আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন।যে সমস্যাটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রকট আকার ধারন করছে তা হচ্ছে গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার। এ সমস্যা টি যাদের আছে, তাদের খাবার-দাবারে একটু অনিয়ম করলেই সমস্যাটি দেখা দেয় । আগে থেকেই সাবধান না হলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে আলসার এর মত বড় অসুখ। 

গ্যাস্ট্রিক আলসার :

পাকস্থলীতে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও অবশেষে ক্ষতের সৃষ্টি করাই  হচ্ছে  গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি। সাধারণত অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া জাতীয় খাবারে এটি বেশি হয়ে থাকে । কারণ এসব খাবারকে হজম করতে অতিরিক্ত এসিডের দরকার হয়, ফলে অনেক হাইড্রোজেন ক্ষরিত হয়ে ক্লোরিনের সঙ্গে মিলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে। ফলে পাকস্থলীতে এসিডের পরিমান বেড়ে গিয়ে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটি দেখা দেয়। 

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের লক্ষণ:

গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে যে সব লক্ষণ দেখা দেয় তা নিম্নে দেয়া হলো –

 খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফাঁপা হয়ে যাওয়া।

 

  • বুকে জ্বালাপোড়া করা।
  • বেশি বেশি ঢেকুর উঠা।
  • পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা হওয়া।
  •  খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকে।
  •  মুখ দিয়ে নুন জল উঠা।
  • বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হয়ে যাওয়া।
  • পিঠে ব্যথা অনুভব হওয়া।
  • ক্ষুধা লাগে কিন্তু অল্প খাবারই ক্ষুধা মিটে যায়।
  • মূত্রত্যাগের সময় রক্তপাত।

এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে আপনার গ্যাস্ট্রিকের আলসার আছে । তাই এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। 

গ্যাস্ট্রিক আলসার কেন হয়?

পেটে অবস্থিত অ্যাসিড যা খাবার হজমে সাহায্য করে তা যদি খাদ্যনালির আস্তরণের ক্ষতি করে তখন গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পেটি হেলি ভেক্টর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এবং অ্যাসপিরিন নামক অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ব্যথা রিলিভারস ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনের ফলে এই গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:

 

  • খাবারে অনিয়ম করা।
  • পরিমাণের চেয়ে অধিক খাবার খাওয়া।
  • সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার বদভ্যাস এর কারণে দেরিতে নাস্তা করা।
  • বাইরের দোকানের খাবার বেশি খাওয়া।
  • তেল চর্বি জাতীয় মসলাদার খাবার বেশি খাওয়া।
  • মসলাদার খাবার খাওয়া।
  • একেক দিন একেক সময় খাবার খাওয়া।
  • অ্যাসপিরিন ও ব্যথা নাশক ওষুধগুলো বেশি সেবন করা।
  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল অতিমাত্রায় সেবন করা।

এই কারণগুলো গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য দায়ী। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে যথা সম্ভব এগুলোকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য বর্জনীয় খাবার:

যারা গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভুক্তভোগী তারা চাইলেই সব খাবার খেতে পারবে না। নিয়ম ছাড়া খেলে তাদের সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে এ থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের রোগ নিরাময়ে জন্য যে সমস্ত খাবারগুলো বর্জন করা জরুরি সেগুলো হল-

 

  •  কফি কিংবা ক্যাফাইন সমৃদ্ধ খাবার।
  • দুধ ও দগ্ধজাত খাবার।
  • অতিরিক্ত তেল মসলা ঝাল যুক্ত খাবার।
  • লাল মাংস অর্থাৎ গরু খাসি ইত্যাদির মাংস।
  • ভাজাপোড়া বাদ দিন।
  • বাইরের রিচ ফুড কিংবা ফাস্টফুড।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দিন।
  • কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
  • অ্যাসপিরিন ও ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দিন।
  • অতিরিক্ত টক খাওয়া বাদ দিন কারণ তা আলসারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়:

আদা:

গ্যাস্ট্রিক বা পেটের যেকোন সমস্যায় আদা হচ্ছে খুবই কার্যকরী একটি ঘরোয়া ওষুধ। গ্যাস্ট্রিক হলে আদার টুকরা চিবিয়ে খেতে পারেন আবার  আদা রস করে গরম পানি তে মিশিয়ে চায়ের মতো খেতে পারেন। চাইলে একটু মধু ও যোগ করতে পারেন।

দারুচিনি:

পেটের গ্যাস বা পেটের ব্যাথা সারাতে খুবই কার্যকরী দারুচিনি ।গরম পানিতে দারুচিনি দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি পান করতে পারেন অথবা দুধে দারুচিনি গুঁড়া  মিশিয়ে দিয়ে খেতে পারেন। তবে গরম দুধে গ্যস বা বদহজম হলে তা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

পানি:

সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। দৈনিক কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এতে অতিরক্ত গ্যাস নিউট্রালাইজ হবে সহজেই, সেই সাথে বদহজম থেকেও রক্ষা পাওয়া যায় ।

পুদিনা পাতা:

গ্যাস্ট্রিক হলে অল্প কিছু পুদিনা পাতা মুখে নিয়ে চিবিয়ে নিন, এতে অতিরিক্ত গ্যাস, বদহজম এবং সেই সাথে বমি ভাব কমবে। পুদিনা পাতা গ্যাসজনিত সমস্যায় খুবই কার্যকরী।

পেঁপে:

পেঁপেতে আছে প্যাপেইন নামক এমজাইম , যা আমাদের হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করএবং গ্যাস্টিক হতে বাধা দেয়। কাঁচা বা পাকা পেঁপে উভয় অবস্থাতেই আপনি উপকার পাবেন। তাই নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন।

মেথি পাতা:

পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করতে এক কাপ পানিতে মেথি পাতা ফোটান। এক চিমটি লবণ যোগ করুন। দিনে দু’বার এই উষ্ণ গরম পানিটি পান করুন। 

কলা:

কলা, পেটের আলসারের জন্য ভালো। এতে ব্যাকটেরিয়ারোধী পদার্থ আছে যা স্বাভাবিকভাবেই পেটের গ্যাস্টিক আলসারের বৃদ্ধি মন্দীভূত করে।

হলুদ:

তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার হজম করতে সাহায্য করে হলুদ। গ্যাস্টিক আলসার সহ পেটের প্রদাহ বা হজম জনিত যেকোন সমস্যায় হলুদ খুবই কার্যকরী।

আনারস:

আনারসে রয়েছে ব্রোমেলেইন নামক হজমশক্তি বৃদ্ধি কারক প্রাকৃতিক এনজাইম ও ৮০ শতাংশের উপরে পানি। এটি আমাদের পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে।

টক দই:

দই বা টক দইয়ে আছে বিভিন্ন উপকারী ব্যক্টেরিয়া যেমন- ল্যাক্টোব্যসিলাস, এসিডোফিলাস ইত্যাদি। এসব উপকারী ব্যকটেরিয়া খুব দ্রুত খাবার হজম করতে ও বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যক্টেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এজন্য খাবারের ১০ মিনিট পরে দই খাওয়া ভালো। এতে গ্যাস দূর হয়। টক দই খেতে পারলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।

জিরা:

জিরা মুখের লালা উৎপাদনে সাহায্য করে যা হজম প্রক্রিয়া ও বিপাক ক্রিয়ায় কাজে আসে। এছাড়াও  অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে, পাকস্থলি কোন কারণে উদ্দিপ্ত হলে তা শীতল করতে এটি সাহায্য করে । এ ছাড়া পেটের আলসার দূর করতে জিরা কাজ করে । আপনার পেটে যখনই বায়ুর উদ্রেক হবে তখনই কয়েকটি জিরা চিবিয়ে অথবা পানিতে সেদ্ধ করে পানিসহ খেয়ে ফেলুন- অ্যাসিডিটি থাকবে না।

শারীরিক ব্যায়াম:

প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়াম করলে বিপাক ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। খাওয়ার পরপর ই বিছানায় শুয়ে পড়বেন না। ১০ মিনিট ঘরের মধ্যেই হাটাহাটি করুন, নয়তো সোজা হয়ে বসে থাকুন। প্রতিদন সকালে ও বিকালে ৩০ মিনিট করে হাটুন। এতে আপনার গ্যস্ট্রিক সমস্যা অনেকটাই কমবে ।

আরো পড়ুন :মানসিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মুক্তির উপায়

পরিশেষে:

 বলা যায় যে সচেতনতাই এই সমস্যার প্রধান ওষুধ।আশা  করি উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো আপনাদের উপকারে আসবে তবে এইসব উপায়গুলো তে যদি গ্যাস্টিক না কমে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরমর্শ নিতে হবে। 

 

Write A Comment