আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। নারীদের সৌন্দর্যের সব থেকে বেশি নজরকারা জিনিসটি হচ্ছে তাদের চুল। কার্লি ফ্যাশানের যুগ চললেও অনেকেই এখনও স্ট্রেইট চুল এর ভক্ত আছেন যারা এখনও রিবনডিং করার জন্য পার্লারে ছুটে যাচ্ছেন বা স্ট্রেইটনার দিয়ে চুল সোজা করছেন।  

অনেকে আছেন যারা কোঁকড়ানো চুল থেকে মুক্তির জন্য অনেক টাকা খরচ করেন, ব্যবহার করেন অনেক নামীদামী প্রসাধনী। কিন্তু ফলাফল বরাবরই হতাশাজনক। কারণ এসব প্রসাধনী ব্যবহারে চুলের উপকারের থেকে ক্ষতিটাই বেশি হয়ে থাকে।

কিন্তু ঘরে বসেই তৈরি কিছু মাস্ক নিয়মিত ব্যবহার করলেই কোঁকড়ানো চুল থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় । যদিও এই পদ্ধতিটি অনেক ধীরে কাজ করে, তবে চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর ব্যতিক্রম নেই।

কোঁকড়া চুল কি এবং কেন হয়:

কোঁকড়া চুলের যত্নের টিপসগুলিতে যাওয়ার আগে, কোঁকড়া চুলের কারণ কী তা বোঝা অপরিহার্য। কোঁকড়া চুল লোমকূপের আকৃতির কারণে হয়ে থাকে । ফলিকল গোলাকার হলে চুল সোজা হয়, কিন্তু ডিম্বাকৃতি হলে চুল কোঁকড়া হয়।

কোঁকড়া চুলে শুষ্কতার প্রবণতা থাকে কারণ মাথার ত্বকে উৎপাদিত প্রাকৃতিক তেল সহজেই চুলের ভেতর যেতে পারে না। এই শুষ্কতার কারনে চুলের কুঁচকানো, জট, এবং ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। তাই কোঁকড়া চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে একটু বাড়তি মনোযোগ ও যত্নের প্রয়োজন হয় ।

চুল সোজা করার ঘরোয়া কিছু উপায়:

রূপচর্চাবিষয়ক একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে , স্ট্রেইটনারের অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং রিবন্ডিং করার সময় ব্যবহৃত কেমিকল চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকরে থাকে । তাই চুল সোজা করতে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করাই ভালো ।এতে সময় লাগে কিন্তু ক্ষতি করে না। নিম্নে কিছু ঘরোয়া নিয়ম আলোচনা করা হলো –

লেবু ও নারিকেল তেল : 

একটি পাত্রে  তাজা লেবুর রস এবং নারিকেল তেল সমপরিমাণে মিশিয়ে নিন। চুল অনুযায়ী এই পরিমাণ বুঝে নিতে হবে। মিশ্রণটি কিছুক্ষণ রেফ্রিজারেটরে রাখুন যেন তা খানিকটা ঘন হয়ে ওঠে। এরপর ‍পুরো চুলে ও মাথার তালুতে মালিশ করে ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ চুল সোজা ও ঝলমলে রাখতে সাহায্য করে থাকে ।

ক্যাস্টর অয়েল : 

দুই টেবিল-চামচ ক্যাস্টর তেল এবং এক টেবিল-চামচ সয়াবিন তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। কুসুম গরম অবস্থায় মাথার ত্বকে এবং পুরো চুলে মালিশ করে নিন।৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

ডিম ও জলপাই তেল: 

দুটি ডিম ভালোভাবে ফেটে নিন এবং পরিমাণ মতো জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিন। চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। ডিম ও জলপাইয়ের তেল চুল মজবুত করে এবং চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে এবং সাথে সাথে চুল সোজা করতে সাহায্য করে থাকে।

অ্যাপল ‍সাইডার ভিনিগার: 

দুই টেবিল-চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার এবং এক কাপ পানিতে মিশিয়ে নিন। গোসলের শেষে এই মিশ্রণটি  দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। যেন নিচের অংশ পুরোপুরি ভেজে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।বাতাসে চুল শুকিয়ে নিতে হবে । এই মিশ্রণটি  চুল সোজা ও ঝলমলে করে তুলবে।

দুধ ও মধু: 

প্রোটিন আর কেরাটিন দিয়ে চুল তৈরি হয়। দুধে থাকা প্রোটিন চুলকে মজবুত করে। একসঙ্গে নরম রাখে। চুল সোজা করতে চাইলে এক চামচ মধুর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে শ্যাম্পু করা চুলে স্প্রে করুন। দুই মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। আবার চুল শ্যাম্পু করার পর একটি স্প্রে বোতলে এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ দুধ নিয়ে ভেজা চুলে স্প্রে করুন। এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল ভালোভাবে আঁচড়ে নিতে হবে ।৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।

অ্যালোভেরা ও জলপাইয়ের তেল: 

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী বেশ পরিচিত। এই পাতার ভেতরের জেলের মতো অংশ আলাদা করে আর সাথে জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিন। এক কাপ তেলের সঙ্গে আধা কাপ পরিমাণ জেল মেশান।পুরো চুলে সমানভাবে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যম্পু করে ফেলুন। এই মিশ্রণ চুল মশ্রিণ ও সোজা করতে সহায়ক।

কাঠবাদামের তেল ও কন্ডিশনার: 

নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন এবং তার সঙ্গে দুতিন ফোঁটা কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে নিন। এরপর কন্ডিশনারের মতো করেই ব্যবহার করুন।সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে চুল মশ্রিণ ও সোজা করবে।

কলা আর মধু:

চুল নরম আর সোজা করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে কলা। এটি ফ্রিজি হেয়ারকে ঠিক করতে সাহায্য করে। একটি কলা, কয়েক চামচ মধু, আধা কাপ দই, তিন চামচ অলিভ অয়েল একসঙ্গে ভলো করে মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন এবং মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন। এরপর চুল ভালো করে ধুয়ে নিন।এই মিশ্রণটি আপনার চুল সোজা করতে সাহায্য করবে। 

মুলতানি মাটি, ডিম ও চালের গুঁড়োর মিশ্রণ:

এতো দিন জানতাম এগুলো ত্বকের ডীপ ক্লিনজিং এর জন্য ব্যবহার করা হয় কিন্তু এটি চুলের যত্নেও অনন্য। এক কাপ মুলতানি মাটির সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ, দুই চামচ চালের গুঁড়ো আর পানি মেশান।মিশ্রণটি অনেক পাতলা হতে হবে যাতে সমস্ত চুল কোট করা যায়। চুলে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা রাখুন আর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে থাকুন। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি করুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার কোঁকড়া চুল কেমন সোজা হয়ে আসছে।

কোঁকড়া চুলের যত্নে কিছু টিপস :

সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা :

সালফেট হল এমন ডিটারজেন্ট যা আপনার চুল থেকে প্রাকৃতিক তেল বের করে দিতে পারে। আপনার চুল ময়শ্চারাইজড এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।

নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা :

কোঁকড়া চুলে প্রচুর আর্দ্রতার প্রয়োজন হয় । তাই চুলকে হাইড্রেটেড এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রতিবার ধোয়ার পর চুলকে কন্ডিশন করুন। একটি লিভ-ইন কন্ডিশনার আপনার চুলকে অতিরিক্ত মাত্রায় আর্দ্রতা প্রদান করবে এবং ফ্রিজ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

সাবধানে চুলে চিরুনি করুন :

আপনার চুল বিচ্ছিন্ন করতে একটি চওড়া দাঁতের চিরুনি বা আপনার আঙ্গুল ব্যবহার করুন। কোঁকড়া চুলে কখনই ব্রাশ ব্যবহার করবেন না, কারণ এতে চুল  ভেঙ্গে যেতে পারে এবং কুঁচকে যেতে পারে।

হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলুন:

হিট স্টাইলিং সরঞ্জামগুলি আপনার চুলের ক্ষতি করবে এবং এতে  চুল ঝরঝরে এবং শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। কার্লিং আয়রন, ফ্ল্যাট আয়রন এবং ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে এড়িয়ে চলুন। ।

আরও পড়ুন :বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত।

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,কোঁকড়া চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে বাড়তি যত্ন ও মনোযোগের প্রয়োজন। এই আর্টিকেলটিতে দেওয়া টিপস এবং কৌশলগুলি অনুসরণ করে, আপনি প্রচুর অর্থ ব্যয় না করে ঘরে বসেই স্বাস্থ্যকর, সুন্দর এবং সোজা কোঁকড়ানো চুল বজায় রাখতে পারেন। সর্বদা আপনার চুলের সাথে কোমল হতে ভুলবেন না, মৃদু পণ্য ব্যবহার করুন এবং যতটা সম্ভব তাপ স্টাইলিং টুলস এড়িয়ে চলতে হবে ।

Write A Comment