আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন।সকলের দরখাস্ত লেখা জানা অত্যান্ত জুরুরি।বিশেষ করে  চাকরির জন্য সকলের  দরখাস্ত লেখা জানা উচিত।

সদ্য পাশ করা তরুণ-তরুণীদেড়  চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানা উচিত।কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে  সিভি এবং আবেদন পত্র সাবমিট করতে হবে চাকারির জন্য।

কিন্তু যদি দরখাস্ত সঠিকভাবে লিখতে না জানেন, তাহলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।  চাকরী প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা, নম্রতা ইত্যাদি পরিমাপ করা হয় একটি আবেদন পত্রের মাধ্যমে। তাই দরখাস্ত গুছিয়ে এবং মার্জিত উপায়ে লিখতে জানা অবশ্যক।

কোন প্রতিষ্টানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথাগত চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম অনুসরণ করে বা  মুখস্ত বিদ্যার জোরে দরখাস্ত লিখে প্রতিষ্টানের আনুষ্টানিকতা পূরণ করতে পারা যায় , কিন্তু চাকরির দরখাস্ত লেখার মাধ্যমে নিয়োগদাতা এবং নিয়োগকারীর মাঝে একটি সফল যোগাযোগ সম্পন করতে পারবেন না।

দরখাস্ত লেখা যদি সঠিক নিয়ম মতো হয় তাহলে দরখাস্ত লেখার মাধ্যমে চাকরিতে আবেদনের পর চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়ে।  তাই আজ আমরা এই আর্টিকেলটিতে চাকরির দরখাস্ত  লেখা সম্পর্কে জানবো।

চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়মাবলী:

আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লেখার নির্ধারিত কিছু নিয়ম রয়েছে যা কোন অবস্থাতেই বাদ দিলে  দরখাস্ত লেখা যাবে না। আপনি যে কোন প্রকারের আবেদন বা দরখাস্ত  লিখুন না কেন, আবেদন বা দরখাস্ত লেখার সময়  নিয়মাবলী মেনে দরখাস্ত লেখা সম্পন্ন করতে হবে।

  • আবেদনের তারিখ (যে দিন আপনি আবেদন করতে চান তার তারিখ)
  • প্রাপক/বরাবর (যার নিকট আবেদন করছেন তার নাম, পদবী ও ঠিকানা)।
  • আবেদনপত্রের বিষয়।
  • সম্ভাষণ/স্যার/জনাব/ম্যাডাম ইত্যাদি।
  • আবেদনের বিষয়ে গঠনমূলক বিস্তারিত বর্ণনা।
  • আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা।

আপনি যে ধরনের আবেদন পত্র বা দরখাস্ত  লিখছেন না কেন, আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লেখার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেসব বাদ দিলে আবেদন পত্র  পূর্ণতা পায় না। আবেদনপত্র লেখার সময় এই বিষয় গুলো মাথায় রাখতে হবে-

  • তারিখঃ
  • দরখাস্তের প্রথমেই তারিখ লিখতে হয়। অনেকেই আবার দরখাস্তের শেষ তারিখ লেখে যেখানেই লেখুক একটি দরখাস্ত লিখতে তারিখ লাগবেই ।  যে তারিখে দরখাস্ত জমা দেয়া হবে সেই তারিখ দিয়ে দরখাস্ত লিখতে হবে।
  • প্রাপকঃ 

দরখাস্ত যার কাছে পাঠাবেন সেই  প্রাপক । এখন যার বরাবর চাকরির দরখাস্ত প্রেরণ করছেন, উনার পদবী, বিভাগ, প্রতিষ্টানের নাম এবং অফিসের ঠিকানা যদি ভুল হয়  বা  প্রাপকের নাম, ঠিকানা না লেখা হয় তাহলে সেই দরখাস্তের কোন মুল্যই নেই।প্রাপক ছাড়াও কিন্তু দরখাস্ত কল্পনা করা যায় না ।

নিয়োগকর্তা  আবেদন পত্র পড়ার প্রথমেই  এই ধারণা করেন যে, আপনি তাদের প্রকাশিত নিয়োগ প্রথম  থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে সবকিছু বুঝে আবেদন করেছেন।

  • দরখাস্তের  বিষয়ঃ

 চাকরির দরখাস্ত লেখার ক্ষেত্রে বিষয়  উল্লেখ করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন  । যে বিষয়ে চাকরির দরখাস্ত লিখতে চান সেটা স্পষ্টভাবে  উল্লেখ করতে হবে।যাতে নিয়োগকর্তার আপনার আবেদনপত্র সর্টিং বা পদবী অনুযায়ী পৃথক করতে সুবিধা হয়।

  • সম্ভাষণঃ 

চাকরির দরখাস্ত বা আবেদন পত্র লেখার সময় অবশ্যই স্যার/মেডাম/মহদোয়/ এসব সম্মান সূচক কোন  শব্দ লিখতে হবে। সম্ভাষণ না লিখলে দরখাস্ত  লেখার আদবই ঠিক থাকবে না  এবং আপনার দরখাস্ত মুঞ্জুর হবে না।  

  • মুল বক্তব্যঃ 

এবার  ০৩ টি অনুচ্ছেদে আপনার সম্পর্কে সংক্ষেপে এমন কিছু লিখুন যা পড়ে নিয়োগকর্তার  আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

  • প্রথম অনুচ্ছেদে ২ থেকে ৩ লাইনের মধ্যে নিয়োগকর্তাকে জানিয়ে দিনআপনি তাদের চাকরির নিয়োগের খবর কিভাবে পেয়েছেন এবং কি কারণে আপনি এই চাকরির জন্য আবেদনের আগ্রহ প্রকাশ করছেন। 

এই চাকরিটি আপনার খুবই প্রয়োজন, এধরনের কোন অপেশাদার কথা উল্লেখ করা যাবে না। নিজের অর্জিত শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে এমন কিছু গুণের কথা উল্লেখ করতে হবে  যা সরাসরি দরখাস্তের বিষয়ে উল্লেখকৃত পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

  • দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আপনি আপনার বিশেষ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা বা অর্জিত শিক্ষাকে সংক্ষিপ্ত আকারে  উল্লেখ করুন, যাতে আপনার মধ্যে থাকা গুণাবলি,  ওই পদে চাকরি করে  প্রতিষ্টানের জন্য ভালো কিছু করতে পারেন ।
  • তৃতীয় এবং সর্বশেষ অনুচ্ছেদে আপনার সকল সাটিফিকেট বা কাগজপত্রের বর্ণনা দিন , যাতে নিয়োগকর্তা অতি আগ্রহে পড়েন। সেইসাথে আপনি যেকোন দিন ইন্টারভিউ দিতে প্রস্তুত তার ইঙ্গিত দিয়ে কিছু কথা লিখুন।
  • নিবেদকঃ 

দরখাস্ত বা আবেদন পত্র  লেখার শেষ ধাপ হলো নিবেদক অংশ । এই অংশে আবেদনকারী তার নাম ঠিকানা তার পদবী উল্লেখ্য করে থাকেন ।  এইটাও  কিন্তু খুব গুরুত্বর্পূন বিষয়। আবেদন পত্রে যদি আবেদনকারীর নাম ঠিকানা সঠিক ভাবে দিতে হবে অর্থাৎ আপনার নাম, ঠিকানা এবং যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর উল্লেখ করুন।

নমুনা :

বরাবর,

(নিয়োগকর্তার পদবী)

(নিয়োগকর্তা যে বিভাগের দায়িত্ত্ব আছেন ইহার নাম)

(প্রতিষ্টানের নাম)

(প্রতিষ্টানের ঠিকানা)

বিষয়ঃ (পদের নাম)এর জন্য আবেদন।

জনাব,

যথাবিহীত সম্মান পূর্বক নিবেদন এই যে, গত (নিয়োগ প্রকাশের তারিখ)এ (নিয়োগ প্রকাশের উৎস) তে  প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করে, আমি নিজেকে (পদের নাম)এর জন্য একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে চাকরিতে আবেদন করার আগ্রহ প্রকাশ করছি।

আমি মনে করছি যে, আমার অর্জিত (দক্ষতা/অভিজ্ঞতা/শিক্ষা) উক্ত পদে চাকরি করতে এবং আপনার প্রতিষ্টানের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবো ।

আমি আমার পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত অত্র আবেদন পত্রের সাথে আপনার পর্যালোচনার জন্য সংযুক্ত করেছি। তবে উক্ত পদে চাকরির জন্য আমার অতিরিক্ত কোন যোগ্যতা বা তথ্য সম্পর্কে কোনো কিছু  জানার থাকলে, নির্দ্ধাধায় আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ রইলো।

অতএব, আমার আবেদনপত্রটি  বিবেচনা করার জন্য আপনার মূল্যবান সময় এবং উক্ত পদে চাকরিতে অংশগ্রহণ করে  আপনার প্রতিষ্টানের জন্য আরও অবদান রাখতে পারবো কিভাবে, সে বিষয়ে আলোচনা করতে একটি সাক্ষাৎকারের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিনীত,

(আপনার নাম)

(আপনার ঠিকানা)

(যোগাযোগের ফোন নম্বর)

আরো পড়ুন :নফল ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সমূহ

পরিশেষে :

বলা যায় যে ,আবেদন পত্র  বা দরখাস্ত  লেখার নিয়ম না মানলে আপনার আবেদন পত্র বা দরখাস্তটি সঠিক হবে না। তাই লেখার সময় স্পষ্টভাবে ও মার্জিত ভাবে এবং নিৰ্মূলভাবে আবেদন পত্র  বা দরখাস্তটি  লেখা শেষ  করতে হবে। 

Write A Comment