ্ধ করুন। এরপর আরও কিছুক্ষণ এটি পাত্রেই ঠান্ডা হতে দিন। উষ্ণ অবস্থায় পান করুন।এতে গলা খুশখুশ থেকে আরাম পাবেন।
(১২)লেবু:
লেবুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মেশান। চুমুক দিয়ে ধীরে ধীরে খান এই পানীয়। গলা খুসখুসে আরাম দিবে।
আরো পড়ুন :ওজন কমানোর উপায় হিসেবে লেবু পানির ব্যবহার।
পরিশেষে:
বলা যাই যে ,ঋতু বদলের সময়টায় ঠান্ডা-কাশির মতো সমস্যা হতে পারে । হুট করে কফ জমে গলা খুসখুস করা, সর্দি লাগা কিংবা কাশি হওয়াটা বেশ অস্বস্তিকর। আবার সামান্য গলার খুসখুসে ভাব দূর করার জন্য ডাক্তারের কাছে ছোটাও হয় না।
এক্ষেত্রে এই আর্টিকেল আপনাদের সাহায্য করবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাকৃতিক সমাধানই সেরা দাওয়াই এক্ষেত্রে। তবে ঠান্ডা-কাশি বেড়ে গেলে কিংবা ঘরোয়া উপায়ে অস্বস্তি দূর না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।