আসসালামু আলাইকুম আশা করছি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। কমবেশি সবারই চুল নিয়ে সমস্যা আছে। তাই চুল টিকিয়ে রাখতে চিন্তার শেষ নেই। চুল যাদের পাতলা বা টাক হয়ে গেছে, তারা নতুন চুল গজানোর জন্যে কত কী-ই না করেন।স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিদিন কিছু না কিছু চুল পড়বেই। তবে চুল পড়ার পাশাপাশি নতুন চুল যদি না গজায়, তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে। আপনার ওপর এই নতুন চুল গজানোর বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করে । আপনি কী খাচ্ছেন, কীভাবে চুলের যত্ন নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে নতুন চুল গজাবে।
সাধারণত আমাদের দৈনিক৫০ টি থেকে ১০০ টি চুল উঠে যায়। যার পরিবর্তে নতুন চুল উৎপন্ন হয় এবং এটি খুবই সাধারণ। কিন্তু কিছু কারণের জন্য যদি আমাদের চুল পড়তে থাকে এবং এর পরিবর্তে নতুন চুল উৎপন্ন না হয় তবে সেটা আমাদের কাছে খুবই চিন্তার কারণ।
চুল গজানোর উপায় :
আমাদের মাথার ত্বক বা স্কাল্পে প্রচুর পরিমাণ ফলিকল থাকে এবং এই ফলিকলের উপর নির্ভর করে আমাদের চুল উৎপন্ন হয়। আমাদের চুল উৎপন্ন হওয়া বা গজানোর অনুপাত নির্ভর করে অনেকগুলি বিষয়ের উপর। ।যেমন –
- নিয়মিত চুলের যত্ন করা।
- পুষ্টি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা ।
- দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করা।
নিয়মিত চুলের যত্ন করা :
নিম্নে আমরা চেষ্টাকরবো ঘরোয়া পদ্ধতিতে বা প্রাকৃতিক ভাবে নতুন চুল গজানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে ।
চুলের যত্নে ডিম :
চুলের যত্নে ডিম অনেক উপকারী উপাদান। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড । তাই নিয়মিত ডিম আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকলগুলি অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে যায় ,ফলে আমাদের নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে।
- ব্যবহার :
প্রতি সপ্তাহে দুই দিন, তিন থেকে চার চামচ ডিম সরাসরি আমাদের মাথায় প্রয়োগ করতে পারি ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর জৈব শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল:
অ্যালোভেরা জেল এর ব্যবহার আমাদের মাথায় চুল গজানোর উপায় হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালোভেরা জেল এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান যা আমাদের মাথার ত্বককে বিভিন্ন ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। আমাদের মাথার ত্বকের ফলিকল গুলির ওপর জমে থাকা স্তর গুলিকে সরিয়ে নতুন চুল গজাতে বা উৎপন্ন হতে সাহায্য করে।
- ব্যবহার :
অ্যালোভেরা গাছের থেকে জেল সংগ্রহ করে প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন সরাসরি আমাদের চুলের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
চুলের যত্নে তেল :
নারকেল তেলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। তাই নিয়মিত নারকেল তেল ব্যবহার আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে এবং চুল পড়ে যাওয়ার প্রবনতাঅনেকটা কমে যাই । এছাড়া শুধু নারকেল তেল দিয়ে আমাদের মাথার ত্বককে ভালো করে ম্যাসাজ করি তাহলে ফলিকল গুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় , ফলে আমাদের নতুন চুল উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যবহার :
প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন আমাদের চুলে নারকেল তেল প্রয়োগ করে দুই থেকে তিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের যত্নে ক্যাস্টর অয়েল:
ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন E এবং ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ফলে আমাদের মাথায় ক্যাস্টর অয়েল প্রয়োগে অবস্থিত ফলিকল গুলির কার্যকারিতা পুনরায় বৃদ্ধি পায়। আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজানোর বা উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- ব্যবহার :
প্রতি সপ্তায় দুই দিন এক ঘন্টার জন্য আমরা আমাদের চুলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারি । তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
চুলের যত্নে পেঁয়াজের রস:
পেঁয়াজের মধ্যে অটো-ইউনিয়ন কন্ডিশনকে রোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। পেঁয়াজের রস নিয়মিত আমাদের চুলে ব্যবহার করলে আমাদের চুলের গোড়া শক্ত হয়, আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক সময় আমাদেরই মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিকে আক্রমণ করে যার ফলে আমাদের নতুন চুল উৎপন্ন হয় না। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন পেঁয়াজের রস আমাদের চুলে প্রয়োগ করলে সেই সমস্যা সমাধান হয়।
- ব্যবহার :
একটি পেঁয়াজকে ভালো করে পেস্ট করে তার থেকে নির্যাতিত রস কে সংগ্রহ করতে হবে। দুই থেকে তিন চামচ পেঁয়াজের রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে ৩০ মিনিটের জন্য। তারপর শ্যাম্পু প্রয়োগ করে আমাদের চুল ধুয়ে নিতে হবে।
চুলের যত্নে লেবু:
পাতি লেবুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা সংক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। শুধু তাই নয় আমাদের নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে এবং আমাদের চুলের গোড়াকে শক্ত করে।
- ব্যবহার:
দুই থেকে তিন চামচ পাতি লেবুর রসের সাথে দুই চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে এক ঘন্টার জন্য আমাদের চুলে প্রয়োগ করতে হবে । তারপর শ্যাম্পু ব্যবহার করে আমাদের চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুলের যত্নে মেথি ও কালোজিরা :
মেথি ও কালোজিরা চুল গজানোর জন্য অনেক উপকারী উপাদান। মেথি ও কালোজিরা সর্বপ্রথম পরিষ্কার করে ভালো করে শুকিয়ে নিন। এরপর ব্লেন্ডারে বা পাটায় পিষে গুঁড়ো করে নিন। এরপর মেথি ও কালোজিরা নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই তিনটি উপকরণ একটু ফুটিয়ে নিন । তারপর ঠান্ডা করে নিন। আপনি চাইলে এই মিশ্রণটি একটি কাচের বোতলে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
- ব্যবহার:
এর ব্যবহার হচ্ছে সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন। এটি সংরক্ষণ করার সময় দুই সপ্তাহ বা তিন সপ্তাহের মধ্যে মিশ্রণটি ব্যবহার করতে হবে।
পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করে :
প্রতিদিন আমরা যদি যথার্থ পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করি তাহলে আমাদের নতুন চুল গজানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। আমরা যদি পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের মাথার ত্বকে অবস্থিত ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে যার ফলে আমাদের ফলিকল গুলি থেকে নতুন চুল গজানো বা উৎপন্ন হয়।
এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে , খুব বেশি ডায়েট বা নিয়ন্ত্রণে খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের ফলিকল গুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রিশন পৌঁছাতে পারে না যার ফলে আমাদের চুল পড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ভিটামিন এবং মিনারেল যা আমাদের নতুন চুল গজানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এছাড়া ও ভিটামিন E, ভিটামিন A, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন C, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম ইত্যাদি চুল গজানোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
যে সব খাবারে এই সব ভিটামিন বেশি রয়েছে আমাদের সেই সব পুষ্টিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক ব্যায়ামের মাধ্যমে :
দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আমরা যদি করি তাহলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন এবং নিউট্রেশন রক্তের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারে। ঠিক ঐরকম ভাবেই আমাদের মাথার ত্বকের প্রতিটি ফলিকলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন নিউট্রিশন রক্তের মাধ্যমে পৌঁছায় যার ফলে আমাদের নতুন চুল গজানোর বা উৎপন্ন হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
আমাদের শরীরের গঠন নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ করলে পরিবর্তন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ বা অর্গান সঠিকভাবে কাজ করে এবং আমাদের শরীর বা স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
উল্লেখ করা উচিত যে ,দৈনিক ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ বলতে শুধুমাত্র জিমে যাওয়া বা ভারি লৌহ বস্তু দ্বারা প্রশিক্ষণ করা বোঝায় না । নিয়মিত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি বা জগিং করা, সাঁতার, প্রাণায়াম এবং যোগাসন ইত্যাদিও ব্যায়াম এর আওতায় আসে।
আরো পড়ুন :ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায় এবং কিছু টিপস
পরিশেষে :
বলা যাই যে ,উপরে উলেখিত উপায় গুলি মেনে চললে আপনার চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুল গজাবে। কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন চুল পড়া কমাতে ও নতুন চুল গজানোর জন্য আপনাকে চুলের উপর যত্ন নিতে হবে ও চুল নিয়মিত পরিষ্কার ও রাখতে হবে।প্রাকৃতিকভাবে চুল গজানোর জন্য যে উপাদান গুলো আলোচনা করেছি আশা করছি এতে আপনাদের উপকার হবে ।