আসসালাম আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। বর্তমানে সময়ে আলোচিত একটি নাম হচ্ছে চিয়া সিড। অনেকেই হয়ত এর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে অজ্ঞ।তাই সকলের জন্যেই আজকের এই আর্টিকেলটি।
চিয়া সিড :
প্রাচীনকালে অ্যাজটেক সভ্যতা এবং মায়ান সভ্যতার মতো কিছু মেসো আমেরিকান (Mesoamerican) সংস্কৃতির প্রধান শস্য ছিলো চিয়া সিড । ইতিহাসবিদদের মতে,চিয়া একটি প্রাচীন মায়ান শব্দ, যার অর্থ শক্তি। চিয়া সাধারনত শস্যের মধ্যে পড়ে।
এমন একটি উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে চিয়া সিড যা মানব শরীরের জন্য খুব উপকারী। এর আলাদা বাংলা কোন নাম নেই এটি চিয়া বীজ নামেই পরিচিত। চিয়া বীজ পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে অন্যতম এবং এই বীজকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। চিয়া বীজে পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর। এই চিয়া বীজ কালো ও সাদা রঙের হয় এবং এই চিয়া বীজ আকারে অনেক ছোট হয়। এই বীজের গুনাগুন অনেক মান সম্পন্নহয়ে থাকে । সব ধরণের আবহাওয়াতে এই চিয়া বীজ হতে পারে।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ :
চিয়া সিড আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, দস্তা, তামা, পটাশিয়াম, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড ও আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন এ, বি, ই, ডি এবং আইরন, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন এবং থায়ামিন সহ খনিজ পদার্থ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আকারে ছোট্ট এই বীজে এত বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ থাকায় একে সুপারফুড ও বলা হয়ে থাকে। চিয়া বীজের পুষ্টি গুনাগুন গবেষনা করে দেখা গেছে দুধে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে তার থেকে ৫ গুণ বেশী ক্যালসিয়াম চিয়া বীজে পাওয়া যায়।
চিয়া সিড এর উপকারিতা:
মানব দেহের জন্য চিয়া সিড এ প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন থাকায় শরীরের জন্য একটি উপাদেয় খাদ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
- চিয়া সিড মানবদেহে শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- চিয়া সিড শরীরে পুষ্টি ও বিভিন্ন উপাদানের অভাব পূরণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে বহু গুনে।
- বর্তমানে ওজন কমানোর অন্যতম একটি আদর্শ খাদ্য চিয়া সিড। এতে চর্বি এবং আমিশের পরিমাণ কম থাকায় শরীরের ওজন কমায়।
- চিয়া সিড শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর ভারসাম্য রক্ষা করে কর্ম ক্ষমতা বজায় রাখে।
- চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- এতে এক গ্লাস দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মলাশয় পরিষ্কার রাখে ফলে করুন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
- শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে দেয়।
- প্রদাহ জনিত সমস্যা দূর করে।
- ঠিক সময়ে এবং পরিপূর্ণভাবে ঘুম হতে সাহায্য করে।
- হজমে শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- শরীর আর মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি পুষ্টি দিয়ে ভর্তি চিয়া সিড ।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম:
চিয়াসিড খাওয়ার নিয়ম বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম। স্বাদ ও ঘ্রাণবিহীন এই খাদ্যটি যেকোনো খাবারের সাথেই খাওয়া যায়। চিয়া সিড গরম পানিতে ২-৩ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পছন্দ মতো খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাই । চিয়াসিড খাওয়ার বেশকিছু নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো।
-
ওটস এর সাথে
চিয়াসিড ওটস এর সাথে যোগ করে সকালের নাস্তায় খাওয়া যায়। তবে রান্নাই সরাসরি যোগ না করার ভাল।
-
সালাদের সাথে
সালাদ বা কাটা ফলমূলের উপরে চিয়া সিড ছিটিয়ে খাওয়া যায়। চিয়াসিড খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে এটিই সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয়।
-
জুসের সাথে
যেকোন ফলের জুসের সাথে চিয়াসিড মিশিয়ে জুসের পুষ্টিগুণ আরো বাড়িয়ে ফেলতে পারেন এবং বাড়িতে চিয়া ড্রিংকস বানিয়েওখাওয়া যাবে।
-
পানির সাথে
- ১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ চিয়া সিড ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খালি পেটে খেলে শরীরের উপকার হয়। চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
-
স্মুথি বানিয়ে
অনেকেই চিয়াসিড স্মুথি বানিয়ে খেতে বেশি পছন্দ করেন। ব্লেন্ডার এর সাহায্যে টক-দই, চিয়া সিড, ও শসা দিয়ে একসাথে মিক্সড করে স্মুথি বানিয়ে খাওয়া যায়। আবার কলা, খেজুর, বাদাম ও চিয়াসিড একত্রে স্মুথি বানিয়ে খেতে পারেন।
-
স্যুপের সাথে
স্যুপের সাথেও চিয়া সিড খাওয়া যায়। সকালে ও রাতে পানি ও লেবুর রসের সাথে চিয়া সিড খেলে পেটের উপরকার হবে।
এছাড়াও নিজের পছন্দ মতো খাবারের সাথে মিশিয়ে চিয়াসিড খাওয়া যায়।
চিয়া সীডের স্বাদ:
চিয়া সীডের স্বাদ ও গন্ধ নেয় বললেই চলে। চিয়া সিড দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি কালো বর্ণের অন্যটি শ্বেত বর্ণের। ছোট আকৃতির এই বীজটির খাদ্যমান বেশ উচ্চমাত্রার।
আরো পড়ুন :চাকরির দরখাস্ত লেখার নমুনা এবং নিয়মাবলী।
পরিশেষে :
বলা যায় যে ,চিয়া সিড অত্যন্ত পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ এবং চিয়া সিড এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে।প্রতিদিনের সুষম খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে চিয়া বীজ খেতে হবে। সবার শরীরের ধরণ এক হয় না তাই যারা সুগারের রোগী বা যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করতে চান তারা পুষ্টিবিদের সাথে কথা বলে, তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী এটি খাওয়া শুরু করুন।