আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। চুলকানি একটি ছোঁয়াচে রোগ । ত্বকে চুলকানি হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না । খুব সাধারণ ব্যাপার হলে ও একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন ত্বকের চুলকানি বেড়ে গেলে । অনেকেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নানান মলম বা ক্রিম ব্যবহার করে থাকে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। চুলকানির কারণে কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। আবার মেজাজ  খিটখিটে হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে, আপনার জানা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি যদি চুলকানির সমস্যার মুখোমুখি হন তবে আপনি এই উপায় গুলির সাহায্যে কাটিয়ে উঠতে পারেন। চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রাকৃতিক  কিছু উপায় আছে। ঘরোয়া এই উপায়গুলোতে খুব সহজেই ত্বকের ক্ষতি ছাড়াই চুলকানির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে । 

চুলকানি :

চুলকানি হচ্ছে একটি অস্বস্তিকর, বিরক্তিকর সংবেদন যা আপনাকে আপনার ত্বক ঘষতে বা আঁচড়ের জন্য প্ররোচিত করে থাকে । চিকিৎসার ভাষায় একে বলা হয় ‘প্রুরিটাস’। এটি শুষ্ক ত্বক, গর্ভাবস্থা এবং কিছু রোগের (যেমন চর্মরোগ বা যকৃতের রোগ) কারণে হয়ে থাকে । 

চুলকানির উপসর্গ:

চুলকানি মাথার ত্বক, হাত, পা বা পুরো শরীরের ছোট অংশকে প্রভাবিত করতে পারে।  চুলকানির একটি সাধারণ কারণ শুষ্ক ত্বক। শুষ্ক ত্বকে ঘামাচির ফলেও চুলকানি হতে পারে।এছাড়া সারা শরীরে চুলকানি একটি মেডিকেল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যেমন লিভারের রোগ। এই পরিস্থিতিতে, ত্বকে কোন পরিবর্তন নাও হতে পারে।চুলকানি অন্য কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ ছাড়াও  হতে পারে।কিছু উপসর্গ যেমন  আঁচড়,লালভাব, ফুসকুড়ি বা ফোসকা, শুষ্ক ও ফাটা ত্বক, চামড়াযুক্ত বা রুক্ষ দাগ সহ চুলকানি হতে পারে।

চুলকানির কারণ:

চুলকানি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে । তবে চুলকানি একেক জনের একেক রকম হতে পারে কিন্তু চুলকানি বিভিন্ন ধরন রয়েছে। সব চুলকানি একরকমহয় না । যেমন দাদ, ফুসকুড়ি, ঘামাছি, অ্যালার্জি এরকম অনেক ধরন রয়েছে। চুলকানি কিভাবে হতে পারে এখানে কিছু কারণ নিম্নে দেয়া হলো-

  • এলার্জি প্রতিক্রিয়া থেকে চুলকানি হতে পারে।
  • কিছু খাবার থেকে চুলকানি হতে পারে।
  • পোকামাকড়ের থেকে কামড় থেকে চুলকানি হয়ে থাকে। 
  • কিছু ওষুধ থেকে চুলকানি হতে পারে।
  • রাসায়নিক প্রসাধনীর কারণে চুলকানি হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় সময় ও চুলকানি হয়ে থাকে।  
  • লিভার কিডনি বা থাইরয়েডের কারণে চুলকানি হয়। 
  • ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য চুলকানি হয়ে থাকে। 
  • শুষ্ক ত্বকের জন্য চুলকানি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত সূর্যের তাপ লাগলে ত্বকে চুলকানি দেখা যায়। 
  • আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে ও চুলকানি হয়ে থাকে। 
  • রক্তদূষণ ও  শরীর কে অপরিষ্কার রাখা সহ আরও কিছু কারণে চুলকানি হতে পারে।

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চুলকানি সাধারণ ব্যাপার, কারণ বয়সের সাথে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক হয়ে যায়।  চুলকানি শরীরের একটি অংশে সীমাবদ্ধ হতে পারে বা সারা শরীরে বা বিভিন্ন স্থানে ঘটতে পারে।আপনার চুলকানির কারণের উপর নির্ভর করে, আপনার ত্বক স্বাভাবিক দেখাতে পারে বা লাল বা রুক্ষ হতে পারে, বা ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয়ে থাকে ।যাইহোক, চুলকানি সম্পূর্ণরূপে দূর করতে, এর কারণ চিহ্নিত করা এবং চিকিত্সা করা প্রয়োজন।

চুলকানি দূর করার উপায়:

বাড়িতে বসে খুব সহজে চুলকানি দূর করা যায়। আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিবো । ত্বকের চুলকানি সাধারণত গুরুতর কিছুর লক্ষণ নয়। আপনি  বাড়িতে বসেই এর চিকিৎসা করতে পারবেন এবং সাধারণত কয়েক সপ্তাহ পরে চলে যাবে। চুলকানি খুবই অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর একটি রোগ যা ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে হয় বা স্ক্রাচ করতে হয়। প্রাকৃতিক উপাদানের কিছু চুলকানির ওষুধ রয়েছে যা দিয়ে খুব সহজেই চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চুলকানি থেকে রক্ষা পেতে  কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। নিচে চুলকানি দূর করার কিছু উপায় দেয়া হলো-

ত্বকে ঠান্ডা প্রয়োগ করা:

ত্বক থেকে চুলকানি প্রশমিত করতে হলে অবশ্যই ঠান্ডা প্রয়োগ করতে পারেন। যে স্থানগুলোতে চুলকানি হয় বা চুলকায় সে স্থানগুলোতে ঠান্ডা, ভেজা কাপড় বা বরফের কোন প্যাক লাগাতে পারেন । এটি প্রায় 5 থেকে 10 মিনিট পর্যন্ত রাখতে হবে। তাহলে দেখবেন খুব কম সময়ে আপনার চুলকানি কমে যাবে।

ওটমিল স্নান বা গোসল:

ওটমিল স্নান বা গোসল চুলকানির জন্য এটি খুব প্রশান্তিদায়ক হয়ে থাকে। বিশেষ করে চিকেন পক্স, আমবাত, রোদে পোড়ার জন্য ফুসকুড়ি ইত্যাদি। যদি আপনার চুলকানি হয় তাহলে কুসুম গরম পানির সাথে পরিমাণমতো ওটমিল অথবা ওটমিলের গুড়ো পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। তাহলে দেখবেন খুবই তাড়াতাড়ি চুলকানি কমে যাবে।

ত্বক ময়েশ্চারাইজ করুন:

শুষ্ক ত্বকে চুলকানির সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এজন্য ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। চুলকানিযুক্ত ত্বকের জন্য  অবশ্যই সুগন্ধি মুক্ত বা পারফিউম মুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে।কিন্তু  আপনি সুগন্ধিযুক্ত মশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চুলকানি সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারেন । এজন্য অবশ্যই সুগন্ধি মুক্ত মশ্চারাইজ ব্যবহার করতে হবে এতে চুলকানি দূর হবে।

মেন্থল বা কুলিং এজেন্ট প্রয়োগ:

চুলকানি যুক্ত ত্বকে মেন্থল বা কুলিং এজেন্ট প্রশান্তি দিয়ে থাকে। এজন্য আপনার ত্বকের লোশন বা মশ্চারাইজার মেন্থল যুক্ত নিতে পারেন অথবা রেফ্রিজারেটরে রেখে দিতে পারেন। এতে চুলকানির সমস্যা দ্রুত দূর হবে।

নিম পাতা:

ত্বকের যত্নে খুবই উপকারী নিমপাতা। চুলকানির চিকিৎসায় ও নিম পাতা খুবই উপকারী। নিম পাতা ত্বকের বিভিন্ন জীবাণু ধ্বংস করে দেয়। নিমপাতা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায় আপনি যেকোন ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।নিম পাতা পানিতে সেদ্ধ করলে সে পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা নিমপাতার পেস্ট আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন এবং নিম পাতার তেল ব্যবহার করতে পারেন।এতে চুলকানি খুবই দ্রুত কমে যাবে।

নারিকেল তেল অথবা জলপাই তেল:

চুলকানির চিকিৎসায় নারিকেল তেল অথবা জলপাই তেল অনেক উপকারী।চুলকানিযুক্ত স্থানে এই তেল লাগালে চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে । এজন্য অবশ্যই নারকেল তেল অথবা জলপাই তেল চুলকানি হলে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অ্যালোভেরা জেল:

অ্যালোভেরা জেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল খুবই উপকারী। চুলকানির জন্য খুবই কার্যকরী একটি জেল।আক্রান্ত স্থানে প্রাকৃতিক এই জেল লাগালে চুলকানি থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

লেবু এবং বেকিং সোডা:

চুলকানি হলে অবশ্যই প্রতিদিন গোসলে হালকা গরম পানিতে বেকিং সোডা এবং লেবুর রস মিশিয়ে গোসল করতে পারেন। কারণ চুলকানি কমাতে এই দুটি উপাদান খুবই কার্যকর।  লেবুতে ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা ত্বকের জীবাণু ধ্বংস করে দেয় এবং চুলকানি খুব দ্রুত কমিয়ে ফেলে।

পর্যাপ্ত পানি পান:

শরীর অতিরিক্ত শুষ্ক হলে চুলকানির সমস্যা সৃষ্টি হয়। শরীরটা শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন।

ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পরুন:

সিনথেটিক, উল এসব কাপড়ের শরীরে চুলকানি সৃষ্টিকরে থাকে । এজন্য অবশ্যই চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে হলে ঢিলেঢালা সুতি কাপড় পড়তে হবে। তাহলে অবশ্যই চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড:

চুলকানির জন্য অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড খুবই কার্যকর সেটি হতে পারে ডেটল অথবা স্যাভলন। প্রতিদিন গোসলের সময় তিন থেকে চার ফোঁটা অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে পারেন আবার  কাপড় ধোয়ার সময় পানিতে ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

মানসিক চাপ হ্রাস করুন:

অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে। একারণে  মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে কোনো দুশ্চিন্তা করা যাবে না। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকলে দ্রুত চুলকানি সমস্যা দূর হবে।

তবে অবশ্যই স্ক্রাচিং থেকে দূরে থাকবেন কারন স্ক্রাচিং হল এমন যত স্ক্র্যাচ করবেন বা চুলকাবেন ততবেশি চুলকাবে। এজন্য স্ক্রাচিং থেকে বিরত থাকুন। এসব ঘরোয়া উপায়ে যদি আপনার চুলকানির সমস্যা সমাধান না করে এবং ছয় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে এবং ঔষধ সেবন করতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চুলকানি থাকলে অথবা ফুসকুড়ি, দাদ অতিরিক্ত চুলকাতে থাকলে সেখানে ঘা সৃষ্টি হবে। এজন্য যখন দেখবেন ঘরোয়া উপায়ে চুলকানি ভালো হচ্ছে না তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

আরো পড়ুন :প্রয়োজনীয় সনদপত্র জন্ম নিবন্ধন হারিয়ে গেলে করণীয়।

পরিশেষে:

বলা যায় যে ,শরীরে যে কোন স্থানে চুলকানি দেখা দিলে মলম বা ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। এতে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন চুলকানি দূর করার সহজ উপায় হিসেবে ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নিয়ে এর সমাধান করতে । ঘরোয়া উপায়ে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।আশা করছি  উপরোক্ত উপায় গুলো চেষ্টাকরলে আপনার  চুলকানি কমে যাবে। এই উপায় গুলো কাজ না করলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।

Write A Comment