আসসালামু আলাইকুম আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রা এতই সহজ হয়ে গেছে যে এখন ট্রেন, বাস, লঞ্চ এবং বিমানের টিকেট কাটার জন্য আমাদের সশরীরে যেতে হয়না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার ঝামেলাও এখন নেই বললে চলে । শুধু আপনার একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার থাকলেই আপনি অধিকাংশ টিকেট বাড়িতে বসেই করে ফেলতে পারবেন।

রেলওয়েকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন বলে ধরা হয়। তাই দূরপাল্লার যে কোনো ভ্রমণে সবাই ট্রেন ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে বর্তমানে ট্রেনের টিকিট পাওয়া অত্যন্ত দুঃসাধ্য ।অনেক সময় লম্বা লাইনে সারাদিন দাঁড়িয়েও ট্রেনের টিকিট মেলে না। আবার ঈদ ও বিভিন্ন সরকারি ছুটির সময় টিকিট পাওয়া আরও কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবে আপনি এখন থেকে খুব সহজেই ঘরে বসে মোবাইল দিয়েই ট্রেনের টিকিট বুকিং করতে পারেন।

অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সময়:

বাংলাদেশে রেলওয়েকে সবচেয়ে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন ধরা হয়। তাই দূরপাল্লার যেকোনো ভ্রমণে সবাই ট্রেন ব্যবহারেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে থাকে ।

অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার সময় হলো রাত দিন ২৪ ঘণ্টা। আপনি আজ থেকে আগামী ৪ দিন পর্যন্ত অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট ক্রয় করতে পারবেন।

অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেনার নিয়ম:

নতুন নিয়মে শুধু অনলাইন নয়, কাউন্টার থেকেও ট্রেনের টিকিট কিনতে আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে, খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। কাউন্টার, অনলাইন ও অ্যাপের মাধ্যমে তা করা যাবে। ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা সাধারণত যাত্রীরা মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। আগে থেকে যাদের রেলের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করা আছে তাদের সাইন-ইন করে জন্মনিবন্ধন সদন আপলোড করতে হবে। আর যাদের আগে থেকে নিবন্ধন নেই, একেবারেই নতুন, তাদের প্রথমে ওয়েবসাইট ভিজিট করে সাইনআপ করে জাতীয় পরিচয়পত্র আপলোডের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

ই-টিকিটিং সিস্টেমে টিকেট কেনার নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সেক্ষেত্রে রেলওয়ের ওয়েবসাইটে একবার রেজিস্ট্রেশন করলেই চলবে। 

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া:

  • প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে (www.eticket.railway.gov.bd) প্রবেশ করুন ।
  • প্রবেশের পর ওয়েবসাইটের উপরের দিকে রেজিস্ট্রেশন ( Registration) ট্যাব ক্লিক করতে হবে।
  • এতে রেজিস্ট্রেশন নামে নতুন একটি পেজ আসবে।  এ পেজে ব্যক্তিগত তথ্যাদি  (Personal Information) সংশ্লিষ্ট ঘরগুলো পূরণ করতে হবে। 
  • মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি (OTP) চলে আসবে। সেটি সঠিকভাবে পূরণ করে ভেরিফাই (Verify) বাটনে ক্লিক করতে হবে। 
  • সব তথ্য ঠিক থাকলে রেজিস্ট্রেশন সফল (Successful) হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে নামে নতুন একটি পেজ আসবে। 
  • এখানে ইউজার (User) অটো লগ ইন (Log In) হয়ে যাবে।  

টিকিট কেনার পদ্ধতি:

  • প্রথমে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে (www.eticket.railway.gov.bd) প্রবেশ করতে হবে।
  • অটো লগ ইন (Log In) না হয়ে থাকলে প্যানেলে ই-মেইল ঠিকানা (E-mail address)  ও পাসওয়ার্ড (Password) পূরণ করে  লগ ইন (Log In) বাটনে ক্লিক করুন । 
  • লগ ইনের পর যে পেজটি আসবে তাতে কাঙ্ক্ষিত ভ্রমণ তারিখ, প্রারম্ভিক স্টেশন, গন্তব্য স্টেশন, শ্রেণি পূরণ করে ফাইন্ড টিকিট (Find Ticket) বাটনে ক্লিক করুন । পরের পেজে ট্রেনের নাম, সিট অ্যাভেলেবিলিটি (আসন আছে কি নেই) ও ট্রেন ছাড়ার সময় দেখাবে।
  • ট্রেন অনুযায়ী ভিউ সিটস (আসন দেখুন) বাটনে ক্লিক করে আসন খালি থাকার সাপেক্ষে পছন্দের আসন (seat) সিলেক্ট করে  কন্টিনিউ পারচেজে  (Continue Purchase) ক্লিক করুন । 
  •  ভিসা (VISA) কার্ড, মাস্টার (MASTER) কার্ড  কিংবা বিকাশে (bkash) পেমেন্ট করলে একটি ই-টিকিট অটো ডাউনলোড (Auto Download) হবে। পাশাপাশি যাত্রীর ই-মেইলে টিকিটের কপি চলে যাবে।
  •  ই-মেইলের ইনবক্স থেকে টিকিটটি প্রিন্ট করে ফটো আইডিসহ ই-টিকেট প্রদত্ত টিকিট প্রিন্ট ইনফরমেশন (Ticket Print Information) দিয়ে সংশ্লিষ্ট সোর্স স্টেশন থেকে যাত্রার আগে ছাপানো টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।  

বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা :

  •  ট্রেনের টিকেট বিকাশ অ্যাপ দিয়েও আপনি কিনতে পারবেন।
  •  টিকিট কিনতে বিকাশ অ্যাপে প্রবেশ করে অ্যাপের টিকেট আইকন থেকে ট্রেন নির্বাচন করতে হবে।
  • এখানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘ই-টিকেটিং সার্ভিস’ স্ক্রিন আসবে।
  • সেখানে যাত্রার শুরুর স্থান, গন্তব্য, তারিখ, টিকেটের সংখ্যা এসব তথ্য দিয়ে ট্রেন নির্বাচন করতে হবে।
  • গ্রাহকের প্রয়োজনীয় টিকেট থাকলে ‘purchase’ এ যেতে হবে।
  • রেলওয়ের ওয়েবসাইট বা অ্যাপের নিবন্ধিত আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে।
  • এরপর বিকাশ দিয়ে ভাড়া দেয়ার গেটওয়ে দেখা যাবে।
  • গেটওয়েতে বিকাশ নম্বর দিলে ফোনে একটি ভ্যারিফিকেশন কোড আসবে।
  • এই কোড ও পিন নাম্বার দিয়ে টিকেট নিশ্চিত করলে ইমেইল করে টিকেট পাঠিয়ে দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে রেলওয়ের ই-টিকেটিংয়ে অ্যাকাউন্ট করে রাখতে হবে।

অ্যাপের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট কেনা:

  •  প্রথমেই, গুগল প্লে স্টোরে ‘Rail Sheba’ লিখে সার্চ দিয়ে এই অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে ।
  •  অ্যাপটি ডাউনলোড হয়ে গেলে ‘Sign Up’ এ ক্লিক করে ইমেইল এড্রেস, ফোন নাম্বার, নাম, পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন ।
  • রেজিস্ট্রেশনের পর ইমেইলে ভ্যারিফিকেশন লিঙ্ক পাঠাবে। এই লিঙ্কে ক্লিক করলেই অ্যাকাউন্ট সচল হয়ে যাবে।
  • অ্যাকাউন্ট সচল হবার পর অ্যাকাউন্টে গিয়ে প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন । সেজন্য আপনার জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার বা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার দিয়ে প্রোফাইল সম্পূর্ণ করতে হবে।
  •  অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে এই অ্যাপে লগ ইন করে ট্রেনের টিকেট কাটা, ট্রেনের সময়সূচী জানা, প্রয়োজনে ট্রেনের বগিও দেখে নেয়া যাবে।
  • টিকেট কেনার জন্য ‘Purchase’ এ ক্লিক করে যাত্রা শুরু ও শেষের স্টেশন, তারিখ, যাত্রী সংখ্যা এবং আসনের শ্রেণী (শোভন, শো: চেয়ার, এসি, স্নিগ্ধা) নির্বাচন করতে হবে। তাহলে এই তারিখে কোন কোন ট্রেন আছে, সময় কখন সেসব বিস্তারিত তথ্য আসবে। এমনকি আপনি পছন্দসই সিটও নির্বাচন করে নিতে পারবেন।
  • একজন সর্বোচ্চ ৪ টি টিকেট কাটতে পারবে। সেজন্য এর বেশি সিট নির্বাচন করা যাবে না। এবং একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে এক সপ্তাহে ২ বারের বেশি টিকেট ক্রয় করা যাবেনা।
  • সিট নির্বাচন করে ‘Continue’ এ ক্লিক করলে ভাড়াসহ সকল তথ্য চলে আসবে। ভাড়ার সাথে ব্যাংক চার্জ এবং ভ্যাট যুক্ত হয়ে পুরো পরিমাণটা দেখাবে।
  •  ‘pay now’ এ ক্লিক করলে ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ দিবে। এখানে রকেট ,বিকাশ, ভিসা কার্ড, নেক্সাস কার্ড ,মাস্টার কার্ড দিয়ে ভাড়া পরিশোধের সুযোগ আছে।
  • পছন্দসই মাধ্যম নির্বাচন করে অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও পিন নাম্বার দেয়ার পর আপনার ফোনে একটি কোড আসবে। এই কোড দিলেই টিকেট কেনা হয়ে যাবে । আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে ভাড়ার সমপরিমাণ টাকা কেটে নিবে এবং ৩০ মিনিটের মধ্যে মেইল করে টিকেট পাঠিয়ে দিয়া হবে । আবার অ্যাপে গিয়ে ‘History’ তে ক্লিক করলেও টিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। 

আরো পড়ুন :সিম রেজিস্ট্রেশন দেখার নিয়ম বিভিন্ন কোম্পানির।

পরিশেষে :

বলা যাই যে, ট্রেনের টিকিট পাওয়া অত্যন্ত দুঃসাধ্য। অনেক লম্বা লাইনে দাড়িয়েও শেষ পর্যন্ত অনেক সময় হয়তো  আপনি  টিকিট পাবেন না। আশা করছি ,এই আটিকেলের  আপনাকে সাহায্য করবে কিভাবে  আপনি ঘরে বসেই খুব সহজে আপনার মোবাইল থেকেই ট্রেনের টিকেট বুকিং করতে পারবেন। 

Write A Comment