আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। ছারপোকা মানে হচ্ছে বাড়ির আতঙ্ক। কারণ একবার যদি এই পোকা কারও ঘরে প্রবেশ করে তবে তা বের করা দুঃসহ হয়ে পড়ে। মূলত ছারপোকাকে রক্তচোষাও বলা হয় এর কারণ এই পোকা মানুষের অগোচরে রক্ত চুষে নেয়। এদের পছন্দের আবাসস্থল বিছানা, বালিশ, মশারি, সোফা । পুরোপুরি নিশাচর না হলেও ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধিক সক্রিয় হয়ে  থাকে।পুরোনো বাংলা সাহিত্যে  ছারপোকার অত্যাচারে মেসবাড়ি ছাড়ার ঘটনা যথেষ্ট পাওয়া যায়।

অনেকে ছারপোকাকে নিশাচর প্রাণী বলে থাকে কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এগুলো সম্পূর্ণ নিশাচর নয়। একটু অন্ধকার কিংবা রাত্র হয়ে আসলে এরা এদের বাসস্থান থেকে বাহিরে বের হয়ে আসে। আর তখনই এদের উপদ্রব শুরু হয় । ঘুমন্ত মানুষের রক্ত শোষা, কামড়ানো, চুল কাটা ,  ইত্যাদি করে থাকে। ছোট ছোট বাচ্চারা তো ছারপোকাকে দেখলেই ভয় পায়। ছারপোকাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায় মেয়েরা। ছারপোকা দেখলেই এদের স্বাভাবিক হার্টভিট অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।

ছারপোকা তাড়ানোর উপায়: 

ছারপোকার ক্ষতি পোষাতে অনেকে ছারপোকাকে ঘর বা রুম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য স্থায়ী উপায় খুঁজে। কিন্তু কার্যকারী উপায় না পাওয়ায় অনেককে  একটা সময় হতাশায় ভুগেন ।

বাস্তবে আতঙ্কের অন্য নাম হচ্ছে ছারপোকা। তাই, বাসা-বাড়ি থেকে অবশ্যই আমাদের এসব ছাড়পোকা তাড়াতে হবে। আলোচনার সুবিধার্থে ছারাপোকা তাড়ানোর উপায়কে ২ ভাগে ভাগ করা হলো-

(১)ক্যামিকেল জাতীয় পদার্থের ( বিভিন্ন রকম ট্যাবলেট বা ঔষধ, স্প্রে, বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল, ন্যাপথলিন এবং কেরোসিন ইত্যাদি ) মাধ্যমে ছারপোকা তাড়ানো।

(২)প্রাকৃতিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে (সূর্যের তাপ, পুদিনা পাতা, গরম পানি এবং প্রাকৃতিক কিটনাশক ইত্যাদি ) ছারপোকা তাড়ানো।

(১)ক্যামিকেলের মাধ্যমে ছারপোকা তাড়ানো:

 

বাজারে বিভিন্ন রকমের বা টাইপের ক্যামিকেল জাতীয় ঔষধ কিংবা স্প্রে ইত্যাদি জাতীয় ছারপোকা প্রতিরোধক পাওয়া যায়। এগুলো ব্যাবহার  করার মাধ্যমে বাসা-বাড়ির রুম থেকে যে কেউ ইচ্ছা করলেই খুব সহজেই ছারপোকা তাড়াতে পারে। ক্যামিকেলের মধ্যে  বিভিন্ন রকম ট্যাবলেট বা ঔষধ, স্প্রে, বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল, ন্যাপথলিন এবং কেরোসিন ইত্যাদি রয়েছে ।নিম্নে আলোচনা করা হলো –

ছারপোকা মারার ট্যাবলেট:

ছারপোকা মারা ট্যাবলেট এর নাম হচ্ছে Aluminium Phosphide. বাজারে যেসব দোকানে কৃষিকাজের জন্য বিভিন্ন প্রকার সার, কীটনাশক, ফসলের বীজ ইত্যাদি বিক্রি করে, সেসব দোকানে ছারপোকার ট্যাবলেট ও পাওয়া যাবে।

ছারপোকা মারার ট্যাবলিটটি খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। প্রতি রুমের জন্য ৮-১০ টি ট্যাবলেট গুঁড়ো করে যে জায়গা গুলোতে ছারপোকার উপদ্রব রয়েছে সেখানে ছড়িয়ে দিন অথবা মেঝের উপরে অথবা চেয়ার কিংবা টেবিলে পত্রিকার কিংবা যেকোনো পেপারের উপর উক্ত ট্যাবলেটগুলো রেখে ২-৩ দিনের জন্য কোথাও চলে যান। কেননা, এই ট্যাবলেটগুলো খুব বিষাক্ত এবং দূর্গন্ধময় গ্যাস উৎপন্ন করে।

ছারপোকা তাড়ানোর স্প্রে:

ছারপোকা তাড়ানোর স্প্রের নাম হলো ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে। এটি বাজারের কসমেটিক টাইপস বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। ছারপোকা মারার জন্য এটি হলো সবচেয়ে ভালো স্প্রে । ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে টি  ঘরের বারুমের যে স্থানে ছারপোকার বসবাস অর্থাৎ ছারপোকা যেখানে থাকে, সেখানে বেশি করে স্প্রে করুণ। যদি এই ভাবে ২-৩ দিন স্প্রে করেন , তাহলে কয়েকদিনের মধ্যে অথবা এ ২-৩ দিনের মধ্যে ছারপোকা বাসা ছেড়ে পালাবে।

ছারপোকা তাড়াতে অ্যালকোহল এর ব্যবহার:

এই ক্ষেত্রে অ্যালকোহল বেশ কার্যকর। বাজারে দোকান থেকে অ্যালকোহল ক্রয় করার পর যেখানে ছারপোকার বসবাস এটি স্পের সাহায্যে সেখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। 

ছারপোকা তাড়াতে ন্যাপথলিন:

ছারপোকা তাড়াতে ন্যাপথলিন কিনে এনে, তা গুড়ো করে নিন। এবার যেখানে ছারপোকার বেশি উপদ্রব, সেখানে ন্যাপথলিনের গুড়োগুলো ছিটিয়ে দিন। এভাবে মাসে কয়েকবার অথবা ২-৩ বার এই কাজ টি করুণ, ছারপোকা পালাতে বাধ্য হবে।

ক্যারোসিন ব্যবহার করে ছারপোকা তাড়ানো:

বাসার যেসব আসবাবপত্রে ছারপোকার চলাচল এবং বসবাস রয়েছে, সেসব জায়গায় বা আসবাবপত্রে কয়েক মাস পর পর ক্যারোসিনের প্রলেপ দিতে পারেন। এতে করে ছারপোকা আর ঐ আসবাবপত্রে আসবে না অথবা বাসা বাধবে না।

(২)প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছারপোকা তাড়ানো:

ছারপোকা তাড়ানোর ক্ষেত্রে বর্তমানে অনেকে বাজারের ক্যামিক্যালের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে । কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেই না যে প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ছারপোকা তাড়ানো যায়। কোনো রকম ক্যামিকেল ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরের ছারপোকাগুলো তাড়ানো উপায় গুলো নিম্নে দেয়া হলো-

সূর্যের তাপে ছারা ছারপোকা তাড়ানো:

বর্তমানে এর  প্রয়োগ বেশি গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায়। সূর্যের অতি উত্তাপ এবং কিরণ ছারপোকে বাসস্থা্ন ছাড়তে বাধ্য করে থাকে। বিশেষ করে যেসব আসবাবপত্র এবং জিনিসপত্র গরম পানি দ্ধারা ধৌত করা সম্ভব নয়, সেসব জিনিসগুলোকেই সূর্যের তাপে দেওয়া হয়। এতে করে ছারপোকা পালায় এবং ছারপোকার ডিমগুলোও নষ্ট হয়ে যায়।  সূর্যের তাপে ছারপোকা তাড়ানো একটি কার্যকারী উপায়।

পুদিনা পাতা দ্ধারা ছারপোকা তাড়ানো:

পুদিনা পাতার গন্ধ ছারপোকা সহ্য করতে পারে না। হোক সেটা টাটকা অথবা শুঁকনো পুদিনাপাতা। আপনার তোষক কিংবা সোপার কভারের নিচে ‍পুদিনা পাতা রেখে কয়েকদিনের জন্য রেখে দিন দেখবেন কয়েক দিন মধ্যে ছারপোকা আপনার ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে।

ছারপোকা তাড়াতে গরম পানি :        

ছারপোকা গরম তাপ বা এল সহ্য করতে পারে না তাই যেসব জিনিসপত্র গরম পানি দ্ধারা ধৌত করা সম্ভব, সেসব আসবাবপত্র এবং জিনিসপত্র দ্রুত গরম পানি দ্ধারা ধৌত করে ফেলতে হবে। ফলে ঐসব জিনিসপত্রে থাকা ছারপোকা এবং সেগুলোর ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মাস অথবা কয়েকমাস পর পর চেষ্টা করুণ ঘরের জিনিসপত্র গুলোকে ধৌত করার জন্য।

আরো পড়ুন :দৈনন্দিন সমস্যা গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়

পরিশেষে :

 

বলা যাই যে ,উপরের দেখানো ক্যামিকেল এবং প্রাকৃতিক ঘরোয়া উভয় পদ্ধতি দুইটি খুবই কার্যকারী। তাই দেখানো সমস্ত নিয়ম ছারপোকা তাড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে । তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, মাসে কয়েকবার অথবা অন্তত একবার ঘরের বা বাসার সমস্ত জিনিসপত্রগুলোকে সূর্যের আলোয় গরম করুন। আর এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ঘর থেকে ছারপোকাকে তাড়িয়ে দিতে পারবেন।

Write A Comment