আসসালামু আ’লাইকুম। আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমরা ব্যাংক এ অ্যাকাউন্ট এর বিষয়ে কমবেশি সবাই জানি। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকলে আমরা টাকা জমা রাখতে পারি এবং সেই টাকা ব্যাংক থেকে তোলার জন্য চেক এর প্রয়োজন হয়। তবে এই চেক সঠিক ভাবে পূরণ করতে হয়। 

এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা সঠিকভাবে চেক লিখতে পারে না আর কারণে অনেক সময় তাদের চেক ক্যানসিল হয়ে যায়।এই জন্য আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের জানাবো।

চেক :

চেক হলো গুরুত্বপূর্ণ ধরণের একটি  কাগজ যার নামে চেকটি তৈরি করা হয় চেকের উপরে সেই ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য থাকে। 

ব্যাংক আদেশ দেয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ করে। এজন্য অবশ্যই সেই ব্যাংকে ওই ব্যাক্তির একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।বাংলাদেশে ১৮৮১ সালের হস্তান্তরযোগ্য দলিল আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, (A “Cheque” is a bill of exchange drawn on a specified banker and not expressed to be payable otherwise than on demand.)অর্থাৎ চেক  এক ধরনের বিনিময় বিল হলো  চেক যা কোন নির্দিষ্ট ব্যাংকের উপর কাটা হয় এবং যার অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধ্য। অর্থাৎ চেক হলো এমন একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল যা প্রস্তুতকারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে আমাতকারী ব্যাংকে রক্ষিত তার আমাতন থেকে চেকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রতি শর্তহীন লিখিত আদেশ প্রদান করে; যার অর্থ চাহিবা মাত্র পরিশোধ্য।

চেক এর বৈশিষ্ট্য :

চেক  হচ্ছে বিশেষভাবে মুদ্রিত এক ধরনের কাগজ যা ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের হিসাবের বিপরীতে ইস্যু করা হয়ে থাকে এবং যার অর্থ চাহিবা মাত্র পরিশোধ্য। চেকের কতকগুলো বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো নিন্মরুপ-

লিখিত:

চেক অবশ্যই লিখিত হতে হবে। কোন ফাঁকা চেক অর্থ পরিশোধের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। চেকে অবশ্যই আমানতকারির  স্বাক্ষর, তারিখ, নির্দিষ্ট প্রাপক এবং টাকার পরিমাণ কথায় ও অংকে লেখা থাকতে হয় । তা না হলে  ব্যাংক অর্থ পরিশোধে বাধ্য নয়।

শর্তহীন:

চেক সর্বদাই শর্তহীন আদেশ বহন করে। শর্তারোপ করলে সেই চেক অর্থ পরিশোধের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না।

ব্যাংকের উপর আদেশ:

চেকের মাধ্যমে সর্বদা ব্যাংকটিকে আদেশ দেয়া হয়ে থাকে । ব্যাংক ছাড়া অন্য কারো উপর চেকের মাধ্যমে আদেশ দেয়া থাকে না।

চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য

চেক চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য এবং হস্তান্তরযোগ্য দলিল। তাই ব্যাংকে চেক উপস্থাপনের সাথে সাথে ব্যাংক চেকের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য।

চেক লেখার নিয়ম জানার প্রয়োজনীয়তা:

একটি ব্যাংক এর গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকের  চেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে । কারণ   এই চেক ছাড়া কোন ভাবে আপনার একাউন্টে জমা টাকা উত্তোলনকরা যাবে না।   যদি আপনার জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে না পারেন তাহলে আপনার ব্যাংকে টাকা রেখে কোনো  লাভ নাই । তাই সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে ব্যাংক চেক কিভাবে লিখতে হয় । যদি ব্যাংক চেক লিখতে ভুল হয়  তাহলে কোন ভাবে টাকা উত্তোলন করা যাবে না।

এছাড়াও যদি চেক লিখতে ভুল হয়  তাহলে চেকটির পৃষ্ঠাটি বাতিল হয়ে যাবে। ব্যাংক চেক লেখার নিয়ম না জানেলে টাকা জমা দিতে কোন সমস্যা না হলেও টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে আপনার বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই চেক লেখার নিয়ম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং আমাদের সকলের এই বিষয়ে জ্ঞান রাখা অবশ্যই উচিত।

চেক লেখার নিয়ম :

চেক লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্যই চেক লেখার সময় সতর্ক হয়ে লিখতে হবে।ভুল হলে চেক বাতিল হয়ে যাবে। 

Date:

চেক এ সঠিক ভাবে Date বা তারিখ লিখতে হবে।  তারিখ বিহীন কোন চেক ব্যাংক গ্রহণ করবে না। চেক এর শুরুতে ডান দিকে  Date বসানোর ঘর থাকে সেখানে Date লিখতে হয় । বাংলা বা ইংরেজি যে কোন ভাষায় আপনি চেক লিখতে পারবেন। এক্ষেত্রে তারিখ সঠিক হতে হবে।

Pay to:

Pay to এর অর্থ হচ্ছে পরিশোধ করুন এবং যার নাম থাকবে তাকে টাকা পরিশোধ করুন। যাকে চেকের মাধ্যমে টাকা প্রদান করা হবে Pay to স্থানে এর  তার নাম লিখতে হবে। নিজের প্রয়োজনে টাকা উত্তোলন করার ক্ষেত্রে  Pay to স্থানে Self বা নিজ লিখতে পারেন। ইংরেজী বা বাংলায় দুটি ভাবেই লিখতে পারেন।

Amount Taka :

টাকা পরিমাণ ছাড়া কোন চেক ব্যাংক গ্রহণ করে না।  Tk. লেখা বক্সে অংকে টাকার পরিমাণ লিখুন  এবং /- চিহ্ন ব্যবহার করুন। এবং Pay to কোথায় আর নিচে টাকার পরিমাণ লিখুন।  যেমন ৩০,০০০/- টাকা এর ফলে চেকের নিরাপত্তা আরও কঠোর হবে। অন্যকেউ চেকের  মুডিফাই করতে পারবে না।

Bank Account Holder’s Signature:

স্বাক্ষর ছাড়া চেকের কোন মূল্য নেই। চেকের ডান পাশে নিচে যেখানে A/C Holder’s Signature থাকে তার উপরে একাউন্টধারী স্বাক্ষর  স্বাক্ষর দিতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় স্বাক্ষর কার্ডে যে স্বাক্ষর থাকে এখানে সেই স্বাক্ষরটি দিতে হবে।স্বাক্ষর না মিললে ব্যাংক কোন ভাবেই চেক উপস্থাপনকারীকে টাকা পরিশোধ করবে না।

Signature at Backside of Cheque:

চেক উপস্থাপনকারী চেকের পেছনের পৃষ্ঠায় অতিরিক্ত স্বাক্ষর দিতে হয় চেক উপস্থাপনকারীর স্বাক্ষর এবং মোবাইল নম্বর দিতে হয়। নিজের নামের চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে চেকের পেছনে কোন স্বাক্ষর দিতে হয় না। তবে, আপনার নামের চেক দিয়ে অন্য কেউ টাকা উত্তোলন করার অনুমতি দিতে চেকের পিছনে উপর-নিচ করে অতিরিক্ত ২ টি স্বাক্ষর দিতে হবে। এই অতিরিক্ত স্বাক্ষর দেয়াকে বলা হয় চেকের অনুমোদন। 

চেক লেখার সতর্কতা:

চেক লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই খুব সাবধানে লিখতে হবে । চেক লিখের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন ধরণের ভুল ও কাটা-ছেঁড়া না হয়। যদি কোন ভুল হয় তা ১ টানে কেটে পাশে/উপরে/নীচে শুদ্ধভাবেলিখতে হবে এবং সেখানে আপনার একটি স্বাক্ষর করতে হবে।

আরো পড়ুন :পাসপোর্ট করার কাগজপত্র সমূহ ও পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম

পরিশেষে :

বলা যাই যে ,অবশ্যই চেক লেখার সময় সতর্ক হয়ে চেক লিখতে হবে।যদি এর বাইরে ও সরাসরি কোনো সাহায্য পেতে চান তাহলে যেই ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে চাচ্ছেন সেই ব্যাংকের ম্যানেজারের কাছে যেতে পারেন। তিনি আপনাকে খুব সহজেই  সব কিছু দেখিয়ে দেবে যে কিভাবে লিখতে হবে। 

Write A Comment